বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

এবার ‘সরকারি নির্দেশে' খালেদা জিয়ার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বন্ধ! এ কোন ধরনের গণতান্ত্রিক আচরণ!!!!!!!!!



by Abdul Aziz on Thursday, 29 March 2012 at 09:14 ·
ব্যক্তি, বাক স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে বর্তমান সরকার যেন ক্রমেই উল্টো পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধাদানের পর এবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করল। সাধারণ কোনো অনুষ্ঠান এটি ছিল না। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ ঘটনার মাধ্যমে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হলো- গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বর্তমানে দেশ কোন পর্যায়ে রয়েছে। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতার অনুষ্ঠান যেখানে ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় কতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে, তা আঁচ করা কঠিন নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণতান্ত্রিক অধিকারহরণের অসংখ্য অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে অধিকারহরণের এ অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। কিন' সরকার এসবে কোনো গা করছে না।
এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার অনুষ্ঠান ছিল না। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর লিখিত পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের কথা ছিল। এসব বইয়ের সম্পাদক ও লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল জি-৯ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। নির্দোষ এ অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি বারবার হেনস্তা হয়েছে। সরকারের আচরণ কতটা অগণতান্ত্রিক স্রেফ তাদের বিরত রাখার অন্যায় অপচেষ্টাটি দেখলে তা বোঝার বাকি থাকে না। তারা দুই সপ্তাহ আগে হোটেল সোনারগাঁ ও বুকিং দেয়। এক সপ্তাহ আগে হোটেল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ তাদের বুকিং বাতিল করে দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, সরকারের শীর্ষস্হানীয় ব্যক্তির অনুষ্ঠান থাকায় তারা এ অনুষ্ঠানটি বাতিল করেছে। একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান কেন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির অনুষ্ঠানের কারণে বাতিল হবে- এটা ঠিক বোঝা যায়নি। কোনো রকম হইচই বা ক্ষতিপূরণের পদক্ষেপ না নিয়ে পরে জি-৯ হোটেল রূপসী বাংলায় এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বুকিং দেয়। আয়োজকেরা নিশ্চিত ছিলেন এবার কোনো ঝামেলা হবে না। তারা অনুষ্ঠানের আগের দিন ভেনু দেখতে গেলে এবারো হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে দেয়। ফোনে বাতিলের বিষয়টি জানানোর পর হোটেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে খুদে বার্তাও পাঠান। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই বার্তা থেকে জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্হার নির্দেশনায় তারা এ অনুষ্ঠানটি বাতিল করেন। কেন অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হলো- এবারো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সন্তোষজনক কোনো উত্তর নেই। সংবাদমাধ্যমগুলো হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকার যখন নির্বাহী আদেশে এভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, সে সরকারকে কিভাবে গণতান্ত্রিক বলা যেতে পারে? স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে যেভাবে তাকে বাধা দেয়া হলো এটাও নজিরবিহীন। এ ধরনের পরিসি'তিতে জনভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক দল যদি সরকারকে প্রতিরোধ করতে যায়, সেটাকে অন্যায় বলা যাবে না। মোড়ক উন্মোচন নিয়ে জি-৯ ও বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে কেবল এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ঘটনা নিয়ে মৌখিক প্রতিবাদের বাইরে কোনো কর্মসূচি তারা দেয়নি। বিরোধী দলের এ ধরনের ধৈর্যধারণকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে সরকার একে কেবল সুযোগ হিসেবে ধরে নিয়ে একে একে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারহরণের মাত্রা বৃদ্ধি করলে পরিণাম অত্যন্ত খারাপ কিছু হবে বলেই ধারণা করা যায়। আমরা মনে করি, সরকার এ ধরনের অন্যায় আচরণ থেকে পিছু হটবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হিসেবে জনগণের অধিকারের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হবে- সেই প্রত্যাশা করে সবাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads