বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১২

হোমনায় বিএনপি নেতা মুন্সি আব্দুল মতিনকে কুপিয়ে হত্যা

সর্বত্র শোকের ছায়া
গত বুধবার রাত ৯টায় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে হোমনা উপজেলা বিএনপির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও দানবীর মুন্সি মো: আবদুল মতিনকে (৬৫)। এ সময় হামলায় তার এক সঙ্গীও গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মৃত্যু সংবাদে উপজেলার সর্বত্র শোকের ছায়া বিরাজ করছে। রাতে মুন্সিরহাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে ১২ থেকে ১৫ জনের একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী দল মুন্সি মো: আবদুল মতিনের পথ রোধ করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে তার ছোট ভাই সোহরাব হোসেন নিলু জানান। মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজনের নামও বলেছেন আহত মুন্সি মতিন । মুন্সিরহাটসংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পশ্চিমে সন্ত্রাসীদের হামলার কবলে পড়ে তিনি আর্তচিৎকার শুরু করলে বাজারের ব্যবসায়ী, গ্রামের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসতে থাকলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স'ানে কোপালে তার ডান হাত পুরোটা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আহত মতিন মুন্সিকে রাত ১০টায় দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস'্য কমপ্লেক্স গৌরীপুরে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকার জনপ্রিয় এই ব্যক্তির উন্নয়ন কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল দীর্ঘ দিন ধরে তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল বলে তার ছোট ভাই নিলু দাবি করেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মুন্সি আবদুল মতিন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার প্রতিপক্ষ জনৈক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার লোকজন মতিন মুন্সিকে সহ্য করতে পারেননি যদিও ওই নির্বাচনে দু’জন প্রার্থীই হেরে গেছেন অল্প ভোটের ব্যবধানে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত একজন মেম্বার প্রার্থী মতিন মুন্সির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল বলে নিলু মুন্সি জানান।
মতিন মুন্সি মাথাভাঙ্গা ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা এলাকায় মুন্সিরহাট নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাজার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করেও প্রতিপক্ষের লোকজন বিরোধিতার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ারের নির্দেশে মতিন মুন্সি স'ানীয় কৃষি ইনস্টিটিউট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও চক্ষু হাসপাতালের জন্য নিজস্ব জায়গা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি দান করেন। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে হজরত শাহজালাল র: নামে মুন্সিরহাটে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে স'ানীয় মাথাভাঙ্গা ভৈরব উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ইউপি সদস্য হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এলাকার রাস-াঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুতায়ন, মসজিদ, মন্দির, মাজার, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ উন্নয়ন ক্ষেত্রের সর্বত্রই ছিল তার পদচারণা। ভিন্ন দলের ও মতের উন্নয়নবিরোধী লোকেরা সব সময়ই মতিন মুন্সির উন্নয়নকাজে বাধা সৃষ্টি করেছে। অনেকে উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত করতে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে তাকে হয়রানি করেছে। মতিন মুন্সি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বুধবার রাতে থানা পুলিশ ও গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশের বিভিন্ন টিম ঘটনাস'ল পরিদর্শন করেছে। মতিন মুন্সি খুনের ঘটনায় ছোট ভাই নিলু মুন্সি বাদি হয়ে থানায় মামলার প্রস'তি নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নামাজে জানাজার পর তা পারিবারিক কবরস'ানে দাফন করা হয়। জানাজায় বিএনপির স'ায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এমপিসহ হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মতিন মুন্সি বাড়ি যাওয়ার পথে তার সাথে ছিলেন আলাউদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি। সন্ত্রাসীরা তাকেও হত্যার চেষ্টা চালায়। আশঙ্কাজনক অবস'ায় তাকে হোমনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিএনপির স'ায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মতিন মুন্সির বাসভবনে গিয়ে তার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে হোমনা মাথাভাঙ্গা ভৈরব উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। মতিন মুন্সির মৃত্যুতে মুন্সিরহাটের সব দোকানপাট গতকাল সকাল থেকে সারা দিন বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া ভৈরব উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাইমারি স্কুলে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করে স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads