শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১২

মাদার অব দি নেশন

মাদার অব দি নেশন সামছুদ্দীন মাহমুদ লেখক- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ,নিউজার্সী, ইউএসএ গত কয়েকদিন আগে স্টারবাক কপিশপে কপি খেতে খেতে আমার বন্ধু জেসিকা আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে “মেহমুড, হু ইজ ইউর মাদার অব দি নেশন?” আমি তার কথায় একটু আশ্চার্যান্বিত হলাম। জেসিকাকে আমি গত ৫ বছর ধরে চিনি। পুরো নাম জেসিকা ব্রাউন। ২০০০ সাল থেকে সে আরব দেশ কুয়েতে ৩ বছর ছিলো মার্কিন মেরিন সেনা হিসাবে। পশ্চিমবঙ্গে এমেরিকান এমবাসিতে কাজ করেছে ৩ বছর। শ্লামালাইকুম, ওআলাইকুম, সহ সাধারন কথাবার্তার অনেক আরবী সে জানে যা আমি ছোটবেলা থেকে কোরআন ও হাদিস পড়েও শিখতে পারেনি। বাংলা এবং বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে তার অবাধ বিচরন দেখে মাঝে মধ্যে আমি অবাক না হয়ে পারিনা। সে একদিন কথা প্রসংগে আমাকে বলেছিল কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে তার পুর্ব ইতিহাস সম্পর্কে তোমাকে আগে ধারনা নিতে হবে। এর মধ্যে সে আমার পুর্ব পুরুষের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিয়েছে। বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে কেউ আমাকে জিজ্ঞাস করলে আমার মনে হয় পাচ মিনিট আমি বলতে পারবো কিনা সন্দেহ। কিন্তু সে অনর্গল ৫ ঘন্টা বলতে পারবে। তার অন্য গুনের কথা না হয় অন্যদিন বলব। একদিন কথা প্রসংগে আমাকে সে জিজ্ঞাস করে আসলে তুমি আমাকে একটা কথা বলোতো “তোমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হয় কি করে? আমার সহজ উত্তর, কেন? তিনি ৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছেন তাই? জেসিকা আমাকে যেচে ধরল “যদি উনি দেশ স্বাধীন করেন তাহলে উনাকে তো তোমরা “দেশের পিতা করতে পারো” যেমনটি জর্জ ওয়াশিংটনকে আমরা দেশের পিতা বলি। জাতির পিতা কেনো? তুমি কি জান জাতি কি? জাতির পিতা কারা?। এ বিষয়ে আমার অজ্ঞতা এবং অক্ষমতা প্রকাশ করার পর কিন্তু সে সবিস্তারে যা আমাকে জানাল তার মোটামুটি বিবরন এই স্ববিস্তারে আমার জাতিস্বত্তার যে বিবরন তুলে ধরল তা্ এই- “পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয় এবং স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিস্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ বাংলা শাসন করেছিল। অর্থাৎ জাতিরসত্তায় তোমরা আর্য। “জাতিসর্বে গত্যর্থাঃ জ্ঞানার্থাঃ প্রাপ্ত্যর্থাশ্চ” - সমূদায় গমনার্থক ধাতু জ্ঞানার্থক ও প্রাপ্ত্যর্থক। সুতরাং, যারা জ্ঞানশীল অথবা যারা (শাস্ত্রসীমায়) গমন করেন কিংবা যারা (শাস্ত্রের পার) প্রাপ্ত হন, তারাই আর্য। অর্থাৎ তোমরা জ্ঞানশীল জাতী হিসাবে আগমন করেছো। এরপর তোমাদের জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটেছে। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলশ্রুতিতে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, যার রাজধানী ছিল ঢাকায়। তবে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায় । ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনর্বার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয় ; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈরীতার প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়। পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। আওয়ামীলীগ নেতা জনগনের ম্যান্ডেড থাকা স্বত্ত্বে পুর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষনা না করে কালক্ষেপন করছিলেন। আমার কাছে এমন ও প্রমান আছে ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করতে বারন করে তাকে বলেছিলেন “আমি আলোচনার জন্য আসছি, তোমাকে তোমার চাওয়ার চেয়ে বেশী দেওয়া হবে”। এর প্রেক্ষিতে ৭ মার্চ ভাষনে সারা বাংলার জনগনের পুর্ণ সমর্থন থাকলেও শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা করেননি। এর পর ইতিহাস সবার জানা। তিনি ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ সুযোগে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর নির্দেশে ২৫শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে বাঙালিদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে। ২৬শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্ত্র থেকে মেজর জিয়ার সে ঐতিহাসিক ঘোষনা” আমি মেজর জিয়া বলছি..... আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করছি” এর পুর্ব পর্যন্ত দিশেহারা জনগন জানতোই কি করবে? পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হামলাযজ্ঞে রাতারাতি বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। এর প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ৯ মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে লড়াই করে। মুক্তি বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের সহায়তায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে পরাভূত করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করেন। প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সেনা যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক হয়; যাদেরকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে শুরুতে মুজিব সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করত: দেশে বাকশাল নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। রক্ষীবাহিনী দিযে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করেন। হত্যা, খুন, ধর্ষন সহ দেশে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেন । রাতারাতি তার জনপ্রিয়তা শুণ্যের কোটায় এসে উপস্থিত হয়। এ অবস্থায় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তারিখে সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ও স্বীয় দলের কিছু রাজনীতিবিদের সংঘটিত অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব স্বপরিবারে নিহত হন। এখন বল কখন কোন অবস্থায় তোমাদের জাতির অভিবাবক বা পিতা হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমান পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কি তোমাদের স্বাধীনতা ঘোষনা দিয়েছেন না তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জনগনকে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি দিয়েছেন। যার অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তোমরা তাকে জাতির পিতা বানাতে পারো। তাহলে তাকে কেন তোমাদের জাতির পিতা মানতে হবে। তিনি বরং তোমাদের জাতিসত্ত্বার পরিচয়কে ধ্বংশ করতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে বাংলাদেশী না বলে বাঙ্গালী হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। এতে কি তোমাদের জাতিসত্তা, তোমাদের স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত হয়না?। বিশ্বে কেবল তোমরা বাঙ্গালী জাতি না। ভারতের পশ্চিম বঙ্গ আসাম,বিহার সহ বিরাট একটা অঞ্চল বাংলা ভাষাভাষি। জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপট যদি ভাষা হয়ে থাকে তাহলো তো তুমি তাদের বাদ দিতে পারো না। আর এতে তোমদের স্বাধীনতা ভুলণ্ঠিত হয়। আর জাতীয়তাবাদের বিষয় যদি ভুখন্ড থাকে তাহলে অবশ্যই আগে জাতীয়তাবাদ হিসাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে তোমরা মেনে নিতে হবে। শেখ মুজিব ও তার দলের অনুসারীরা তো বাংলাদেশকেই স্বীকার করছেনা। তারা তো নিজেদের বাংলাদেশী বলছেনা। তাহলে কিভাবে তোমরা স্বাধীন হলে। আগে জাতীয়তা ঠিক করো তার পরে জাতির পিতা। তোমরা যদি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ গ্রহন করো এবং তোমরা যদি মনে করো তিনি তোমাদের দেশ স্বাধীন করেছেন, তবে না হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে তোমরা জাতির পিতা বলতে পারো। মোট কথা তোমাদের জাতির সংজ্ঞাটা আগে নির্ধারন করতে হবে। যেমন ধরো তোমরা জাতি হিসাবে কি? বাঙ্গালী না বাংলাদেশী। বিশ্বের উল্লেখ্যযোগ্য লোককে জাতি তাদের জাতির পিতা হিসাবে ঘোষনা করেছে। এদের মধ্যে ধর মহাত্না গান্ধি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ হয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলেও এর আগে সুভাসচন্দ্র বোস ১৯৪৪ সালে তাকে জাতির পিতা উপাধি দেয় কারন তিনি ভারতীয় জাতিকে জন্ম দিয়েছিলেন। সুকর্ণকে ইন্দোনেশিয়া জাতির পিতা বলা হয় কারন তিনি ১৯৪২-১৯৪৫ সালে জাপানি দখল থেকে ইন্দোনেশিয়াকে মুক্ত করে নতুন জাতি হিসাবে তাদের উপহার দিয়েছিলেন। ইবনে সৌদ অব সোদি আরাবিয়াকে জাতির পিতা বলা হয় কারন তিনি সৌদ জাতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সান ইয়েট-সেন কে চাইনিজ জাতির পিতা কারন তিন এককভাবে চায়না জাতির জন্ম দিয়েছেলিন, আহমেদ শাহ দুরানীকে আফগান জাতির পিতা বলা হয় কারন তিনি আফগান জাতির জন্ম দিয়েছেন। জর্জ ওয়াশিংটনকে ফাদার অব হিজ কান্ট্রি বলা হয়, মালয়েশিয়ার টুন্কু আবদুল রহমানকে ফাদার অব ইনডেপেন্ডেন্স বলা হয়, সান নজুমাকে নামিবিয়ার ফাউন্ডিং ফাদার অব নামিবিয়ান নেশন বলা হয়, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ককে ফাদার অব তুর্ক বলা হয়, ক্রোশেয়িার এন্টি স্টারভিক কে ফাদার অব হোমল্যান্ড বলা হয়। এখন তোমরা যদি শেখ মুজিবর রহমানকে স্বাধীনতার স্বপতি বলো তাহলে তাকে ফাদার অব ইনডেপেন্ডেন্স দাও। কিন্তু তিনি তো কোন একক জাতির জন্ম দেয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি বাঙ্গালী ছিলেন তাই তাকে বড়জোড় ফাদার অব বেঙ্গলী দিতে পারো।” জেসিকা এক নিঃশ্বাসে উপরোক্ত কথাগুলো বলে গেল। তার এ কথাগুলোর আমি কোন উত্তর দিতে পারেনি। তার সাথে আমি তর্কও করতে চাইনা। কারন তর্কে তার সাথে পেরে উঠা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে আমার থেকে অনেক অনেক বেশী জ্ঞান রাখে। আর জ্ঞানীদের সাহচর্য্য আমি পছন্দ করি। কিন্তু আজকে সে যখন একটি বিষয় আমার কাছে জানতে চাইল আমি আশ্চার্য হলাম। বললাম, কেন তুমি জানোনা আমাদের “মাদার অব দি নেশন” কে? সে বলল অনেক কিছুই আমি জানি কিন্তু এ বিষয়ে আমার জ্ঞান সীমিত। বিশ্বের খুব কম ভাগ্যবান মহিলাই আছেন যারা মাদার অব নেশন উপাধি পেয়েছেন। পাকিস্তানের ফাতিমা জিন্নাহ, সাউথ আফ্রিকার মা সিলুলু, চীনের সুং চিং-লিং, জার্মানীর ইনজে মেইসেল, জিম্বাবুইর সেলী মুগাবে, গায়ানার জেনেট হেগেন, আর্জেন্টিনার ইভা পেরণ উল্লেখযোগ্য। এসকল গুনি মহিলারা প্রত্যেকে স্বস্ব মহিমায় মহিমান্বিত। জাতিকে করেছিলেন আলোকিত ও অনুকরনীয়।। জেসিকাকে বললাম দেখ জেসি, আমাদের দেশে কৃতি মহিলাই কেবল একজনই আছেন। যদি “মাদার অব দি নেশন” দিতে হয় তাকেই দিতে হয়। জেসি নীল নয়ন জোড়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বল কি? কে সে কৃতী মহিলা? আমি বললাম সে ইতিমধ্যে অনেক উপাধিতে ভুষিত হয়েছেন এর মধ্যে আছেন ডটার অব পিস, জননেত্রী, গনতন্ত্রের মানষকন্যা, দেশরত্ন, যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা ইত্যাদি। ভারতের ত্রিপুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরম্ভ করে মার্কিন মুলকের বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাকে ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভুষিত করেছে। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য অনেক তদবীর করে যাচেছন। তার বিরুদ্ধে ১৬টি দুর্নীতির মামলা হলেও তিনি অবলীলায় বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষ আরোহন করছেন। নিজের স্বামী বেচে থাকতে যাকে বলেছেন মাথায় গণ্ডগোল আছে। আদালত তাকে “রং হেডেড” হিসাবে উপাধি দেওয়ার পরও তিনি ১৬ কোটি মানুষের দেশের প্রধান হিসাবে আছেন। পুর্বের শাসন অর্থাৎ ১৯৯৬-২০০১ সালের কথা বাদ দিলেও বর্তমানে তার শাসনামলে তার বাবার শাসনামলের সাথে হুবহ একটা মিল খুজে পাওয়া যায়। খুন, হত্যা, সীমান্তে হত্যা, ব্যাংক ডাকাতি (বর্তমানে শেয়ার বাজার থেকে কোটি কোটি লোপাট), রক্ষি বাহিনী দিয়ে লক্ষ লক্ষ্ লোকহত্যা(বর্তমানেও র্যা ব ও ছাত্রলীগ বাহিনীর হাতে সমান তালে হত্যা ও গুম) এবং সবোর্পরি পুর্বের বাকশালের মত বর্তমানেও বিরোধীদলকে দমনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েমের পায়তারা ইত্যাদি তার বাবার শাসনামলের চিত্রই আমদের কাছে ফুটে উঠে। তার পিতা দেশের মানুষের এতবড় ক্ষতি করার পরেও যদি জাতির পিতা হতে পারেন তাহলে তার তো “মাদার অব দি নেশন” হওয়ারই কথা। জেসিকা বলল তুমি মনে হয়’ তোমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলছো? আমার উত্তর পাওয়ার আগে জেসিকা হো হো করে হেসে উঠল। শুধু হাসছে আর হাসছে। তার সে হাসি আর থামানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারন কাউকে বিদ্রুপ করে জেসিকা যখন হাসে তার সে হাসি দু ঘন্টা পরে থামে এ আমার পুর্ব অভিজ্ঞতা। অগত্যা আমাকে একাকী স্টারবাক কপিশপ ত্যাগ করতে হলো। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads