মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১২



পুরস্কৃত হলেন সেই এডিসি হারুন ও এসি বিপ্লব কুমার! 



বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুককে পেটানোর ঘটনা : পুরস্কৃত হলেন সেই এডিসি হারুন ও এসি বিপ্লব কুমার! স্টাফ রিপোর্টার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে আলোচনায় আসা ঢাকা মহানগর পুলিশের সেই এডিসি হারুন ও এসি বিপ্লব কুমারকে অবশেষে পুরস্কৃত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। তেজগাঁও জোনের দায়িত্বে থাকা এডিসি হারুনকে পুলিশ সুপার (এসপি) ও মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমারকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পদোন্নতি দিয়ে বিপ্লব কুমারকে ডিএমপিতেই রাখা হয়েছে। তিনি এখনও মোহাম্মদ-পুর জোনে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধিশাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনে গত সোমবার ১১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তাকেও পদোন্নতি দেয়া হয়। অন্যদিকে হারুন অর রশিদকে অতি গোপনে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাকে চাঁদপুর জেলার এসপি করা হতে পারে বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তিনি এখনও তার আগের কর্মস্থল তেজগাঁও জোনে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ জুলাই হরতালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন এডিসি হারুন ও বিপ্লব কুমার সরকার। এ ঘটনার একদিন পরই এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা রহস্যজনক পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে হারুন হাসপাতাল থেকেই আমেরিকা চলে যান। সেখান থেকে ফিরে আবার চাকরিতে যোগ দেন। ৬ জুলাই বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির এমপিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সেদিন সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় মিছিল করলে এডিসি হারুন অর রশিদ ও এসি বিপ্লব কুমার তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা জয়নুল আবদিন ফারুকের কলার চেপে ধরে ধাওয়া করে গায়ের পোশাক খুলে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এমনকি তিনি দৌড়ে গিয়ে ন্যাম ভবনে সংসদ সদস্যের কক্ষে গিয়েও নিস্তার পাননি। সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে রাস্তায় এনেও পিটিয়েছেন হারুন ও বিপ্লবসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। সেদিনের এই নৃশংসতা ছিল চরম ঘৃণিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা জঘন্য এবং বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে রক্তাক্ত জখম করেন। লাঠি দিয়ে আঘাত করে বিরোধী নেতার মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। বুকের ওপর উঠে বুট দিয়ে লাথি মারেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। ‘শুয়োরের বাচ্চা, চড় মেরে দাঁত ফেলে দেব’ বলে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো তেড়ে গেছেন। সংসদ ভবনের কাছে বিনা উসকানিতে এক সময়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার এই পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় চড়াও হয়ে ওঠেন ফারুকের ওপর। এ সময় কয়েকজন মহিলা এমপিকেও লাঞ্ছিত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ফারুককে এমপি হোস্টেলে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়েও হামলা চালায় পুলিশ। ২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এক সময় চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেয়ার পর থেকেই ঘুষ-বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও রহস্যজনকভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি জীবনের শুরু থেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। ২১তম বিসিএস ক্যাডারে চাকরি নেয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ছাত্রলীগের জগন্নাথ হল শাখার সেক্রেটারি। পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পর নিজের অতীত কৃতকর্মের কথা ভেবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে সারদায় ট্রেনিং করেই তিনি ডিভি ভিসা নিয়ে আমেরিকা চলে যান। ৭ বছর আমেরিকায় থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসেন। পুলিশের ভাষায়, এ সময় তিনি ছিলেন ফেরারি। দীর্ঘ ৭ বছর অনুপস্থিত থেকে দেশে ফিরে রহস্যজনকভাবে আবার চাকরি ফিরে পান তিনি। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads