দেশ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। সারা দেশে সহিংসতা বিরাজ করছে। ২০ দল বনাম আওয়ামী লীগ অঘোষিত যুদ্ধ চলছে। রাজনৈতিক মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত জাতির জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনে না। রাজনৈতিক সমাধান রাজপথে করতে চাইলে তা শুধু সহিংসতাই বাড়াবে। অতীতে আমরা এর অনেক নজির দেখেছি এবং তাতে অগণতান্ত্রিক শক্তির আগমনের পথই শুধু সহজ হয়। এরই মধ্যে দেশে ঘটে গেছে অনেক সংঘাত-সহিংসতা। সরকারি দলের যে অনমনীয় মনোভাব, তাতে আগামী দিনে এ সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জনগণের মধ্যে। কিন্তু তারা এ থেকে মুক্তি চায়। দেশের মানুষ চায়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দলের সহাবস্থান, যা দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। যে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ আয়োজনে আদালতের রুল বলি, আর বিদেশি চাপ, জনগণের আকাক্সক্ষা এখানে সবার উপরে। দেশের প্রায় সব মানুষ সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ আশা করছে। তাদের আকাক্সক্ষার মর্যাদা দিতে হবে দুই দলকেই। আর এক্ষেত্রে সরকারকে পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে দুই প্রধান দলের ওপর, সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কেন্দ্র করে মহাজোট ও ২০ দলীয় জোট গঠিত হলেও উভয় জোটের রাজনৈতিক কার্যক্রম মূলত দুই প্রধান দলের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাচনের আসন বণ্টন থেকে শুরু করে সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এ দুই দলই মূল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রধান দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে ঠেলে দিয়েছে এক অনিশ্চিত অবস্থার দিকে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত থাকলেও আমাদের রাজনীতিকরা আপসহীন হওয়ার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব থেকে পুরোপুরি সরে আসতে পারেননি। গণতান্ত্রিক আবরণে তারা যে পেশিশক্তি প্রদর্শনের মহড়া চালিয়ে যাচ্ছেন সেটিই প্রকারান্তরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। সংসদে সংশোধনী এনে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে এককেন্দ্রিক নির্বাচন করছে সরকার। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন দিনের পর দিন সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে। সরকারের এ অবস্থানের কারণে আগামী দিনগুলোতে যে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে চিন্তিত। কারণ রাজনৈতিক সঙ্কট যত ঘনীভূত হবে, ততই বাধাগ্রস্ত হবে উন্নয়। দেশের উন্নয়ন মূলত নির্ভর করে বিনিয়োগের ওপর। বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়, তা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টের পাশাপাশি এ রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক সময় জননিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। অতীতেই শুধু নয়, নিকট অতীতেও আমরা সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক অস্থিরতার অসহায় বলি হতে দেখেছি, যা সমাজের স্বাভাবিক বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত করে। নির্বাচনকে শুধু অর্থবহ নয়, দেশের মানুষ তথা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশের। আর এটা করতে উভয় পক্ষের সহাবস্থান নিশ্চিত করাটাই হবে প্রধান কাজ। এ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হতে হবে। সেই সমঝোতার পথ তৈরি করতে পারে সংলাপ। দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, শুধু উভয় দলের শীর্ষ পর্যায়ের সংলাপই রাজনৈতিক অঙ্গনকে সংঘাতমুক্ত রাখতে পারে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে পারে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত করতে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠান ও তা গ্রহণযোগ্য করে তুলতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা। সেই সমঝোতার জন্য সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে উভয় দলকেই বসতে হবে।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চললে তা হয় অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। তাই এখনই সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হওয়ার এক বিরল ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর ঘটবে কিনা, তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্রকামী দেশ হলে, তা ঘটবে না বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচন সম্পর্কে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, বিশ্বের যেসব মানুষ জানে তারা কোনোদিনই বিস্মৃত হবে না। সাধারণত মানুষ বিরল সব ঘটনার প্রতি আগ্রহী হয় বেশি এবং তা মনে রাখে। ডিসকভারি চ্যানেলটি এ কারণেই বেশি জনপ্রিয়। প্রশ্ন আসতে পারে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের ঘটনা তো আমাদের দেশে অহরহ ঘটেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটে। তাহলে বিরল হবে কেন এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বিরল না হলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বিরল। ৫ জানুয়ারির আগে ঘটেনি। এটিই বিশ্বের প্রথম বিনাভোটে সরকার গঠন করার নির্বাচন। তবে বাংলাদেশে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও গণতান্ত্রিক অন্য কোনো দেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ বাংলাদেশকে বলা হয়, সব সম্ভাবনার দেশ। এখানের রাজনীতিতে মানুষের ধারণার বাইরে ঘটে না, এমন কিছু নেই। যেমন বাংলাদেশে সামরিক শাসন সম্পর্কে মানুষ জানে। কোনো এক সন্ধ্যায় বা রাতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে- এ ধরনের ঘটনা তাদের কাছে পরিচিত। তবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটেছে, তা তাদের কল্পনার মধ্যে ছিল না। সামরিক শাসন যে সিভিল শাসনকে সামনে রেখে পেছনে থেকে কাজ করতে পারে, তা মানুষ আগে তো দেখেইনি, কল্পনাও করেনি। এ ধরনের সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন একটি অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের সামনে যে আরও বড় ধরনের বিস্ময় জাগানিয়া ঘটনা অপেক্ষা করছে, তা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কি তারা কল্পনা করেছিল? কেউ কি ভেবেছিল, বিনাভোটে সরকার গঠন হয়ে যেতে পারে। তারাই ভাবতে পারে, যারা অত্যন্ত জটিল ও কুটিল টাইপের এবং স্বাভাবিক চিন্তাধারার মানুষ নন। গণতন্ত্রমনস্ক কোনো মানুষের মনে এ ধরনের চিন্তা আসতেই পারে না। অবশ্য লেবাসধারী হলে তা হতে পারে। যাই হোক, দুটি ভিন্ন সালের জানুয়ারি মাসের দুটি বিরল ঘটনা মানুষের মনে যে চিরদিন গেঁথে থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে দেশটি যেহেতু বাংলাদেশ, তাই সামনে যে মানুষের জন্য আরও বিস্ময়কর কোনো ঘটনা অপেক্ষা করছে না, তা নিশ্চিত করে এখন আর বলা যায় না।
এমন একটি কথা প্রচলিত রয়েছে- বিনাভোটে যে সরকার গঠন করা যায়, এই কুবুদ্ধির মাস্টার মাইন্ড ছিল ভারত। তার কূটচালে সরকার সে সময় নির্বাচন করেছিল। পরবর্তীতে বিনাভোটের সেই কালচার শাসক দল বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছে এবং তা প্রয়োগ করে চলেছে। এর ফলে এখন অনেকেই বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার আর সামরিক শাসকের সরকারের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, সামরিক শাসকও বিনাভোটে ক্ষমতায় আসে। জনসাধারণের ভোট নেয়ার প্রয়োজনীয়তা থোড়াই কেয়ার করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট দিতে পারেনি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। নির্বাচনটি ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এর ফলে সচেতন নাগরিকদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, আচরণের দিক থেকে বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার সামরিক শাসকের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। এর কারণ হচ্ছে, এ ধরনের সরকারের সামনে সাংবিধানিক বৈধতার ছুঁতা থাকে। জনমতের তোয়াক্কা না থাকলেও সাংবিধানিক ও আইনগত বৈধতা থাকে। এ ধরনের সরকারকে হাফব্রিড বলা যেতে পারে। না গণতান্ত্রিক, না স্বৈরতান্ত্রিক। ফলে এরা ভালোও হতে পারে আবার ভয়ঙ্করও হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, এখানে বিরোধী দলের রাজনীতি করার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। যত ধরনের অপবাদ আছে প্রতিপক্ষের উপর তা চাপিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। মাঠে শুধু সরকারি দল ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সামরিক সরকার যেহেতু নিজেও জানে সে বৈধভাবে আসেনি, তাই নিপীড়ন-নির্যাতন চালালেও তাতে মিনিমাম একটা সীমা থাকে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে-ময়দানে নামতে পারে এবং আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতে পারে। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে। তবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকারের নিপীড়ন যে কতটা ভয়াবহ ও নির্মম হতে পারে, তা এখন বিরোধী দলগুলো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মাঠে নামলেই তারা সহিংসতা করবে, এ অজুহাতে তাদের নামতেই দেয়া হচ্ছে না। এ ধরনের অসামরিক সরকার কি জনসাধারণ আর কখনো দেখেছে? বিনাভোটে সরকার গঠনের যে থিওরি ভারত দিয়েছে বলে প্রচলিত রয়েছে, সেই ভারতের পত্র-পত্রিকায়ই এই সরকারের সমালোচনা এখন করা হচ্ছে। কলামিস্ট রামচন্দ্র গুহ গত মাসে বাংলাদেশ সফর করে গত ৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টেলিগ্রাফে একটি উপসম্পাদকীয় লেখেন। বেশ বড়সড় উপসম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। এক জায়গায় তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের যথেষ্ট জায়গা দিতে না চাওয়া। কিন্তু এখন নিয়তির পরিহাস হলো, সেই আওয়ামী লীগই এখন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ উপসম্পাদকীয়র আরেক অংশে রামচন্দ্র উপদেশ এবং উদাহরণ দিয়ে লিখেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার উপদেষ্টারা ভালো করবেন যদি তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন কায়েম করা অতীতের সরকারগুলোর ইতিহাসের সাথে নিজেদেরকে পরিচিত করান। নাৎসীরা মাত্র ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে, ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকার ফ্রিডম পার্টি- সবাই একদল শাসিত রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিল, কিন্তু কেউই মাত্র কয়েক বছরের বেশি টেকেনি। সে জন্যই একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু যে সময়টা তারা ক্ষমতায় থাকে তখন ব্যাপক বিনাশ সাধন করে।’ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে একজন বিদেশি কলামিস্টের বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নামক রীতি-নীতির অবস্থা কি। তবে দলকানা লোক বাদে সাধারণ মানুষ এ ধরনের শাসনের ধরন-ধারণ বুঝলেও তাদের বলার মতো কোনো সুযোগ বা প্ল্যাটফর্ম নেই। যে বিরোধী দল বলবে, তারা নিজেরাই দৌড়ের উপর রয়েছে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচার মতো পরিস্থিতির মধ্যে তাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে বলতে যায়, তবে তাকে অবধারিতভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের সমালোচনা করা যেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তেমনি একটি স্তাবক শ্রেণীও সৃষ্টি হয়েছে। সরকারও চায় স্তাবক শ্রেণী শুধু তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক। হচ্ছেও তাই। অধিকাংশ টেলিভিশন টক শো দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ ও তার সরকারের সমালোচনা এবং পরামর্শমূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, তখন সাধারণ মানুষের কাছে তা তাদের কথা বলে প্রতিভাত হয়। ভিনদেশি খবরের উপর এ ধরনের নির্ভরশীলতা স্বৈরশাসকের আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, দেশের গণমাধ্যমের চেয়ে মানুষ বিবিসি বা বিদেশের অন্য কোনো চ্যানেলের খবরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এর কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সঠিক খবর দিলে একমাত্র এই মাধ্যমগুলোই দিতে পারে। জনসাধারণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্যে যে সম্মান ও গৌরব থাকে, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে তার স্বাদ পাওয়া যায় না। যিনি বিনাভোটে নির্বাচিত হন, তার আত্মসম্মানের যেমন হানি হয়, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কারণ জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই একজন প্রার্থীর আচার-আচরণ, কথাবার্তা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, একাগ্রতাসহ তিনি যে একজন জনদরদী ও ভালো মানুষ এ বিষয়টির পরীক্ষা হয়। বিজয়ী হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ পরীক্ষা ছাড়া যিনি নির্বাচিত হন, দেখা গেছে তাদের কেউ কেউ জনসাধারণের সাথে এমন আচরণ করেন যে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়। আমরা ইতোমধ্যে লালমনিরহাটের এক এমপিকে শিশুকে গুলি করতে দেখেছি। ময়মনসিংহের এক এমপির এইটটি বাহিনীর তা-বের কথা শুনেছি। কক্সবাজারের এক এমপির ড্রাগ লর্ড হওয়ার খবর দেখেছি। এছাড়া আরও অনেক আসনের এমপির গডফাদার খেতাব পাওয়া থেকে শুরু করে তাদের কুকীর্তির খবর শোনা যায়। স্ব স্ব এলাকায় তারা স্বৈরশাসকের মতোই আচরণ করে চলেছেন। জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হতে না পারার ঝাল যেন তারা মিটিয়ে চলেছেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে তাদের কারো কারো এমন আচরণ লক্ষ্য করা গেছে যে, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে তাদেরই মতো বিনাভোটে নির্বাচিত করার সবধরনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে রেখেছেন। এজন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে না দেয়াসহ এলাকা ছাড়া করার ব্যবস্থাও করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যতভাবে ব্যবহার করা যায়, তাই করছেন। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রথমবারের মতো কোনো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার ঘোষণা যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এই ঘোষণা শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের আচরণকে যেন উগ্র করে তুলেছে। এর মূল কারণ হতে পারে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়। কারণ শাসক দলের সামনে উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ধাপে ধাপে করা উপজেলা নির্বাচনে তারা দেখেছে, শুরুর দিকের ধাপগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থীরা বিপুল বিজয় অর্জন করতে থাকে। শাসক দলের প্রার্থীরা কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছে না। কাজেই নো ফেয়ার গেইম। বিরোধী দলের বিজয় রথ থামাতে হবে এবং তাদের জনসমর্থন নেই- এ কথা প্রমাণ করতেই হবে। করেছেও তাই। তাদের মনোভাব এমন ছিল, এতে কিছুদিন হয়তো সমালোচনা হবে, তাতে কি! যত দিন যাবে এসব সমালোচনা একসময় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে, বিজয় তো থেকে যাবে। আর এবারের পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়া তো আরও বড় ব্যাপার। এখানে দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। এই মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কাজেই যতই সমালোচনা হোক, আমরাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল- এ কথা প্রমাণ করতে হবে। এজন্য যা করার প্রয়োজন, তাই করতে হবে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের ভাষায় ‘বিশেষ ষড়যন্ত্র’ বা ‘অদৃশ্য প্রভাব’-এর মাধ্যমে তাদের অনেক প্রার্থীর নমিনেশন বাতিল করা হয়েছে। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দলের অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পথে। ফেনীতে ইতোমধ্যে ৩৩ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে গেছে। সেখানে মেয়রও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছে। চাঁদপুরে দুই পৌরসভাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায়ও শাসক দলের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পথে। অর্থাৎ নমিনেশন যাচাই-বাছাইকালেই বিরোধী দলের কিছু প্রার্থীকে ‘সাইজ’ করে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি বেশ ভালোভাবেই চর্চিত হয়েছে। আর মূল নির্বাচনের সময় কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা অনুমান করা কারো পক্ষে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। অবশ্য ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফল কি হবে, তা সবাই জানেন। তার অর্থ হচ্ছে, তারা মনে করছে নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা ঠিক করে রাখা হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে নির্বাচনের পর দেখা যাবে, শাসক দলের বিপুল জয়জয়কার এবং দেশবাসীর সামনে বলা হবে, এই যে দেখেন আমরা কত জনপ্রিয়! বিরোধী দলের কোনো জনসমর্থন নেই। দেখা যাবে টেলিভিশন টকশোগুলোতেও এ ধরনের নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য বশংবদ টকারদের দলে দলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বিরোধী দলের মুণ্ডুপাত করে উপসংহারে বলবে, এর চেয়ে ভালো নির্বাচন পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি। অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিনাভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যেতে পারে!
অনেকেই বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। দেশের মানুষকে রাজনীতির প্রতি অনীহার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তাদের এ কথার প্রতিফলন শাসক দলের কিছু নীতিনির্ধারকের কথায়ও প্রকাশিত হয়েছে। গত রোববার একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে থমকে থাকা রাজনৈতিক পরিবেশ চাঙ্গা করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এজন্য বিএনপিকে প্রয়োজনীয় ‘ছাড়’ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা এ কথাও বলেন, ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দেশে তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। তাই পৌরসভার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে চায়। শাসক দলের নীতিনির্ধারকদের ছাড় দেয়ার এই কথা থেকেই বোঝা যায়, দেশে শাসক দল ছাড়া বিরোধী দলের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধী দলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অথচ এই শাসক দল যখন ২০০৯ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে ক্ষমতাসীন হয়, তখনও কিন্তু বিরোধী দলের স্বাভাবিক রাজনীতি করার অবারিত সুযোগ ছিল। তারা মিছিল-মিটিং করতে পারত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সে সুযোগ কমে গেছে এবং বিরোধী দলের কর্মকা- ঘরবন্দী করে ফেলা হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারে না। তারা কর্তৃত্ববাদী হয় এবং জনসাধারণের ভোটের মর্ম বেমালুম হয়ে যায়। গণতন্ত্র কখনোই এ ধরনের পরিস্থিতি সমর্থন করে না। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, বিরোধী দল যেমন রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্বের মধ্যে আটকে পড়েছে, তেমনি শাসক দলও বিনাভোটের অপবাদের মধ্যে আটকে রয়েছে। এই দুই ক্ষেত্র থেকে বের হয়ে আসার পথ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। শাসক দলের নীতিনির্ধারকরা যেমন উপলব্ধি করতে পারছে বিরোধী দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন, তেমনি পৌর নির্বাচনে তাদের উপলব্ধি প্রয়োগের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বা ছোট নির্বাচন হলেও, এর মাধ্যমে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ারও পথ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এ পথ মসৃণ করার জন্য শাসকদলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটে কিনা।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চললে তা হয় অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। তাই এখনই সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হওয়ার এক বিরল ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর ঘটবে কিনা, তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্রকামী দেশ হলে, তা ঘটবে না বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচন সম্পর্কে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, বিশ্বের যেসব মানুষ জানে তারা কোনোদিনই বিস্মৃত হবে না। সাধারণত মানুষ বিরল সব ঘটনার প্রতি আগ্রহী হয় বেশি এবং তা মনে রাখে। ডিসকভারি চ্যানেলটি এ কারণেই বেশি জনপ্রিয়। প্রশ্ন আসতে পারে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের ঘটনা তো আমাদের দেশে অহরহ ঘটেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটে। তাহলে বিরল হবে কেন এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বিরল না হলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বিরল। ৫ জানুয়ারির আগে ঘটেনি। এটিই বিশ্বের প্রথম বিনাভোটে সরকার গঠন করার নির্বাচন। তবে বাংলাদেশে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও গণতান্ত্রিক অন্য কোনো দেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ বাংলাদেশকে বলা হয়, সব সম্ভাবনার দেশ। এখানের রাজনীতিতে মানুষের ধারণার বাইরে ঘটে না, এমন কিছু নেই। যেমন বাংলাদেশে সামরিক শাসন সম্পর্কে মানুষ জানে। কোনো এক সন্ধ্যায় বা রাতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে- এ ধরনের ঘটনা তাদের কাছে পরিচিত। তবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটেছে, তা তাদের কল্পনার মধ্যে ছিল না। সামরিক শাসন যে সিভিল শাসনকে সামনে রেখে পেছনে থেকে কাজ করতে পারে, তা মানুষ আগে তো দেখেইনি, কল্পনাও করেনি। এ ধরনের সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন একটি অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের সামনে যে আরও বড় ধরনের বিস্ময় জাগানিয়া ঘটনা অপেক্ষা করছে, তা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কি তারা কল্পনা করেছিল? কেউ কি ভেবেছিল, বিনাভোটে সরকার গঠন হয়ে যেতে পারে। তারাই ভাবতে পারে, যারা অত্যন্ত জটিল ও কুটিল টাইপের এবং স্বাভাবিক চিন্তাধারার মানুষ নন। গণতন্ত্রমনস্ক কোনো মানুষের মনে এ ধরনের চিন্তা আসতেই পারে না। অবশ্য লেবাসধারী হলে তা হতে পারে। যাই হোক, দুটি ভিন্ন সালের জানুয়ারি মাসের দুটি বিরল ঘটনা মানুষের মনে যে চিরদিন গেঁথে থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে দেশটি যেহেতু বাংলাদেশ, তাই সামনে যে মানুষের জন্য আরও বিস্ময়কর কোনো ঘটনা অপেক্ষা করছে না, তা নিশ্চিত করে এখন আর বলা যায় না।
এমন একটি কথা প্রচলিত রয়েছে- বিনাভোটে যে সরকার গঠন করা যায়, এই কুবুদ্ধির মাস্টার মাইন্ড ছিল ভারত। তার কূটচালে সরকার সে সময় নির্বাচন করেছিল। পরবর্তীতে বিনাভোটের সেই কালচার শাসক দল বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছে এবং তা প্রয়োগ করে চলেছে। এর ফলে এখন অনেকেই বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার আর সামরিক শাসকের সরকারের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, সামরিক শাসকও বিনাভোটে ক্ষমতায় আসে। জনসাধারণের ভোট নেয়ার প্রয়োজনীয়তা থোড়াই কেয়ার করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট দিতে পারেনি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। নির্বাচনটি ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এর ফলে সচেতন নাগরিকদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, আচরণের দিক থেকে বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার সামরিক শাসকের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। এর কারণ হচ্ছে, এ ধরনের সরকারের সামনে সাংবিধানিক বৈধতার ছুঁতা থাকে। জনমতের তোয়াক্কা না থাকলেও সাংবিধানিক ও আইনগত বৈধতা থাকে। এ ধরনের সরকারকে হাফব্রিড বলা যেতে পারে। না গণতান্ত্রিক, না স্বৈরতান্ত্রিক। ফলে এরা ভালোও হতে পারে আবার ভয়ঙ্করও হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, এখানে বিরোধী দলের রাজনীতি করার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। যত ধরনের অপবাদ আছে প্রতিপক্ষের উপর তা চাপিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। মাঠে শুধু সরকারি দল ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সামরিক সরকার যেহেতু নিজেও জানে সে বৈধভাবে আসেনি, তাই নিপীড়ন-নির্যাতন চালালেও তাতে মিনিমাম একটা সীমা থাকে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে-ময়দানে নামতে পারে এবং আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতে পারে। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে। তবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকারের নিপীড়ন যে কতটা ভয়াবহ ও নির্মম হতে পারে, তা এখন বিরোধী দলগুলো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মাঠে নামলেই তারা সহিংসতা করবে, এ অজুহাতে তাদের নামতেই দেয়া হচ্ছে না। এ ধরনের অসামরিক সরকার কি জনসাধারণ আর কখনো দেখেছে? বিনাভোটে সরকার গঠনের যে থিওরি ভারত দিয়েছে বলে প্রচলিত রয়েছে, সেই ভারতের পত্র-পত্রিকায়ই এই সরকারের সমালোচনা এখন করা হচ্ছে। কলামিস্ট রামচন্দ্র গুহ গত মাসে বাংলাদেশ সফর করে গত ৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টেলিগ্রাফে একটি উপসম্পাদকীয় লেখেন। বেশ বড়সড় উপসম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। এক জায়গায় তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের যথেষ্ট জায়গা দিতে না চাওয়া। কিন্তু এখন নিয়তির পরিহাস হলো, সেই আওয়ামী লীগই এখন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ উপসম্পাদকীয়র আরেক অংশে রামচন্দ্র উপদেশ এবং উদাহরণ দিয়ে লিখেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার উপদেষ্টারা ভালো করবেন যদি তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন কায়েম করা অতীতের সরকারগুলোর ইতিহাসের সাথে নিজেদেরকে পরিচিত করান। নাৎসীরা মাত্র ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে, ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকার ফ্রিডম পার্টি- সবাই একদল শাসিত রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিল, কিন্তু কেউই মাত্র কয়েক বছরের বেশি টেকেনি। সে জন্যই একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু যে সময়টা তারা ক্ষমতায় থাকে তখন ব্যাপক বিনাশ সাধন করে।’ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে একজন বিদেশি কলামিস্টের বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নামক রীতি-নীতির অবস্থা কি। তবে দলকানা লোক বাদে সাধারণ মানুষ এ ধরনের শাসনের ধরন-ধারণ বুঝলেও তাদের বলার মতো কোনো সুযোগ বা প্ল্যাটফর্ম নেই। যে বিরোধী দল বলবে, তারা নিজেরাই দৌড়ের উপর রয়েছে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচার মতো পরিস্থিতির মধ্যে তাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে বলতে যায়, তবে তাকে অবধারিতভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের সমালোচনা করা যেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তেমনি একটি স্তাবক শ্রেণীও সৃষ্টি হয়েছে। সরকারও চায় স্তাবক শ্রেণী শুধু তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক। হচ্ছেও তাই। অধিকাংশ টেলিভিশন টক শো দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ ও তার সরকারের সমালোচনা এবং পরামর্শমূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, তখন সাধারণ মানুষের কাছে তা তাদের কথা বলে প্রতিভাত হয়। ভিনদেশি খবরের উপর এ ধরনের নির্ভরশীলতা স্বৈরশাসকের আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, দেশের গণমাধ্যমের চেয়ে মানুষ বিবিসি বা বিদেশের অন্য কোনো চ্যানেলের খবরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এর কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সঠিক খবর দিলে একমাত্র এই মাধ্যমগুলোই দিতে পারে। জনসাধারণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্যে যে সম্মান ও গৌরব থাকে, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে তার স্বাদ পাওয়া যায় না। যিনি বিনাভোটে নির্বাচিত হন, তার আত্মসম্মানের যেমন হানি হয়, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কারণ জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই একজন প্রার্থীর আচার-আচরণ, কথাবার্তা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, একাগ্রতাসহ তিনি যে একজন জনদরদী ও ভালো মানুষ এ বিষয়টির পরীক্ষা হয়। বিজয়ী হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ পরীক্ষা ছাড়া যিনি নির্বাচিত হন, দেখা গেছে তাদের কেউ কেউ জনসাধারণের সাথে এমন আচরণ করেন যে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়। আমরা ইতোমধ্যে লালমনিরহাটের এক এমপিকে শিশুকে গুলি করতে দেখেছি। ময়মনসিংহের এক এমপির এইটটি বাহিনীর তা-বের কথা শুনেছি। কক্সবাজারের এক এমপির ড্রাগ লর্ড হওয়ার খবর দেখেছি। এছাড়া আরও অনেক আসনের এমপির গডফাদার খেতাব পাওয়া থেকে শুরু করে তাদের কুকীর্তির খবর শোনা যায়। স্ব স্ব এলাকায় তারা স্বৈরশাসকের মতোই আচরণ করে চলেছেন। জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হতে না পারার ঝাল যেন তারা মিটিয়ে চলেছেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে তাদের কারো কারো এমন আচরণ লক্ষ্য করা গেছে যে, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে তাদেরই মতো বিনাভোটে নির্বাচিত করার সবধরনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে রেখেছেন। এজন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে না দেয়াসহ এলাকা ছাড়া করার ব্যবস্থাও করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যতভাবে ব্যবহার করা যায়, তাই করছেন। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রথমবারের মতো কোনো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার ঘোষণা যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এই ঘোষণা শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের আচরণকে যেন উগ্র করে তুলেছে। এর মূল কারণ হতে পারে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়। কারণ শাসক দলের সামনে উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ধাপে ধাপে করা উপজেলা নির্বাচনে তারা দেখেছে, শুরুর দিকের ধাপগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থীরা বিপুল বিজয় অর্জন করতে থাকে। শাসক দলের প্রার্থীরা কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছে না। কাজেই নো ফেয়ার গেইম। বিরোধী দলের বিজয় রথ থামাতে হবে এবং তাদের জনসমর্থন নেই- এ কথা প্রমাণ করতেই হবে। করেছেও তাই। তাদের মনোভাব এমন ছিল, এতে কিছুদিন হয়তো সমালোচনা হবে, তাতে কি! যত দিন যাবে এসব সমালোচনা একসময় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে, বিজয় তো থেকে যাবে। আর এবারের পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়া তো আরও বড় ব্যাপার। এখানে দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। এই মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কাজেই যতই সমালোচনা হোক, আমরাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল- এ কথা প্রমাণ করতে হবে। এজন্য যা করার প্রয়োজন, তাই করতে হবে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের ভাষায় ‘বিশেষ ষড়যন্ত্র’ বা ‘অদৃশ্য প্রভাব’-এর মাধ্যমে তাদের অনেক প্রার্থীর নমিনেশন বাতিল করা হয়েছে। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দলের অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পথে। ফেনীতে ইতোমধ্যে ৩৩ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে গেছে। সেখানে মেয়রও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছে। চাঁদপুরে দুই পৌরসভাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায়ও শাসক দলের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পথে। অর্থাৎ নমিনেশন যাচাই-বাছাইকালেই বিরোধী দলের কিছু প্রার্থীকে ‘সাইজ’ করে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি বেশ ভালোভাবেই চর্চিত হয়েছে। আর মূল নির্বাচনের সময় কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা অনুমান করা কারো পক্ষে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। অবশ্য ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফল কি হবে, তা সবাই জানেন। তার অর্থ হচ্ছে, তারা মনে করছে নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা ঠিক করে রাখা হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে নির্বাচনের পর দেখা যাবে, শাসক দলের বিপুল জয়জয়কার এবং দেশবাসীর সামনে বলা হবে, এই যে দেখেন আমরা কত জনপ্রিয়! বিরোধী দলের কোনো জনসমর্থন নেই। দেখা যাবে টেলিভিশন টকশোগুলোতেও এ ধরনের নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য বশংবদ টকারদের দলে দলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বিরোধী দলের মুণ্ডুপাত করে উপসংহারে বলবে, এর চেয়ে ভালো নির্বাচন পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি। অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিনাভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যেতে পারে!
অনেকেই বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। দেশের মানুষকে রাজনীতির প্রতি অনীহার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তাদের এ কথার প্রতিফলন শাসক দলের কিছু নীতিনির্ধারকের কথায়ও প্রকাশিত হয়েছে। গত রোববার একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে থমকে থাকা রাজনৈতিক পরিবেশ চাঙ্গা করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এজন্য বিএনপিকে প্রয়োজনীয় ‘ছাড়’ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা এ কথাও বলেন, ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দেশে তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। তাই পৌরসভার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে চায়। শাসক দলের নীতিনির্ধারকদের ছাড় দেয়ার এই কথা থেকেই বোঝা যায়, দেশে শাসক দল ছাড়া বিরোধী দলের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধী দলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অথচ এই শাসক দল যখন ২০০৯ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে ক্ষমতাসীন হয়, তখনও কিন্তু বিরোধী দলের স্বাভাবিক রাজনীতি করার অবারিত সুযোগ ছিল। তারা মিছিল-মিটিং করতে পারত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সে সুযোগ কমে গেছে এবং বিরোধী দলের কর্মকা- ঘরবন্দী করে ফেলা হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারে না। তারা কর্তৃত্ববাদী হয় এবং জনসাধারণের ভোটের মর্ম বেমালুম হয়ে যায়। গণতন্ত্র কখনোই এ ধরনের পরিস্থিতি সমর্থন করে না। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, বিরোধী দল যেমন রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্বের মধ্যে আটকে পড়েছে, তেমনি শাসক দলও বিনাভোটের অপবাদের মধ্যে আটকে রয়েছে। এই দুই ক্ষেত্র থেকে বের হয়ে আসার পথ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। শাসক দলের নীতিনির্ধারকরা যেমন উপলব্ধি করতে পারছে বিরোধী দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন, তেমনি পৌর নির্বাচনে তাদের উপলব্ধি প্রয়োগের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বা ছোট নির্বাচন হলেও, এর মাধ্যমে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ারও পথ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এ পথ মসৃণ করার জন্য শাসকদলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটে কিনা।
এইচ এম আব্দুর রহিম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন