শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

গণতন্ত্র হত্যা দিবসের সমাবেশ : আলটিমেটাম মেনে তত্ত্বাবধায়কে না ফিরলে গণঅভ্যুত্থান - বিএনপি




গণতন্ত্র হত্যা দিবসের সমাবেশে বিএনপি নেতারা ৯০ দিনের আলটিমেটাম মেনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে সরকারকে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলেন, আলটিমেটাম মেনে আগামী ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়কে না ফিরলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আর এর পরিণতি হবে নব্বইয়ের আদলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান।
গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ১৯৮২ সালের এই দিনে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করায় বিএনপি দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইএসআইয়ের কাছ থেকে বিএনপির টাকা নেয়ার খবর শেখ হাসিনার সাজানো গল্প বলে মন্তব্য করেন ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এই ধরনের মিথ্যাচার বন্ধ করুন। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এমন মিথ্যা কথা বলেন, তখন লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন,
এম ইলিয়াস আলী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন—আইএসআই নাকি ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়াকে টাকা দিয়েছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। সারাপৃথিবীতে আজকে প্রমাণিত হয়েছে এটা শেখ হাসিনার সাজানো গল্প। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন এমন মিথ্যাচার করেন, তখন আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। ড. মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের এই মিথ্যাচারের পথ পরিহার করার আহ্বান জানান।
ড. মোশাররফ বলেন, ১৯৮৬ সালে এরশাদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন। শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় বললেন, ‘এরশাদের ডাকা নির্বাচনে যারা অংশ নেবে, তারা জাতীয় বেঈমান হবে।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা দেখলাম, তিনি আবার নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। এরশাদের পতন ঠেকাতেই তিনি নির্বাচনে গিয়েছিলেন। সেদিন যদি হাসিনা নির্বাচনে না যেতেন, ১৯৮৬ সালেই এরশাদের পতন হতো।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। সাংবাদিক দম্পত্তির বেডরুমও নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। বিভিন্ন মহাসমাবেশ ও রোডমার্চের মাধ্যমে দেশের মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। এসব দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না। সেজন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে এরশাদ নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে শেখ হাসিনাকে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়েছিলেন। এবার হাসিনা নির্বাচন করে ক্ষমতায় গিয়ে এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানাতে চান। ১৯৮৬ সালের সেই সংসদ দুই বছরও টেকেনি। এবারও ’৮৬ স্টাইলের নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যেতে চাইলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হবে, যেমন এরশাদ সরকারের পতনের পর তাদের মন্ত্রীদের অবস্থা হয়েছিল।
ড. মোশাররফ বলেন, সরকার দাবি করে, তিন হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। তাহলে দেশে বিদ্যুতের অবস্থা এমন কেন? এ কথা জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের এমপিরা প্রশ্ন করেছেন। তখন কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
চট্টগ্রামে সমাবেশ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। প্রতিহিংসার পরিবর্তে প্রতিযোগিতার রাজনীতি করে। গতকাল বিকালে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে গণতন্ত্র হত্যা দিবস ও হরতালের সমর্থনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মী সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, হরতাল হচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের হাতিয়ার। বিএনপি চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করতে চায়, কিন্তু হরতাল এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে চট্টগ্রামে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নোমান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা না হলে চট্টগ্রামে ২৯ মার্চের আগেই নতুন করে হরতাল আহ্বান করা হবে।
তিনি বলেন, কেউ যদি গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগাতে চায় এবং চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর কোনো ধরনের আঘাত আসে, তাহলে আমরা চট্টগ্রামে ২৮ মার্চ পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।
মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কাউন্সিলর শামসুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, মাহবুবুর রহমান শামীম, আনোয়ার হোসোইন, এম এ সবুর, আবুল হাশেম বক্কর, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, কাজী আকবর, এস কে খোদা তোতন, ওহাব কাশেমী, আবদুল মান্নান, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, শামসুল আলম, আশরাফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাত্তার সারোয়ার, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, শাহেদ বক্স, জেলী চৌধুরী, জেসমীন খানম, আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, নজরুল সরকার, ইকবাল হোসেন, মাইনুদ্দীন শহীদ প্রমুখ।
রাজশাহীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ : রাজশাহী অফিস জানায়, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। দিনটিকে স্বৈরাচার দিবস আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিচার দাবিতে গতকাল রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
গতকাল দুপুরে ছাত্রদলের একটি বিশাল মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর ভুবনমোহন পার্কে সমাবেশে করে। রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল সভাপতি মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোজাদ্দেদ জামিলী সুমন, আবেদুর রেজা, নগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রুহুল আমীন বাবলু, তোরাব আলী পারভেজ, ছাত্রদল নেতা সঞ্জয়, অপু প্রমুখ।
খুলনায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন : খুলনা অফিস জানায়, সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে হত্যা করার বার্ষিকীতে খুলনায় আলোচনা সভা করেছে বিএনপি। সন্ধ্যায় কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে মহানগর ও জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। বক্তব্য রাখেন মনিরুজ্জামান মনি, অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, অ্যাডভোকেট গাজী আবদুল বারী, ফখরুল আলম, শেখ আমজাদ হোসেন, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, আবু হোসেন বাবু, শফিকুল আলম তুহিন, আজিজুল হাসান দুলু, এবাদুল হক রুবায়েদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন আসাদুজ্জামান মুরাদ।
ঝিনাইদহে আলোচনা সভা : ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জেলা কমিটির উদ্যোগে কেপি বসু সড়কের দলীয় কার্যালয়ে ২৪ মার্চ গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা। এছাড়া সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মসিউর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, বিএনপি নেতা কামাল আজাদ পান্নু, আবু বকর, আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, রওশন বিন কদর মিরন, আহসান হাবিব, জিয়াউল ইসলাম ফিরোজ, মীর ফজলে এলাহী শিমুল, আরিফুল ইসলাম আনন, মামুন ও মোস্তাক আহমেদ।আমারদেশ,২৫ মার্চ ২০১২ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads