বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০১৪

বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য এ মুহূর্তে করণীয়


রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা লাভের এবং ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়ার যে খেলায় মেতে উঠেছে, তাতে সর্বস্তরের মানুষ এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়ই শঙ্কিত। দেশ ও দশের সেবার পরিবর্তে বড় দলগুলোর নেতারা শুধু ধনসম্পদ অর্জনের জন্য রাজনীতিকে তাদের ব্যবসায় পরিণত করেছে। সাধারণ মানুষ বর্তমানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি চায়। শুধু মুক্তি চাইলেই কি মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে? এ জন্য চাই প্রয়োজনীয় পন্থা অবলম্বন। তবে স্বদেশের সব বুদ্ধিজীবীসহ ব্যবসায়িক সংগঠনের সমাধান হচ্ছেÑ দুই নেত্রীকে আলোচনায় আশু বসাতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর তা না হলেই বা কে দিতে পারবে সঠিক সমাধান?
কোনো শারীরিক রোগের সূচিকিৎসার জন্য সাধারণত একজন চিকিৎসকেরই প্রয়োজন হয়, তেমনিভাবে কোনো সামাজিক রোগের চিকিৎসা শুধু একজন সামাজিক চিকিৎসকই করতে পারেন। যারা দার্শনিক তারাই তো সামাজিক রোগের সুচিকিৎসক। আর আমরা জানি দার্শনিক কখনো কোনো দলের হন না। তারা কখনো দলবাজি করেন না। তারা সংসারকর্মও তেমন করেন না। আর করলেও সংসারের জন্যও কোনো সময় দিতে পারেন না। দার্শনিকদের কোনো নিজস্ব স্বার্থ নেই। পৃথিবীর সব মানবসন্তানকেই তাদের আপন সন্তানস্বরূপ মনে করেন। কিভাবে সবার মঙ্গল করা যায় এবং সহজ প্রক্রিয়া বের করার জন্য তাদের প্রতিনিয়ত জ্ঞান আহরণ করতে হয়। পরিণতিতে তাদের নিজের আরাম আয়েশ করার জন্য কোনো সময়ই থাকে না। কথিত আছে যে, দার্শনিক ইবনে রুশদ তার বিয়ে ও বাবার মৃত্যুকালীন রাত ছাড়া আর কোনো রাতে অধ্যয়ন ত্যাগ করেননি। আমার মনে হয়, দুনেত্রীর একই টেবিলে আলোচনায় বসার মতো কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া এক দুরূহ ব্যাপার, আর হলেও তেমন কোনো সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ প্রসঙ্গে ইসলামের ইতিহাস থেকে কয়েকটি উৎকৃষ্ট উদ্ধৃতি দেয়া যাক :
উমাইয়া বংশের পতনের পর আব্বাসীর বংশের শাসকেরা রাষ্ট্রকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। অবশ্য সে ক্ষেত্রে দার্শনিকের ভূমিকা ছিল মুখ্য। আব্বাসীর বংশের কিছু শাসকও দার্শনিক ছিলেন। সে যুগের অন্যতম বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন ইবনে রুশদ। আব্বাসীর বংশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইবনে রুশদয়ের বিরাট অবদান ছিল।
বর্তমানে আমাদের হতদরিদ্র দেশটির চরম অব্যবস্থাপনা আর সীমাহীন দুর্নীতি থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব হবেÑ একমাত্র সমাজ চিন্তাবিদ ইবনে রুশদের মতো কোনো এক দার্শনিক দিয়ে। কারণ একমাত্র দার্শনিকেরাই পারেন রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপরামর্শ দিয়ে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে। আজ চার দিকে তাকালে শুধু যে জঞ্জাল, স্বাস্থ্যহীন মানুষ আর বুভুু ভিুকের দল নজরে আসেÑ তার একমাত্র কারণ আমরা দর্শন (জীবন দর্শন) থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে আরো দূরে সরে যাচ্ছি। দর্শনশাস্ত্রের অবহেলাই এ অবস্থার একমাত্র কারণ। তাই সবাই দর্শনশাস্ত্রের মূল্যবান তথ্য এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হলেই এ পৃথিবীতে আর আহাজারি, দুঃখ-বেদনা থাকবে না। থাকবে অনাবিল সুখ ও আনন্দ।
তাই সঙ্গত কারণেই স্বদেশেও যাতে ইবনে রুশদের মতো দার্শনিক সৃষ্টি হতে পারে, সে জন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা করাই হবে এ মুহূর্তে একমাত্র করণীয়। উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে দর্শনশাস্ত্র এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (Parent Subject) হিসেবে বিবেচিত হয়ে এলেও, শুধু বাংলাদেশেই তা অবহেলিত হয়ে আসছে, যা সত্যিই দুঃখজনক!
ছাত্রদের দর্শনশাস্ত্রে ভর্তির ব্যাপারে অবশ্যই সাহিত্য এবং জ্যামিতিতে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। তা ছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটলসহ খ্যাতিমান সব দার্শনিক হাতেগোনা কয়েকজন মেধাবী ছাত্রকেই দর্শনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কারণ তারা মনে করতেন, অধিকসংখ্যক ব্যক্তির দার্শনিক হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাইতো রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের দিকে খেয়াল রেখে খুব কমসংখ্যক অতিশয় মেধাবী ছাত্রকেই রাষ্ট্রীয় আর্থিক সহায়তায় দর্শনশাস্ত্র পড়ানোর ব্যবস্থা করা উচিত হবে। আমার মতে, মফস্বল এবং শহরে অবস্থিত সব কলেজে অবিলম্বে দর্শন বিভাগ বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ অধিকসংখ্যক ব্যক্তির দার্শনিক হওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। লজিক বন্ধকরণের সপক্ষে প্রচুর যুক্তি রয়েছে, যা জানার জন্য লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য লজিক নিয়ে এইচএসসি পাস করারও কোনো প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অঙ্ক নিয়ে এইচএসসি পাস করা একজন মেধাবী ছাত্রেরই দর্শনশাস্ত্র পড়া উচিত। কম মেধাবী ছাত্রদের কখনো দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়া উচিত নয়। তবে জ্ঞান আহরণের জন্য সবারই কমবেশি দর্শন পড়া উচিত।
উল্লেখ্য, সরকার যদি দর্শন বিভাগের ছাত্রদের জন্য আকর্ষণীয় বৃত্তির ব্যবস্থা করে, তাহলেই গরিব ও মেধাবী ছাত্ররা দর্শন বিষয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হবে। আর তখনই এসব মেধাবী ছাত্রের মধ্য থেকে প্রীতিলতার মতো দার্শনিক এবং সমাজসেবায় নিবেদিত ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। উপরিউল্লিখিত রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে দার্শনিকদের সম্মান প্রদান এবং উপদেষ্টা পরিষদে সদস্য রাখার নিয়ম প্রচলন করা হলে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশটিও একদিন সামগ্রিকভাবে উন্নতি অর্জন করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads