প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ একটি হুমকির কথা পাঠকরাও নিশ্চয়ই শুনেছেন এবং লক্ষ্য করেছেন। সাম্প্রতিক ইতালি সফর সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বেছে বেছে তিনি গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে ঠিক সে সময়ই এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন নীলফামারীতে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা ছিল নাÑ যার ফল ভোগ করতে হয়েছে বিশেষ করে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে। কারটা রেখে কার বক্তব্য প্রচার করবে- এ নিয়ে মহাবিপদেই পড়তে হয়েছিল তাদের। ওদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে হুমকি উচ্চারণ করেছেন সেটাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত (ভোটারবিহীন ও একতরফা) নির্বাচনের সময় তার নেতৃত্বে যে সরকার ছিল সেটা ছিল একটি ‘ট্রানজিট সরকার’। তখন ‘অনেক কিছু’ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। সে কারণে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো ইচ্ছামতো মানুষ খুন করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এখন তার সরকার ‘নির্বাচিত’, তিনি নিজেও ‘নির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করতে দেবেন না তিনি। বক্তব্যের এ পর্যায়ে এসেই হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক।’ এর পরিণতি কি হয় তা দেখিয়ে ছাড়বেন তিনি!
এই হুমকি যে কেবলই কথার কথা নয় সে সম্পর্কে শেখ হাসিনার সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই দেখিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, যখন যা বলেন তা তিনি ‘মিন’ও করেন। অর্থাৎ করেও দেখান। এজন্যই তার সরকারের বিভিন্ন ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ এবং র্যাব-পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের হামলায় বিরোধী কোনো দল মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে পারছে না। গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি বাড়ছে গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার সংখ্যাও। ওদিকে গণতন্ত্রের প্রধান কেন্দ্র জাতীয় সংসদকে পঙ্গু করা হয়েছে সুচিন্তিত কৌশলের ভিত্তিতে। নবম সংসদ থেকে বিরোধী দলের এমপিদের বাইরে ঠেলে দিয়ে এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে দশম সংসদ গঠন করার মাধ্যমে জাতীয় সংসদকেই অকার্যকর করে ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিষ্কার হয়েছে, জাতীয় সংসদের ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ নেই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। গণতন্ত্রকে তো নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেই, রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রকেও একেবারে তছনছ করে ফেলেছে শেখ হাসিনার সরকার। জনপ্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রই দলীয়করণ নীতির অসহায় শিকার হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সর্বশেষ ভরসার স্থল হিসেবেও কোনো প্রতিষ্ঠানকে থাকতে দিচ্ছে না সরকার। এভাবেই চূড়ান্ত স্বৈরশাসনের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।
ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ডে মোটেও বিস্মিত হননি। কারণ ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘সংগ্রামী’ দল হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এ ধরনের পন্থাই নিয়েছে। জনগণের সঙ্গে তো বটেই, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সব সময় প্রতারণামূলক কৌশলই অবলম্বন করেছে। প্রতিটি উপলক্ষে প্রমাণিত হয়েছে, গণতন্ত্র বা জনগণের অধিকার আদায়ের আড়ালে ক্ষমতায় যাওয়ার এবং দলগত স্বার্থ উদ্ধার করার বাইরে দলটির উদ্দেশ্যের মধ্যে আর কিছু নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৫৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তখন আওয়ামী লীগের প্রধান কর্মসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন আদায় করা। দাবিটি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে অবিভক্ত বাংলার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও কৃষক-শ্রমিক পার্টির নেতা ‘শেরে বাংলা’ আবুল কাশেম ফজলুল হকের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলেন মওলানা ভাসানী। হক-ভাসানীর পাশাপাশি তৃতীয় প্রধান নেতা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বেই ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ শেরে বাংলার সঙ্গে যৌথভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক। কিন্তু মূলত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি গণতন্ত্রের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছিল। ৯২-ক ধারার আড়ালে জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা।
আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৫৬ সালে। সেবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের অন্য নেতারাও মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। একই সময়ে অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে পরিপন্থী অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী এমনকি একথা পর্যন্ত ঘোষণা করেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান নাকি ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেছে! এর প্রতিবাদে এবং স্বায়ত্তশাসন আদায় ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রশ্নে মওলানা ভাসানী ‘আসসালামু আলাইকুম’-এর জন্য বিখ্যাত কাগমারী সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সংঘাতের পরিণতিতে মওলানা ভাসানীকে তাঁর নিজের গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করতে হয়েছিল। ওই দিনগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু মওলানা ভাসানীর তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভূমিকা পালন করেননি। শুধু তা-ই নয়, ১৯৫৭ সালের ২৫ ও ২৬ জুলাই পুরনো ঢাকার ‘রূপমহল’ সিনেমা হলে যখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন অধিবেশন চলছিল তখন শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী গুন্ডারা হামলা চালিয়ে অধিবেশনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। দ্বিতীয় দফা হামলা চালানো হয়েছিল পল্টন ময়দানের সমাবেশে। আওয়ামী গুন্ডারা মওলানা ভাসানীর এবং ‘সীমান্ত গান্ধী’ নামে পরিচিত খান আবদুল গাফফার খানসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত নেতাদের অনেকেরই মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। ইট-পাটকেলের ঢিল শুধু নয়, লাঠির আঘাতও সহ্য করতে হয়েছিল মওলানা ভাসানীকে। ফলে পল্টন ময়দানের সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে, গুন্ডামি করার এবং সন্ত্রাসী হামলা চালানোর শিক্ষাটাও উত্তরাধিকার হিসেবেই পেয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ।
পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের গুন্ডামি ও বর্বরতা আরো মারাত্মকই হয়েছে। পাকিস্তানযুগে মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বিশেষ করে পল্টন ময়দানে বাধাহীনভাবে সমাবেশ করতে পারেনি। প্রতিটি সমাবেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আওয়ামী গুন্ডারা। বাংলাদেশ হওয়ার পর দলটির বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মিছিল সমাবেশে হামলা তো চালিয়েছেই, ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেককে জখম ও খুন করেছে আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এবং রক্ষীবাহিনীকেও দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে মুজিব সরকার। ভাসানী ন্যাপসহ বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। ন্যক্কারজনক সে বর্বরতাই এখনো চালাচ্ছে দলটি।
প্রসঙ্গক্রমে গণতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মনোভাব ও কৌশল সম্পর্কে বলা দরকার। ১৯৫০-এর দশকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন দলটি স্বায়ত্তশাসনের তো বটেই, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেও ভূমিকা পালন করেছে। এরপর এসেছে ১৯৬০-এর দশক। এখন কথার মারপ্যাঁচে নানা গালগল্প শোনানো হলেও সত্য হচ্ছে, গণতন্ত্রের জন্য কোনো আন্দোলনেই আওয়ামী লীগ যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। দলটি বরং প্রতারণাপূর্ণ কৌশলের মাধ্যমে অন্যের সাফল্যকে দখল করেছে। একটি উদাহরণ হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করা যায়। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের মে থেকে বন্দী থাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থা তখন ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। দলটি তখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিল। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৯ নম্বর দফাকে ছয়টি ভাগে আলাদা করে শেখ মুজিব তার ছয় দফা পেশ করেছিলেন ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ছয় দফার প্রশ্নেই ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিখ-িত হয়েছিল। শেখ মুজিব ছিলেন ‘ছয় দফাপন্থী’ আওয়ামী লীগের সভাপতি, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ধুরন্ধর নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘পিডিএমপন্থী’ আওয়ামী লীগ। ‘ছয় দফাপন্থী’ আওয়ামী লীগের অবস্থা সে সময় এতটাই খারাপ ছিল যে, ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান আসামী বানানোর পরও দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা দূরের কথা, ওয়ার্কিং কমিটির এক প্রস্তাবে বরং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার জন্য ‘আবেদন’ জানানো হয়েছিল।
এখন যতো গালগল্পই শোনানো হোক না কেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলেন মওলানা ভাসানী। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি ‘ঘেরাও’ নামের এক নতুন ধরনের আন্দোলন শুরু করেন, ৪ ডিসেম্বর তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা পল্টন ময়দানের সমাবেশ থেকে গিয়ে গবর্নর হাউস (বর্তমান বঙ্গভবন) ঘেরাও করে। পুলিশের গুলীতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যু ও সরকারি দমন-নির্যাতনের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী পরপর দু’দিন হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর এই ঘেরাও আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত হয়েছিল ছাত্র সমাজের ১১ দফা, আর ১১ দফাভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানেই মুক্তি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দীরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত এবং শেষ পর্যন্ত ভ-ুল করেছিলেন শেখ মুজিব। যে ১১ দফার ভিত্তিতে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন সে ১১ দফা পরিত্যাগ করে নিজের ছয় দফাকে সামনে আনার মাধ্যমেও তিনি নিজের প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
জনগণের সঙ্গে তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সব সময় প্রতারণামূলক কৌশল অবলম্বন করেছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য বাকশালী শাসনের পতন-উত্তরকালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেরানো যায়। প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়াতেই আওয়ামী লীগ কোনো না কোনোভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যাক। আবদুল মালেক উকিল তখন সভাপতি। আওয়ামী লীগ সেবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমানের পদত্যাগ এবং ১৯৭৪ সালে নিজেদেরই পাস করা চতুর্থ সংশোধনী বাতিলসহ চারটি প্রধান দাবি তুলে ধরেছিল। নেতারা জনগণকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, যেন চার দফা পূরণ না করা হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অন্যদিকে কোনো একটি দাবি পূরণ করা দূরে থাকুক, মেনে নেয়ার আশ্বাস পর্যন্ত দেয়নি সরকার। তা সত্ত্বেও ১৯৭৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ৩৯টি আসন পেয়েছিল।
১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়াতেও আওয়ামী লীগ ন্যক্কারজনক প্রতারণাই করেছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকা- পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলটি আরো একবার চার দফা পূর্বশর্ত উপস্থাপন করেছিল। নির্বাচনের তারিখ পেছানো, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের মুক্তি এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি ছিল চার দফায়। নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগে দলটি গুরুতর দুটি প্রতারণা করেছিল। প্রথমটি ছিল পূর্বশর্ত পূরণ করার প্রশ্নে। ‘চরমপত্র’ আকারে নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কিন্তু পূর্বশর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও ১৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দলের প্রার্থী হয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। প্রতারণার দ্বিতীয় ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং অমানবিক। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার অভিযোগে ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শালের বিচারে মৃত্যু দন্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ জন সামরিক অফিসারের আত্মীয়-স্বজনরা সে সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। শেখ হাসিনা অনশনরতদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, দন্ডাদেশ বাতিল না করা হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানোর একদিন পরই শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওদিকে মৃত্যু দন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল ২৩ সেপ্টেম্বর (১৯৮১)।
প্রতারণার আরো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে। তারও আগে বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে চিহ্নিত এরশাদের অবৈধ অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়েছিল। বিএনপির বিদায়ে উল্লসিত হয়ে দলটির মুখপত্র দৈনিক ‘বাংলার বাণী’ প্রথম পৃষ্ঠায় বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল (২৫ মার্চ, ১৯৮২)। সামরিক শাসনের পরবর্তী নয় বছরে নানা কৌশলে এরশাদকে রক্ষাও করেছে আওয়ামী লীগ। বিস্তারিত বর্ণনায় না গিয়ে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, ২১ মার্চ গভীর রাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার একদিন আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পাঁচ দফা এবং চলমান আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কিন্তু নিজেই নিজের সে ঘোষণার উল্টো কাজ করেছিলেন শেখ হাসিনা। সেবার সংসদে ৭৬টি আসনসহ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়েছিলেন।
এভাবে বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের কৌশলগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজনে অন্যদের ব্যবহার করা এবং কাজ ‘উদ্ধার’ হয়ে গেলে পাশ কাটিয়ে চলা- কখনো একেবারে ছুঁড়ে ফেলা। ধারণা দেয়ার জন্য এখানে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। ১৯৮৬ সালে ১৫ দলে ভাঙন ঘটিয়ে এবং আন্দোলনের প্রধান সহযোগী সাত দলীয় জোটের সঙ্গে প্রতারণা করে রাতারাতি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। গভীর রাতে এমন এক সময়ে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, যখন চাইলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল, তিনি আসলে অন্যদের সাফল্য একাই ভোগ-দখল করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ না করে সামরিক শাসক এরশাদকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে প্রতারণার আরো একটি উদাহরণ। সেবার, ১৯৮৭ সালের নবেম্বরে আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যখন আওয়ামী এমপিরা পদত্যাগ করলেই এরশাদের পতন ঘটতো। জামায়াতের এমপিরা আগেই পদত্যাগ করেছিলেন, আওয়ামী লীগের এমপিরাও নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ দেই, কাল দেই করে শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্রগুলো জমা দেননি। ফলে এরশাদ শুধু টিকেই যাননি, সংসদের বিলুপ্তি ঘটানোর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা দেখানোরও সুযোগ পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রথম বিএনপি সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের কথাও স্মরণ করা যেতে পারে। সঙ্গী বামপন্থীরা তো বটেই, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য সকল বিরোধী দলও এতে অংশ নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কোনো দলকেই সামান্য ছাড় দেয়নি। শুধু তা-ই নয়, সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ার পরও দলটি আন্দোলনের সহযোগী ও কথিত মুক্তিযুদ্ধপন্থী কোনো দলের কোনো নেতাকে মন্ত্রী বানায়নি। পরিবর্তে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিল এমন দু’জন মাত্র নেতাকে, যাদের সঙ্গে সামরিক শাসক এরশাদের বিশেষ ধরনের সম্পর্ক ছিল- একজন দীর্ঘদিন তার মন্ত্রিত্ব করেছেন (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু), অন্যজন ছিলেন ১৯৮৮ সালের সংসদে বিরোধী দলের নেতা (জাসদের আ স ম আবদুর রব)। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ বাম ও কথিত মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের শুধু ব্যবহারই করেছিল।
পরবর্তীকালেও আওয়ামী লীগ ঐক্যের অভিনয় থেকে সরে আসেনি। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি মহাজোট গঠন করেছিল। নাম সর্বস্ব কয়েকটি দলের সঙ্গে হাত মেলানোয় বুঝতে বাকি থাকেনি যে, জোট না করে আওয়ামী লীগের কোনো উপায় ছিল না। এর কারণ, সরকার বিরোধিতার নামে শেখ হাসিনা একদিকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন, অন্যদিকে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো একটি বিষয়েই তাকে কখনো আন্দোলন করার বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। জনগণকে বিপদের মধ্যে ফেলে বিদেশে পাড়ি জমানোর নজিরও শেখ হাসিনা বারবার স্থাপন করেছিলেন। এজন্যই জনগণও তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়নি। একই কারণে শেখ হাসিনাকে কয়েকটি নাম সর্বস্ব দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ পর্যায়েও আওয়ামী লীগ তার বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব অনুযায়ী এগিয়ে গেছে। লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজেদের ‘নিয়ে আসা’ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসেছে দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তো গণতন্ত্রকেই নির্বাসনে পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের ব্যাপারে এতটাই সততা আওয়ামী লীগের! একই কারণে দলটির নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণতন্ত্র ও জনগণের সংগ্রাম সম্পর্কে শেখার এবং জানার কিছুই থাকতে পারে না। অমন একজন ‘নির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রীর হুমকিতেই বা ভয় পাবে কেন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত দলগুলো?
এই হুমকি যে কেবলই কথার কথা নয় সে সম্পর্কে শেখ হাসিনার সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই দেখিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, যখন যা বলেন তা তিনি ‘মিন’ও করেন। অর্থাৎ করেও দেখান। এজন্যই তার সরকারের বিভিন্ন ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ এবং র্যাব-পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের হামলায় বিরোধী কোনো দল মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে পারছে না। গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি বাড়ছে গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার সংখ্যাও। ওদিকে গণতন্ত্রের প্রধান কেন্দ্র জাতীয় সংসদকে পঙ্গু করা হয়েছে সুচিন্তিত কৌশলের ভিত্তিতে। নবম সংসদ থেকে বিরোধী দলের এমপিদের বাইরে ঠেলে দিয়ে এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে দশম সংসদ গঠন করার মাধ্যমে জাতীয় সংসদকেই অকার্যকর করে ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিষ্কার হয়েছে, জাতীয় সংসদের ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ নেই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। গণতন্ত্রকে তো নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেই, রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রকেও একেবারে তছনছ করে ফেলেছে শেখ হাসিনার সরকার। জনপ্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রই দলীয়করণ নীতির অসহায় শিকার হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সর্বশেষ ভরসার স্থল হিসেবেও কোনো প্রতিষ্ঠানকে থাকতে দিচ্ছে না সরকার। এভাবেই চূড়ান্ত স্বৈরশাসনের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।
ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ডে মোটেও বিস্মিত হননি। কারণ ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘সংগ্রামী’ দল হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এ ধরনের পন্থাই নিয়েছে। জনগণের সঙ্গে তো বটেই, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সব সময় প্রতারণামূলক কৌশলই অবলম্বন করেছে। প্রতিটি উপলক্ষে প্রমাণিত হয়েছে, গণতন্ত্র বা জনগণের অধিকার আদায়ের আড়ালে ক্ষমতায় যাওয়ার এবং দলগত স্বার্থ উদ্ধার করার বাইরে দলটির উদ্দেশ্যের মধ্যে আর কিছু নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৫৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তখন আওয়ামী লীগের প্রধান কর্মসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন আদায় করা। দাবিটি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে অবিভক্ত বাংলার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও কৃষক-শ্রমিক পার্টির নেতা ‘শেরে বাংলা’ আবুল কাশেম ফজলুল হকের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলেন মওলানা ভাসানী। হক-ভাসানীর পাশাপাশি তৃতীয় প্রধান নেতা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বেই ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ শেরে বাংলার সঙ্গে যৌথভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক। কিন্তু মূলত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি গণতন্ত্রের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছিল। ৯২-ক ধারার আড়ালে জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা।
আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৫৬ সালে। সেবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের অন্য নেতারাও মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। একই সময়ে অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে পরিপন্থী অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী এমনকি একথা পর্যন্ত ঘোষণা করেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান নাকি ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেছে! এর প্রতিবাদে এবং স্বায়ত্তশাসন আদায় ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রশ্নে মওলানা ভাসানী ‘আসসালামু আলাইকুম’-এর জন্য বিখ্যাত কাগমারী সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সংঘাতের পরিণতিতে মওলানা ভাসানীকে তাঁর নিজের গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করতে হয়েছিল। ওই দিনগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু মওলানা ভাসানীর তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভূমিকা পালন করেননি। শুধু তা-ই নয়, ১৯৫৭ সালের ২৫ ও ২৬ জুলাই পুরনো ঢাকার ‘রূপমহল’ সিনেমা হলে যখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন অধিবেশন চলছিল তখন শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী গুন্ডারা হামলা চালিয়ে অধিবেশনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। দ্বিতীয় দফা হামলা চালানো হয়েছিল পল্টন ময়দানের সমাবেশে। আওয়ামী গুন্ডারা মওলানা ভাসানীর এবং ‘সীমান্ত গান্ধী’ নামে পরিচিত খান আবদুল গাফফার খানসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত নেতাদের অনেকেরই মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। ইট-পাটকেলের ঢিল শুধু নয়, লাঠির আঘাতও সহ্য করতে হয়েছিল মওলানা ভাসানীকে। ফলে পল্টন ময়দানের সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে, গুন্ডামি করার এবং সন্ত্রাসী হামলা চালানোর শিক্ষাটাও উত্তরাধিকার হিসেবেই পেয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ।
পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের গুন্ডামি ও বর্বরতা আরো মারাত্মকই হয়েছে। পাকিস্তানযুগে মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বিশেষ করে পল্টন ময়দানে বাধাহীনভাবে সমাবেশ করতে পারেনি। প্রতিটি সমাবেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আওয়ামী গুন্ডারা। বাংলাদেশ হওয়ার পর দলটির বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মিছিল সমাবেশে হামলা তো চালিয়েছেই, ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেককে জখম ও খুন করেছে আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এবং রক্ষীবাহিনীকেও দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে মুজিব সরকার। ভাসানী ন্যাপসহ বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই আওয়ামী গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। ন্যক্কারজনক সে বর্বরতাই এখনো চালাচ্ছে দলটি।
প্রসঙ্গক্রমে গণতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মনোভাব ও কৌশল সম্পর্কে বলা দরকার। ১৯৫০-এর দশকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন দলটি স্বায়ত্তশাসনের তো বটেই, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেও ভূমিকা পালন করেছে। এরপর এসেছে ১৯৬০-এর দশক। এখন কথার মারপ্যাঁচে নানা গালগল্প শোনানো হলেও সত্য হচ্ছে, গণতন্ত্রের জন্য কোনো আন্দোলনেই আওয়ামী লীগ যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। দলটি বরং প্রতারণাপূর্ণ কৌশলের মাধ্যমে অন্যের সাফল্যকে দখল করেছে। একটি উদাহরণ হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করা যায়। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের মে থেকে বন্দী থাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থা তখন ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। দলটি তখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিল। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৯ নম্বর দফাকে ছয়টি ভাগে আলাদা করে শেখ মুজিব তার ছয় দফা পেশ করেছিলেন ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ছয় দফার প্রশ্নেই ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিখ-িত হয়েছিল। শেখ মুজিব ছিলেন ‘ছয় দফাপন্থী’ আওয়ামী লীগের সভাপতি, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ধুরন্ধর নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘পিডিএমপন্থী’ আওয়ামী লীগ। ‘ছয় দফাপন্থী’ আওয়ামী লীগের অবস্থা সে সময় এতটাই খারাপ ছিল যে, ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান আসামী বানানোর পরও দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা দূরের কথা, ওয়ার্কিং কমিটির এক প্রস্তাবে বরং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার জন্য ‘আবেদন’ জানানো হয়েছিল।
এখন যতো গালগল্পই শোনানো হোক না কেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলেন মওলানা ভাসানী। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি ‘ঘেরাও’ নামের এক নতুন ধরনের আন্দোলন শুরু করেন, ৪ ডিসেম্বর তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা পল্টন ময়দানের সমাবেশ থেকে গিয়ে গবর্নর হাউস (বর্তমান বঙ্গভবন) ঘেরাও করে। পুলিশের গুলীতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যু ও সরকারি দমন-নির্যাতনের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী পরপর দু’দিন হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর এই ঘেরাও আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত হয়েছিল ছাত্র সমাজের ১১ দফা, আর ১১ দফাভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানেই মুক্তি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দীরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত এবং শেষ পর্যন্ত ভ-ুল করেছিলেন শেখ মুজিব। যে ১১ দফার ভিত্তিতে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন সে ১১ দফা পরিত্যাগ করে নিজের ছয় দফাকে সামনে আনার মাধ্যমেও তিনি নিজের প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
জনগণের সঙ্গে তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সব সময় প্রতারণামূলক কৌশল অবলম্বন করেছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য বাকশালী শাসনের পতন-উত্তরকালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেরানো যায়। প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়াতেই আওয়ামী লীগ কোনো না কোনোভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যাক। আবদুল মালেক উকিল তখন সভাপতি। আওয়ামী লীগ সেবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমানের পদত্যাগ এবং ১৯৭৪ সালে নিজেদেরই পাস করা চতুর্থ সংশোধনী বাতিলসহ চারটি প্রধান দাবি তুলে ধরেছিল। নেতারা জনগণকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, যেন চার দফা পূরণ না করা হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অন্যদিকে কোনো একটি দাবি পূরণ করা দূরে থাকুক, মেনে নেয়ার আশ্বাস পর্যন্ত দেয়নি সরকার। তা সত্ত্বেও ১৯৭৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ৩৯টি আসন পেয়েছিল।
১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়াতেও আওয়ামী লীগ ন্যক্কারজনক প্রতারণাই করেছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকা- পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলটি আরো একবার চার দফা পূর্বশর্ত উপস্থাপন করেছিল। নির্বাচনের তারিখ পেছানো, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের মুক্তি এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি ছিল চার দফায়। নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগে দলটি গুরুতর দুটি প্রতারণা করেছিল। প্রথমটি ছিল পূর্বশর্ত পূরণ করার প্রশ্নে। ‘চরমপত্র’ আকারে নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কিন্তু পূর্বশর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও ১৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দলের প্রার্থী হয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। প্রতারণার দ্বিতীয় ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং অমানবিক। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার অভিযোগে ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শালের বিচারে মৃত্যু দন্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ জন সামরিক অফিসারের আত্মীয়-স্বজনরা সে সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। শেখ হাসিনা অনশনরতদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, দন্ডাদেশ বাতিল না করা হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানোর একদিন পরই শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওদিকে মৃত্যু দন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছিল ২৩ সেপ্টেম্বর (১৯৮১)।
প্রতারণার আরো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে। তারও আগে বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে চিহ্নিত এরশাদের অবৈধ অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়েছিল। বিএনপির বিদায়ে উল্লসিত হয়ে দলটির মুখপত্র দৈনিক ‘বাংলার বাণী’ প্রথম পৃষ্ঠায় বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল (২৫ মার্চ, ১৯৮২)। সামরিক শাসনের পরবর্তী নয় বছরে নানা কৌশলে এরশাদকে রক্ষাও করেছে আওয়ামী লীগ। বিস্তারিত বর্ণনায় না গিয়ে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, ২১ মার্চ গভীর রাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার একদিন আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পাঁচ দফা এবং চলমান আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কিন্তু নিজেই নিজের সে ঘোষণার উল্টো কাজ করেছিলেন শেখ হাসিনা। সেবার সংসদে ৭৬টি আসনসহ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়েছিলেন।
এভাবে বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের কৌশলগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজনে অন্যদের ব্যবহার করা এবং কাজ ‘উদ্ধার’ হয়ে গেলে পাশ কাটিয়ে চলা- কখনো একেবারে ছুঁড়ে ফেলা। ধারণা দেয়ার জন্য এখানে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। ১৯৮৬ সালে ১৫ দলে ভাঙন ঘটিয়ে এবং আন্দোলনের প্রধান সহযোগী সাত দলীয় জোটের সঙ্গে প্রতারণা করে রাতারাতি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। গভীর রাতে এমন এক সময়ে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, যখন চাইলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল, তিনি আসলে অন্যদের সাফল্য একাই ভোগ-দখল করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ না করে সামরিক শাসক এরশাদকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে প্রতারণার আরো একটি উদাহরণ। সেবার, ১৯৮৭ সালের নবেম্বরে আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যখন আওয়ামী এমপিরা পদত্যাগ করলেই এরশাদের পতন ঘটতো। জামায়াতের এমপিরা আগেই পদত্যাগ করেছিলেন, আওয়ামী লীগের এমপিরাও নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ দেই, কাল দেই করে শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্রগুলো জমা দেননি। ফলে এরশাদ শুধু টিকেই যাননি, সংসদের বিলুপ্তি ঘটানোর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা দেখানোরও সুযোগ পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রথম বিএনপি সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের কথাও স্মরণ করা যেতে পারে। সঙ্গী বামপন্থীরা তো বটেই, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য সকল বিরোধী দলও এতে অংশ নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কোনো দলকেই সামান্য ছাড় দেয়নি। শুধু তা-ই নয়, সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ার পরও দলটি আন্দোলনের সহযোগী ও কথিত মুক্তিযুদ্ধপন্থী কোনো দলের কোনো নেতাকে মন্ত্রী বানায়নি। পরিবর্তে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিল এমন দু’জন মাত্র নেতাকে, যাদের সঙ্গে সামরিক শাসক এরশাদের বিশেষ ধরনের সম্পর্ক ছিল- একজন দীর্ঘদিন তার মন্ত্রিত্ব করেছেন (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু), অন্যজন ছিলেন ১৯৮৮ সালের সংসদে বিরোধী দলের নেতা (জাসদের আ স ম আবদুর রব)। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ বাম ও কথিত মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের শুধু ব্যবহারই করেছিল।
পরবর্তীকালেও আওয়ামী লীগ ঐক্যের অভিনয় থেকে সরে আসেনি। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি মহাজোট গঠন করেছিল। নাম সর্বস্ব কয়েকটি দলের সঙ্গে হাত মেলানোয় বুঝতে বাকি থাকেনি যে, জোট না করে আওয়ামী লীগের কোনো উপায় ছিল না। এর কারণ, সরকার বিরোধিতার নামে শেখ হাসিনা একদিকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন, অন্যদিকে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো একটি বিষয়েই তাকে কখনো আন্দোলন করার বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। জনগণকে বিপদের মধ্যে ফেলে বিদেশে পাড়ি জমানোর নজিরও শেখ হাসিনা বারবার স্থাপন করেছিলেন। এজন্যই জনগণও তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়নি। একই কারণে শেখ হাসিনাকে কয়েকটি নাম সর্বস্ব দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ পর্যায়েও আওয়ামী লীগ তার বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব অনুযায়ী এগিয়ে গেছে। লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজেদের ‘নিয়ে আসা’ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসেছে দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তো গণতন্ত্রকেই নির্বাসনে পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের ব্যাপারে এতটাই সততা আওয়ামী লীগের! একই কারণে দলটির নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণতন্ত্র ও জনগণের সংগ্রাম সম্পর্কে শেখার এবং জানার কিছুই থাকতে পারে না। অমন একজন ‘নির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রীর হুমকিতেই বা ভয় পাবে কেন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত দলগুলো?
আহমদ আশিকুল হামিদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন