বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

গ্রেফতার অভিযান বন্ধ হওয়া প্রয়োজন


নতুন পর্যায়ে আবারও চরম ফ্যাসিবাদী মনোভাবের ন্যক্কারজনক উন্মোচন ঘটাতে শুরু করেছে সরকার। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর; তথা ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার আগেই সরকার গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। কোনো মামলা না থাকলেও ক’দিন আগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ৬৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বলা হয়েছে, পুলিশের কাছে নাকি ‘তথ্য’ ছিল- যুবদলের এ নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর ষড়যন্ত্র করছিলেন! বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তো বটেই, অনেক বেশি সংখ্যায় গ্রেফতার করা হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের। এমন কোনো দিনের কথা বলা যাবে না, যেদিন অন্তত শয়ের অংকে গ্রেফতার না করা হচ্ছে। রাজধানী ও বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ধাওয়ার মুখে রয়েছেন। যাকে যখন ইচ্ছা, তখনই ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ- এ যেন ‘যাকে পাও ধরো এবং জেলখানায় ভরো’ ধরনের ব্যাপার! গ্রেফতার করে এবং রিমান্ডে নিয়ে তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে আসলে ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা সম্পর্কেই বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। বলাবাহুল্য, সে পরিকল্পনায় গণতন্ত্রসম্মত সদিচ্ছার কোনো ইঙ্গিত নেই। সংঘাত এড়িয়ে সমঝোতা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেষ্টা চালানোরও কোনো ইঙ্গিত নেই। অর্থাৎ সরকার যথারীতি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পন্থাতেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দিক থেকে এটা অবশ্য নতুন কোনো বিষয় নয়, কারণ নামে ‘নির্বাচিত’ এবং গণতান্ত্রিক হলেও প্রথম থেকেই সরকার বিরোধী দলকে দমনের কর্মকান্ডে ব্যস্ত রয়েছে। শুধু গ্রেফতারের কথাই-বা বলা কেন, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দেশের কোথাও বাধাহীনভাবে কোনো মিছিল-সমাবেশও করতে দেয়া হচ্ছে না। নেতা-কর্মীদের পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং ঘরোয়া বৈঠককে পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের বিচিত্র অভিযোগে ভন্ডুল করা হচ্ছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী অ্যাখ্য দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ- যেমনটি ঘটেছে যুবদল সভাপতির ক্ষেত্রে। বলা দরকার, এ ব্যাপারে কিছুটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে হুমকির আড়ালে হুকুম জারি করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মূল কথায় তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় একটি ‘ট্রানজিট সরকার’-এর প্রধান ছিলেন বলে ‘অনেক কিছু’ই করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সে কারণেই বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো নাকি ইচ্ছেমতো মানুষ খুন করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এখন তার সরকার ‘নির্বাচিত’, তিনি নিজেও ‘নির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং আন্দোলনের নামে আর মানুষ খুন করতে এবং সহিংসতা ঘটাতে দেবেন না তিনি। বক্তব্যের এ পর্যায়ে এসেই ‘একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক’ বলে হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, এর পরিণতি কি হয় তা ‘দেখিয়ে’ ছাড়বেন তিনি! উদ্বেগের কারণ হলো, এ ধরনের হুমকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য ক্ষমতাসীনরা আগেও বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন। এগুলো যে কেবলই কথার কথা নয়, সে সম্পর্কেও জনগণকে বুঝতে হয়েছে। প্রতিটি উপলক্ষেই তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা তিনি করেও দেখান। বর্তমান পর্যায়েও তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার যেভাবে গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতন চালাচ্ছে তার ফলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের পিঠ আসলে দেয়ালে ঠেকে গেছে। তা সত্ত্বেও ২০ দলীয় জোট এ পর্যন্ত যথেষ্ট নমনীয়তা দেখিয়ে এসেছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ও একতরফা নির্বাচনের পরও তেমন কোনো আন্দোলনই করেনি দলগুলো। অন্যদিকে সরকার শুধু দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযানই চালাচ্ছে না, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতায় আসারও নাম পর্যন্ত করছে না। বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি ২০ দলীয় জোট জানিয়েছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষতাসীনরা বরং ২০১৯ সাল পর্যন্ত তো বটেই, আরো অনেক বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এভাবে চলতে থাকলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যাবে। এজন্যই ক্ষমতাসীনদের উচিত অবিলম্বে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ করা এবং বিএনপি-জামায়াত-শিবিরসহ সব দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রীকে একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিধানও সংবিধানে যুক্ত করতে হবে- সব দল যেন বাধাহীনভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে ও কর্মসূচি পালন করতে পারে সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান পর্যায়ে তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও আমরা আশা করতে চাই- সরকার শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর হুমকির জবাবে বেগম খালেদা জিয়া গণঅভ্যুত্থান এবং গণধোলাইয়ের যে পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সে পরিণতি এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো- ফ্যাসিবাদী নীতি ও কর্মকান্ড পরিহার করে ২০ দলীয় জোটের দাবি মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads