রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৪

বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে দুটি মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হলো। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মামলায় আগামী ২১শে এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। গত ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসু দেব রায় এই আদেশ দেন। আসামীপক্ষের সময় প্রার্থনা আবেদন নাকচ করে দেয়ার পর এজলাশে দু’দফা চার্জ গঠনের চেষ্টা করে হট্টগোলের কারণে ব্যর্থ হয়ে পরে খাস কামরায় বসে বিচারক চার্জ গঠনের এই আদেশ দেন। এই আদেশ বিচারক তার পেশকারদের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জানিয়ে দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে, চার্জ গঠনের ঘটনাটি আইন ও প্রথা সিদ্ধ হয়নি। তারা বলেন, প্রথা অনুযায়ী চার্জ গঠনের আগে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনা আদালতের জন্য অপরিহার্য এবং যুক্তিতর্ক এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি চার্জ গঠন অপরিহার্য হয় তাহলে চার্জ গঠন করা হবে। নতুবা আসামীকে অব্যাহতি দেয়া হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। বরং বিচারক খাস কামরায় গিয়ে এজলাশে না এসে দু’ঘণ্টা পর পেশকারের মাধ্যমে চার্জ গঠনের বিষয়টি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেছেন, কার বিরুদ্ধে চার্জ হলো? আমাকে তো জিজ্ঞাসাই করা হলো না, আমি দোষী না নির্দোষ। আমাকে তো চার্জ পড়ে শোনানো হয়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ১৯ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে প্রক্রিয়ায় অভিযোগ গঠনের রিপোর্ট পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। কেননা অভিযুক্তের বক্তব্য না শুনে এবং তার আইনজীবীদের অভিযোগ অনুযায়ী চার্জ গঠন শুধু বিচার বিভাগীয় রীতিনীতির পরিপন্থীই নয়, বিচারের আগে তার প্রতি অবিচারও। কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তিনি দোষী হন না, দোষী হতে হলে অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকতে হয়। তদুপরি আইনজীবীরা আরো অভিযোগ করেছেন যে, তারা বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে আদালত পরিবর্তনের জন্য আবেদনও করেছেন। দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইন অভিযুক্ত নাগরিকদের আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের অধিকার দিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আনা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, তার পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয় বলে কাগজপত্রে দেখানো হয় যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি দমন কমিশনের এই মামলার আইনী ভিত্তি অথবা মেরিট সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। আইন-আদালতকে প্রভাবিত না করে তার নিজস্ব গতিতে তাকে চলতে দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কোনোক্রমেই বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। কিন্তু আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের বিচার বিভাগকে রাজনীতিকীকরণের একটি অপপ্রয়াস চলে আসছে। এতে এই বিভাগের মান, সুনাম যেমন ক্ষুণœ হচ্ছে, তেমনি ন্যায়বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। বিগত সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে দেশকে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রচেষ্টা চলেছিল এবং তারই অংশ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াসহ আওয়ামী লীগ-বিএনপির অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে দুর্র্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার কাজও শুরু হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ১৫টি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ও তার সরকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের সকল মামলা প্রত্যাহার করে নেন এবং বিরোধীদলীয় নেতাদের মামলাসমূহ শুধু চালুই রাখেননি, তাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলাও রুজু করেন।  কেয়ারটেকার আমলে রুজুকৃত মামলাসমূহ থেকে যে নীতিতে সরকারি দলের নেতৃবৃন্দকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল, সে নীতিতে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকেও অব্যাহতি দেয়া উচিত। সেটা সম্ভব না হলে আইন ও ইনসাফের দাবি অনুযায়ী সরকারি দলের নেতাদের মামলাও পুনরুজ্জীবিত করা দরকার। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিসহ প্রধানমন্ত্রীকেও সাধারণ মানুষের কাতারে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads