বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ


বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা আওয়ামী লীগের মুখোশ। এই মুখোশ পরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ধর্মনিরপেক্ষতায় নয়, তাদের বিশ্বাস আসলে ধর্মহীনতায়। এ জন্যই তারা সব ধর্মকে অবমাননা করে। সব ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত করে। নিজেদের অপকর্ম ও অপরাধের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পার পেতে চায় আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার শুভ বিজয়া উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগের সমর্থনে একের পর এক উদাহরণ দিয়ে এবং বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মুখে হিন্দুপ্রীতির কথা বললেও আওয়ামী লীগের আমলেই হিন্দুরা বেশি হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখনো হচ্ছে। সরকার এমনকি র‌্যাব ও পুলিশকে দিয়েও বিশিষ্ট হিন্দু ব্যক্তিদের হত্যা করিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে। তাদের হাত থেকে খ্রিস্টানদের গীর্জাও রেহাই পাচ্ছে না। হিন্দুদের জায়গা-জমি এবং দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আওয়ামী লীগের গুন্ডা-সন্ত্রাসীরাই দখল করে নিচ্ছে। তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অনেক হিন্দু দেশত্যাগ করতে এবং ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সে ধারা এখনো চলছে। শেখ হাসিনার অতি বিশ্বস্ত মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী চরম উস্কানিমূলক সাম্প্রতিক বক্তব্যের উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেছেন, এ সরকারের অধীনে কোনো ধর্ম ও বর্ণের মানুষই নিরাপদ নয়। সে জন্যই সরকারকে হটিয়ে আওয়ামী লীগের কবল থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করার আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের নেত্রী।
আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়ার কথাগুলো খুবই সরাসরি এবং সুস্পষ্ট। পেছনের ঘটনাবলী ও ইতিহাস সম্ভবতঃ তার কথার পক্ষেই  সাক্ষ্য দিচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে অসংখ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয়দানকারীরাই আড়াল নিয়ে আওয়ামী লীগই হিন্দুদের ওপর নানামুখী নির্যাতন অনেক বেশি চালিয়েছে। ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে চিহ্নিত করে হিন্দুদের সম্পত্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্যও আওয়ামী লীগাররাই বেশি দখল করেছে। এসব বিষয়ে দলটির জেলা পর্যায়ের শুধু নয়, কেন্দ্রীয় অনেক নেতার নামও সংবাদপত্রের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কারো বিচার বা শাস্তি হয়নি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বরং পরবর্তীকালে পুরস্কার হিসেবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন। অনেকে এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যে হিন্দুরা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশ এবং মুসলিম বিরোধী কৌশলের ভিত্তিতে তাদেরকে উল্টো আওয়ামী লীগের সমর্থক বানানো হয়েছে। বামফ্রন্ট তথা কমিউনিস্ট পার্টির বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে এই প্রচারণা পর্যন্ত চালানো হয়েছিল যে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গঠিত চারদলীয় জোট সরকারের দমন-নির্যাতনের কারণেই নাকি লাখ লাখ হিন্দু দেশত্যাগ করতে এবং ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে! সে প্রচারণা হালে পানি পায়নি সত্য কিন্তু সাধারণভাবে ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে এখনো এমন ধারণাই রয়েছে যে, বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং এ দলটি ক্ষমতায় থাকলেই সংখ্যালঘু তথা হিন্দুরা নিরাপদে বসবাস করতে পারে! এ ধরনের ধারণা ও বিশ্বাস যে মোটেই সত্য নয় বরং আওয়ামী লীগের আমলেই যে হিন্দুরা বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে- সে কথাটাই স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। উদাহরণও তিনি যথার্থই দিয়েছেন। যেমন পুরনো ঢাকার মেহনতী যুবক বিশ্বজিৎ থেকে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তাদের কেউই হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি। প্রত্যেককে বরং নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারকে তো বিশেষ একটি বাহিনীকে দিয়ে সুচিন্তিতভাবেই হত্যা করিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তার লাশও পাওয়া গেছে নদীর পানিতে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন- বলে শুধু নয়, ইতিহাস এবং বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও মনে করি, মুখে বললেও এবং নানা কৌশলে প্রচারণা চালালেও আওয়ামী লীগ কোনো দিক থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক দল নয়। দলটির নেতা-কর্মীরা ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে থাকেন মাত্র- যে মুখোশ খসে পড়ে যখন-তখন। শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় এবং সংসদেও মুখোশ পরা অনেককেই পাওয়া যাবে। একই কারণে খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সরকারকে বিদায় নিতে বাধ্য করা দরকার, যাতে ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষই সুখে ও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারেন। যাতে কোনো ধর্মের মানুষকেই ধর্মের কারণে নির্যাতিত, অসম্মানিত ও ক্ষতিগ্রস্ত না হতে হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads