শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২

যুদ্ধ করে খালেদাকে দেশ থেকে তাড়াব : হানিফ : খালেদা জিয়ার অপকর্মের বিচার হবে : কামরুল




জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুশিয়ার করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আপনি দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি করেছেন, আর ক্ষতি করবেন না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করুন। নয়তো যুদ্ধ করে আপনাকে দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হব। ৩০ বছর লড়াই করেছি। প্রয়োজনে আরও
৩০ বছর লড়াই করব।’
গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ আয়োজিত ‘স্বাধীনতা : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম খালেদা জিয়াকে ছাড় না দিয়ে ‘অপকর্মের দায়ে’ বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিয়েছেন। একই সময় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশনেত্রী পরিষদের চলা মানববন্ধন কামরুল ইসলামের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয়। এ অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক প্রধান অতিথি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শাহ-ই-আলম। সেমিনারে দেয়া বক্তৃতায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রের ফরজ কাজ হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর করা। এটাকে নফল বলার সুযোগ নেই। যে কোনো ধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির পক্ষ হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করে না। যুদ্ধাপরাধীরা অগণিত মানুষের হক নষ্ট করেছে।’ যারা আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা ধর্মীয় অনুশাসনও মানে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে মাহবুব উল আলম হানিফ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমি আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। আপনি অনেক শিক্ষিত। কিন্তু যখন পদের জন্য মিথ্যা কথা বলেন তখন আপনার শিক্ষার প্রতি আমার লজ্জা হয়।’ ‘তারেককে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ’—মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আপনারা বলছেন তারেককে আমরা মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছি। তার কোনো মামলা আমরা প্রমাণ করতে পারিনি। এর চেয়ে মিথ্যা আর কী হতে পারে?’
হানিফ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কথায় কথায় বলেন ক্ষমতায় গেলে সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করবেন। কিন্তু আপনি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় দেশকে লুলা করেছিলেন, নেতাকর্মীদের সার্টিফিকেট ছাড়াই চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে পুরো দেশকে ল্যাংড়া-লুলা করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার জানতে ইচ্ছা হয় কেন এ প্রতিহিংসা। জাতির ওপর আর কিভাবে প্রতিশোধ নেবেন আপনি। তাহলে কি আমরা ধরবো পাকিস্তানের টাকা নিয়ে নির্বাচন করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছেন। যাদের কাছ থেকে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি তাদের টাকা দিয়ে নির্বাচন করছেন এরচেয়ে বড় লজ্জার কি হতে পারে।’
বিরোধী দল অসত্য কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা বলে আমরা নাকি তাদের নির্যাতন করছি। কিন্তু তাদের পাঁচ বছরের কথা আলোচনা করলে জনগণের জীবন শিউরে ওঠে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, নারীদের নির্যাতন এবং পাঁচ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুরো দেশকে কারাগারে রূপান্তর করা হয়। একদিকে জঙ্গিদের উত্থান অন্যদিকে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়।’
১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সময় এই বিশাল অস্ত্র ধরার কথা জনগণ জানে। কিন্তু আরও শত শত ট্রাক অস্ত্র পাচার করেছে। জঙ্গিদের অস্ত্র দিয়েছে। দেশকে লুটপাট করেছে।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা আপনি, এর আগে দু’বার ক্ষমতায় ছিলেন। রাষ্ট্রের আচার জানার কথা। কিন্তু আপনি রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের ২০ মিনিট আগেই রওনা দেন। এটা কী ধরনের আচরণ। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আপনাকে তো বাধা দেবেই। আপনি সেদিন আগেভাগে গিয়েছিলেন শহীদদের অবমাননা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। সেদিন স্মৃতিসৌধে আপনার ছেলেদের হাতে ফুল থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা।’
হানিফ বলেন, ‘আর মিথ্যাচার করবেন না। বহু মিথ্যাচার করেছেন। ১২ মার্চ মহাসমাবেশ করে ঢাকাকে তাহরির স্কয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আপনাদের সে চেষ্টা সফল হতে দেয়নি।’
আন্দোলন সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে না বলে বিরোধী দলকে হুশিয়ার করে দেন তিনি।
সেমিনারে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতকদের প্রতিষ্ঠিত দলই যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করছে। বেগম জিয়া যা করছেন, যথার্থই করছেন। সাম্প্রদায়িক দল থেকে যে দলের সৃষ্টি, সেই দলের নেতার কাছে এর চেয়ে আর কী আশা করা যায়।’

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads