‘ভাষা মতিন’ নামে বেশি পরিচিত এককালের রাজনীতিক ও দেশের প্রবীণ নাগরিক আবদুল মতিন গত ৮ অক্টোবর সকালে ইন্তিকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। আড়াই মাসের মতো বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৮ বছর। সিরাজগঞ্জের এই কৃতী সন্তান খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতীয় মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পরপর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এই চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ডাকসুর নির্বাচিত সম্পাদক এবং পরবর্তীকালে জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমসহ স্বল্পসংখ্যক ছাত্রনেতার দুর্দান্ত সাহসী নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের মার্চে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তারই চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আবদুল মতিন ছিলেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের জন্য গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পৌঁছে দেয়ার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটিকে আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রদেশের রাজধানী ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ছাত্র সমাজ। কিন্তু ঠিক আগের দিন হঠাৎ করে সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। পুলিশ ও ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এর সশস্ত্র সৈনিকরা শহরের সর্বত্র অবস্থান নিয়েছিল, ঘিরে ফেলেছিল বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ফলে মিছিল নিয়ে রাজপথে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তেমন এক কঠিন পরিস্থিতিতেই দুর্দান্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন। তার নির্দেশে ও নেতৃত্বে মিছিল করার জন্য চারজন-চারজন করে ছাত্র বের হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কারণ, ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও একসঙ্গে চারজনের চলাচলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এভাবেই সুকৌশলে মিছিলের আয়োজন করেছিলেন আবদুল মতিন। সে মিছিল অবশ্য বেশিক্ষণ শান্তিপূর্ণ থাকতে পারেনি। পুলিশ ও ইপিআর-এর সশস্ত্র সৈনিকরা প্রথমে লাঠিচার্জ করার এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করার পর ছাত্রদের ওপর গুলীবর্ষণ করেছিল। এতে আহত হয়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র। তাদের মধ্যে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালামসহ কয়েকজন শাহাদাতবরণ করেছিলেন।
গুলী ও হত্যার পর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠেছিল। এরই জের ধরে ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটেছিল এবং ১৯৫৬ সালে রচিত পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলা পেয়েছিল অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি ও মর্যাদা। এজন্যই একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছে, ‘ভাষা মতিন’ও তেমনি মিশে গেছেন দেশের সমগ্র অস্তিত্বের সঙ্গে। উল্লেখ্য, মরহুম আবদুল মতিন সারাজীবনই কৃষক-শ্রমিকসহ মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতি ও আন্দোলন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি অবদান রেখেছেন। জীবনের শেষদিনগুলো পর্যন্ত তিনি সামরিক ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কথা বলেছেন একজন সাহসী নেতার মতো। ‘ইউরোপের দেশে দেশে’সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থও রয়েছে তার।
আমরা ‘ভাষা মতিন’ নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই সংগ্রামীর ইন্তেকালে গভীর শোকপ্রকাশ করছি। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পৌঁছে দেয়ার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটিকে আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রদেশের রাজধানী ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ছাত্র সমাজ। কিন্তু ঠিক আগের দিন হঠাৎ করে সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। পুলিশ ও ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এর সশস্ত্র সৈনিকরা শহরের সর্বত্র অবস্থান নিয়েছিল, ঘিরে ফেলেছিল বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ফলে মিছিল নিয়ে রাজপথে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তেমন এক কঠিন পরিস্থিতিতেই দুর্দান্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন। তার নির্দেশে ও নেতৃত্বে মিছিল করার জন্য চারজন-চারজন করে ছাত্র বের হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কারণ, ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও একসঙ্গে চারজনের চলাচলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এভাবেই সুকৌশলে মিছিলের আয়োজন করেছিলেন আবদুল মতিন। সে মিছিল অবশ্য বেশিক্ষণ শান্তিপূর্ণ থাকতে পারেনি। পুলিশ ও ইপিআর-এর সশস্ত্র সৈনিকরা প্রথমে লাঠিচার্জ করার এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করার পর ছাত্রদের ওপর গুলীবর্ষণ করেছিল। এতে আহত হয়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র। তাদের মধ্যে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালামসহ কয়েকজন শাহাদাতবরণ করেছিলেন।
গুলী ও হত্যার পর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠেছিল। এরই জের ধরে ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটেছিল এবং ১৯৫৬ সালে রচিত পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলা পেয়েছিল অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি ও মর্যাদা। এজন্যই একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছে, ‘ভাষা মতিন’ও তেমনি মিশে গেছেন দেশের সমগ্র অস্তিত্বের সঙ্গে। উল্লেখ্য, মরহুম আবদুল মতিন সারাজীবনই কৃষক-শ্রমিকসহ মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতি ও আন্দোলন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি অবদান রেখেছেন। জীবনের শেষদিনগুলো পর্যন্ত তিনি সামরিক ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কথা বলেছেন একজন সাহসী নেতার মতো। ‘ইউরোপের দেশে দেশে’সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থও রয়েছে তার।
আমরা ‘ভাষা মতিন’ নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই সংগ্রামীর ইন্তেকালে গভীর শোকপ্রকাশ করছি। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন