মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

গণমাধ্যমে উপেক্ষিত জনমত


সংবাদমাধ্যমের এখনকার প্রধান খবর নির্বাচনী সহিসংতা। অস্ত্র ও বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, পুলিশের ওপর হামলার সরল বর্ণনায় ভরা। খবরের উপস্থাপন দেখে বোঝার উপায় নেই অপরাধী কারা। সাদাসিধা বললে বলতে হয়, ঘটনা আছে এর কর্তা নেই। দর্শক পাঠকদের সৌভাগ্য অন্ততপক্ষে ঘটনাকে মিডিয়া গায়েব করে দিচ্ছে না। অন্যায় কর্মকাণ্ডের একটি সরল বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ঘটনা গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটছে। সাংবাদিক অপমান করার ঘটনা প্রকাশেও কার্পণ্য দেখা যাচ্ছে। 
খবর অনুযায়ী তৃতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে সহিসংসতা আর ভোট জালিয়াতির উৎসব হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সারা দেশে তিনজন প্রাণ হারায়। কারা এসবের জন্য দায়ীÑ এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কেউ দেয়নি। প্রায় সবাই শিরোনাম করেছে এবার আওয়ামী লীগ এগিয়ে। প্রথম দুই দফার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়। তৃতীয় দফা নির্বাচনের আগে এমন কী ঘটল যে, জনমতের ওপর তার প্রভাব পড়েছে, যার ফলে মানুষ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে বড় দাগে ঝুঁকে পড়ল। পাঠকদের মনে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগলেও কোনো মিডিয়া তার বিশ্লেষণ দিতে উৎসাহিত নয়। একটি পত্রিকা শিরোনাম করল আওয়ামী লীগ ফুরফুরে মেজাজে। ভোট জালিয়াতির নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিব্রত হওয়ার কথা। লজ্জার কথা যে, তারা কেবল জোর জুলুম করার পর একটি নির্বাচনে বিরোধীদের চেয়ে এগিয়ে গেল।
প্রথম দুদফায় ১১৭টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদ পায় বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগ ও বাম জোট পায় ৮০টি। বামদল নিয়ে জোট আছে কিন্তু বামদের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর দল কিংবা লেনিনের সমর্থনপুষ্ট কেউ একটি উপজেলায় জিতেছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপি জোট ভাইস চেয়ারম্যান পদ পায় ২৪৫টি। আওয়ামী জোট পায় ১৩৭টি।  তৃতীয় দফায় দুটো ঘটনা ঘটল। ব্যাপক ভোট ডাকাতি এবং ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক বিজয়। তাদের ৩৮ জন চেয়ারম্যানের বিপরীত বিএনপি জোট ৩৫ জন চেয়ারম্যান পদ পায়। বিপুল ভরাডুবির পর বিরাট বিজয়। এ নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ না থাকলেও আছে ফলাফলের প্রকৃত চিত্রকে আড়াল করার চেষ্টা।
আওয়ামী লীগ এগিয়ে এ খবর বড় করে করা হলেও খবর হয়নি কয়টি কেন্দ্র দখল হয়েছে সে বিষয় নিয়ে। খবর হয়নি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় কারা দিচ্ছে তা নিয়ে। জালভোট, কেন্দ্র দখল ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো খবর নেই। নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজের কথা অনেকেই ভুলে গেছেন হয়তো। তিনি একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করানোর সুযোগ পাননি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রচারণার যে ঝড় উঠানো হয়েছিল, মিডিয়া সে দায় থেকে মুক্ত নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নিয়ে কারো কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারের পতন পর্যন্ত প্রত্যেকটি সংগ্রামে মিডিয়া অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এবার প্রথম সরকারবিরোধী ব্যাপকভিত্তিক আন্দোলনে মিডিয়া সরাসরি বিরোধিতা করে। এর সুবিধা পেয়ে ক্ষমতাসীন সরকার তার মেয়াদকাল বাড়িয়ে নিতে সমর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এর বেনিফিশিয়ারি হলেও মিডিয়ার জন্য এটি একটি বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে। জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তারা অভিযুক্ত হয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সরকারবিরোধীরা এখন রয়েছে দমন নির্যাতনের মুখে। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করছে, সরকারের বিপক্ষে জনমত অত্যন্ত প্রবল। মিডিয়ার প্রবল সমর্থন নিয়েও সরকার জনগণের সমর্থন হারাচ্ছে। অন্য দিকে মিডিয়ার উৎপাদিত খবর ও মতামতকে জনগণ আমলে নিলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী এতদিনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কার্যত দেখা যাচ্ছে দলটির প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। 
বাম দলগুলোর অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমের কোনো মন্তব্য নেই। ক্ষমতায় এবার বেশ কয়েকজন বাম নেতা অত্যন্ত প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। সরকারের নীতি নির্ধারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গণজাগরণমঞ্চের সৃষ্টি ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের পরামর্শে সরকার কাজ করে। তাদের সৃষ্ট গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলায় সারা দেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, লুটপাট ও আগুন দেয়া হয়। এই মঞ্চ থেকে ঘৃণা ছড়ানো হলেও মিডিয়া একযোগে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। জনগণের চিন্তা ধ্যান ধারণার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া একটি মঞ্চকে সমর্থন দেয়ায় খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে, যা প্রকৃতপক্ষে গেছে বিরোধী দলের পক্ষে। একটি দেশের মিডিয়া চাইলেই নিজেদের মতো করে মতামত গড়ে নিতে পারে না। জনগণের বিবেচনা শক্তিকে কেউ অক্ষম করে দিতে পারে না। 
মিডিয়া একই আচরণ করেছে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের বিরুদ্ধে। দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে গণমাধ্যমের আচরণ কোনো গ্রামার অনুসরণ করেনি। তাদের বেলায় সাংবাদিকতা রূপান্তরিত হয়েছিল পলিটিক্যাল একটিভিজমে। ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে তারা কাজ করেছে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে সহিংসতা’ ‘তাণ্ডব’ ‘জঙ্গিশব্দের আড়ালে লুকিয়ে ফেলতে সহযোগিতা করেছে তারা। রাস্তায় মিছিলকে নাশকতাবলে সংবাদ প্রচার করতে বাঁধেনি তাদের। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে এসব শব্দ লুফে নিয়ে ব্যবহার করেছে পুলিশ। শেষে এ শব্দগুলো শুধু জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। হেফাজতের ওপর সশস্ত্র অভিযানে শব্দগুলো কাজে লেগিয়েছে সরকার। গত বছরের ৫ মের ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়া খোলাসা করে প্রচার করলেও দেশীয় মিডিয়া ঘটনাটিকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের আড়ালে ঢেকে ফেলার অপচেষ্টা করে। এর ফলে সৃষ্ট খুন, গুম ও অপহরণের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির দায় মিডিয়া এখন এড়াতে পারে না। জঙ্গি দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক বেআইনি অভিযানকে সমর্থন করেছে তারা। এখন সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম করে প্রতিদিন নাগরিকদের হাওয়া করে দেয়া হচ্ছে।

জাতীয় জনমত জরিপ ও মিডিয়া
কয়েকটি প্রধান দৈনিক কয়েক বছর ধরে নিয়মিত জনমত জরিপ করে আসছে। ওইসব জরিপ সাধারণ পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি করে। জরিপের সত্যতা নিয়ে কেউ কাউন্টার জরিপ করেনি। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান এবং পত্রিকার পক্ষ থেকে জরিপের যথার্থতার ব্যাপারে উচ্চ নিশ্চয়তা দেয়া হয়। সেসব যুক্তি তর্ক ও সাফাই পড়ার পর জরিপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা সন্দেহ করার সুযোগ ছিল না। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল এসব জরিপকে প্রথম বড় ধরনের ধাক্কা দিলো। তাদের উপস্থাপিত পরিসংখ্যানের বিপরীত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনে। জরিপে বরাবর দেখানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রতি জনমতের ধস খুব বেশি হয়নি। প্রত্যেকটি জরিপে দেখানো হয়েছে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। উপজেলা নির্বাচনে রংপুরে শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরেছে। গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থী শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। এখন জরিপের ব্যাপারে সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে পাঠকদের।
জাতীয় পার্টি নিয়ে জরিপকারীদের পূর্বাভাস একেবারে উদ্ভট ঠেকছে। জরিপে এ পার্টির প্রতি মানুষের জনসমর্থন কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছিল। জামায়াতের জনসমর্থনের ব্যাপারে ঠিক এর উল্টো পরিসংখ্যান প্রদর্শন করেছিল জরিপকারীরা। একটি জরিপে দেখানো হয়েছিল, দলটির জনসমর্থন অর্ধেকে নেমে এসেছে। উপজেলা নির্বাচনে জনগণের রায়ে জরিপের স¤পূর্ণ বিপরীত চিত্রই দেখা যাচ্ছে। 
তিন দফায় মোট ২৮টি উপজেলায় জামায়াত থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে দুটি উপজেলা চেয়ারম্যান। জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত ১২টি ভাইস চেয়ারম্যানের বিপরীতে জামায়াতের প্রার্থীরা ১০৩টি উপজেলায় এ পদে বিজয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ জরিপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক সময় গেছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। তার ব্যক্তিগত আচার আচারণ দলটির ভাবমর্যাদা নষ্ট করেছে। কিন্তু এমন হওয়ার কথা নয় যে, একটি দল এক বছরের মাথায় বিলুপ্ত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। জাতীয় পার্টি নিয়ে জরিপকারীদের পরিসংখ্যান কোথা থেকে এসেছিল তা নিয়ে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। ওইসব জরিপে বিএনপির প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে এমন দেখানো হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচনে জয়ের ধারায় দেখা যাচ্ছে, সেখানেও জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ছিল না। 
জরিপকারীরা সারা দেশ থেকে নমুনা নিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করেছে। এর মাধ্যমে তারা পুরো জাতির একটি রাজনৈতিক পূর্বাভাস দিয়েছিল। জরিপকারীদের নমুনা এলাকাগুলোতে নির্বাচন হয়নি এ ধরনের যুক্তি দিয়ে তাই এই জরিপ ও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল তুলনীয় নয় বলা যাবে না। জরিপে প্রদর্শিত তথ্যের সাথে বাস্তবতার ফারাক এতটা হওয়ার নজির পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। আমরা আগেও ওইসব জরিপের পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে লিখেছি। উপজেলা নির্বাচনের পর জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জরিপ প্রকাশকারী ওইসব মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা আবারো প্রশ্নের মুখে পড়বে।
রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে জরিপের মতো স্পর্শকাতর কার্যক্রমে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। মিডিয়ার মতো বাংলাদেশের জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ উঠবে। পাঠকদের এখন এ ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সদ্য গজিয়ে ওঠা জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একই মতাদর্শের লোকেরা চালায়। জনমতের সঠিক প্রতিফলন জানতে হলে রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে।

বেড়ে গেল অন্যান্য
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন তিনটি দল! আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য। চলমান উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় দলটির উদ্ভব হয়েছে। অন্যান্যশব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তুচ্ছার্থে ব্যবহার হয়। নগণ্য ও অর্থহীন সংখ্যা প্রকাশ করে এটি। টিভি ও পত্রিকায় নির্বাচনী ফলাফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সব দলকে অন্যান্যনামে প্রকাশ করেছে। একটি পত্রিকা তিন দফা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের কতজন কোনো দলের তা এ তিনটি রাজনৈতিক দলের নামে পাইচার্টে দেখিয়েছে। তাদের হিসাব মতে, প্রথম দফায় অন্যান্যপেয়েছে ১৯টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় পেয়েছে যথাক্রমে ১৮ ও ১৫টি। বাংলাদেশে বামপন্থী দল রয়েছে এক ডজনেরও বেশি। এরা অনেকেই বর্তমান সরকারের ভাগিদার। জনসমর্থনহীন এসব দলের কর্মকাণ্ড মিডিয়া ফলাও করে প্রকাশ করে। এসব দলের নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায় মিডিয়ায়। তবে জনগণের কোনো সমস্যা সমাধানে মাঠেঘাটে এদের পাওয়া যায় না। তাদের প্রতি নাগরিকদের আস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে, উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল তার উজ্জ্বল প্রমাণ। জাতীয় পার্টি জিতেছে দুটি উপজেলায়। এলডিপি, জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ একটি করে উপজেলায় জয়ী হয়েছে।
তা হলে অন্যান্যএতটা বেড়ে গেল কিভাবে। ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে এর উত্তর পাওয়া যাবে। দলটি জয়ী হয়েছে ২৮টি উপজেলায়। পত্রিকাটি অবশ্য তিন দফায় কোন দল কতটি ভাইস চেয়ারম্যান পদ পেয়েছে তা পাইচার্টে উপস্থাপন করেনি। জামায়াত ১০৩টি ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে। পাইচার্টে ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যাটা প্রকাশ করা হলে অন্যান্যের সংখ্যাটি আওয়ামী লীগের কাছাকাছি হয়ে যেত এবং তা বেঢপ দেখাত। অন্যান্যদলটি কিভাবে এত বড় পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগত। রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা থেকে এ ধরনের আচরণ উদ্ভব হতে পারে। যেসব কারণে বাংলাদেশে বাম রাজনীতিকেরা গুরুত্ব পান, একই কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলো গুরুত্বহীন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় মিডিয়ার পক্ষ থেকে। এ আচরণের চরম পর্যায়ে মিডিয়া সরাসরি রাজনৈতিক দল বিশেষের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
মিডিয়ার লক্ষ্য যদি হয় জাতীয় উন্নয়ন। দেশপ্রেম যদি আদর্শ হয়। তাহলে এমন আচরণ মিডিয়া কখনো করতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোর ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেয়া তাদের কাজ হওয়া উচিত। তাদের কাজ হওয়া উচিত কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার জন্য একটিভিস্টের ভূমিকা পালন নয়। এ কার্যক্রমে রাজনৈতিক মতাদর্শ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু এর পরিণতিতে দীর্ঘমেয়াদে মিডিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে যেতে পারে। জামায়াতের বিরুদ্ধে কট্টর বৈরিতার ফলাফল দলটির জন্য শাপেবর হয়ে দেখা দিলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত আগের তুলনায় অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছে। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে মিডিয়ার প্রকাশিত খবর জনগণ বিশ্বাস করলে দলটির পক্ষে নির্বাচনে এতটা ভালো ফলাফল কোনোভাবে সম্ভব হতো না।

সহিংসতার শিকার সাংবাদিকেরা খবর হননি
তৃতীয় দফা নির্বাচনে সহিসংতার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। এ খবরটিকে শিরোনাম হতে দেখা যায়নি। চৌদ্দগ্রামে রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহযোগী সাংবাদিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ভোটকেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘আর এক মিনিট কেন্দ্রে থাকলে তোদের লাশ পড়বে, সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না। এ মুহূর্তে কুমিল্লা ছাড়বি, না হলে তোদের সবগুলোকে পুলিশে দেবো।
সকাল ১০টা থেকে মন্ত্রীর পিএস মোশাররফ হোসেন কয়েক শক্যাডার নিয়ে মহড়া দিতে শুরু করেন। উপজেলার ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি ক্ষমতাসীনেরা দখল করে নেন। সাংবাদিকেরা কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তিনি তাদের বাধা দেন। প্রথমে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। অন্যায় প্রভাব খাটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদের পরিচয় জানতে চান। বিতর্কের একপর্যায়ে নিজেকে মন্ত্রীর পিএস পরিচয় দেন। তার ক্যাডার বাহিনী এ সময় সাংবাদিকদের ঘিরে ধরে কুৎসিৎ গালাগাল করে। মোশাররফ তাদের নির্দেশ দেন লাঠি আনতে। শেষে ধাক্কা দিয়ে সাংবাদিকদের জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে দেন তারা। এ সময় মানবজমীনের সিনিয়র সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদের মোবাইল ছিনিয়ে নেন তারা। মোবাইল ফোনটি ফেরত দেয়ার অনুরোধ করলে আরো মারধর করার হুমকি দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নীরবে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রধান গণমাধ্যম সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসীদের এ অপমান লাঞ্ছনা নিয়ে কোনো খবর করেনি। পুলিশের নির্লিপ্ততা নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা তো আরো অনেক দূরের বিষয়। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads