সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৪

লতিফ সিদ্দিকীর অব্যাহতি ও কিছু প্রশ্ন


সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ সদস্য ও ডাক, তার টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের এক নং দফার গ. উপদফা অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান ঘটানোর নির্দেশ প্রদান করেন। প্রজ্ঞাপনে তাকে অপসারণের কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
অপরদিকে জনাব সিদ্দিকীকে প্রেসিডিয়াম থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদ কেন বাতিল হবে না এই মর্মে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশও প্রদান করা হয়েছে।
লতিফ সিদ্দিকীকে সরকার ও আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড মন্ত্রিত্বসহ দলের সকল পদ ও পদবী থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছেন না তার উপকার করেছেন ভবিষ্যৎ ইতিহাসই তার প্রমাণ দিবে। লতিফ সিদ্দিকী একজন দাগী ক্রিমিন্যাল, দুর্নীতিগ্রস্ত ও নৈতিকস্খলনের দোষে দুষ্ট একজন ধর্মভ্রষ্ট রাজনীতিক। তার অতীত ও বর্তমান ইতিহাস কলঙ্কজনক। আশির দশকে তিনি আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন এবং কারাগারে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী এরশাদ আমলে ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচনে  এমপি হয়ে প্রভাব খাটিয়ে তাকে কারামুক্ত করেছিলেন। এই ক্রিমিনালকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তার প্রেসিডিয়াম সদস্য করে জাতীয় নেতা বানিয়েছেন। তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে মন্ত্রীর পদ এবং আসনকে কলঙ্কিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সফরসঙ্গী হিসেবে তাকে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হজ্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তিনি আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অপমান করেছেন।
তার ভাষায়, “আমি হজ্ব ও তাবলীগের বিরোধী। এই হজ্বে যে কত ম্যান পাওয়ার নষ্ট হয় তার ইয়ত্তা নেই। হজ্বের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গিয়েছেন। এদের কোন কাম নেই, প্রডাকশন নেই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজ্বে যায় পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।” তিনি হজ্বের শুরু প্রসঙ্গে বলেন, “আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করলো, এই জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে? তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে, আমার অনুসারীরা বছরে একবার একসাথে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয় ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী হজ্বের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনকেও অস্বীকার করেছেন। পবিত্র কুরআনে হজ্বের পটভূমি ও ইতিহাস তাৎপর্য এবং উপকারিতা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা আল হজ্জ-এর ২৬-২৮ নং আয়াত, সূরা ইব্রাহীম-এর ৩৫-৩৭ নং আয়াত, সূরা আল-বাকারার ১২৫-১২৯ নং আয়াত, সূরা আল-আনকাবুতের ৬৭ নং আয়াত, সূরা আলে ইমরান-এর ৯৬-৯৭ নং আয়াত, সূরা আল বাকারার ১২৪ নং আয়াতে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। হজ্ব ইসলামের একটি পবিত্র ইবাদত এবং পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “মানুষের উপর আল্লাহর হক এই যে, এই কাবাঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ্য যাদের আছে তারা হজ্ব করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করতে আসবে না) তারা জেনে রাখুক যে আল্লাহ সৃষ্টি জগতের মুখাপেক্ষী নন।” (সূরা আল-ইমরান৯৭ আয়াত)
উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের একজন সিনিয়র মন্ত্রী যখন হজ্বের ইতিহাস বিকৃত করেন এবং আল্লাহর একটি ফরজ ইবাদতকে উপহাস করেন তখন তার এবং তার নিয়োগদাতার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার ব্যক্তব্যটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, তিনি আল্লাহ এবং আল্লাহর নবীকেও বিশ্বাস করেন না। যে রাসূল (সা.)কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহতায়ালা বিশ্ব ব্রহ্মা- সৃষ্টি করতেন না, যাকে মানবজাতির জন্য উৎকৃষ্টতম আদর্শ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, যাকে তিনি সাক্ষ্য ও সুসংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং একটি উজ্জ্বল আলোক শিখা হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং যাকে হেদায়াত ও সত্যদ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি এই সত্যদ্বীনকে সকল দ্বীনের ওপর চূড়ান্তভাবে বিজয়ী করতে পারেন সেই মুহাম্মদ (সা.)কে লতিফ সিদ্দিকী রাসূল (সা.) হিসেবে পরিচয় দেননি, দিয়েছেন আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ হিসেবে এবং জাজিরাতুল আরবের সবাইকে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করে সাহাবা কেরামদেরও চরিত্র হনন করেছেন। তার এই র্ধষ্টতা ক্ষমার অযোগ্য।
লতিফ সিদ্দিকী তার অপর এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পুত্র ও তার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগে তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন এবং একটি বোমা ফাটানো তথ্য দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রতি মাসে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেতন গ্রহণ করেন যা বিশ্বের শক্তিধর ও ধনী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ১ বছরের বেতন-ভাতা থেকেও বেশি। তার দেয়া এই তথ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর অথবা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এর প্রতিবাদ করা হয়নি।
লতিফ সিদ্দিকীকে তার পদপদবি থেকে অব্যাহতি দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা রুজু করা হয়নি। ফলে জনমনে যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কোটি কোটি মুসলমানের ঈমান আকীদা ও ধর্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত হানার জন্য পদ হারালেন, না প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার পুত্র জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলা ও তার বেতন-ভাতার তথ্য ফাঁস করার জন্য মন্ত্রিত্ব ও নেতৃত্ব হারালেন তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকার যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের বরেণ্য আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে তাদের গ্রেফতার করতে পারেন সেখানে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে চাকরিচ্যুত করার পরও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না এ বিষয়টি পরিষ্কার নয় এবং পরিষ্কার নয় বলেই মানুষ সন্দেহ করছেন যে, ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার জন্য নয়, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অন্য কারণে। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এটি একটি নাটকও হতে পারে বলে অনেকের অভিযোগ।
লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী তাকে পাগলের বংশধর বলে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি সিলেট বিমানবন্দরে তিনি বলেছেন, এই পরিবারের সবাই নিয়িন্ত্রণহীন। বলাবাহুল্য এই পাগলের বংশধরকে তিনি ২০০৯ সালে তার নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভায় বস্ত্র মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং ঐ মন্ত্রিসভার ৫ বছর পর্যন্ত তার আকাম-কুকাম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার সব কিছুতেই সন্তুষ্ট হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মন্ত্রিসভার আরো বড় মন্ত্রণালয় তথা ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার  ওপর অর্পণ করেছেন। অবশ্য অনেকেই আমাদের সরকারের অনেক মন্ত্রীর যোগ্যতা ও মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যে মন্ত্রী ৯ তলা ১টি ভবন বিরোধী দলের  লোকেরা ঝাঁকুনি দিয়ে ফেলে দেয়া তত্ত্ব আবিষ্কারর করেন এবং ১টি দরিদ্র দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে লুট করা ৪০০০ কোটি টাকাকে পিনাট বলে অভিহিত করেন এবং কথায় কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মকে উপহাস ও অবজ্ঞা করেন তার এবং তাদের মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ তার যাত্রার শুরু থেকেই ধর্মের উপর আঘাত হেনে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করা শুরু করেছেন। তারা তাদের যাত্রাপথে ধার্মিক ব্যক্তি, আলেম-ওলামা ও দাড়ি-টুপিধারী ব্যক্তিদের প্রধান শত্রু বলে গণ্য করেন। ধর্মকে দেশ থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলছেন। গঠনতন্ত্রের আকীদা বিশ্বাসে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্বের উল্লেখ থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন এবং সারাদেশে ইসলামী আকীদায় বিশ্বাসী দল ও তাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগ এনে আলেম ওলামাদের এবং সমাজ-ভালো মানুষদের যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে বিচার করছেন। তারা তাফসীর মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছেন। কুরআন হাদিস ও ইসলামী বই প্রস্তককে ‘জঙ্গি সাহিত্য’ ও ‘জিহাদী সাহিত্য’ আখ্যায়িত করে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা অব্যাহত রেখেছেন। এই তারাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে শাস্তি দেবেন একথা বিশ্বাস করা কঠিন।
আর যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার এমন সদস্য খুব কম পাওয়া যাবে যিনি বা যারা এই দেশের মানুষ বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করছেন না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের পূজা উদ্বোধন করতে গিয়ে তাদের বিশেষ দেবীর নাম উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি গজের পীঠে চড়ে ধরাধামে অবতীর্ণ হওয়ায় দেশব্যাপী ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে তখন কি তৌহিদী জনতার ঈমানে আঘাত লাগে না?
আগেই বলেছি, ধর্ম বিশেষ করে ইসলামের উপর আঘাত হানা আওয়ামী লীগের অনেক নেতানেত্রী ও মন্ত্রীর সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
ফতোয়া ইসলমাী শরীয়ার দৃষ্টিতে দিকনির্দেশনা প্রদানের একটি স্বীকৃত বাহন। এটি ইসলামী জ্ঞানসমৃদ্ধ দূরদর্শী আলেমদের কাজ। অথচ ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে। পাটমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯ সালে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ধর্ম হচ্ছে তামাক ও মদের মতো নেশা। কওমী মাদরাসা সম্প্রসারণে ভীত হয়ে রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ব্যাঙের ছাতার মতো সারাদেশে কওমী মাদরাসা গজিয়ে উঠছে! আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ কওমী মাদরাসাকে জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র বলে অভিহিত করেছেন। গত মেয়াদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া বলেছিলেন, রাসূল (সাঃ) মসজিদে নববীর অর্ধেক হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। কত বড় মিথ্যাচার! ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ইমামদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বিদেশী নর্তক-নর্তকীর বল ও টুইট ড্যান্স প্রদর্শন করিয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরাই নবীর প্রকৃত উম্মত। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, আমি হিন্দুও নই, মুসলিমও নেই। সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলবো। এইটি ইমাম ওলামা লীগের এক সম্মেলনে ২০১০ সালে বলেছেন দেশে ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আর এই ইসলামের প্রবর্তক হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আরও বলেছেন, জামায়াত নেতারা রোজা রাখেন ঠিকই, কিন্তু ইফতার করে হুইস্কি দিয়ে। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর ‘পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে খলিফাতুল মুসলিমীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ মুজিবকে খলিফাতুল মুসলেমীন বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের ঈমান। এর যারা বিরোধিতা করেন তারা কুরআনকে অস্বীকার করেন। ২০০৯ সালের ৩১ নভেম্বর আওয়ামী ঘরানার বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধিতা করা তথা আওয়ামী লীগকে সমর্থন না করা কুফরি। এটা করা হলে ইসলাম থেকে যে কোনো ব্যক্তি খারিজ হয়ে যাবে। রমনার কালীমন্দির উদ্বোধনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি সুধাংশু শেখর হালদার বলেছিলেন, ‘মাওলানা-মওলভী ও মোল্লাদের কেটে তাদের রক্ত মা কালীর পায়ের নিচে না দিলে মা কালী জাগবে না।’
উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর প্রত্যেকটিই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এই অবস্থায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধাপ্পাবাজি নয় তা কি বুদ্ধিমান কেউ বিশ্বাস করবেন? আওয়ামী লীগে বা তার জোটে লতিফ সিদ্দিকী একজন নন, বহু। তাদের সবাইকে শাস্তি দেয়ার সাহস কি দলটির আছে?
ড. মোঃ নূরুল আমিন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads