দেশ ও দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে। সবখানে আতংক। সহিংসতা সর্বত্র। মুখোমুখি দুই পক্ষ। ছাড় দেয়ার মানসিকতা কারো নেই। দেশ, জাতি ও অর্থনীতি গোল্লায় যাচ্ছে সে বিষয় ভাবার সময নেই। অস্থিরতা,আতংক ও উৎকণ্ঠার মুখে দেশের রাজনীতি চলছে । লাগাতার অবরোধ ও হরতালে গণন্তান্ত্রিক অধিকার সংকট সৃষ্টি করেছে। চারদিকে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। সেটা ভাবার বিষয় নয়। বর্তমান ভাবার বিষয় হচ্ছে ক্ষমতায় থাকতে হবে।
বিরোধী দলের টানা অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি চলছে। যা দেখে সরকারদলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে ভয়ংকর চিন্তা বাসা বেঁধেছে। সে চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। তবু তারা মুখে মুখে ঢালাওভাবে বলছে ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের ফেরিওয়ালারা নিজেদের বক্তেব্যই স্ববিরোধী হয়ে উঠছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাবি করেন, ‘আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট’। তিনি ঐ বৈঠকে আরো বলেন, ‘বর্তমানে যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রীয় নাশকতা’। তার শেষের কথাটি কি আগের কথাটার বিপরীত নয়?। মাননীয় শিল্পমন্ত্রীকে যদি বলি,আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই থাকে, তবে রাতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ কেন? টানা অবরোধ ও হরতালে সারা দেশে প্রতিটি থানায় পুলিশী টহল, তল্লাশি জোরদারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কেন? পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক, তাহলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রতি শুক্রবারে নেয়া হচ্ছে কেন? রাত ৯ টার পর মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ কেন? সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন,তখন উত্তেজিত হয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের তো মানবিকতা বলতে কিছু নেই। তাই একজন পরীক্ষার্থীর যদি কিছু হয়, তার দায় কার ওপর পড়বে? তাই শুক্রবার ছাড়া পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না’। খোদ অর্থমন্ত্রীই বলেছেন, ‘রাজধানীর বাইরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক’। শিল্পমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, দেশের কেমন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায়? স্বাভাবিকতার প্যারামিটারই বা কী ? দয়া করে বলবেন কি? তিনি যদি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকের পার্থক্যটা দেখান, তাহলে জনগণের পক্ষে বুঝা সহজ হবে।
আমাদের দেশে বড় রাজনৈতিক দল দু’টি। একটি দল ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অপর দলটি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে যা চলেছে, তা কখনোই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে বলেছেন। তিনি সংসদে আরো বলেন, ৫২ দিন অবরোধে এদেশে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বিএনপির দাবি, সরকার পেট্রোল বোমা দিয়ে বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চালাচ্ছে, ইতোমধ্যে অনেককে গুম-খুন করেছে। সুশীল সমাজ মনে করেন, দেশের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি। এ ক্ষতি থেকে আমরা বাঁচতে চাই। সরকারের এমন বক্তব্য কি স্বাভাবিকতা নির্দেশ করে? এছাড়া টানা অবরোধ ও হরতালে ৫২ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর কয়েক হাজার মামলা ও বিশ হাজার নেতা কর্মীকে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত,গুম,খুন হচ্ছে। পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষ আহত, নিহত,পঙ্গু ও গণগ্রেফতার হচ্ছে। এরপরও কি বলবেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ? তাই সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারের উচিত গণতন্ত্রের বিষয়টা স্বীকার করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হয় ৫ জানুয়ারি। সেই তারিখে ২০ দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করার জন্য মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন । কিন্তু সরকার ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেন নি। উপরন্তু ৩ জানুয়ারি থেকে বেগম জিয়াকে গুলশান অফিসে অবরোধ করে রাখেন। নিরূপায় হয়ে বেগম জিয়া ৫ জানুয়ারি বিকাল ৫ ঘটিকায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন। শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ঢাকাসহ সারা দেশে গণহারে গণগ্রেফতার। টানা অবরোধ ও হরতালে সারা দেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ অচল । পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার অবরোধ-হরতালকারীদের দমনে জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের,কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিজনের উপর কয়েকটি করে মামলা দেয়া হয়েছে। গত ২৬ মে ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। খালেদা জিয়াকে ঘ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করায় সারা বিশ্ব হতবাক হয়েছে।
দেশের পরিস্থিতি কোনোক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে না। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে । অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ‘অবরোধ-হরতাল’ অর্থনৈতিক পঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সভা-সেমিনার কিংবা গণমাধ্যমে ‘অবরোধ-হরতাল’ প্রতিরোধ করার নিমিত্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৫ জানুয়ারি হরতাল-অবরোধসহ বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘নারকীয়’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন- ‘বর্তমান পরিস্থিতি যে দীর্ঘায়িত হবে, এটি আমরা বুঝতে পারিনি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক দাবি করেন ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। ঢাকার জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে’। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এরপর বিএনপি আন্দোলনের নামও নিতে পারবে না।’ আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কথা দিলাম আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। জনজীবনের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা হবে।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন- ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। যেকোন মূল্যে মহাসড়ক সচল করা হবে।’ গত ২২ জানুয়ারি সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মাগরিবের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে’। ২৩ জানুয়ারি আ’লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে’। ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে’।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও নেতারা বিভিন্ন বক্তৃতা, বিবৃতিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
দেশ অবরোধ-হরতাল মুক্ত নয়। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ না ‘অস্বাভাবিক’ জানার জন্য আমরা একটু চিন্তা করি। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলে দফায় দফায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ,রাজধানীর বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার ক্লাস পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি করা হচ্ছে ,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবিতে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন, দগ্ধ মানুষের সংখ্যা বার্ন ইউনিটে ক্রমেই বাড়ছে, ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে , প্রায়ই মিছিল হচ্ছে উচ্চ আদালত চত্বরে, কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেড়েছে, ৫০ দিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , নাশকতার মামলায় গৃহে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন হুকুমের আসামী করা হচ্ছে, কেন গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশ্ব সম্প্রদায় কেন বাংলাদেশ নিয়ে সংলাপের আহ্বান করছে। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে, নাশকতা ঠেকাতে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযান চলছে , নাশকতা ঠেকাতে গত ২২ জানুয়ারি সরকার মোটরসাইকেলে সঙ্গী বহন নিষিদ্ধ করেছে, জাতিসংঘের মহাসচিব দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন, সরকারের গোয়েন্দা শাখা বোমাবাজদের তালিকা করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকবাদীরা গুঁজামিল আর ডিজিটাল বাজি করলেও বিভিন্ন রাজনৈতি দল, মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক মহলসহ সুশীল সমাজের সবাই স্বীকার করছেন যে, দেশে রাজনৈতিক অবস্থা চরম সঙ্কটময় অবস্থায় রয়েছে। টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি অবস্থা মারাত্মক ভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। এই পরিস্থিতি কারও জন্যই কাম্য নয়। এই দেশ আমাদের । যা রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করেছি। ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ক্ষতি করা মানে, আমাদের সবারই ক্ষতি করা। তাই সঠিক গণতন্ত্রের বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষা পেলে সব কিছু এমনিভাবে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে মিশে বুদ্ধি, চিন্তা ও চেতনার দিয়ে যদি একটা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,তাহলে সবার মাঝে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। এই কামনাই করি।
বিরোধী দলের টানা অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি চলছে। যা দেখে সরকারদলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে ভয়ংকর চিন্তা বাসা বেঁধেছে। সে চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। তবু তারা মুখে মুখে ঢালাওভাবে বলছে ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের ফেরিওয়ালারা নিজেদের বক্তেব্যই স্ববিরোধী হয়ে উঠছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাবি করেন, ‘আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট’। তিনি ঐ বৈঠকে আরো বলেন, ‘বর্তমানে যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রীয় নাশকতা’। তার শেষের কথাটি কি আগের কথাটার বিপরীত নয়?। মাননীয় শিল্পমন্ত্রীকে যদি বলি,আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই থাকে, তবে রাতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ কেন? টানা অবরোধ ও হরতালে সারা দেশে প্রতিটি থানায় পুলিশী টহল, তল্লাশি জোরদারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কেন? পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক, তাহলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রতি শুক্রবারে নেয়া হচ্ছে কেন? রাত ৯ টার পর মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ কেন? সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন,তখন উত্তেজিত হয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের তো মানবিকতা বলতে কিছু নেই। তাই একজন পরীক্ষার্থীর যদি কিছু হয়, তার দায় কার ওপর পড়বে? তাই শুক্রবার ছাড়া পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না’। খোদ অর্থমন্ত্রীই বলেছেন, ‘রাজধানীর বাইরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক’। শিল্পমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, দেশের কেমন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায়? স্বাভাবিকতার প্যারামিটারই বা কী ? দয়া করে বলবেন কি? তিনি যদি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকের পার্থক্যটা দেখান, তাহলে জনগণের পক্ষে বুঝা সহজ হবে।
আমাদের দেশে বড় রাজনৈতিক দল দু’টি। একটি দল ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অপর দলটি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে যা চলেছে, তা কখনোই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে বলেছেন। তিনি সংসদে আরো বলেন, ৫২ দিন অবরোধে এদেশে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বিএনপির দাবি, সরকার পেট্রোল বোমা দিয়ে বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চালাচ্ছে, ইতোমধ্যে অনেককে গুম-খুন করেছে। সুশীল সমাজ মনে করেন, দেশের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি। এ ক্ষতি থেকে আমরা বাঁচতে চাই। সরকারের এমন বক্তব্য কি স্বাভাবিকতা নির্দেশ করে? এছাড়া টানা অবরোধ ও হরতালে ৫২ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর কয়েক হাজার মামলা ও বিশ হাজার নেতা কর্মীকে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত,গুম,খুন হচ্ছে। পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষ আহত, নিহত,পঙ্গু ও গণগ্রেফতার হচ্ছে। এরপরও কি বলবেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ? তাই সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারের উচিত গণতন্ত্রের বিষয়টা স্বীকার করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হয় ৫ জানুয়ারি। সেই তারিখে ২০ দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করার জন্য মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন । কিন্তু সরকার ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেন নি। উপরন্তু ৩ জানুয়ারি থেকে বেগম জিয়াকে গুলশান অফিসে অবরোধ করে রাখেন। নিরূপায় হয়ে বেগম জিয়া ৫ জানুয়ারি বিকাল ৫ ঘটিকায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন। শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ঢাকাসহ সারা দেশে গণহারে গণগ্রেফতার। টানা অবরোধ ও হরতালে সারা দেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ অচল । পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার অবরোধ-হরতালকারীদের দমনে জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের,কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিজনের উপর কয়েকটি করে মামলা দেয়া হয়েছে। গত ২৬ মে ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। খালেদা জিয়াকে ঘ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করায় সারা বিশ্ব হতবাক হয়েছে।
দেশের পরিস্থিতি কোনোক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে না। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে । অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ‘অবরোধ-হরতাল’ অর্থনৈতিক পঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সভা-সেমিনার কিংবা গণমাধ্যমে ‘অবরোধ-হরতাল’ প্রতিরোধ করার নিমিত্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৫ জানুয়ারি হরতাল-অবরোধসহ বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘নারকীয়’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন- ‘বর্তমান পরিস্থিতি যে দীর্ঘায়িত হবে, এটি আমরা বুঝতে পারিনি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক দাবি করেন ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। ঢাকার জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে’। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এরপর বিএনপি আন্দোলনের নামও নিতে পারবে না।’ আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কথা দিলাম আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। জনজীবনের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা হবে।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন- ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। যেকোন মূল্যে মহাসড়ক সচল করা হবে।’ গত ২২ জানুয়ারি সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মাগরিবের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে’। ২৩ জানুয়ারি আ’লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে’। ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে’।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও নেতারা বিভিন্ন বক্তৃতা, বিবৃতিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
দেশ অবরোধ-হরতাল মুক্ত নয়। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ না ‘অস্বাভাবিক’ জানার জন্য আমরা একটু চিন্তা করি। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলে দফায় দফায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ,রাজধানীর বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার ক্লাস পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি করা হচ্ছে ,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবিতে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন, দগ্ধ মানুষের সংখ্যা বার্ন ইউনিটে ক্রমেই বাড়ছে, ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে , প্রায়ই মিছিল হচ্ছে উচ্চ আদালত চত্বরে, কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেড়েছে, ৫০ দিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , নাশকতার মামলায় গৃহে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন হুকুমের আসামী করা হচ্ছে, কেন গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশ্ব সম্প্রদায় কেন বাংলাদেশ নিয়ে সংলাপের আহ্বান করছে। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে, নাশকতা ঠেকাতে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযান চলছে , নাশকতা ঠেকাতে গত ২২ জানুয়ারি সরকার মোটরসাইকেলে সঙ্গী বহন নিষিদ্ধ করেছে, জাতিসংঘের মহাসচিব দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন, সরকারের গোয়েন্দা শাখা বোমাবাজদের তালিকা করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকবাদীরা গুঁজামিল আর ডিজিটাল বাজি করলেও বিভিন্ন রাজনৈতি দল, মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক মহলসহ সুশীল সমাজের সবাই স্বীকার করছেন যে, দেশে রাজনৈতিক অবস্থা চরম সঙ্কটময় অবস্থায় রয়েছে। টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি অবস্থা মারাত্মক ভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। এই পরিস্থিতি কারও জন্যই কাম্য নয়। এই দেশ আমাদের । যা রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করেছি। ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ক্ষতি করা মানে, আমাদের সবারই ক্ষতি করা। তাই সঠিক গণতন্ত্রের বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষা পেলে সব কিছু এমনিভাবে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে মিশে বুদ্ধি, চিন্তা ও চেতনার দিয়ে যদি একটা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,তাহলে সবার মাঝে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। এই কামনাই করি।
আসাদুজ্জামান আসাদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন