বুধবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

রক্তের এই হোলি খেলার শেষ কোথায়!


দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে হাজারো মানুষের মতো আমিও বিস্মিত। অন্যায়কারীরা অন্যায় করে যদিও পার পেয়ে যায়। সে কারণে ইতিহাস পিছনে থাকে না। ইতিহাস তার আপন মহিমায় সত্যের উন্মোচন সর্বদা জাতির সামনে প্রকাশ করে দেয়। হরতাল আর অবরোধের ৪৮ দিনে সারা দেশে যে অমানবিক রক্তপাত ঘটেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। রক্তের এই হোলি খেলার রাজনীতিতে দগ্ধ হচ্ছে নিরীহ মানুষ। পেট্রলবোমার নিষ্ঠুর আঘাতে পুড়ে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে মানুষের দেহ। বার্ন ইউনিটের বিভৎস মানুষের ছবি মিডিয়ায় প্রচারিত হলেও পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে যারা পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তাদের সংবাদ মিডিয়ায় সেভাবে প্রচারিত হয়নি। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ যেমন পেট্রলবোমার মতো জঘন্য অপরাধকে সমর্থন করতে পারে না। তেমনিভাবে গুম, খুন, অপহরণ, ক্রসফায়ায়ের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডেরও সমর্থন করা যায় না।
রক্তপাতের হোলি খেলার রাজনীতি আমরা কেউ চাই না। তার পরেও সারা দেশে আগুনের লেলিহান দাউ দাউ করে জ্বলছে দেশ। দেশের কোথাও আজ শান্তির লেশমাত্র নেই। সর্বত্র চলছে গুম, খুন, পেট্রলবোমা আর ক্রসফায়ারের মহাউৎসব। এই লেখাটি শুরু করছি ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথের স্মরণীয় একটি উক্তি দিয়ে - তিনি বলেছিলেন আমার প্রজাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা ভিন্ন আমার কাছে এই পৃথিবীর কোনো কিছুই মূল্যবান নয়। রাণী এলিজাবেথ আজ দুনিয়াতে নেই। কিন্তু তার এই সহানুভূতির আবেগ ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার চোখে স্মরণ করতেই হয়। অত্যাচারী জালেম নিষ্ঠুর শাসক হতে পড়াশোনা করা লাগে না একটু হিংসার পথ গ্রহণ করলেই হওয়া যায়। ইতিহাস সাক্ষী, রাজা বাদশারা যখনই ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে জনগণের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে ন্যায় অন্যায়ের ধার ধারেন নাই ঠিক তখনই প্রকৃতির তার আপন মহিমায় প্রতিশোধ নিয়ে জনগণকে মুক্তির পথের দিশা দিয়ে দেন। আর তখন জনগণও উপলব্ধি করে, দুঃসময় কারও জন্য চিরস্থায়ী হয় না।
চলমান হরতাল অবরোধের সহিংসতার হাত থেকে কারও মুক্তি নেই। জীবনের প্রয়োজনে চিন্তাহীনভাবে ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরে আসার গ্যারান্টি নেই বলেই চলে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভেতরে পার করতে হচ্ছে এক একটি দিন। পেট্রলবোমা বা ককটেলের আঘাতে পুড়ে যাওয়া মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ আর আহজারিতে বাংলার আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠেছে। মানুষ পুড়ছে,বার্ন ইউনিটে আসছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের যন্ত্রণাকে ছোট করে দেখার সুযোগ যেমন নেই, তেমনিভাবে যারা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের সান্তনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই। কত দেখা যায়? কত মেনে নেওয়া যায়? আর কতই বা লেখা যায়? নারকীয় এই পরিস্থিতির দায় যখন কেউ নিতে চায় না তখনই মনের মধ্যে একটি প্রশ্নই আসে- নিরপরাধ এই মানুষগুলোকে পুড়িয়ে কি গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়? সরকার প্রধান প্রায়ই বলেন আমি তো নির্বাচনের আগে তাদেরকে সংলাপের আহ্বান করেছি। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য আহ্বান করেছি। এমনকি বেগম জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতেও গিয়েছি। সবই সত্য কথা। তবে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন তা সবই তার র্কতৃত্ববাদের খায়েশ পূরণ করার প্রয়াসে। সংলাপ হবে, তবে প্রধানমন্ত্রীর বেধে দেয়া সময়ে। নির্বাচন হবে,তবে প্রধানমন্ত্রীরই অধীনে।শোক জানাতে গিয়েছেন সত্যি তবে খালেদা জিয়ার দেয়া সময়ে নয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ে। এর নাম যদি গণতন্ত্র হয় তাহলে স্বৈরতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কি হতে পারে? সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, বিচার মানি তালগাছ আমার। খবরের কাগজের শিরোনামে দেখার কথা ছিলো সুখী সমৃদ্ধ দেশের উন্নয়নের কথা তার পরির্বতে শিরোনামে দেখতে হয়েছে গুম,খুন,ক্রসফায়ারে মতো নাটকীয় বন্ধুক যুদ্ধের কথা।
নদীমাতৃক এই দেশের নদীর পানিতে ভাসছে অজ্ঞাত মানুষের পঁচা বিভৎস লাশ। এই লাশের বেঁচে থাকা স্বজনেরা অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনপাত করলেও কেউ বিচারের সান্ত¡নাটুকু দিতে পারছেন না। খুন করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া আজ মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, আমরা যারা ছিচকে চোর, পকেটমার বা ছিনতাইকারীকে হাতে না হাতে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে উচিত শিক্ষা দিই,তাঁদের অনেকে ক্রসফায়ায়ের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকে সমর্থন করছেন। দেশব্যাপী ফের গুম আতংকের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে গণগ্রেফতার। আন্দোলন দমাতে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আবার কোথাও কোথাও চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান। নেতাদের না পেয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের স্বজনদের। সারা দেশের কারগারগুলো বন্দীদের ভিড়ে ঠাসা ঠাসি হয়ে গেলেও কমতি নেই গ্রেফতারের। এই অবরোধ হরতালকে ঘিরে ১৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিপর্যস্ত আজ দেশ। বিপন্ন হচ্ছে মানবাধিকার। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ পেট্রলবোমায়,কেউ গুলিতে,কেউ বন্দুকযুদ্ধে। দেশের রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সারা দুনিয়া। সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু আওয়ামী সরকার সে পথে হাঁটছেন না। চলমান পরিস্থিতিকে কোনো ভাবে তারা রাজনৈতিক সংকট মনে করছেন না। সরকারের মন্ত্রী এমপিদের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে একই সুরে কথা বলছেন প্রজাতন্ত্রের নিয়োজিত কর্মকর্তারা। রাজনীতিবিদেরা যে ভাষায় কথা বলেন ঠিক একই ভাষায় তারা কথা বলতে শিখেছেন। তাদের এই অতিকথনের ভাষাকে জনগণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি।
টিভি পর্দায় শুধু একপক্ষের মুখই দেখা যাচ্ছে। তারাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিদের মতো করে একপেশে সব কিছু দেখছেন। দেশের হাজারো মানুষ আজ ভয়ে বাহিরে যেতে  পারছেন না। সেখানে সরকার এটাকে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হিসেবে। দেশের কোথায়ও তারা কোন আন্দোলন দেখছেন না। কিন্তু ক্ষমতার সিড়িঁকে আজীবন আকড়ে ধরার প্রয়াসে বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার সকল আয়োজনের এজেন্ডা হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশে নির্মূলের রাজনীতি এমন প্রকাশ্যে অতীতে এ জাতি দেখেনি। সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রকাশ্যেই যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর দেখামাত্র গুলি সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ বলেছেন,সমাজের কল্যাণ চিন্তাই যার লক্ষ্য হওয়া উচিত তিনি একি বললেন! বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তিনি আগেই দেশবাসীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে এবার বললেন বেগম খালেদা জিয়াকে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া উচিত। সকলের মনে থাকার কথা জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের উক্তিটি। তিনিই প্রথম গুলি করার প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বুকে গুলি চালানোর জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। এর পর বিভিন্ন মহল থেকে চরম ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি-হুশিয়ারি একের পর এক আসতে থাকে।একদিকে হুংকার অন্যদিকে হরতাল অবরোধ। চারদিকে দাউ দাউ করে জলছে বাস ট্রাক সহ নানাবিধ যানবাহন। বাতাসে প্রবাহিত হচ্ছে পোড়া মানুষের গন্ধ। নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম। চলছে দমন পীড়নের অভিযান। ঘর থেকে বের হলে পেট্রোল বোমায় বা আগুনে দগ্ধ হওয়ার আতংক। ঘরে থাকলে গুম,গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারের আতংক। একটু স্বস্তি নিরাপত্তার প্রত্যাশায় ঠিকানা খুঁজছে সবাই। কিন্তু কোথাও যেন তাদের নেই ঠাঁই। আছে শুধূ ভয় ভীতি আর গুলির ঝনঝনানির বিকট শব্দ। রাজনীতির এই শাখের করাতে জিম্মি অসহায় সাধারণ মানুষ। এই ভয়াবহ আতংক ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে সবাই পরিত্রাণ চায়।
মিডিয়ার সংবাদে বিভংসতার ছবি দেখে কারও পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব না। তারপরেও মিডিয়ার সংবাদের বেশির ভাগ সময়ই বার্ন ইউনিটের দগ্ধ মানুষের সংবাদ দেশের মানুষকে দেখতে হয়েছে। এই হরতাল অবরোধ কেউ পছন্দ করে না। তারপরেও রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হরতাল অবরোধকে। বার্ন ইউনিটের বিভৎসতার ছবি আমার মনকে যেমন কষ্ট দেয়,তেমনিভাবে বন্ধুকযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনা আমাকে আসত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা একবারের জন্য একটু ভেবে দেখেনি ওই বার্ন ইউনিটের পেছনে কি কারণ রয়েছে? পেট্রলবোমার আঘাতে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলো কি কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি?
সব ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় শক্তির বলে বিরোধী দল-মত দমনের চেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ-সংঘাত সৃষ্টি করা পরিণতি দেশ ও জনগণের জন্য কখনোই কল্যাণকর হয় না। গত প্রায় এক মাসে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় ২৭-৩০ জনের বেশী। প্রথম আলোর ১৭ তারিখের পত্রিকায় শিরোনামে ওঠে এসেছে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তাঁরা কেউ দিনমজুর,কেউ দোকানি,কেউ ভ্রাম্যমাণ খেলনা বিক্রেতা। একজন প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও রয়েছেন। হাসপাতালের ভর্তির পর এঁদের তিনজনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। আহত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ,কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ তাঁদের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে। এই অপরাধ গুলো রাষ্ট্রের কেউ দেখেন না। আইনের পোষাকের জোরে যারা এই কাজগুলো করছেন তাদের বিবেকের কাছে একটি প্রশ্ন করতে খুবই ইচ্ছে করছে- বিনা কারণে যাদেরকে গুলি করছেন তারা তো আপনার আমার মতই মানুষ। আপনি কি পারতেন শত অপরাধ করলেও আপনার প্রিয় ভাইটিকে গুলি করতে? আমরা মনে করি দেশের প্রচলিত আইনে প্রত্যেকটি অপরাধীর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা না করে উল্টোপথে পরিচালিত করছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে। যে আওয়ামী সরকার ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্রসফায়ার বন্ধের কথা বলেছিল,আজ তারাই হয়েছে বন্ধুকযুদ্ধের প্রবর্তক। হত্যা আরও হত্যা ডেকে আনে এই সত্য কথাটি হয়ত তারা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা ভুলে যেতে পারি না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সত্যকে আমরা মিথ্যের চাঁদরে ঢেকে ফেলে দিয়েছি। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সৎ সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি। মিডিয়াকে বলা হয় জাতির আয়না। সে আয়নাতে যখন একপক্ষের ছবি ভেসে ওঠে আরেক পক্ষের ছবি লুকায়িত থাকে তখন আর সত্য উন্মোচিত হতে পারে না। সরকারপক্ষ শুধুমাত্র পেট্রলবোমার সহিংসতা দেখতে পান। কিন্তু যারা ক্রসফায়ার বা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে নির্বিকার। যারা পেট্রলবোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন তাদের ক্ষতি কোন কিছু দিয়ে পূরণ হবার নয়। অনুরূপভাবে যারা তথাকথিত বন্ধুক যুদ্ধে পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে তাদের ক্ষতিও কোনো দিন পূরণ হবার নয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে আলেকজান্ডার দি গ্রেটকে মানুষেরা ভুলে যেতে পারে কিন্তু তার সে সহানুভূতির ইতিহাস ভুলে যেতে পারে না। আলেকজান্ডার যখন ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতবর্ষে প্রবেশ করলেন,সেই সময় ভারতবর্ষে ছিল অসংখ্য ছোট বড় রাষ্ট্র। কারোর সাথেই কারোর তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না। প্রত্যেকেই পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হত। প্রতিবেশী সমস্ত রাজাই আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নিল। শুধুমাত্র একজন রাজা আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করতে অস্বীকার করলেন। তিনি হলেন রাজা পুরু। আলেকজান্ডার সরাসরি শত্রু সৈন্যদের মুখোমুখি হতে চাইলেন না। তিনি গোপনে অন্য পথ পাড়ি দিয়ে নদী পার হয়ে পুরুকে আক্রমণ করলেন। পুরু ও তাঁর সৈন্যবাহিনী অসাধারণ বীরত্ব প্রর্দশন করলেও আলেকজান্ডারের দক্ষ বাহিনীর কাছে পরাজয় বরণ করতে হল। অবশেষে আহত হয়ে বন্দী হলেন রাজা পুরু। তাঁকে নিয়ে আসা হল আলেকজান্ডারের কাছে। তিনি শৃঙ্খলিত পুরুকে জিজ্ঞাসিত করলেন। আপনি আমার কাছে কি রকম ব্যবহার আশা করেন? রাজা পুরু জবাব দিলেন। একজন রাজা অন্য রাজার সঙ্গে যে ব্যবহার করেন,আমিও সেই ব্যবহার আশা করছি। রাজা পুরুর বীরত্ব,তাঁর নির্ভীক উত্তর শুনে এতখানি মুগ্ধ হলেন আলেকজান্ডার অবশেষে মুক্তি দিয়ে শুধু তাঁর রাজ্যই ফিরিয়ে দিলেন না,বন্ধুত্ব স্থাপন করে আরো কিছু অঞ্চল উপহার দিলেন। আলেকজান্ডার আজ নেই কিন্তু তাঁর সহানুভূতির সেই ইতিহাস আজোও মানুষেরা স্মরণ করে। যারাই ক্ষমতার মসনদে থাকেন তাদের কাছ থেকে জনগণ সুন্দর বন্ধুত্বসুলভ আচরণ আশা করেন। যারা ভালোবাসা দিতে পারেন তারাই হলো প্রকৃত মানুষ। আমরা সরকারের কাছে হিংসার পরিবর্তে আলেকজান্ডারে সহানুভূতির মতো উদারতা প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি রক্তের এই হোলি খেলার নোংরা রাজনীতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি করছি।
মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads