রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৪

দেশে বিরোধী দল দমনের অভিযান চলছেই


বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক সংকট দেশীয় রাজনীতিবিদদের দিয়ে সমাধান করা আর সম্ভব নয়। তাই বিদেশীরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। দেশীয় সমস্যা দেশীয়ভাবে সমাধান করা সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আমাদের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো যৌক্তিক দাবি জমের মতো ভয় পাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকার মোহে অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেদিকে কোনো চিন্তা করছে না। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করতে যদি সক্ষম হতো তাহলে বিদেশীরা নাক গলাবার সুযোগ পেতো না। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তারা এসে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হলো বিদেশীরা কেন আমাদের সমস্যা সমাধান করতে আসবে? তাহলে আমরা কি দেশ চালাতে অক্ষম, যার জন্য বিদেশীদের যুক্তি-পরামর্শ নিতে হবে। পরের বুদ্ধিতে যারা চলে তারা মেধাহীন জাতি। পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেÑ ওরা তোমাদের বন্ধু নয়। ওরা বন্ধুরূপে আসবে বটে পরে শত্রুতার রূপটি বাস্তবায়ন করবে। উপমহাদেশের ১২শ’ বছরের মুসলিম শাসন কিভাবে ধ্বংস হয়েছে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে কুরআনের ঐশী বাণীর সাথে মিলে যাবে। কুরআনে বলা হয়েছে সীমালঙ্ঘন করো না, সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে মদিনাকেন্দ্রিক যে রাষ্ট্রটি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং পরবর্তী চার খলিফার শাসন আমলে সেই রাষ্ট্রটির চৌহদ্দি ছিল বর্তমান পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি। সব জাতি, ধর্ম বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে ৩০ বছর সহাবস্থান করে পরম শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছিল। সেই মুসলিম রাষ্ট্রটি এখন বহু টুকরায় বিভক্ত। সমঅধিকার সাম্য মৈত্রীর বন্ধনে দেশ পরিচালিত হয়েছিল বলে এটা সম্ভব হয়েছিল। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ রাষ্ট্রে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর একগুঁয়েমিতার কারণে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার বিগত শাসনামলে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির আগুনে জ্বলছে দেশ। মহাজোট সরকারের ৫ বছর ছিল বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বিগত বছরগুলোতে সরকারের মূল কাজ ছিল বিরোধী দলকে নির্মূল করে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। সরকার এখন বিরোধী দল দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন শতাধিক মামলা দ্রুত তদন্ত করে চার্জশিট দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দেশের থানাগুলোতে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। মামলাগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা আসামীর তালিকায় রয়েছেন। যাতে বিরোধী দল সরকারের অনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিবাদ না করতে পারে। এছাড়া সরকার ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলাগুলো সচল করার চিন্তা করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জামায়াত-বিএনপির নামে যত নতুন-পুরাতন মামলা আছে সেগুলোকে দ্রুত তদন্ত করে সম্পন্ন করতে হবে। সরকার বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকায় মামলা দায়ের করা হয় বেশি। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ৩৪টি। এসব মামলায় ৫২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কানসাটে বিদ্যুৎকেন্দ্র পোড়ানোর দায়ে ১৮টি মামলায় জামায়াত-বিএনপির দুই হাজার ২৮০ জনকে আসামী করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১৫টি মামলায় কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৪ মামলায় আসামী করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। তিনি কয়েক দফা জেল খেটেছেন, এখনও জেলে আছেন। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে মামলা আছে ১০৩টি। এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলা আছে ৩৯টি। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে রয়েছে ৭০টি মামলা। সাবেক মন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা। এছাড়া বিএনপির শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে বিরোধী দলের এমন কোনো ব্যক্তি নেই যার বিরুদ্ধে কোনো মামলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। যা রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এদিকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান দুজনের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। ওইসব মামলায় ১৬টির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জামায়াতের ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে ২ শতাধিক মামলা রয়েছে। জামায়াতের সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সেলিম উদ্দিন, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার ধারণা করেছিল বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট নির্বাচনে যাবে না। আর এর মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস আন্দোলন প্রতিহত করা যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাবে কলঙ্কের নির্বাচনের কথা। আর এই হিসাবকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে উপজেলা নির্বাচন দেয়া হয়েছিল। আর সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য শুরু করলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘সেই তুই নথ খসালী তবে কেন লোক হাসালি’। আরও বললেন, গোলাপী ট্রেন ফেল করছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে শুরু করলেন যাতে বিরোধী দল যেন রাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। তাতে কাজ না হওয়ায় বহু প্রার্থীকে আটক করা হয়। মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়। বহু প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে কাজ না হওয়ায় প্রশাসনিক নানা অপকৌশল গ্রহণ করা হয়, যার সামান্য অংশমাত্র সংবাদপত্রে এসেছে। অন্তত ১০টি উপজেলায় দেখা গেছে, অস্ত্র হুন্ডা দিয়ে গু-ারাই ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। আর এর বিপরীতে সাধারণ ভোটাররা অসহায় অবস্থায় জিম্মি হয়ে বসবাস করছেন। নীরব ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সত্য কথাটি বলতে ভয় পাচ্ছেন। অত্যাচার নির্যাতন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ওপরও চালানো হচ্ছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মধ্যে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ নির্মম ঘটনার কারণ আজও রহস্যাবৃত। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ আইলায় আক্রান্ত হন। সরকার দশ লাখ পরিবারকে পুনর্বাসনের কথা বললেও তাদের পুনর্বাসন করতে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু অসহায় দুস্থদের টাকা আত্মসাৎ করে সাতক্ষীরা-খুলনা উপকূলীয় এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সরকার ক্ষমতায় আসার পর একে একে দুর্নীতির খবর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বের হতে থাকে। সে সময় থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা ও পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। অবশেষে মাহমুদুর রহমানকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এভাবে আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অশুভ সূচনা করে। এরপর একে একে দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিগত ৫ বছরে ২৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এদের কোনো বিচার করা হয়নি। বর্তমানে বিরোধী দলকে নির্মূলের নীলনকশা চলছে। বিএনপির বহু নেতাকে আটক রাখা হয়েছে। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করে রাখা হয়েছে। শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। তিনি আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিনের একই অবস্থা করা হয়েছে। হাজার হাজার শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এদিকে সরকার গত বছর ২৫ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার পর ৭ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছিল। ঢাকা থেকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঘোষণা করার পর আরও দেড় হাজার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাধারণ মানুষও রয়েছেন। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক থেকে বলা হয়েছে, গত এক মাসে ৫০ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামী থাকায় নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ কারো বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রোশ থাকলে আটক করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এতে পুলিশের বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে এভাবে নির্মূল করে পথের কাঁটা পরিষ্কার করতে চায়। গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। স্বৈরাচার মানে হলো এক ব্যক্তির শাসন। এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের মাধ্যমে ভিন্নভাবে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার নাম দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। এভাবে কৌশলগত শব্দ ব্যবহার করে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যকে আড়াল করা হচ্ছে। এ সরকার ২০০৮ সালে সেনাশাসকের ওপর ভর করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। সেসব তথ্য এখন বের হতে শুরু করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন কিছু বলেনি। তারা আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য হত্যা, গুম স্বৈরতান্ত্রিক সরকার যে পথ অবলম্বন করে সেই পথ অবলম্বন করছে। বিশ্বে সর্বাত্মকবাদী শাসনের প্রতিভূ এডলপ হিটলার ব্যাপক জনপিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসে ছিলেন। এরপর উগ্রজাতীয়তাবাদে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বকে পদানত করতে চেয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোটা দুনিয়া যখন জানল জার্মান পোল্যান্ড আক্রমণে যাচ্ছে। তখন হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস জার্মানির মধ্যে এই বলে জাতি প্রেম জাগাচ্ছিল যে, পোল্যান্ড নাকি জার্মানের ওপর আক্রমণ করতে আসছে। মহাজোট সরকারের মন্ত্রীরাও গোয়েবলসের মতো মিথ্যা বলতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। ২৯ আগস্ট সংসদে দাঁড়িয়ে বলা হলো, ৫ মে শাপলা চত্বরে কিছু ঘটেনি। অর্থাৎ একটা মানুষও মরেনি। হেফাজত ওয়ালারা রং মেখে সেখানে একত্রিত হয়েছিল। আবার সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রেসনোটে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ৬১ জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেছে। অবশ্য এ কারণে পরবর্তীতে অধিকারের আদিলুর রহমানকে এর মাশুল দিতে হয়েছিল। ২০১৩ সাল ছিল যেন সহিংস রাজনীতির ভয়াবহ কর্মক্ষেত্র। বেড়েছে অপরাধ, নৃশংস খুন, এসব মৃত্যুর হিসাব রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন গবেষকরা। একাধিক মানবাধিকার সংস্থার জরিপে ২০১৩ সালে দুই হাজার ১৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মৃত্যু, সীমান্তে সহিংসতা, গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ধরলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৬৬টি। সরকার ক্রমান্বয়ে হিং¯্র হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক)-এর পরিসংখ্যানে বলেছে, ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়েছেন ৪৯২ জন। ৮১৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে পুলিশের গুলীতে। ২৫ নবেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৩০ দিনের মধ্যে ২৪ দিন অবরোধ পালিত হয়। এ সময় পুলিশের গুলীতে ১২০ জন নিহত হন। এদিকে ১ জানুয়ারি বাসে আগুন দেয়ার সময় মাগুরা শহরের বাসটার্মিনাল থেকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এরা হলেন- মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্যা (২৪), ছাত্রলীগ কর্মী লিমন ও রানা। তাদের কাছ থেকে পেট্রোলভর্তি দুই বোতল ও দিয়াশলাই পাওয়া গেছে। এভাবে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টি বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দাঁত-মুখ খিঁচড়ে বলেছিলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী নাকি যুদ্ধাপরাধী। মতিয়া চৌধুরী নাকি গণতন্ত্রের অগ্নিকন্যা। বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তার সম্পর্কে এই মিথ্যাচার।
সংসদে দাঁড়িয়ে বলা হয়, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন। বেগম জিয়ার মাথায় সাপের ঝাঁপি। তারেক রহমান বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। হলমার্ক, ডেসটিনি, কেলেঙ্কারির জন্য বিএনপি দায়ী। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে কোনো সাংবাদিক নির্যাতিত হয়নি। সরকারের মন্ত্রীরা এ ধরনের মিথ্যাচার একের পর এক করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। একইভাবে হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের সহায়তায় আইনজীবীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি পালনকালে সরকার প্রশাসন দ্বারা অবরোধ পালন করেছে। খালেদা জিয়াকে তার বাসা থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক-এগারোর কুশীলবরা আবার সক্রিয়। একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী অসাংবিধানিকভাবে অন্য সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়। বাংলার মানুষ একথা ভুলেনি মঈনুদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের সরকার শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল। তারা নিজেরাও একথা অকপটে বলেছিলেন। এক এগারোর সক্রিয়তায় ষোলআনা সুফল আওয়ামী লীগ নিজেই ভোগ করেছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক এগারোর সহায়তা ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হতো না। বিরোধী দলের ওপর কি আচরণ করেছে তা সারা বিশ্ব দেখেছে। খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়। ৫ জানুয়ারি একদলীয় নির্বাচন বর্জনের জন্য মার্চ ফর ডেমোক্রেসির ডাক দেন খালেদা জিয়া। এ সময় ৫টি বালুভর্তি ট্রাক তার বাসভবনের সামনে আড় করে রাখা হয়। এভাবে সপ্তাহখানেক খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়। সরকার গণতন্ত্র চর্চা করছে না। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য যত অনৈতিক কাজ হোক না কেন তা করতে কার্পণ্য করবে না। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবকে বিরোধী দলের ওপর ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রেস ক্লাব, হাইকোর্ট এলাকার মতো স্পর্শকাতর এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিরিয়ানি খিচুড়ি খেয়ে হামলা করতে পিছপা হয়নি। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক নেতারা গুম হচ্ছেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন দ্বারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। আওয়ামী লীগ এদেশকে তাদের পৈতৃক সম্পদ বলে মনে করে। তাদের বক্তব্য এমন যে, তাদের ছাড়া আর কারও রাজনীতি করার অধিকার নেই। সম্প্রতি সরকারের এক মন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াত ও হেফাজতের ট্রেনে উঠে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। ইদানীং তারা ২০৪২ সালের স্বপ্ন দেখছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ৫ বছর পর আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে। এতে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হয়তোবা এদেশের জনগণ তাদের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হতে দেবে তা এখন দেখার বিষয়। সরকার বিরোধী দলের মেরুদ- ভেঙে দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কথায় আছে, ‘ম্যান প্রপোজেস, গড ডিসপোজেস’। অর্থাৎ মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার মাধ্যমে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা অনেকেই করেছেন। কিন্তু টিকে থাকেননি। বিশেষ করে জনগণের অসন্তুষ্টি মাথায় নিয়ে কারো পক্ষেই ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। সরকারও পারবেন না। এটা জানেন, কিন্তু মানছেন না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads