মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

আমরা স্বাধীনতা এমন চাই-


স্বাধীনতা! এই ‘‘স্বাধীনতা’’ শব্দটার ভিতরে কি যেন লুকিয়ে আছে। স্বাধীনতা শব্দটা শোনা মাত্রই হৃদয়ের মাঝে এক অন্য অনুভূতি জাগ্রত হয়। আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য পৃথিবীর সকলেই প্রাণপণ চেষ্টায় লিপ্ত। বিশ্বে মনে হয় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি স্বাধীনতা চান না। শুধু মানুষ নয় বরং পশু-পাখিরাও পরাধীনতার উর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চায়। আমরা বাবুই আর চড়–ই পাখির সেই কবিতাটি জানি- বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই/ কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই......পাকা হোক তবু ভাই পরেরও বাসা/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা। কষ্টে থাকলেও সেখানে যদি স্বাধীনতা থাকে তাহলে সেটাই ভাল আর মহাসুখে থেকেও যদি পরাধীন থাকা হয় তাহলে সেখানেও ভাল লাগার কথা নয়। সহজভাবে বললে বলা যায় যে, জন্মগতভাবেই মানুষ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আর এজন্যই পরাধীনতা ভাল লাগে না।
এই পরাধীনতা ভাল না লাগার কারণেই আমরা তৎকালীন বিশ্বের সর্বেসর্বা ব্রিটিশের বন্ধন মুক্ত হয়েছিলাম অনেক রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু এরপরও নিজেদেরকে পুরোপুরি স্বাধীন বলে মনে হলো না। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আমাদের- পূর্ব পাকিস্তানীদের ওপর বিভিন্নভাবে অবিচার করে আসছিল। আমাদের কোন প্রয়োজনকেই তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছিল না। স্বভাবতই আমাদের দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ ধীরে ধীরে ফুঁসে উঠতে থাকে। শুরু হয়ে যায় সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম- মুক্তির সংগ্রাম। অনেক রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেলাম একটি লাল সবুজ পতাকার স্বাধীন সার্বভৌম দেশ-বাংলাদেশ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরে এসেও বলতে হচ্ছে আমরা যে জন্য লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি সেটা পুরোপুরি পাই নাই। শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই আমাদেরকে শুধু ঠকিয়েই আসছে। যারাই ক্ষমতায় যায় তারাই আমাদের জাতীয় “সম্পদ” মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের দলীয় শ্লোগানে পরিণত করে থাকেন! অথচ মুক্তিযুদ্ধ কোন ব্যক্তি বা দলের নয় বরং এটা সমগ্র জাতির সত্তার সাথে মিশে আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি চেতনার ভিত্তিতে। বর্তমানে অবশ্য কেউ কেউ বলে থাকেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো “ধর্মনিরপেক্ষতা”, অথচ স্বাধীনতার যেই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বলে একটি শব্দও নেই। যেই কারণ দেখিয়ে বা দেখে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলাম কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই চেতনাকে ডিলেট করে দিয়ে আমাদের শাসকগোষ্ঠী সেখানে প্রতিস্থাপন করলেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা!
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম”। আচ্ছা দেখুনতো এই ঘোষণার কোথায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে? আমি হয়তো চোখে কম দেখতে পারি কিন্তু আপনিতো ভালভাবেই দেখেন-আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? তার মানে হলো আমরা যে চেতনার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছি সেটা “ধর্মনিরপেক্ষতা” নয়, বরং সেটা হলো সমাজে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা’’। অথচ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরেও আমরা সেটা ফিরে পাইনি, এখনও খুঁজে ফিরছি।
১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন তার শেষাংশ উল্লেখ করছি- ‘‘আমাদের এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলে গেলে চলবে না যে, এ যুদ্ধ গণযুদ্ধ এবং সত্যিকার অর্থে এ কথাই বলতে হয় যে এ যুদ্ধ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের যুদ্ধ। খেটে খাওয়া সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র-জনতা তাদের সাহস, তাদের দেশপ্রেম, তাদের বিশ্বাস, স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তায় তাদের নিমগ্নপ্রাণ, তাদের আত্মাহুতি, তাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষায় জন্ম নিল এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ। সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠুক আমাদের স্বাধীনতার সম্পদ। বাংলাদেশের নিরন্ন দুঃখী মানুষের জন্যে রচিত হোক এক নতুন পৃথিবী, যেখানে মানুষ মানুষকে শোষণ করবে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক ক্ষুধা, রোগ, বেকারত্ব আর অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে মুক্তি”। (দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা-৬০)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনারই দেখুন যেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি সেটার আজ কি হাল। আজকে আমাদের দেশে বিভেদের রাজনীতি করা হচ্ছে অথচ স্বাধীনতা হয়েছে ঐক্যের জন্য। তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল আজ তাদেরই সন্তানরা ১৬ কোটিতে পরিণত হয়েছে এরপরও বিভেদ কেন? বর্তমানে একটি বিশেষ দলের অন্তর্ভুক্ত না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকে না! তখন যেমন পশ্চিম পাকিস্তানের চেতনায় বিশ্বাসী না হলে “পাকিস্তানী” থাকা যেত না বর্তমানে তেমনি ঐ বিশেষ দলে শামিল না হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা যায় না- যদিওবা আপনি যুদ্ধ করতে গিয়ে একটি পা হারিয়েছেন! অতএব যেহেতু আমাদের প্রতিজ্ঞার তেমন কিছুই পূরণ হয়নি তাই বলতেই হচ্ছে যে ৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।
আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যেটাকে সবচেয়ে বেশি সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয় সেটা হলো ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইসলাম যেন দুটো দুই প্রান্তের বিষয়! বর্তমানে আমাদের দেশে ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, যারাই ইসলাম পালন করে তারাই মনে হয় সবচেয়ে বেশি খারাপ! সিনেমায় বা নাটকে যিনি সবচেয়ে খারাপ চরিত্রে অভিনয় করেন তার পড়নে পাঞ্জাবি, টুপি আর দাঁড়ি থাকতেই হবে। তার মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা কখনও দাঁড়ি রাখে না বা রাখতে পারে না আর টুপি পড়ে না বা পরতে পারে না! আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, কুকুরের ছবিতেও টুপি পড়ানো হচ্ছে! আজকে যারাই দাঁড়ি রাখেন তারাই ভয়ে থাকেন, কখন যে এই দাঁড়ি রাখার অপরাধে(?) গ্রেফতার হয়ে যেতে হয় আল্লাহই মালুম। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হলো দাঁড়ি রাখা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত ছিলেন সেই নূরুল কাদির তার -দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা- বইয়ের ১৪৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন, “দাঁড়ি কামানো সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সম্প্রতি যে উক্তি করিয়াছেন তাহা পাকিস্তান তথা সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানের জন্য অপমানজনক। একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমরা যখন আশা করিয়াছিলাম যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব নিজেই দাঁড়ি কামানো বন্ধ রাখিয়া একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে মুসলমানের জন্য অন্যতম সুন্নত পালন করিবেন, সেই সময় একজন মুসলমানকে সুন্নত পালন না করিতে উপদেশ দিয়া তিনি ইসলামিক মূলনীতিকেই অবজ্ঞা করিয়াছেন।”
পাকিস্তান যদিও ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, বলা যায় মুসলিম রাষ্ট্র ছিল এরপরও মুক্তিযোদ্ধারা দাঁড়ি রাখার মত বিষয়টিকেও ছাড় দেন নি। তারা যেন কোন বাধা-প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দাঁড়ি রাখতে পারেন এই জন্যই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আর আজকে সেই দাঁড়িই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে গেল! পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দাঁড়ির বিরুদ্ধে ছিলেন আর বর্তমান সরকারও দাঁড়ির বিরুদ্ধে- তাহলে আমরা যেই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম সেটা ৪৩ বছর পরেও কি পেয়েছি?
আগেই বলেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনাই হলো ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদেরকে ইসলামের কথা বলেই উজ্জীবিত করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন কুরবান করার প্রেরণাই ছিল ইসলাম। জনাব এ্যাডভোকেট নূরুল কাদির তাঁর দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় খুব সুন্দর করে এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন- “অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তাঁর অগাধ পা-িত্যের মাহাত্ম্যে খুবই মুনশিয়ানার সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছিলেন। ইসলামকে সকলের কাছে যথার্থরূপে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের সেই ধারাবাহিক ‘ইসলামের দৃষ্টিতে’ কথিকা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও উপকারী হয়েছিল।”
একটু খেয়াল করুন, যেই ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় “সময়োপযোগী ও উপকারী’’ হয়েছিল বলে বলা হচ্ছে- সেই ইসলামকে আজ চরমভাবে অপমানিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, জঙ্গিবাদের প্রজননকেন্দ্র নাকি মাদরাসাগুলো, অথচ স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে জঙ্গি (সন্ত্রাসী) তৈরি হচ্ছে তার একশত ভাগের একভাগও মাদরাসায় হচ্ছে না। মাদরাসা ‘‘জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র’’ কথাটা বলার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম যেন মাদরাসায় না যায়- ইসলাম না শেখে, আর স্কুল কলেজে তো ইসলাম নাই বললেই চলে। তাছাড়া যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসা, তারা যত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই ডিগ্রি নিক না কেন আর যত তুখোড় মেধাবী হোক না কেন, ভাল কোন সরকারি চাকরি তাদের জুটবে না বললেই চলে। অতএব ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে মাদরাসায় পড়ার আগ্রহ দিন দিন হারিয়ে ফেলছেন। স্কুলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়া গেলেও মাদরাসায় পড়লে তা পাওয়া যায় না। এমন সুপরিকল্পিতভাবে মাদরাসা তথা ইসলাম শিক্ষাটাকে মানুষের কাছে “অপ্রয়োজনীয়” একটা শিক্ষা হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে! মুক্তিযুদ্ধের সময় যেই ইসলামকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে হলো সেই ইসলামই আবার স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এতিম হয়ে ঘুরছে, তাহলে কি সেই আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা আর এই স্বাধীনতা এক হলো?
আজকে আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকার গঠন করবে কে? এটা নির্ধারণ করে দেয় নাকি অন্য কোন দেশ! একটা স্বাধীন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে অন্য কোন দেশ এটা কেমন কথা! এই জন্যই কি আমরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম? স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে না নিজস্ব কোন সংস্কৃতি চালু করতে পেরেছি আর না ধার করা গণতন্ত্রের পুরোপুরি অনুসরণ করতে পেরেছি, এই হলো আমাদের প্রাণের স্বাধীনতা! আর এই কথা বলতে গেলেই আমি হয়ে যাই স্বাধীনতা বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিল এই কথাগুলো বলার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হবার সৌভাগ্য(?) অর্জন  করেছিলেন। সে জন্যই অত্যন্ত দুঃখ করেই লিখলেন একটি বই- ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’।
পাশের দেশ আজকে আমাদের দেশের প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে এটা এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে আর কিভাবে চালাতে হবে এটা বলে দেয়া যেন তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে! তারা আজকে অনেকটা উলঙ্গভাবেই আমাদের দেশের বিষয় নিয়ে নাক গলাচ্ছে। তারা আমাদের দেশের ফেলানীদেরকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখছে, সাধারণ মানুষদেরকে গুলী করে পাখির মতো হত্যা করছে আর আমাদের দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলছেন, এটা তেমন কোন ব্যাপারই না, এমনটা আগেও ঘটেছে, এখন ঘটছে আর ভবিষ্যতেও ঘটবে।
কয়েকদিন আগে ক্রিকেট খেলা নিয়ে কি কা-টাই না ঘটাচ্ছিল ভারত। তারা এই ক্রিকেটেও আমাদেরকে গোলামের মত ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আর আমাদের মেরুদ-হীন কর্তারা সেটাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগে গেলেন!
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটলো মাত্র কয়েকদিন আগে। ভারতীয়রা আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রিত করে “গু-ে” নামের একটি সিনেমা তৈরি করলো আর আমাদের দেশের সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিবাদ করার দরকার ছিল অথচ সেভাবে এর প্রতিবাদটি পর্যন্ত কার হলো না! এটা কেন হবে? ঠিক আছে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছিল তার মানে কি এই যে, এখানে তারা এখনও নেতৃত্ব দেবে? তাদের কথায় আমাদেরকে উঠতে আর বসতে হবে?
এ ধরনের বিভিন্ন দিক দেখেই সম্ভবত তৎকালীন ভারতীয় সেনা প্রধান একটি কঠিন মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল স্টেটসম্যান ভারতের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেক শ’ এর মন্তব্যটি প্রকাশ করে। সেখানে তিনি বলেছেন-
“যদি বাংলাদেশকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে ভারতের আশ্চর্য হবার কিছু নেই। যেদিন আমার সৈন্যরা বাংলাদেশকে মুক্ত করে সেদিনই আমি এ কথা উপলব্ধি করি। বাংলাদেশীদের কখনই ভারতের প্রতি তেমন ভালবাসা ছিল না। আমি জানতাম ভারতের প্রতি তাদের ভালবাসা অস্থায়ী। অনুপ্রেরণা লাভের জন্য ভারতের দিকে না তাকিয়ে তারা মক্কা ও পাকিস্তানের দিকে দৃষ্টিপাত করবে। আমাদেরকে সত্যাশ্রয়ী হতে হবে। বাংলাদেশীদের প্রতি আমরা সঠিক আচরণ করিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের সব রকমের সাহায্য করা উচিত ছিল, কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা তা করেননি। তারা বেনিয়ার মতো আচরণ করেছেন।”
শুধু এই কয়েকটা বিষয় পর্যালোচনা করলেই এটা স্পষ্ট হয় যে, ভারতের সব কাজ যেন আমাদেরকে ঠকানোর জন্য, সেটা যুদ্ধের সময় যেমন করেছে এখনও ঠিক তেমনই করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরেও আমরা সেই বেষ্টনী থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি! আসলে আমাদের এমন এক নেতৃত্ব দরকার যার মেরুদ- অত্যন্ত শক্ত-মজবুত। আমরা কোন দেশের গোলামী করে থাকতে চাই না। প্রতিবেশীসহ সব দেশ হবে সমঅধিকারভিত্তিক সহযোগী ও বন্ধু। প্রথমে ব্রিটিশরা আর পরে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করেছে। সেই অত্যাচার আর নির্যাতনের মূলচ্ছেদ করার জন্যই আমরা স্বাধীন হলাম অনেক রক্তের বিনিময়ে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও আমাদের দেশের একদল আরেকদল বা গোষ্ঠীকে নির্যাতন করেই আসছে। হত্যা আর গুম তো এখন একটা নিত্যদিনের কর্মে পরিণত হয়ে গেছে। আপনি আমার মতের বিরোধী অতএব আপনাকে মেরে ফেলতে হবে অথবা অপনাকে অন্য কোনভাবে নির্যাতন করা হবে। এখন কথায় কথায় গুলী চালানো হচ্ছে অথচ ইতিহাস বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেও এমন বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
গণতন্ত্র নাই, গণতন্ত্র নাই বলে তখন আমরা মুখের ফেনা বের করেছিলাম অথচ স্বাধীনতার পর পরেই সেই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হলো। বলা যায় এখনও সেই গণতন্ত্র উদ্ধার হয়নি। এই কি ছিল আমাদের নিয়তি! স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারলাম না!
আমরা এমন একটা স্বাধীনতা চাই যেখানে থাকবে না কোন খুন-গুম, অত্যাচার-নির্যাতন, আশরাফ-আতরাফের শ্রেণী বিন্যাস, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের অপকৌশল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল আর মারা-মারির দৃশ্য, অশ্লীলতা-বেহায়ানা, যুলুম-অবিচার, আইনের পক্ষপাতিত্ব, ভুখা-নাঙার মিছিল, ডাস্টবিনের পাশে পড়ে মরার দৃশ্য। আমরা চাই একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ। যদি সেটা আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে প্রিয় শিল্পী হায়দার হোসেনের মতো আমাদেরকেও করুণ সুরে গেয়ে উঠতে হবে-
কি দেখার কথা কি দেখছি
কি শোনার কথা কি শুনছি
কি বলার কথা কি বলছি
কি ভাবার কথা কি ভাবছি
তিরিশ বছর পরেও আমি
স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি....।
মোঃ আবু তাহের 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads