শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২

আমার দেশকে দেয়া সাক্ষাত্কারে আন্দালিব রহমান : আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে মিথ্যাচার করায় আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত



সাক্ষাত্কার নিয়েছেন, বাছির জামাল
একানব্বই সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) অর্থ দিয়েছে—আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগকে হাস্যকর বলে বর্ণনা করলেন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি। গতকাল আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে এজন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বরং আওয়ামী লীগের ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমর্যাদা কিছুটা বাড়বে।
দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস’র একটি রিপোর্টকে কেন্দ্র করে গত প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়াকে আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের
প্রায় সব নেতাই ওই রিপোর্ট উল্লেখ করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। খালিজ টাইমস’র রিপোর্টটি প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়ার পরই ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। প্রথম আলো’র নয়াদিল্লি প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী খালিজ টাইমসে রিপোর্টটি পাঠান। পরবর্তী সময়ে ডেইলি মেইল’র অন লাইন সংস্করণ ও ইন্ডিয়া টুডেতেও একই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু যার স্বীকারোক্তি উল্লেখ করে এই রিপোর্ট লেখা হয়, সেই আইএসআই’র সাবেক প্রধান লে. জেনারেল (অব.) আসাদ দুররানী বিবিসিকে বলেন, তিনি এমন কথা বলেননি। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তা কেবল তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। পাকিস্তানের বাইরে কোনো দল বা দেশ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে এমন ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে বাংলাদেশে যে হৈচৈ হচ্ছে, এর কোনো ভিত্তি নেই।
এ প্রসঙ্গে আন্দালিব রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরনো রাজনৈতিক দল কোনো প্রমাণ ছাড়া বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অর্থ নেয়ার অভিযোগ আনাটা আসলেই বেমানান। বিএনপি জনগণের দল। এই দলটি সবচেয়ে বেশিদিন এ দেশের ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং এই দলের ভালো-মন্দের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে একটি অলীক অভিযোগ এনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করল আওয়ামী লীগ। এজন্যই তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমাদের রাজনীতিতে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি শুরু হওয়া উচিত।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে : নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারের বৈধতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কোনো বৈধতা থাকে না। একই কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় না। এজন্যই বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে গণতন্ত্রের ওই দুটি শর্তই লঙ্ঘিত হয়। অতীতে এর নজির রয়েছে ভুরি ভুরি।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আন্দালিব ১২ মার্চে চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশে সরকারের বাধা দেয়া, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ২৬ মার্চ সাভারের স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা দেয়া এবং হোটেল রূপসী বাংলায় খালেদা জিয়ার একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এই কয়েকটি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আচরণ দেখেই বলে দেয়া যায় জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলকে সহ্য করবে না সরকার। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থের জন্য যে
কী ভয়াবহ হয়ে ওঠতে পারে, তা প্রমাণের জন্য উপর্যুক্ত কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট। তাছাড়া
আমাদের দেশে দুটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থার সঙ্কট প্রকট। এজন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমে আরও খারাপ হচ্ছে। এর মাধ্যমে তোফায়েল সাহেবরা (তোফায়েল আহমদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য) দেশে একটি সঙ্কট সৃষ্টি করে আসলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ বলতে চায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহিংসতাকে উত্সাহিত করে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সেই সময় আওয়ামী লীগের কারণেই সহিংসতা হয়েছিল। লগি-বৈঠা দিয়ে আওয়ামী লীগই মানুষকে মেরে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। তখন কোনো দোষ-ত্রুটি হলে তা ব্যক্তির জন্য হয়েছে। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির ওপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না।
নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ কয়েকটি উপনির্বাচনে বিরোধী দলের
প্রার্থী জয়লাভ করায় এটাই প্রমাণ হয় যে, দলীয় সরকারের অধীনেও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব—
এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, কয়েকটি স্থানীয়
ও উচ্চ নির্বাচনের ফল দেখে বলে দেয়া যায় না
যে, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। এই কয়েকটি নির্বাচনে যে ফল হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের খোলস মাত্র। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার স্বরূপে আবির্ভূত হবে। উপরে যে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিলাম, তাতেও আওয়ামী লীগের স্বমূর্তিটা আমরা কিঞ্চিত ধরতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের মনোভাব বুঝে গেছে। তারা জানে যে, আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। সেজন্যই সংবিধান সংশোধন করে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ছাড়া বিএনপি ও বিরোধী জোট নির্বাচনে যাবে না। আমাদের ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে আবার সরকারের বৈধতার সঙ্কট সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে না। তা না হলে জনগণের ক্ষমতায়ন হবে না। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জনগণের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করতে বাধ্য হবে।
আন্দালিব রহমান বিগত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে তারা জনগণকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এজন্য জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads