মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

প্রসঙ্গ আইনের শাসন


দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষা ও সুশাসনের জন্য রয়েছে আদালত এবং বিচারব্যবস্থা। দেশের আইন সকল নাগরিককে মেনে চলতে হয়। মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিচারক, পুলিশ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। কেউ যদি প্রচলিত আইন অমান্য করেন, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তথা পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে থাকে। আইন মোতাবেক যে শাস্তি হয় তা তাকে মেনে নিতে হয়। দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেমন আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, তেমনই কেউ আইন অমান্য করলে বা অন্য নাগরিকের অধিকার খর্ব করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা যেতে পারে। দেশের শৃংখলা রক্ষা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তাবিধানের জন্য আইনের শাসন জরুরি। যেখানে আইনের শাসন থাকে না, সেখানে নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তাও থাকে না। নাগরিকদের জীবনযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দেশ লুটেরা ও সন্ত্রাসীদের রাজত্বে পরিণত হয়। কাজেই আইনের শাসন সভ্য সমাজের জন্য একান্ত জরুরি। যেখানে আইনের শাসন নেই, সেখানে সুস্থ মানুষের বসবাস সম্ভব নয়। আইনের শাসন বলবৎ না থাকলে স্বাধীনতার মূল্যও থাকে না। মানুষের স্বাধীনতা যেমন একটি মৌলিক অধিকার, তেমনই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত থাকাও সভ্যতার দাবি। অন্যের জীবন-জীবিকার প্রতি কেউ যেমন হুমকি সৃষ্টি করতে পারে না, তেমনই নিজের মৌলিক অধিকারসমূহ বিসর্জন দিয়ে কেউ স্বাধীন মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
পৃথিবীর প্রতিটি আধুনিক ও সভ্য দেশ কিছু জরুরি নিয়মনীতি বা আইন কানুনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে পৃথিবীর সব আইনেই মানবাধিকার শীর্ষে রয়েছে। মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনই অন্যের অধিকার যেন বিঘিœত না হয় তা নিশ্চিত করার তাকিদও রয়েছে। আইন সবার জন্য সমান। আইন যেমন সবাইকে সমানাধিকার দিয়েছে মানুষ হিসেবে, তেমনই তা মেনেও চলতে হয় সবাইকে। আইন কেউ মানবে না, আবার কাউকে মানতে বাধ্য করা হবে জোরপূর্বক এমনটা নয়। যারা আইন মানতে চান না, নিজের সুখ-সুবিধাকে বড় করে দেখেন, প্রয়োজনে অন্যকে মেরে ধরে নিজের ইচ্ছেকে পূরণ করতে চান অন্যায়ভাবে, তাদের জন্যই তৈরি হয় আইন-আদালত বা বিচারব্যবস্থা। বিচারব্যবস্থা হচ্ছে সভ্যতার অবদান। আইনের শাসন হচ্ছে সভ্য জীবনের অনুষঙ্গ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, কেউ কেউ ক্ষমতার মোহে আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। প্রতিপক্ষকে ক্ষমতার দাপটে পদদলিত করে তাদের সব অধিকার কেড়ে নেবার ধৃষ্টতা দেখাতে দুঃসাহসী হয়ে ওঠেন। বিনাভোটে নির্বাচিত আমাদের সরকারে থাকা মন্ত্রী সাহেবরা এতটাই বেসামাল হয়ে পড়েছেন যে, তারা এখন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের হাত-পা কেটে নেবার ঘোষণা দিচ্ছেন প্রকাশ্যে। কিন্তু সন্ত্রাসী বা জঙ্গি লালনের উর্বরভূমিতো জোর করে ক্ষমতা দখলকারীদের রাজনীতি ও তাদের দর্শন। কেউ জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন-আদালত যে ব্যবস্থা নেবে তাই হবে। মন্ত্রী-এমপিরা কারুর হাত-পা কেটে নেবার কে? যারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করছে, তাদের হাত-পা কেটে নিতে কি পারবেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি সাহেবরা?
আমরা সুশাসন চাই। ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। আইনের শাসন চাই। বিচারের নামে প্রহসন চাই না কখনও। সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাত-পা কেটে নেবার হুমকি যারা দেন, তারা যাই হোন সুশাসন চান না, ন্যায়বিচার চান না। আইনের শাসন চান না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads