শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২

বিরোধী দলের মানববন্ধনে আওয়ামী সমর্থকদের হামলা : পঙ্গু গণতন্ত্রকে হত্যায় সচেষ্ট আ.লীগ : ফারুক




সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের হামলা ও ভাংচুরে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে পারেনি বিএনপি সমর্থিত দেশনেত্রী পরিষদ নামে একটি সংগঠন। পুলিশের সামনেই প্রজন্ম লীগের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা মাইক ও রিকশা ভাংচুর করে দেশনেত্রী পরিষদের কর্মীদের তাড়িয়ে দেয়। হামলায় দেশনেত্রী পরিষদের কর্মী শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও বৃদ্ধ এক রিকশাচালক আহত হন।
দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক প্রধান অতিথি ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করার কথা ছিল। তারা প্রেস ক্লাব থেকে মানববন্ধনে যোগ দিতে আসার আগেই সরকার সমর্থকদের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। পরে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের মানববন্ধনে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও এমপি গোলাম মাওলা রনি বক্তৃতা করেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে দেশনেত্রী পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধনে দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে গণতন্ত্র পঙ্গু করে ফেলেছে। এখন গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের গেট সংলগ্ন সড়কের পূর্বদিকে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ায়। আর পশ্চিম দিকে দাঁড়ায় বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ও সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের একটি মিছিল এসেই দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তখন ওই মানববন্ধনে মাইকে বক্তৃতা করছিলেন তাঁতী দলের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। দুই মানববন্ধনের মধ্যে পুলিশ অবস্থান নিলে পেছনের সারিতে দাঁড়িয়েই মিন্টু বক্তৃতা চালিয়ে যান। ‘৭২ থেকে ‘৭৫ আওয়ামী
লীগের দুঃশাসন এবং বর্তমান সরকারের শেয়ারবাজার লুটপাট ও মামলা-হামলা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু লীগের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা। ‘রাজাকার’ ও ‘জঙ্গি’ গালি দিয়ে দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়ে তারা। দেশনেত্রী পরিষদ কর্মীদের ধাক্কা, মারধর করে মাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। রিকশায় লাগানো ভাড়া করা মাইক দুটি ভাংচুরের পাশাপাশি বৃদ্ধ রিকশাচালকের ওপরও চড়াও হয় তারা। তাদের হামলায় দেশনেত্রী পরিষদের দুই কর্মী ও রিকশাচালক আহত হন।
হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও কিছু পুলিশ সদস্য দেশনেত্রী পরিষদের কর্মীদের সরিয়ে দেয়। দেশনেত্রী পরিষদের কিছু কর্মী হামলার শুরুতেই প্রেস ক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নেন। পরে অন্যরাও ভেতরে চলে যান। এরপর মানববন্ধনের প্রধান অতিথি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রেস ক্লাবের গেটে আসেন। সরকার সমর্থকদের হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা প্রেস ক্লাব ত্যাগ করেন।
মানববন্ধন পণ্ড হওয়ার পর দেশনেত্রী পরিষদের সভাপতি শহীদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে আমাদের এ মানববন্ধন ছিল পূর্বঘোষিত। সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে জমায়েত হই। পরে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা হঠাত্ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান। মাইক কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করে। তাদের মারধরে আমাদের ১০/১২ জন কর্মী আহত হন।
তবে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের উপদেষ্টা গোলাম মাওলা রনি এমপি বলেন, ‘কোনো মারামারি বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। এটা দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ ঘটনাস্থলে শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোজাফফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কি করবো। হঠাত্ প্রজন্ম লীগের কর্মীরা এসে দেশনেত্রী পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই মুহূর্তে আমাদের করার কিছুই ছিল না।’
গণতন্ত্র হত্যায় সচেষ্ট আ.লীগ—ফারুক : বিকালে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে জিয়া নাগরিক সংসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র পঙ্গু করেছে। এখন পঙ্গু গণতন্ত্রকে হত্যায় সচেষ্ট দলটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনাকে তিনি পূর্বপরিকল্পিত গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন।
বিকালের আলোচনা সভাটিও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় চার্জ গঠনের প্রতিবাদে আয়োজন করা হয়।
জিয়া নাগরিক সংসদের সভাপতি মাইনুদ্দিন মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমির হামিদুর রহমান আযাদ, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জাসাসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads