বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৪

নতুন নির্বাচনের জন্য ৭ রাষ্ট্রদূতের ফের তাগিদ


গত মঙ্গলবার রাজধানীর অঁলিয়স ফ্রঁসেসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ সাতটি দেশ ও সংস্থার রাষ্ট্রদূতরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে সষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এতে ভোটার জনগণের ইচ্ছা ও মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। কানাডার রাষ্ট্রদূত সরাসরি বলেছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষই নতুন একটি নির্বাচনের পক্ষে। সে কারণে তারা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের পক্ষ থেকেও একই অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতরা আরো বলেছেন, পরবর্তী পাঁচটি বা দশটি নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আর কখনো সহিংসতার সৃষ্টি না হয়। ভোটার জনগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে এবং ফলাফল যাতে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারেও সমঝোতায় আসার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূতরা। তারা বলেছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রধান দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্যে সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকা-সহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি উঠে এসেছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। মূলকথায় তারা বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো অংশ না নেয়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। ভোটাররাও এতে ভোট দিতে যাননি। তারও আগে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এমপিরা। এসব কারণে নির্বাচনটি ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার পক্ষ থেকে দুই নেত্রীকে তিনি সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পন্থা উদ্ভাবনের এবং সে অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে আহ্বান জানানো হয়েছিল সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রদূতরা। কিন্তু তাদের সে আহবান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজিত হয়নি। নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের নেয়া সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগকে সব দেশ যে স্বাগত জানিয়েছিল তারও উল্লে¬খ করে তারা বলেছেন, সে উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। সব মিলিয়েই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি বলে মন্তব্য করে তারা বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা খুব দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগিদ দিয়েছে, যাতে জনগণ তাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। সরকারের উচিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
অন্য কিছু বিষয়ে বললেও সাত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। বক্তব্যে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জন এবং ভোটারদের অনুপস্থিতি তথা অংশ না নেয়ার দিকটি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়েও তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনটি নিয়ে তারা তথা তাদের দেশ ও সংস্থা মোটেই সন্তুষ্ট নয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন আরও একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেয়ার মধ্য দিয়েও একই মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তারা। তারা শুধু এটুকু বলতেই বাকি রেখেছেন যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার কোনো বৈধ সরকার নয়। কথাটা মুখে না বললেও নতুন সরকারের সঙ্গে অতি শীতল ব্যবহার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা কমানোর মতো এমন বেশ কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যেগুলো প্রমাণ করে, দ্বিতীয় মেয়াদে আগত সরকারের ব্যাপারে দেশগুলোর যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। সব মিলিয়েই রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য স্পষ্ট এবং কঠোর বার্তাই এসেছে। আমরা মনে করি, ক্ষমতাসীনদের উচিত এই বার্তার মূলকথা অনুধাবন করা এবং আবারও সংবিধানের দোহাই দেয়ার ও পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার চিন্তা পরিত্যাগ করে যত দ্রুত সম্ভব নতুন সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, একমাত্র ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কাছেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের ভাষাতেই প্রতিক্রিয়া Ÿ্যক্ত করেছে। ব্রিটেন তো অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য-সহায়তা স্থগিত ও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছে। অন্য আরও কিছু দেশও পর্যায়ক্রমে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি সত্যিই তেমন হয়ে গেলে কোনো ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ই সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং বিপদ বেড়ে যাওয়ার আগেই ক্ষমতাসীনদের উচিত রাষ্ট্রদূতদের আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং বিশেষ করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন করে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। বলা দরকার, এজন্য শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না, একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের বিধানও সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, প্রচ- দমন-নির্যাতন এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মাধ্যমে কোনোভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পাড়ি দিতে পারলেও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল থেকে ক্ষমতাসীনরা নিশ্চয়ই শিক্ষা নেবেন। সে শিক্ষার ভিত্তিতেই আগামীতে তাদের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সব দল নির্বাচনে অংশ নেয় এবং যাতে ভোটাররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর মধ্য দিয়ে তারা সাত রাষ্ট্রদূতের প্রতি কেবল নয়, বিশ্ববাসীর ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষার প্রতিও সম্মান দেখাতে পারবেন বলে আমরা মনে করি। স্বল্প সময়ের মধ্যে সে লক্ষ্যেই তাদের উদ্যোগী হওয়া উচিত।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads