এটা আর নতুন খবর নয় যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের ‘স্বাধীনতা’ কমতে কমতে শূন্যেরও নিচে নেমে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুদক কর্তাদের নীতি ও ‘সদিচ্ছা’। নানা বাগাড়ম্বরের আড়ালে তারা আসলে সরকারকে তোষণ করতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে ‘দায়মুক্তি’ দেয়ার ব্যাপারে দুদক রেকর্ডের পর রেকর্ড স্থাপন করছে। উদাহরণও রয়েছে রিপোর্টটিতে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ক্ষমতাসীন দলের এক হাজার ৫৯৮ জনকে দুর্র্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক। এ সময় দুর্নীতির ৯০৪টি অভিযোগের মধ্যে ৮৭০টিতে কোনো মামলাই করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ও স্পষ্ট প্রমাণ থাকলেও দুদকের কর্তাব্যক্তিরা নাকি কোনো প্রমাণই পাননি! নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় যাদের আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল তারা ‘ভুল হয়েছে’ বলে অজুহাত দেখিয়েই দুদকের কাছ থেকে পার পেয়ে গেছেন। চলতি বছরে শুধু নয়, ২০১১ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানেও বিস্ময়কর তথ্যই পাওয়া গেছে। এ সময়ে ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ হাজার ৩৪৯ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান নথিভুক্ত করে তাদের প্রত্যেককে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক। সে কারণে অনেক বিশিষ্টজনই ব্যঙ্গ করে দুদককে ‘দায়মুক্তি’ কমিশন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অন্যদিকে একই দুদক কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপারে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সরকারবিরোধী কারো সম্পর্কে বেনামী কোনো চিঠি পেলেও কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যাচ্ছে। সম্পদের হিসাবসহ নানাকিছু জানতে চেয়ে চিঠি হাঁকাচ্ছেন তারা। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করছেন। চলছে অসম্মানিত করার কর্মকা-। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার ব্যাপারেও কর্তাব্যক্তিরা গায়ের ঘাম ঝরাচ্ছেন। সরকারের ইশারাকেই ‘শিরোধার্য’ হিসেবে মেনে চলছেন তারা। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদের এবং তাদের কারো কারো নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ তথ্য-প্রমাণসহ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেও ‘পরীক্ষা-নীরিক্ষা’র নামে নীরবতা অবলম্বন করেছেন তারা। এই ‘পরীক্ষা-নীরিক্ষা’ কিন্তু বিরোধী দলের কারো ক্ষেত্রে করা হয়নি। এখনো করা হচ্ছে না। তাদের ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপেরও কোনো সীমা-পরিসীমা নেই দুদকের। এমনকি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুদক। সরকারবিরোধী অনেক বিশিষ্টজনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দুদক। এভাবে বিরোধী দলের ব্যাপারে যথেষ্ট ‘উদার’ দুদককেই ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে দারুণ ‘সংযমী’ দেখা যাচ্ছে। ‘দায়মুক্তি’ ও রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের ছোটবড় সকলেই।
বলা দরকার, শুধু সাম্প্রতিক কার্যক্রমের কারণে দুদকের বিরুদ্ধে আপত্তি ও প্রতিবাদ ওঠেনি। বাস্তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুদক ক্ষমতাসীনদের তোষণের একই নীতি ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে। সরকারী দলের লোকজন বিনা টেন্ডারে শত শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিলেও ঠোঁটে আঙুল লাগিয়ে বসে থেকেছে দুদক। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ নিলেও সরকারের পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু কোনো একজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের খবর শোনা যায়নি। সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বিশেষ গোষ্ঠীর লোকজন শেয়ার বাজার থেকে সাধারণ মানুষের ২৫ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। তারপরও চুপটি মেরে থেকেছেন দুদকের কর্তাব্যক্তিরা। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সম্পদের নানা আকারের পাহাড় তৈরি করেছেন। কিন্তু দুদকের মুখে রা’টি পর্যন্ত শোনা যায়নি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাকুক, অধিকাংশ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পর্যন্ত করেনি দুদক। সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তো একবার বলেই বসেছিলেন যে, এসব বিষয়ে তাদের নাকি কিছুই ‘করণীয় নেই’! মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের তথা সরকারের কারো বিরুদ্ধে ‘হুট করে’ কিছু করাও নাকি ‘ঠিক’ হবে না! বলা বাহুল্য, মূলত এই তোষণ নীতির কারণেই রেহাই পেয়ে গেছেন অন্তত পাঁচ হাজার ৩৪৯ জন। একই কারণে দুদককেও আজকাল ‘দায়মুক্তি’ কমিশন হিসেবে ব্যঙ্গ করা হচ্ছ।
আমরা দুদকের এ ধরনের নীতি ও কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই। দফায় দফায় আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার দুদককে ‘দন্তহীন বাঘ’ বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সত্য, কিন্তু তার চেয়ে বড় সত্য হলো, কর্তাব্যক্তিরা এমন ন্যক্কারজনকভাবেই চামচামো ও ধান্দাবাজির কাজ-কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন, যার সুযোগ নিয়ে সরকার দুদকের হাত-পা এবং নখও কেটে ফেলতে পেরেছে। সব মিলিয়ে দুদক এখন ‘মিউ মিউ করা বেড়ালে’ পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। দুর্নীতি দমনের প্রধান যে উদ্দেশ্য নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কোনোরকম গাফিলতি ও তোষণনীতি চলতে দেয়া যায় না। এর ফলে কমে যাওয়ার পরিবর্তে দুর্নীতি বরং বাড়তে থাকবে। কারণ, প্রমাণিত সত্য হলো, দুর্নীতি সব সময় ক্ষমতাসীনরাই বেশি করেন। এখনো তারাই করছেন। এভাবে চলতে থাকলে দুদক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। এজন্যই দুদক কর্তাদের উচিত কেবলই বিরোধী দলের পেছনে দৌড়ে ঘাম ঝরানোর এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে দায়মুক্তি দেয়ার পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। ‘সদিচ্ছা’ সবার বেলাতেই সমানভাবে দেখানো দরকার। তা না করে কেবলই সরকারকে খুশি করার মাধ্যমে চাকরি টিকিয়ে রাখার এবং পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা করা হলে কর্তাব্যক্তিদের পরিণতি এক সময় হাস্যকর হয়ে উঠতে পারে। তখন কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের মতো একথা বলে হালে পানি পাওয়া যাবে না যে, দুদককেও হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটার জন্য নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল!
অন্যদিকে একই দুদক কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপারে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সরকারবিরোধী কারো সম্পর্কে বেনামী কোনো চিঠি পেলেও কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যাচ্ছে। সম্পদের হিসাবসহ নানাকিছু জানতে চেয়ে চিঠি হাঁকাচ্ছেন তারা। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করছেন। চলছে অসম্মানিত করার কর্মকা-। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার ব্যাপারেও কর্তাব্যক্তিরা গায়ের ঘাম ঝরাচ্ছেন। সরকারের ইশারাকেই ‘শিরোধার্য’ হিসেবে মেনে চলছেন তারা। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদের এবং তাদের কারো কারো নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ তথ্য-প্রমাণসহ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেও ‘পরীক্ষা-নীরিক্ষা’র নামে নীরবতা অবলম্বন করেছেন তারা। এই ‘পরীক্ষা-নীরিক্ষা’ কিন্তু বিরোধী দলের কারো ক্ষেত্রে করা হয়নি। এখনো করা হচ্ছে না। তাদের ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপেরও কোনো সীমা-পরিসীমা নেই দুদকের। এমনকি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুদক। সরকারবিরোধী অনেক বিশিষ্টজনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দুদক। এভাবে বিরোধী দলের ব্যাপারে যথেষ্ট ‘উদার’ দুদককেই ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে দারুণ ‘সংযমী’ দেখা যাচ্ছে। ‘দায়মুক্তি’ ও রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের ছোটবড় সকলেই।
বলা দরকার, শুধু সাম্প্রতিক কার্যক্রমের কারণে দুদকের বিরুদ্ধে আপত্তি ও প্রতিবাদ ওঠেনি। বাস্তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুদক ক্ষমতাসীনদের তোষণের একই নীতি ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে। সরকারী দলের লোকজন বিনা টেন্ডারে শত শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিলেও ঠোঁটে আঙুল লাগিয়ে বসে থেকেছে দুদক। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ নিলেও সরকারের পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু কোনো একজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের খবর শোনা যায়নি। সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বিশেষ গোষ্ঠীর লোকজন শেয়ার বাজার থেকে সাধারণ মানুষের ২৫ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। তারপরও চুপটি মেরে থেকেছেন দুদকের কর্তাব্যক্তিরা। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সম্পদের নানা আকারের পাহাড় তৈরি করেছেন। কিন্তু দুদকের মুখে রা’টি পর্যন্ত শোনা যায়নি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাকুক, অধিকাংশ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পর্যন্ত করেনি দুদক। সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তো একবার বলেই বসেছিলেন যে, এসব বিষয়ে তাদের নাকি কিছুই ‘করণীয় নেই’! মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের তথা সরকারের কারো বিরুদ্ধে ‘হুট করে’ কিছু করাও নাকি ‘ঠিক’ হবে না! বলা বাহুল্য, মূলত এই তোষণ নীতির কারণেই রেহাই পেয়ে গেছেন অন্তত পাঁচ হাজার ৩৪৯ জন। একই কারণে দুদককেও আজকাল ‘দায়মুক্তি’ কমিশন হিসেবে ব্যঙ্গ করা হচ্ছ।
আমরা দুদকের এ ধরনের নীতি ও কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই। দফায় দফায় আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার দুদককে ‘দন্তহীন বাঘ’ বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সত্য, কিন্তু তার চেয়ে বড় সত্য হলো, কর্তাব্যক্তিরা এমন ন্যক্কারজনকভাবেই চামচামো ও ধান্দাবাজির কাজ-কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন, যার সুযোগ নিয়ে সরকার দুদকের হাত-পা এবং নখও কেটে ফেলতে পেরেছে। সব মিলিয়ে দুদক এখন ‘মিউ মিউ করা বেড়ালে’ পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। দুর্নীতি দমনের প্রধান যে উদ্দেশ্য নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কোনোরকম গাফিলতি ও তোষণনীতি চলতে দেয়া যায় না। এর ফলে কমে যাওয়ার পরিবর্তে দুর্নীতি বরং বাড়তে থাকবে। কারণ, প্রমাণিত সত্য হলো, দুর্নীতি সব সময় ক্ষমতাসীনরাই বেশি করেন। এখনো তারাই করছেন। এভাবে চলতে থাকলে দুদক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। এজন্যই দুদক কর্তাদের উচিত কেবলই বিরোধী দলের পেছনে দৌড়ে ঘাম ঝরানোর এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে দায়মুক্তি দেয়ার পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। ‘সদিচ্ছা’ সবার বেলাতেই সমানভাবে দেখানো দরকার। তা না করে কেবলই সরকারকে খুশি করার মাধ্যমে চাকরি টিকিয়ে রাখার এবং পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা করা হলে কর্তাব্যক্তিদের পরিণতি এক সময় হাস্যকর হয়ে উঠতে পারে। তখন কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের মতো একথা বলে হালে পানি পাওয়া যাবে না যে, দুদককেও হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটার জন্য নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন