জাতি
হিসেবে, আধুনিক পৃথিবীর মানুষ হিসেবে, দু-চার ফোঁটা বিদ্যা ধারণকারী
হিসেবে, লজ্জায়, আত্মগ্লানিতে, নিজেদের
অধঃপতনে, বিবেকশূন্যতায় একেবারেই হতবাক হয়ে গেছি। ঘটনাটি একজন মৃত
মানুষকে নিয়ে। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের
অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম। গত ১৩ অক্টোবর অত্যন্ত আকস্মিকভাবে অপরিণত বয়সে হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৬ বছর।
ড. পিয়াস করিম ছাত্রাবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির সাথে সংযুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক পড়াশোনা শেষে ১৯৮০ সালে তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর এবং পিএচইডি লাভ করেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রেই বেশ কিছুকাল শিক্ষকতা করেন ড. পিয়াস। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন পিয়াস করিম। মৃদুভাষী, সদালাপী, সদাচারী, বন্ধুবৎসল পিয়াস করিম এরপর টিভির টকশোগুলোতে আসতে শুরু করেন। চৌকস যুক্তি, সাবলীল উপস্থাপনা ভঙ্গিতে অল্প সময়ের মধ্যেই ড. পিয়াস করিম টিভির দর্শক-শ্রোতাদের একজন প্রিয় মুখে পরিণত হন।
এ ক্ষেত্রে কখনোই ছাড় দিয়ে কথা বলেননি পিয়াস করিম। ভর করেননি আপসকামিতায়। খুব স্পষ্ট করে কোদালকে কোদাল বলেছেন। সব সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বলেছেন। ফলে এ দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে পিয়াস করিম হয়ে উঠেছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সারা দেশে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী মহল থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, তার মৃত্যুতে দেশের এই দুঃসময়ে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তার টেলিভিশন টকশোগুলো যারা দেখেছেন, তারা জেনেছেন তিনি ছিলেন আপসহীন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অকুতোভয়-উচ্চকণ্ঠ। নিজের মত প্রকাশে ছিলেন সব সময় অবিচল। ছিলেন নির্ভীক ও আত্মপ্রত্যয়ী। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই সত্য প্রকাশ করতে উপস্থিত থেকেছেন ড. পিয়াস করিম; কিন্তু এখন এই সমাজে সত্য প্রকাশ বড় বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চারিত সত্যকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য দেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার যেমন নানাবিধ গণতন্ত্রবিরোধী, মানুষের মৌলিক অধিকারবিরোধী, ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী আইনকানুন প্রণয়ন করেছে ও করছে; একইভাবে পেটোয়া বাহিনী দ্বারা হামলা চালিয়ে সত্যকণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারের এই পেটোয়া বাহিনী একাধিকবার পিয়াস করিমের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তার বাসভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে; কিন্তু পিয়াস করিম সব সময়ই ছিলেন অবিচল-অকুতোভয়।
তার মৃত্যু সংবাদে শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই তার বাসভবনে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। শুধু চেনা মুখ নয়, গিয়ে হাজির হয়েছিল তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতারাও। পিয়াস করিমের পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ১৫ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ রাখা হবে শহীদ মিনারে। আমাদের হতবাক ও স্তম্ভিত হওয়ার শুরু সেখান থেকেই। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যারা ইতোমধ্যেই অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি করে কুখ্যাতি অর্জন করেছে, তারাসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ঘোষণা করে বসল যে, পিয়াস করিমের লাশ কিছুতেই শহীদ মিনারে আনতে দেয়া হবে না। তাদের সাথে যোগ দিলো পচাগলা দু-একটি বাম ছাত্রসংগঠন। তারা শহীদ মিনারের চার পাশে ব্যানার লাগিয়ে দিলো, ‘পিয়াস করিমের ভার, বইবে না শহীদ মিনার’।
সরকারের শীর্ষ মহলের ইঙ্গিত ছাড়া ছাত্রলীগ ও পচাগলা বাম ছাত্রসংগঠন নিজেরাই এমন ঘোষণা করেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সরকারের মন্ত্রী ও ফটর ফটর নেতারা এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি বটে, তবে ‘শহীদ মিনার এলাকার শান্তি রক্ষার স্বার্থে’ সেখানে কয়েক শ’ পুলিশ মোতায়েন করে একেবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। তাতে সরকারের অবস্থান আর অস্পষ্ট থাকেনি। এর মধ্যে আমাদের আরো এক দফা বিস্মিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন, তাদের অনুমতি ছাড়া পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে আনতে দেয়া হবে না। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন হলে বিবেচনা করে দেখা হবে।
তখন বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। কেননা কোনো বিবেচনায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের ইজারাদার নয়। প্রতিদিন শহীদ মিনারে কোনো না কোনো সংগঠন নানা ধরনের প্রতিবাদ-সমাবেশের আয়োজন করছে। শিক্ষকেরা সেখানে অনশন করেছেন। গার্মেন্টশ্রমিকেরা ব্যানার-ফেস্টুন সাজিয়ে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, এখনো অনেকে করছেন। অনুমতির প্রশ্ন আসেনি; কিন্তু দেশের প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে এবং সরকারের নির্লজ্জ দালালিতে নিজেদের সমর্পণ করলেন। সেখানকার প্রশাসকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের মুখে যেমন চুনকালি লেপে দিলেন, তেমন চুনকালিই দিলেন গোটা জাতির মুখে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটা কিছুতেই প্রত্যাশিত ছিল না।
এই বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা গণতান্ত্রিক চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিভূ। কিন্তু এখানকার দলান্ধ শাসকেরা সেই মর্যাদার আসন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করলেন। অর্থাৎ অযোগ্য দালাল প্রশাসকদের কারণে একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় আরেকবার তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলল। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসকের চরিত্র এমন তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তারা কী শিক্ষা দিচ্ছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে ছাত্রলীগ নামক সরকার দলীয় সংগঠনটির সদম্ভ ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
ছাত্র আমরাও ছিলাম। ’৬০-’৭০-’৮০ দশক জুড়ে সমস্ত ছাত্র আন্দোলনে আমি নিজেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি ২২ বছর ছাত্র ছিলাম। আদু ভাই হিসেবে নয়; অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটে আমাকে এই দীর্ঘ সময় ছাত্র থাকতে হয়েছিল। তখনো ছাত্রলীগ দেখেছি। তাদের ব্যালটবাক্স ছিনতাই দেখেছি। খুন-খারাবি, ছাত্রী অপহরণ, মারামারি দেখেছি; কিন্তু তার পাশাপাশি আরো যেসব ছাত্রসংগঠন ছিল তাদের গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, যুদ্ধ বন্ধের জন্য, শিক্ষার সুুযোগ সম্প্রসারণের জন্য লড়াই করতে দেখেছি। যথাসম্ভব এসব আন্দোলনে শরিক থেকেছি। মেধা-মনন বিকাশের পথ প্রশস্ত করার জন্য জ্ঞানচর্চামূলক সংগঠন গড়ে তুলেছি। কারো বক্তব্যের প্রতিবাদ করার জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছি। বলিনি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তারা পা রাখতে পারবেন না।
আজকে ড. পিয়াস করিমের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিতে দেয়া হলো না ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দলান্ধ প্রশাসনের যোগসাজশে। শফিউল আলম প্রধান তো সত্য কথাই বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা শহীদ মিনার কারো বাবার সম্পত্তি নয়। এখানে যাওয়ার অধিকার সবারই আছে। ড. পিয়াস করিম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পুরনো ছাত্রই স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন; কিন্তু তাদের সবাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বা শহীদ মিনারে আনার কথা কেউ চিন্তাও করেন না; কিন্তু কেউ কেউ সর্বজনশ্রদ্ধেয় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি বলে যান না; কিন্তু তার ঘনিষ্ঠজনেরা সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তো গর্বিত হওয়া উচিত ছিল যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার লাশ শহীদ মিনারে আনা হচ্ছে; কিন্তু নীচতা ও সঙ্কীর্ণতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তাদের প্রভু সরকারকে এমন হীন জায়গায় ঠেলে দিলো। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, একটি ভুঁইফোড় সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনে পুলিশ প্রহরায় শহীদ মিনার এলাকায় একটি ব্যানার টানিয়েছে। সে ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, মানবজমিন সম্পাদক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক ও টকশো আলোচক নূরুল কবির, সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তজা, আইনজীবী ড. তুহিন মালিককে শহীদ মিনার এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সিপি গ্যাং নামের একটি সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ‘আঙুল চুষছেন’, নাকি ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন’? এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষক। তার পরও এ রকম একটি ভুঁইফোড় সংগঠন কী ঔদ্ধত্যে এমন একটি ব্যানার টানানোর সাহস পেল। তবে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ রকম একটি ব্যানার টানানোয় মদদ দিলেন? এরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে। মনে হয় ছাত্রলীগকে মদদ দানের জন্য যেন এই প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ হিসেবে বসানো হয়েছে। মুক্তবুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা, মানবিকতার বিকাশ, বিবেকের উদ্বোধন বা জাগরণ তাদের লক্ষ্য নয়।
আর লক্ষ্য নয় বলেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদদে এমন নির্লজ্জ গণতন্ত্রবিরোধী স্বৈরাচারমুখী কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ ও দু-একটি ভুঁইফোড় সংগঠন করতে পারল। ধিক এই সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এরা মন ও মনন বিকাশের শত্রু। ইতিহাসে এরা ঘৃণার পাত্র হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
ড. পিয়াস করিমকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল; কিন্তু শ্রদ্ধা জানানো আর যুদ্ধ-সঙ্ঘাত এক জিনিস নয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা লাশ নিয়ে হানাহানির প্রচেষ্টা সৃষ্টি করতে চাননি; কিন্তু শুক্রবার সকালে যখন হিমঘর থেকে লাশ তার নিজ বাসায় নিয়ে আসা হলো, তখন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ সেখানে হাজির হয়েছিলেন। দোয়া করেছেন। ফুল দিয়েছেন। শোকে কাতর, পাথর হয়েছেন। এরপর যখন বায়তুল মোকাররমে বাদ জুমা তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো, তখনো হাজার হাজার মানুষ সেখানে তার রুহুর মাগফিরাতের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছেন, তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে আল্লাহ যেন এই সত্যসন্ধিৎসু শিক্ষাবিদকে বেহেশত নসিব করেন।
সেখানেও সরকার চতুর্দিকে শত শত পুলিশ মোতায়েন করে এমন এক যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল যে, মনে হচ্ছিল ভেতরে বিরাট কী জানি হচ্ছে; কিন্তু কিছুই নয়। নামাজে জানাজা, দোয়া আর শ্রদ্ধা নিবেদন। আমিও মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজ করি, তিনি যেন ড. পিয়াস করিমকে বেহেশত নসিব করেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং ক্ষমাশীল।
পিয়াস করিম চলে গেছেন। তিনি আর কখনো সত্য উচ্চারণ নিয়ে টিভিপর্দায় হাজির হবেন না। আর কোনো দিন তার কণ্ঠ থেকে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও নিবর্তকের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ধ্বনি উচ্চারিত হবে না। তিনি বহুকাল এ দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় সত্য প্রকাশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন; কিন্তু যারা শহীদ মিনারে তার লাশ শ্রদ্ধা জানানোর পথে বাধা সৃষ্টি করলেন, তারা ঘৃণিত হিসেবেই সমাজে বিবেচিত হতে থাকবেন। তবে এই নষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সেই লড়াইয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হবো।
ড. পিয়াস করিম ছাত্রাবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির সাথে সংযুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক পড়াশোনা শেষে ১৯৮০ সালে তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর এবং পিএচইডি লাভ করেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রেই বেশ কিছুকাল শিক্ষকতা করেন ড. পিয়াস। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন পিয়াস করিম। মৃদুভাষী, সদালাপী, সদাচারী, বন্ধুবৎসল পিয়াস করিম এরপর টিভির টকশোগুলোতে আসতে শুরু করেন। চৌকস যুক্তি, সাবলীল উপস্থাপনা ভঙ্গিতে অল্প সময়ের মধ্যেই ড. পিয়াস করিম টিভির দর্শক-শ্রোতাদের একজন প্রিয় মুখে পরিণত হন।
এ ক্ষেত্রে কখনোই ছাড় দিয়ে কথা বলেননি পিয়াস করিম। ভর করেননি আপসকামিতায়। খুব স্পষ্ট করে কোদালকে কোদাল বলেছেন। সব সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বলেছেন। ফলে এ দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে পিয়াস করিম হয়ে উঠেছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সারা দেশে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী মহল থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, তার মৃত্যুতে দেশের এই দুঃসময়ে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তার টেলিভিশন টকশোগুলো যারা দেখেছেন, তারা জেনেছেন তিনি ছিলেন আপসহীন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অকুতোভয়-উচ্চকণ্ঠ। নিজের মত প্রকাশে ছিলেন সব সময় অবিচল। ছিলেন নির্ভীক ও আত্মপ্রত্যয়ী। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই সত্য প্রকাশ করতে উপস্থিত থেকেছেন ড. পিয়াস করিম; কিন্তু এখন এই সমাজে সত্য প্রকাশ বড় বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চারিত সত্যকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য দেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার যেমন নানাবিধ গণতন্ত্রবিরোধী, মানুষের মৌলিক অধিকারবিরোধী, ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী আইনকানুন প্রণয়ন করেছে ও করছে; একইভাবে পেটোয়া বাহিনী দ্বারা হামলা চালিয়ে সত্যকণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারের এই পেটোয়া বাহিনী একাধিকবার পিয়াস করিমের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তার বাসভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে; কিন্তু পিয়াস করিম সব সময়ই ছিলেন অবিচল-অকুতোভয়।
তার মৃত্যু সংবাদে শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই তার বাসভবনে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। শুধু চেনা মুখ নয়, গিয়ে হাজির হয়েছিল তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতারাও। পিয়াস করিমের পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ১৫ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ রাখা হবে শহীদ মিনারে। আমাদের হতবাক ও স্তম্ভিত হওয়ার শুরু সেখান থেকেই। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যারা ইতোমধ্যেই অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি করে কুখ্যাতি অর্জন করেছে, তারাসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ঘোষণা করে বসল যে, পিয়াস করিমের লাশ কিছুতেই শহীদ মিনারে আনতে দেয়া হবে না। তাদের সাথে যোগ দিলো পচাগলা দু-একটি বাম ছাত্রসংগঠন। তারা শহীদ মিনারের চার পাশে ব্যানার লাগিয়ে দিলো, ‘পিয়াস করিমের ভার, বইবে না শহীদ মিনার’।
সরকারের শীর্ষ মহলের ইঙ্গিত ছাড়া ছাত্রলীগ ও পচাগলা বাম ছাত্রসংগঠন নিজেরাই এমন ঘোষণা করেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সরকারের মন্ত্রী ও ফটর ফটর নেতারা এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি বটে, তবে ‘শহীদ মিনার এলাকার শান্তি রক্ষার স্বার্থে’ সেখানে কয়েক শ’ পুলিশ মোতায়েন করে একেবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। তাতে সরকারের অবস্থান আর অস্পষ্ট থাকেনি। এর মধ্যে আমাদের আরো এক দফা বিস্মিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন, তাদের অনুমতি ছাড়া পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে আনতে দেয়া হবে না। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন হলে বিবেচনা করে দেখা হবে।
তখন বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। কেননা কোনো বিবেচনায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের ইজারাদার নয়। প্রতিদিন শহীদ মিনারে কোনো না কোনো সংগঠন নানা ধরনের প্রতিবাদ-সমাবেশের আয়োজন করছে। শিক্ষকেরা সেখানে অনশন করেছেন। গার্মেন্টশ্রমিকেরা ব্যানার-ফেস্টুন সাজিয়ে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, এখনো অনেকে করছেন। অনুমতির প্রশ্ন আসেনি; কিন্তু দেশের প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে এবং সরকারের নির্লজ্জ দালালিতে নিজেদের সমর্পণ করলেন। সেখানকার প্রশাসকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের মুখে যেমন চুনকালি লেপে দিলেন, তেমন চুনকালিই দিলেন গোটা জাতির মুখে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটা কিছুতেই প্রত্যাশিত ছিল না।
এই বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা গণতান্ত্রিক চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিভূ। কিন্তু এখানকার দলান্ধ শাসকেরা সেই মর্যাদার আসন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করলেন। অর্থাৎ অযোগ্য দালাল প্রশাসকদের কারণে একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় আরেকবার তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলল। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসকের চরিত্র এমন তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তারা কী শিক্ষা দিচ্ছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে ছাত্রলীগ নামক সরকার দলীয় সংগঠনটির সদম্ভ ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
ছাত্র আমরাও ছিলাম। ’৬০-’৭০-’৮০ দশক জুড়ে সমস্ত ছাত্র আন্দোলনে আমি নিজেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি ২২ বছর ছাত্র ছিলাম। আদু ভাই হিসেবে নয়; অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটে আমাকে এই দীর্ঘ সময় ছাত্র থাকতে হয়েছিল। তখনো ছাত্রলীগ দেখেছি। তাদের ব্যালটবাক্স ছিনতাই দেখেছি। খুন-খারাবি, ছাত্রী অপহরণ, মারামারি দেখেছি; কিন্তু তার পাশাপাশি আরো যেসব ছাত্রসংগঠন ছিল তাদের গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, যুদ্ধ বন্ধের জন্য, শিক্ষার সুুযোগ সম্প্রসারণের জন্য লড়াই করতে দেখেছি। যথাসম্ভব এসব আন্দোলনে শরিক থেকেছি। মেধা-মনন বিকাশের পথ প্রশস্ত করার জন্য জ্ঞানচর্চামূলক সংগঠন গড়ে তুলেছি। কারো বক্তব্যের প্রতিবাদ করার জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছি। বলিনি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তারা পা রাখতে পারবেন না।
আজকে ড. পিয়াস করিমের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিতে দেয়া হলো না ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দলান্ধ প্রশাসনের যোগসাজশে। শফিউল আলম প্রধান তো সত্য কথাই বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা শহীদ মিনার কারো বাবার সম্পত্তি নয়। এখানে যাওয়ার অধিকার সবারই আছে। ড. পিয়াস করিম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পুরনো ছাত্রই স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন; কিন্তু তাদের সবাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বা শহীদ মিনারে আনার কথা কেউ চিন্তাও করেন না; কিন্তু কেউ কেউ সর্বজনশ্রদ্ধেয় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি বলে যান না; কিন্তু তার ঘনিষ্ঠজনেরা সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তো গর্বিত হওয়া উচিত ছিল যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার লাশ শহীদ মিনারে আনা হচ্ছে; কিন্তু নীচতা ও সঙ্কীর্ণতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তাদের প্রভু সরকারকে এমন হীন জায়গায় ঠেলে দিলো। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, একটি ভুঁইফোড় সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনে পুলিশ প্রহরায় শহীদ মিনার এলাকায় একটি ব্যানার টানিয়েছে। সে ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, মানবজমিন সম্পাদক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক ও টকশো আলোচক নূরুল কবির, সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তজা, আইনজীবী ড. তুহিন মালিককে শহীদ মিনার এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সিপি গ্যাং নামের একটি সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ‘আঙুল চুষছেন’, নাকি ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন’? এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষক। তার পরও এ রকম একটি ভুঁইফোড় সংগঠন কী ঔদ্ধত্যে এমন একটি ব্যানার টানানোর সাহস পেল। তবে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ রকম একটি ব্যানার টানানোয় মদদ দিলেন? এরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে। মনে হয় ছাত্রলীগকে মদদ দানের জন্য যেন এই প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ হিসেবে বসানো হয়েছে। মুক্তবুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা, মানবিকতার বিকাশ, বিবেকের উদ্বোধন বা জাগরণ তাদের লক্ষ্য নয়।
আর লক্ষ্য নয় বলেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদদে এমন নির্লজ্জ গণতন্ত্রবিরোধী স্বৈরাচারমুখী কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ ও দু-একটি ভুঁইফোড় সংগঠন করতে পারল। ধিক এই সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এরা মন ও মনন বিকাশের শত্রু। ইতিহাসে এরা ঘৃণার পাত্র হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
ড. পিয়াস করিমকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল; কিন্তু শ্রদ্ধা জানানো আর যুদ্ধ-সঙ্ঘাত এক জিনিস নয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা লাশ নিয়ে হানাহানির প্রচেষ্টা সৃষ্টি করতে চাননি; কিন্তু শুক্রবার সকালে যখন হিমঘর থেকে লাশ তার নিজ বাসায় নিয়ে আসা হলো, তখন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ সেখানে হাজির হয়েছিলেন। দোয়া করেছেন। ফুল দিয়েছেন। শোকে কাতর, পাথর হয়েছেন। এরপর যখন বায়তুল মোকাররমে বাদ জুমা তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো, তখনো হাজার হাজার মানুষ সেখানে তার রুহুর মাগফিরাতের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছেন, তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে আল্লাহ যেন এই সত্যসন্ধিৎসু শিক্ষাবিদকে বেহেশত নসিব করেন।
সেখানেও সরকার চতুর্দিকে শত শত পুলিশ মোতায়েন করে এমন এক যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল যে, মনে হচ্ছিল ভেতরে বিরাট কী জানি হচ্ছে; কিন্তু কিছুই নয়। নামাজে জানাজা, দোয়া আর শ্রদ্ধা নিবেদন। আমিও মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজ করি, তিনি যেন ড. পিয়াস করিমকে বেহেশত নসিব করেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং ক্ষমাশীল।
পিয়াস করিম চলে গেছেন। তিনি আর কখনো সত্য উচ্চারণ নিয়ে টিভিপর্দায় হাজির হবেন না। আর কোনো দিন তার কণ্ঠ থেকে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও নিবর্তকের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ধ্বনি উচ্চারিত হবে না। তিনি বহুকাল এ দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় সত্য প্রকাশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন; কিন্তু যারা শহীদ মিনারে তার লাশ শ্রদ্ধা জানানোর পথে বাধা সৃষ্টি করলেন, তারা ঘৃণিত হিসেবেই সমাজে বিবেচিত হতে থাকবেন। তবে এই নষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সেই লড়াইয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হবো।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন