আমরা যারা কম-বেশি বাম রাজনীতির ছোঁয়া
পেয়েছি,
তারা জানি, প্রভাববলয় বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আদর্শের
কাছাকাছি গণভিত্তিসম্পন্ন দলটিতে অনুপ্রবেশ করা একটি সনাতনী কৌশল। বাম দলগুলো এই
কৌশল অনুশীলন করে আসছে। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ, তারপর আওয়ামী লীগ। বামপন্থী রাজনীতির কৌশলী পরিকল্পনায় এখন
সেটি বামপন্থী প্রভাবিত আওয়ামী লীগ। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এক সময় কমিউনিস্ট
পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার আগে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন। এ ধরনের
কয়েক ডজন নেতা,
যারা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে
উঠে গেছেন। মাঝারি স্তরে আছেন ‘কয়েক শ’ নেতা।
অধস্তন স্তরেও রয়েছেন অসংখ্য। অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধু
যে বামপন্থীদের এড়িয়ে যেতেন, তাদের নিয়ে বাকশাল করেই রাজনৈতিক
অস্তিত্ব বিপন্ন করেছেন। শেখ হাসিনার কৃতিত্ব এটা, তিনি
বাঘা বাঘা বামপন্থীকে নিয়ে তার নিজস্ব দুর্গ নির্মাণ করেছেন। এখন বামপন্থীরা ভাবেন
তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আওয়ামী লীগের মতো একটি জাতীয়তাবাদী দলকে ব্যবহার করতে
পারছেন। তাদের এজেন্ডাগুলোও আওয়ামী লীগের ব্যানার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে
বাস্তবায়িত হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এতে নাখোশ নয়। জনগণ দুষছে আওয়ামী লীগকে। শেখ
হাসিনা এবং তার সাথে আরো কিছু নেতা আছেন, যারা
ভাবেন তারা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে বাম নেতাদের মধ্যে যারা বাকপটু, কথার খই ফুটাতেন, কথায়
কথায় বামতত্ত্ব ঝাড়তেন, যারা ভাবতেন তারা জনসমর্থনহীন হলেও
নিধিরাম সরদার,
তারা এখন তারই অনুগত ও আশ্রিত। পরস্পরকে
ব্যবহার করার একধরনের অসাধু ইচ্ছা ও প্রতারণায় উভয় পক্ষ আক্রান্ত। অথচ নীতিকথা
হচ্ছেÑ প্রতারণা করো না, প্রতারিত
হয়ো না। এভাবে ব্যবহার করার বিষয়টি নেত্রী মাঝে মধ্যে খোঁটা দিয়ে তাদের সেটা
স্মরণ করিয়ে দিয়ে খুশি হন। অথচ পরস্পরের সম্পর্কটা অনৈতিক কৌশল ও প্রতারণার একটা বদখেয়াল
দ্বারা পরিচালিত। এ বিষয়টি কোনো পক্ষ ভাবছে না।
শিক্ষামন্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বদ ইচ্ছা প্রদর্শন আমাদের কাজ নয়। তিনি মিষ্টিভাসী না তেতো রাজনীতির কূটকৌশলের ধ্বজাধারী সেটা কোনো প্রসঙ্গ নয়। আমরা দেখছি তিনি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা-সংস্কৃতি এখন এমন দু’জনের হাতে যারা বাম রাজনীতির কৌশলী অবস্থানের দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগের ভেতরেও এই নিয়ে কম উষ্মা নেই।
অর্থনীতির শরীর উদোম। ভালো করে এর গতর দেখার জন্য হাতিরঝিলে চোখ রাখুন। আলোঝলমলে পরিবেশে দৃষ্টি কাড়ে, মন ভরায় না। ক’হাত পরপর ছিনতাইকারী ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মী চোখে পড়বে। হাতিরঝিল পেছনে রেখে টঙ্গী ডাইভারশন রোড ধরে মগবাজার হয়ে মালীবাগ পর্যন্ত পথ চলুন। জাতিসঙ্ঘে বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নভাবনা ও স্বপ্ন জড়ানো ভাষণের মাজেজা বুঝতে কষ্ট হবে না। দুর্নীতি আক্রান্ত ব্যাংকপাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ, ধসে পড়া পোশাক খাত, জনশক্তি রফতানির ধারাপাত সহজেই বোঝা যাবে। অর্থনীতি-উন্নয়ন চুলোয় যাক, সংস্কৃতির আকাশ ও পাতাল সাম্রাজ্যে ভারতীয় আধিপত্য, বহুজাতিক কোম্পানির দৌরাত্ম্য, আর ভোগবাদী চিন্তার প্রসার আপনার বাপের নাম ভুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। এর ভেতর দিয়ে শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক শোষণ, লুটপাট, দুর্নীতির মহাপ্লাবন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনার সাথে শিক্ষার নৈরাজ্য যোগ হলে জাতি টিকবে কি করে! কথায় আছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে মারাত্মক। শিক্ষায় ধস রাজনৈতিক নিপীড়নের চেয়েও ভয়াবহ। কোনো জাতিকে নিঃশেষ কিংবা গোলামির জিঞ্জির পরাতে হলে তার সংস্কৃতি পাল্টে দেয়া যথেষ্ট। শিক্ষা ক্ষেত্রে ধস নামালে অনুগত দাস ছাড়া কিছুই সৃষ্টি হবে না। মেধাশূন্য জাতি মনের অজান্তেই ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে যাবে। দেশের সার্বভৌমত্ব, মানচিত্র, পতাকা তার কাছে মনে হবে অর্থহীন। জাতীয় অহংবোধ তার কাছে ঠুনকো বিষয় ছাড়া কিছুই মনে হবে না। সে সেøাগান দেবেÑ একুশ মানে মাথা নত না করা, কিন্তু বাতচিত করবে হিন্দিতে কিংবা ব্যাংকরাজিতে। ফেব্রুয়ারি এলে উর্দুর মুণ্ডুপাত করে বেদিতে ফুল ছিটিয়ে দেশপ্রেমের ঢেঁকুর তুলবে।
মাস দুয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে প্রীতিভাজন গোলাম মাওলা রনির একটা লেখা সম্পাদনা করতে গিয়ে ভেবেছিলাম বেশি বলা হয়ে গেল কি না। সন্তানের পিতা হিসেবে সাবেক এমপি রনি সেই কলামে যে আহাজারি করেছেন তার একটি শব্দও এখন আর বাহুল্য মনে হচ্ছে না। আমরা সম্ভবত ভেতরটা কম দেখেছি বলেই তার আহাজারি বেশি মনে হয়েছে। সেই কলামটি আমরা ছেপেছিলাম হুবহু। এখন মনে হচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়ে কেউ শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, কেউ শেষের পথে। আমাদের অভিজ্ঞতাটা তাই পুরনো ও ভোঁতা, গোলাম মাওলা রনির দেখাটা টাটকা এবং ঋজু।
চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক এই বিভাগে লিখেছিলেনÑ শিক্ষার মান শেষ। আমাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাস আর ফাঁসের বাজিকরদের দৌরাত্ম্যের ফলে জাতির মেধা ও মনন শেষ। শিক্ষা বাণিজ্যনির্ভর মেধা ও মগজশূন্য বিকারগ্রস্ত একটি নতুন প্রজন্মই সৃষ্টি করতে চান শিক্ষামন্ত্রী ও তার সরকার। বিষয়টা অত গভীরভাবে ভেবে দেখিনি। প্রফেসর ও লেখক জাফর ইকবাল কখনো কখনো আবেগতাড়িত শিশুতোষ লেখক মাত্র। কখনো বা দলকানা চেতনার ফেরিওয়ালা। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে তার উদ্বেগটা আমার কাছে শিক্ষকসুলভই মনে হয়েছে। প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যটাও দেখা যেতে পারে। মাত্র চার দিন আগে একটি দৈনিকে তিনি লিখলেন, ‘এবার সরাসরি শিামন্ত্রী অনুপ্রবেশ করলেন। এমনিতে শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন মিষ্টভাষী ভদ্রলোক। আওয়ামী মন্ত্রিসভার দুর্নীতিবাজদের ভিড়ে টেক্সটবুক বোর্ডের সময়মতো বই বিতরণ করে তিনি বেশ নাম কামিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি ছিলেন, সেই হিসেবে তাকে কেউ দুর্নীতিবাজ মনে করেন না। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প নিতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলেন তিনি। তিনি বুঝতে পারেননি, কাক কাকের মাংস খায় না; কিন্তু আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের মাংস খায়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বোমা ফাটালেন। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে তিনি যা বললেন তা টিআইবি তদন্ত প্রতিবেদনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিসের ভিত্তিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হলো, নির্ধারিত বিধান ও আইন না মেনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করল কিভাবে এবং চালিয়েই বা যাচ্ছে কিভাবেÑ সেই প্রশ্ন উত্থাপিত হলো।...
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীায় ৯০ শতাংশ পাস ও লাধিক জিপিএ ৫ পাওয়াকে শিামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার নিজেদের মহাসাফল্য হিসেবে দেখালেও অন্যরা একে শিার সর্বনাশ বলে মনে করছেন। শিার মান ক্রমাগতভাবে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দুর্নীতিও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবারের ভর্তিজালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন কলেজ শাখার নেতাদের নাম পত্রিকায় এসেছে।...
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, জাতির মেরুদণ্ড শিাব্যবস্থা যখন এ রকম করে ভেঙে পড়ছে, তখনো শিামন্ত্রী সঙ্কটের গভীরতা বুঝতে পারছেন না। শুধু শিামন্ত্রী নন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শিার মান ও শিার্থীদের যোগ্যতার বিষয়ে বাগাড়ম্বর করছেন।’ মান্না ভাইয়ের এসব মন্তব্যের সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই।
এখন শিক্ষামন্ত্রী বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটাই নাকি ত্রুটিপূর্ণ। ভিসি প্রমাণ চাইলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সমস্যা প্রচুর, সেসব কমবেশি আমরাও জানি এবং ভুক্তভোগী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি শিক্ষামন্ত্রী ভর্তি প্রসঙ্গে সত্য বলেননি। শিক্ষামন্ত্রী ত্রুটির প্রমাণ দিতে পারবেন না। আসল কথা হলো, জাতির শিক্ষাজীবনে হাহাকার শুরু হয়েছে। কেয়ামতের সময় বান্দার হাত-পা অঙ্গপ্রত্যঙ্গও নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারি বাগাড়াম্বরের বিরুদ্ধে তুলে ধরা তিনটি সাক্ষ্য কোনোটি অসত্য নয়। এ যেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য দেয়া। সাজেদা চৌধুরীর মতো প্রবীণ নেত্রী যখন মিথ্যা সাফল্যের ডুগডুগিবাজ হাছান মাহমুদের মতো স্বঘোষিত তুখোড়কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বেয়াদব বলেন, তখন নৈরাজ্যের এই সময়ে বসবাস করে হাশর-নাশরের কথা ভাবতেই হচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকী শুধু কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে সজোরে আঘাত হানার কারণে অপরাধী নন, আল্লাহর বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে কটাক্ষের ভাষায় নবীর নামে চালিয়ে দিয়ে নিজেকে ধর্মদ্রোহীর কাতারে নিয়ে গেছেন। এই অজ্ঞতা ও ধৃষ্ঠতা কি শুধুই প্রলাপ না জঙ্গি খোঁজার অংশ! ভালো যে মন্তব্যটি করে তিনি তার দলের অবস্থানও পরিষ্কার করলেন। খালেদা জিয়া কিংবা তার দল ও জোটের কেউ হাছান মাহমুদদের নিয়ে এমন করেননি, করলে ঘেউ ঘেউ করার মতো লোকের অভাব হতো না। তাতে সত্যটা আড়ালে চলে না গেলেও রাজনীতির রঙ ও গন্ধ বেরোতো।
শিক্ষামন্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বদ ইচ্ছা প্রদর্শন আমাদের কাজ নয়। তিনি মিষ্টিভাসী না তেতো রাজনীতির কূটকৌশলের ধ্বজাধারী সেটা কোনো প্রসঙ্গ নয়। আমরা দেখছি তিনি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা-সংস্কৃতি এখন এমন দু’জনের হাতে যারা বাম রাজনীতির কৌশলী অবস্থানের দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগের ভেতরেও এই নিয়ে কম উষ্মা নেই।
অর্থনীতির শরীর উদোম। ভালো করে এর গতর দেখার জন্য হাতিরঝিলে চোখ রাখুন। আলোঝলমলে পরিবেশে দৃষ্টি কাড়ে, মন ভরায় না। ক’হাত পরপর ছিনতাইকারী ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মী চোখে পড়বে। হাতিরঝিল পেছনে রেখে টঙ্গী ডাইভারশন রোড ধরে মগবাজার হয়ে মালীবাগ পর্যন্ত পথ চলুন। জাতিসঙ্ঘে বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নভাবনা ও স্বপ্ন জড়ানো ভাষণের মাজেজা বুঝতে কষ্ট হবে না। দুর্নীতি আক্রান্ত ব্যাংকপাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ, ধসে পড়া পোশাক খাত, জনশক্তি রফতানির ধারাপাত সহজেই বোঝা যাবে। অর্থনীতি-উন্নয়ন চুলোয় যাক, সংস্কৃতির আকাশ ও পাতাল সাম্রাজ্যে ভারতীয় আধিপত্য, বহুজাতিক কোম্পানির দৌরাত্ম্য, আর ভোগবাদী চিন্তার প্রসার আপনার বাপের নাম ভুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। এর ভেতর দিয়ে শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক শোষণ, লুটপাট, দুর্নীতির মহাপ্লাবন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনার সাথে শিক্ষার নৈরাজ্য যোগ হলে জাতি টিকবে কি করে! কথায় আছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে মারাত্মক। শিক্ষায় ধস রাজনৈতিক নিপীড়নের চেয়েও ভয়াবহ। কোনো জাতিকে নিঃশেষ কিংবা গোলামির জিঞ্জির পরাতে হলে তার সংস্কৃতি পাল্টে দেয়া যথেষ্ট। শিক্ষা ক্ষেত্রে ধস নামালে অনুগত দাস ছাড়া কিছুই সৃষ্টি হবে না। মেধাশূন্য জাতি মনের অজান্তেই ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে যাবে। দেশের সার্বভৌমত্ব, মানচিত্র, পতাকা তার কাছে মনে হবে অর্থহীন। জাতীয় অহংবোধ তার কাছে ঠুনকো বিষয় ছাড়া কিছুই মনে হবে না। সে সেøাগান দেবেÑ একুশ মানে মাথা নত না করা, কিন্তু বাতচিত করবে হিন্দিতে কিংবা ব্যাংকরাজিতে। ফেব্রুয়ারি এলে উর্দুর মুণ্ডুপাত করে বেদিতে ফুল ছিটিয়ে দেশপ্রেমের ঢেঁকুর তুলবে।
মাস দুয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে প্রীতিভাজন গোলাম মাওলা রনির একটা লেখা সম্পাদনা করতে গিয়ে ভেবেছিলাম বেশি বলা হয়ে গেল কি না। সন্তানের পিতা হিসেবে সাবেক এমপি রনি সেই কলামে যে আহাজারি করেছেন তার একটি শব্দও এখন আর বাহুল্য মনে হচ্ছে না। আমরা সম্ভবত ভেতরটা কম দেখেছি বলেই তার আহাজারি বেশি মনে হয়েছে। সেই কলামটি আমরা ছেপেছিলাম হুবহু। এখন মনে হচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়ে কেউ শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, কেউ শেষের পথে। আমাদের অভিজ্ঞতাটা তাই পুরনো ও ভোঁতা, গোলাম মাওলা রনির দেখাটা টাটকা এবং ঋজু।
চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক এই বিভাগে লিখেছিলেনÑ শিক্ষার মান শেষ। আমাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাস আর ফাঁসের বাজিকরদের দৌরাত্ম্যের ফলে জাতির মেধা ও মনন শেষ। শিক্ষা বাণিজ্যনির্ভর মেধা ও মগজশূন্য বিকারগ্রস্ত একটি নতুন প্রজন্মই সৃষ্টি করতে চান শিক্ষামন্ত্রী ও তার সরকার। বিষয়টা অত গভীরভাবে ভেবে দেখিনি। প্রফেসর ও লেখক জাফর ইকবাল কখনো কখনো আবেগতাড়িত শিশুতোষ লেখক মাত্র। কখনো বা দলকানা চেতনার ফেরিওয়ালা। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে তার উদ্বেগটা আমার কাছে শিক্ষকসুলভই মনে হয়েছে। প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যটাও দেখা যেতে পারে। মাত্র চার দিন আগে একটি দৈনিকে তিনি লিখলেন, ‘এবার সরাসরি শিামন্ত্রী অনুপ্রবেশ করলেন। এমনিতে শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন মিষ্টভাষী ভদ্রলোক। আওয়ামী মন্ত্রিসভার দুর্নীতিবাজদের ভিড়ে টেক্সটবুক বোর্ডের সময়মতো বই বিতরণ করে তিনি বেশ নাম কামিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি ছিলেন, সেই হিসেবে তাকে কেউ দুর্নীতিবাজ মনে করেন না। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প নিতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলেন তিনি। তিনি বুঝতে পারেননি, কাক কাকের মাংস খায় না; কিন্তু আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের মাংস খায়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বোমা ফাটালেন। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে তিনি যা বললেন তা টিআইবি তদন্ত প্রতিবেদনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিসের ভিত্তিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হলো, নির্ধারিত বিধান ও আইন না মেনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করল কিভাবে এবং চালিয়েই বা যাচ্ছে কিভাবেÑ সেই প্রশ্ন উত্থাপিত হলো।...
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীায় ৯০ শতাংশ পাস ও লাধিক জিপিএ ৫ পাওয়াকে শিামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার নিজেদের মহাসাফল্য হিসেবে দেখালেও অন্যরা একে শিার সর্বনাশ বলে মনে করছেন। শিার মান ক্রমাগতভাবে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দুর্নীতিও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবারের ভর্তিজালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন কলেজ শাখার নেতাদের নাম পত্রিকায় এসেছে।...
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, জাতির মেরুদণ্ড শিাব্যবস্থা যখন এ রকম করে ভেঙে পড়ছে, তখনো শিামন্ত্রী সঙ্কটের গভীরতা বুঝতে পারছেন না। শুধু শিামন্ত্রী নন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শিার মান ও শিার্থীদের যোগ্যতার বিষয়ে বাগাড়ম্বর করছেন।’ মান্না ভাইয়ের এসব মন্তব্যের সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই।
এখন শিক্ষামন্ত্রী বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটাই নাকি ত্রুটিপূর্ণ। ভিসি প্রমাণ চাইলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সমস্যা প্রচুর, সেসব কমবেশি আমরাও জানি এবং ভুক্তভোগী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি শিক্ষামন্ত্রী ভর্তি প্রসঙ্গে সত্য বলেননি। শিক্ষামন্ত্রী ত্রুটির প্রমাণ দিতে পারবেন না। আসল কথা হলো, জাতির শিক্ষাজীবনে হাহাকার শুরু হয়েছে। কেয়ামতের সময় বান্দার হাত-পা অঙ্গপ্রত্যঙ্গও নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারি বাগাড়াম্বরের বিরুদ্ধে তুলে ধরা তিনটি সাক্ষ্য কোনোটি অসত্য নয়। এ যেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য দেয়া। সাজেদা চৌধুরীর মতো প্রবীণ নেত্রী যখন মিথ্যা সাফল্যের ডুগডুগিবাজ হাছান মাহমুদের মতো স্বঘোষিত তুখোড়কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বেয়াদব বলেন, তখন নৈরাজ্যের এই সময়ে বসবাস করে হাশর-নাশরের কথা ভাবতেই হচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকী শুধু কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে সজোরে আঘাত হানার কারণে অপরাধী নন, আল্লাহর বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে কটাক্ষের ভাষায় নবীর নামে চালিয়ে দিয়ে নিজেকে ধর্মদ্রোহীর কাতারে নিয়ে গেছেন। এই অজ্ঞতা ও ধৃষ্ঠতা কি শুধুই প্রলাপ না জঙ্গি খোঁজার অংশ! ভালো যে মন্তব্যটি করে তিনি তার দলের অবস্থানও পরিষ্কার করলেন। খালেদা জিয়া কিংবা তার দল ও জোটের কেউ হাছান মাহমুদদের নিয়ে এমন করেননি, করলে ঘেউ ঘেউ করার মতো লোকের অভাব হতো না। তাতে সত্যটা আড়ালে চলে না গেলেও রাজনীতির রঙ ও গন্ধ বেরোতো।
মাসুদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন