শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

জঙ্গিবাদের জুজু : অস্ট্রেলীয় টিমের সফর বাতিলের পর এবার ব্রিটিশ মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর বাতিল


ইতালীর নাগরিক তাভেলা সিজার কেন খুন হয়েছেন সেটা আমরা জানি না। সেটি জানা সম্ভবও নয়। কেন খুন হয়েছেন, কারা খুন করেছে, সেগুলো পুলিশের কাজ। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল অবশ্য বলেছেন যে, তাভেলা সিজারের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শীঘ্রই নাকি সুসংবাদ পাওয়া যাবে। আমরা সেই সুসংবাদের আশায় বসে থাকছি। তবে তাকে যে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের লোকজন খুন করেনি সেটি এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকারই স্বীকার করেনি, ইতালীও স্বীকার করেছে। তবে একটি প্রশ্ন মানুষের মাথায় ঘুরছে। সেটি হলো, হত্যাকাণ্ডের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্ট্রিট লাইট নেভানো ছিল কেন? অবশ্য এই প্রশ্নটিরও গভীরে যাবে পুলিশ, সেটিও আমাদের প্রত্যাশা।
তবে একটি বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো, আমরা তো সাদা চোখে কোনো জঙ্গি তৎপরতা বা অশান্তির বীজ দেখতে পাচ্ছি না। তার পরেও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম ঢাকায় আসা বন্ধ করল কেন? তারা তো কোনো রাখ ঢাক করেনি। তারা তো সরাসরি বলেই দিয়েছে যে, বাংলাদেশের, বিশেষ করে ঢাকার, অবস্থা ভাল না। গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া আরো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অফিসিয়ালি ঘোষণা করেছে যে, আপাতত তারা ঢাকায় আসছে না। ভবিষ্যতে কোনো একটি সুবিধাজনক সময়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিম ঢাকা সফর করবে। কিন্তু এর পাশাপাশি শুক্রবার আরও একটি বড় খবর বেরিয়েছে। সেটি হলো এই যে, ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সোয়ার তার ঢাকা সফর স্থগিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বলা হয়েছে যে, ঢাকায় হাই সিকিউরিটি রিস্ক আছে। তাই এই মুহূর্তে ঢাকা যাওয়াকে ব্রিটিশ সরকার সিকিউরিটি রিস্ক মনে করে।
এছাড়া পশ্চিমা দুনিয়া আর যেসব পদক্ষেপ নেয়, সেগুলিও নিরাপত্তা হুমকি বিষয়ক। এসব পদক্ষেপের ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নেতিবাচক রূপ ধারণ করছে। অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড কমিউনিটির গ্লিটার পার্টি স্থগিত করা হয়েছে। আমেরিকান ক্লাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার কূটনৈতিক মিশনসমূহের ডিন হিসেবে ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন তার সরকারি বাসভবনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনায় মার্কিন দূতাবাসে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য জানার জন্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিকট চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
চিত্রের অপর পিঠে বিরাজ করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অবস্থা। যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে জঙ্গিবাদের ভূত দেখে সেই আওয়ামী লীগের বড় দুই নেতা এবার বলেছেন যে, বাংলাদেশে আইএসও নাই, জঙ্গিও নাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল তো সেদিন নিজেই বলেছেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের যে ভয় করছে অস্ট্রেলিয়া সেটি অমূলক। কারণ পাকিস্তান বা আফগানিস্তান নয় বাংলাদেশ।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে ইতালীর নাগরিককে হত্যার ঘটনা জঙ্গির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ সফরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, এই বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। এ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কিছু দেখছি না।’ অতএব, ইতালীয়কে হত্যার সঙ্গে কোনো জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ জঙ্গি হামলার অজুহাতে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল আসছে না এবং ওই সময়ই ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যা করা হয়, এ বিষয়টিকে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি কথাটা শুধুই অজুহাত। এগুলো মিথ্যাচার ও অপপ্রচার।
॥ দুই॥
এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষ দ্বিমতের কোনো অবকাশ দেখেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন যে, আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয় বাংলাদেশ। ঠিকই বলেছেন তিনি। পাকিস্তানে যেসব জঙ্গি হামলা হচ্ছে তার ছিটে ফোটাও হচ্ছে না বাংলাদেশে। জঙ্গি হামলায় বেনজির ভুট্টোর মত নেতা মারা গেছেন। যে জন সমাবেশে বিস্ফোরণ হয়েছিল সেখানে বেনজির ভুট্টো ছাড়াও অন্তত ১৩০ জন মানুষ মারা গেছেন। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ যখন পাকিস্তানের মিলিটারি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তার ওপর ভয়াবহ হামলা হয়েছিল। অল্পের জন্য তিনি এবং তার সফর সঙ্গীরা বেঁচে গেছেন। পাকিস্তানের মন্ত্রী এবং গভর্নররাও জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের কথা সকলেই জানেন। তালেবান বা আল-কায়েদা হামলায় সেখানে শুধু সাধারণ মানুষই মারা যাননি অসংখ্য মার্কিন সৈন্যও নিহত হয়েছে এবং সামরিক যান ধ্বংস হয়েছে। জঙ্গিবাদ দেখতে হলে যেতে হবে ইরাকে, যেতে হবে সিরিয়ায়। এ পর্যন্ত শত শত নয়, সহস্রাধিক সামরিক ও বেসামরিক মানুষ এসব হামলায় নিহত হয়েছেন। কিন্তু তার পরেও বিদেশীরা এবার এমন আচরণ করল, যেন বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হয়েছে। কেন এমন ধারণা হলো?
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জুজু খুঁজে বেড়াচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘অবিরাম’ সংগ্রামের কথা বিগত ৬ বছর ধরে সরকার অব্যাহতভাবে প্রচার করছে। এমনকি এই সেদিন জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে বিদেশ যাওয়ার পথে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতার কথা বলেছেন। লন্ডনে জঙ্গিবাদ দমনে ব্রিটিশ সরকারকে আরও বেশি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্যের  দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (২১ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৌলবাদীরা বাংলাদেশে তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছু কিছু লোক তাদের মদদ দেয়ার চেষ্টা করছে।’ এই জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। পক্ষান্তরে সেই একই লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।
গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে জঙ্গি তৎপরতার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সরকারের পরিকল্পিত। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, পুলিশ এবং র‌্যাবের শীর্ষ অফিসারদের মুখ দিয়েও দেশে জঙ্গিবাদের কথা বলানো হচ্ছে। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জঙ্গিবাদ নির্মূলে র‌্যাবকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এটি হচ্ছে আমাদের প্রিমিয়াম এলিট ফোর্স। আমরা বাংলাদেশকে কখনো জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হতে দিতে চাই না। র‌্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত করার জন্য, নির্মূল করার জন্য র‌্যাব ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। এক মাস আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জানবাজি লড়াই চলছে। আমরা সেই লড়াইকে বিজয়ের শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছি। ২৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের জিরো পয়েন্টে জাসদ আয়োজিত সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের দাবি শীর্ষক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী।
॥ তিন ॥
জঙ্গিবাদ জঙ্গিবাদ বলে সরকারের শীর্ষস্থানের ব্যক্তিরা অব্যাহতভাবে তোতা পাখির মত বুলি আউড়িয়ে চলেছেন। এ বছর ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের রক্ত নিয়ে যারা খেলছে তাদের শাস্তি হবেই হবে। জঙ্গি সন্ত্রাসীদের কোনো ক্ষমা নেই। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ আমরা মেনে নেবো না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতেই হবেই। জঙ্গি নেত্রীর বিচার হবেই হবে।’ নেত্রীর কথায় সুর মিলিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তিনি এখন জনগণের নেত্রী নন, তিনি হচ্ছেন জঙ্গি নেত্রী। গত ২ মার্চ গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে জঙ্গি দমন করছেন। দেশে মাত্র একজন জঙ্গি আছে, তিনি হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তাকেও দমন করা হবে।’ গত ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গি নেত্রী। দেশকে অচল করে দিতে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বেগম জিয়া দেশের গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের এই নেত্রী দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।’ ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ জঙ্গি নেত্রী খালেদার ঠিকানা হতে পারে না। তার ঠিকানা হবে পাকিস্তান।’ গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়া জঙ্গি নেত্রী। জঙ্গি নেত্রী বোমা মেরে, মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় যেতে চায়।’ এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘জঙ্গি নেত্রী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘জঙ্গি নেত্রীর হাতে দেশ কখনো পরাজিত হতে পারে না। ভবিষ্যতে জঙ্গিদের বিচার হবে। এদের সাথে জড়িত সবাইকে সাজা ভোগ করেতে হবে।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘ দেশে রাজনীতির নামে যে কর্মসূচি চলছে এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটা জঙ্গিবাদী কর্মসূচি। আর খালেদা জিয়া এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়ে সন্ত্রাসীদের নেত্রীতে পরিণত হয়েছে।’
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ‘দি ওয়াশিংটন টাইমস’ পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে বাংলাদেশের অন্যতম গণতান্ত্রিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করেন। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য তিনি আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানান। জঙ্গিবাদ এবং আইএস নিয়ে প্রচারণা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বিরোধী দলের রাজপথের আন্দোলনকেও জঙ্গিবাদ এবং আইএসের কার্যক্রমের সাথে তুলনা করেছেন কোনো কোনো নেতা।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি এবং তালেবান জঙ্গি সন্দেহে বিভিন্ন সময়ে অনেককে গ্রেফতারের পর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা অনেকবার দাবি করেছেন, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের সাথে ইরাক ও সিরিয়ার আইএস জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। অনেকে সিরিয়া ও ইরাক যেতে আগ্রহী আইএসে যোগ দেয়ার জন্য। এমনকি সামিউন নামে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক আটকের পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তিনি সরাসরি আইএসের সাথে জড়িত।
সিরিয়া ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আইএস আত্মপ্রকাশের পর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আইএসের সাথে জড়িত সন্দেহে ২০ জনের মতো গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করা হয়েছে যে, তাদের সাথে আইএসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
॥চার॥
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দু’টি বিরোধী দল। বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক জনমত বিদ্যমান সে জনমত মোতাবেক ২০ শতাংশ মানুষও এই সরকারের সমর্থক নয়। ৮০ শতাংশ মানুষ এই সরকারের বিরোধিতা করে এবং বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন করে। সেই ৮০ শতাংশ মানুষের দল বিএনপি এবং জামায়াতকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি জঙ্গিবাদী বলেন তাহলে তো বিদেশীদের মনে এই ধারণা সৃষ্টিই হতে পারে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জঙ্গিবাদী। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে শেখ হাসিনা বিএনপি এবং জামায়াত সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন। সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিএনপি এবং জামায়াতকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। ওরা হচ্ছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী দল। ঢাকায় ইতালীয় এক নাগরিক খুন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত বিদেশী নাগরিককে হত্যা করতে পারে।
সুতরাং সরকার যত কথাই বলুক না কেন, অস্ট্রেলীয় টিমের বাংলাদেশ সফর স্থগিত হওয়া, সারা পশ্চিমা দুনিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে রেড এ্যালার্ট জারি করা এবং বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর বাতিলের দায় দায়িত্ব সরকার অস্বীকার করতে পারে না। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads