বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

প্রসঙ্গ উপজেলা নির্বাচন


ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। তবে এতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে আল্লামা সাঈদীর পুত্র মাসুদ বিন সাঈদীর বিজয়।
সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদীর জয় নিয়ে মিডিয়া এবং অন্যত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা। বিশ্লেষকরা স্পষ্টতই মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও ভালোবাসার জয় হয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ মনে করছে দুর্বল সংগঠন আর নেতাকর্মীদের অনৈক্য ডুবিয়েছে দল সমর্থিত প্রার্থীকে। তবে প্রকাশিত নানা মিডিয়া অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে ছিল আরও অনেক কারণ। জিয়ানগর উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খালেক গাজীর পক্ষে মাঠে ছিলেন বিতর্কিত জিয়ানগরের নাসির সিপাই গং ও জামাল মেম্বার। তারা হেন কোনো কাজ নেই যা করেননি। খালেক গাজীর পক্ষে তারা কাজ করায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে জিয়ানগরবাসী। পাশাপাশি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ভোটাররাও মুখ ফিরিয়ে নেন খালেক গাজীর ওপর থেকে। জিয়ানগর উপজেলা নির্বাচনে মাসুদ বিন সাঈদী ২১ হাজার ১৪৯ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল খালেক গাজী ৬ হাজার ৬১৫ ভোট পান। উপজেলার ২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩টি কেন্দ্র হিন্দু অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে রেখাখালী সুতারখালীর রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় খালেক গাজীর নিজ কেন্দ্রে মাসুদ সাঈদী দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পান। সেখানে মাসুদ সাঈদী পান ৬৫৯ ভোট, খালেক গাজী পান ২৯৭ ভোট। দক্ষিণ ইন্দুরকানী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাসুদ সাঈদী পান ৭৮৭ ভোট, খালেক গাজী পান ২৩৭ ভোট। পঞ্চগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে মাসুদ সাঈদী পান ৭৬৮ ভোট, খালেক গাজী পান ৫০৮ ভোট। সরেজমিন জিয়ানগর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে সাংবাদিকরা লিখিত প্রতিবেদনে জানিয়েছেন,  ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। মুসলিম-হিন্দু ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল ভোটারদের সরব উপস্থিতি ও দীর্ঘ লাইন। সকালে এ চিত্র দেখে খালেক গাজীর সমর্থকরা কয়েকটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। কিন্তু মাসুদ বিন সাঈদীর সমর্থক ও ভোটারদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএমএ আউয়ালের শরণাপন্ন হন। পিরোজপুর সদর উপজেলায় তার ভাইয়ের বিজয় নিশ্চিত করে তার লোকজন নিয়ে তিনি ছুটে যান বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের নির্বাচনী এলাকা পিরোজপুর-২ আসনের জিয়ানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে। স্থানীয় জামায়াতের মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে তাদের হাই কমান্ডের কাছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের শেষ দিকে এ চিত্র তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজকে অবহিত করা হয়। বলা হয়, যদি সাঈদীর নিজ উপজেলায় ভোটের ফলাফল বদলানো হয় তারা আর চুপ করে থাকবে না। কয়েকজন সাংবাদিক ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। ওই সময়ে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ঢাকা মেট্রো-গ ১১৪০০৭ পাজেরো গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় এমপি আউয়াল প্রশাসনের সঙ্গে দেন-দরবার করছিলেন। আর ওই গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর চালক। গাড়িটিও নির্বাহী প্রকৌশলীর। গত ৫ বছর ধরে এমপিই ব্যবহার করে আসছেন। আর গাড়ির তেল যোগান দিচ্ছে এলজিইডি। ওইদিন উপজেলা পরিষদে এমপি আউয়াল অবস্থান করলেও দল সমর্থিত প্রার্থীর ভোটের হার দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান। দলীয় প্রার্থীকে পরামর্শ দিয়ে যান ভোট বর্জনের। সাঈদীপুত্রের কাছে কেন এই পরাজয়Ñ এ প্রশ্নের জবাবে পিরোজপুর সদর এলাকার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারছেন না। তারা পরস্পরকে দোষী ও অভিযুক্ত করছেন এবং বিষোদগারে লিপ্ত হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, জিয়ানগরবাসী প্রমাণ করে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে যে, জামায়াত ও সাঈদী সাহেবের ওপর জুলুম করা হয়েছে। তাছাড়া, তিনি যে হিন্দুদের নির্যাতন করেননি তা তারাই ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ভোটের ফলাফল চিত্র তা-ই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, আমার পিতা যুদ্ধাপরাধে অপরাধী নন। তিনি জিয়ানগরবাসীর প্রাণের মানুষ। পাশাপাশি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি এলাকাবাসীর জন্য কাজ করেছেন। আর গত ৫ বছরের জুলুম, নির্যাতন, হামলা-মামলা ও সন্ত্রাসের জবাব মানুষ ভোটের মাধ্যমে দিয়েছে। তিনি জানান, এই জিয়ানগর উপজেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাঈদী। তার চেষ্টায়ই এই উপজেলা হয়।
ব্যাপক সরকারি ও প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগকে ব্যর্থ করে দিয়ে মাসুদ বিন সাঈদীর বিজয় প্রমাণ করেছে জনতার শক্তিই শেষ কথা এবং সত্যের শক্তিই চিরন্তন। এ বিজয়ের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আর মিথ্যাচার দাঁতভাঙা জবাব পেলো। যাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব এখন মরেনি, তারা চোখের সামনে জ্বলন্ত সত্য ভোটের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হতে দেখলেন। জিয়ানগরের সত্যনিষ্ঠ মানুষ তথা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সামনে সত্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপন করলেন। এখনও যারা মিথ্যা, হিংসা, ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন, তাদের চোখ খুলে দেয়ার জন্য এই গণতান্ত্রিক জনরায়ই যথেষ্ট।
যদিও বর্তমান উপজেলা নির্বাচন ব্যাপক সন্ত্রাস, বলপ্রয়োগ ও চাপের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহু স্থানে জনরায় এবং জনমতকে লুণ্ঠন করা হয়েছে। তথাপি জাগ্রত জনতার সামনে যে ষড়যন্ত্র পরাস্ত হতে বাধ্য, এ সত্যটিই মাসুদ বিন সাঈদীর বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এই বিজয়ের চেতনায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও শক্তি পাবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং ভোটের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে এ বিজয় একটি ঐতিহাসিক সংযোজন হয়ে থাকবে।
শুধু মাসুদ বিন সাঈদীই নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের ব্যাপক বিজয় ও জনপ্রিয়তার মাধ্যমে ইসলামী আদর্শ এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের চলমান ধারার প্রতি গণমানুষের ব্যাপক আস্থা ও সমর্থনেরই প্রকাশ ঘটেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া কিংবা প্রত্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়িতেও ঘটেছে অভূতপূর্ব গণজাগরণ। নাইক্ষ্যংছড়িতে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী সাবেক সফল ও জনপ্রিয় চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সাবেক কৃতী স্নাতকোত্তর তোফাইল আহমেদের পক্ষে তার মাসুম সন্তানরা যখন ন্যায়-বিচারের স্বার্থে তাদের নির্দোষ পিতার পক্ষে দ্বারে দ্বারে ভোটপ্রার্থনা করেছিল, সেদিন কেঁদে ওঠেছিল হাজার হাজার জনতা। জনতা তাদের সমর্থন ও ভালোবাসার আকুতি ভোটের বাক্সে দিয়ে সত্যকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং সদা প্রহরায় থেকে জনরায়কে ছিনিয়ে নেয়ার সকল অপচেষ্টাকে বানচাল করেছিলেন। বস্তুত জামায়াতের নিপীড়িত-নির্যাতিত প্রার্থীরা শুধু ভোট বা পদই পাননি, তারা মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছেন। তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম, রক্তদান-কুরবানির প্রতি গণমানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জন করেছেন। একটি সংগ্রামী, গণতান্ত্রিক, জনসম্পৃক্ত রাজনীতিক দল হিসেবে জামায়াতের এই প্রাপ্তি গণতন্ত্রেরই অর্জন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বেড়েছে সহিংসতা ও অনিয়ম। জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল আর ভোটের আগেই ব্যালট বোঝাইয়ের নজিরবিহীন এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, অবস্থান এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে। শক্তির মহড়ায় কেন্দ্র দখলের উৎসবের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেমন প্রাধান্য বিস্তার করেছেন তেমনি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা বেশি জয়ী হয়েছেন। ব্যবধান কমানোর সহিংসতাপূর্ণ এ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ ফল ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে। পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচন ছিল অধিক সহিংসতাপূর্ণ। এ নির্বাচনে তাদের পাঠানো প্রতিনিধিকে অনেক স্থানে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি পর্যবেক্ষককে কেন্দ্রে আটকে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাপক জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে এ সংস্থাটি। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, একটি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের সামনেই ১০ বছরের কিশোর একাই ১৩টি ভোট দিয়েছে। এদিকে নির্বাচনে ক্রমে সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৃটেন। এক অনুষ্ঠানে দেশটির হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে চার ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পর্যায়ক্রমে ব্যবধান কমিয়ে এগিয়ে গেলেও ধাপে ধাপে বেড়েছে সংঘাত-সহিংসতা ও অনিয়ম। সহিংসতা দমনে নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশিত ভূমিকা নেয়নি। মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা। সর্বশেষ খবর হলো, একজন মন্ত্রী ও একজন এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছে কমিশন। চতুর্থ দফা নির্বাচনের আগের দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক জানিয়েছিলেন ব্যালট ছিনতাই হলে গুলী করা হবে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে বলেও বলা হয়েছিল। তবে কমিশনের এমন ঘোষণায় নির্বাচন চিত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং অবনতি হয়েছে পরিস্থিতির। আগের ধাপের নির্বাচনে বাগেরহাট ও শরীয়তপুরে সহিংসতায় মারা যান দুজন। জালভোট, কেন্দ্র দখল ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বেশ কয়েকটি উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করেন। সহিংসতা ও সংঘর্ষের কারণে ২১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ঝিনাইদহ, কুমিল্লা উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, বরিশাল উত্তর, বাউফল, ধামরাই, কানাইঘাট, নাসিরনগর, সোনাগাজী, ফুলগাজী, বটিয়াঘাটা, বেতাগী, নলছিটি, কাঁঠালিয়া, ঈশ্বরদী, বানারীপাড়া, মনপুরা, দৌলতখানসহ ২৫টি উপজেলার বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র দখল বা সরকারি দলের প্রার্থীর লোকজন প্রভাব বিস্তার করায় সাধারণ ভোটাররা সেখানে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি বা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেননি।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতার কারণে নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের বিষয়ে দৃশ্যত সতর্কতার বিষয়টি ইঙ্গিত করে। আগের ধাপগুলোতে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও চতুর্থ ধাপে তাদের ক্ষমতা দেয়ার বিষয় চিঠি দিয়ে অবহিত করে কমিশন। বলা হয় সেনাবাহিনীর সামনে যেকোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই তারা ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে নির্বাচনে দৃশ্যত এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোলযোগ থামাতে ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। তবে দখল-জালিয়াতি ছিল আগের ধাপের চেয়ে অনেক বেশি। সহিংসতায় মারা গেছে ৪ জন।
তৃতীয় ধাপে ভোট শুরুর আগে কেন্দ্র দখলের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। চতুর্থ ধাপে কয়েকটি উপজেলায় রাতেই কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই করে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন সিল মেরেছে। ভোট শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে ব্যালট ভর্তি বাক্স পাওয়া গেছে ভোটকেন্দ্রে।
প্রথম ধাপে ১৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আহত হন প্রায় ৪০ জন। বিএনপির অভিযোগ ৭৬৩টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। তবে ১৬টি উপজেলার ৬৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় ধাপে ২৬টি জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৩৫টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এই ২৬টি জেলার শতাধিক ভোটকেন্দ্রে জালভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল, বিএনপির এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মোট চার ধাপে ৩৭৬টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী ১৭৪টিতে আওয়ামী লীগ, ১৫০টিতে বিএনপি ও ৩২টি উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। প্রথম ধাপে ১৯  ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ ৩৫টি, বিএনপি ৪৪টি, জামায়াত ১২টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ৬টি উপজেলায় জয়লাভ করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ১১৫টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী বিএনপি ৫২টি, আওয়ামী লীগ ৪৮টি, জামায়াত ৮টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ৭টি উপজেলায় জয়লাভ করেন। তৃতীয় ধাপে ৮১টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৫ মার্চ। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী ৭৬টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ ৩৮টি, বিএনপি ২৮টি, জামায়াত ৭টি, অন্যান্য ও স্বতন্ত্র মিলে ৩টিতে জয় পায়। এই ধাপে স্থগিতকৃত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছা, হিজলা ও হাজীগঞ্জে ২৭ মার্চ, শ্রীপুরে ৩১ মার্চ ভোটগ্রহণ করা হবে। সীমানা জটিলতার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। চতুর্থ ধাপে ২৩ মার্চ ৯১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ৫৩টি, বিএনপি ২৬টি, জামায়াত ৫টি, জাতীয় পার্টি ১টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ৩টিতে জয়লাভ করেন। সহিংসতার কারণে স্থগিত করা হয় ৩টি কেন্দ্রের ফল।  
উপজেলা নির্বাচনকে মিডিয়া রক্তাক্ত ও সংঘাতপূর্ণ বলেছে। বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের নানা সঙ্কট ও সমস্যাকেই তুলে ধরেছে। অতএব সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা ও কাজ করার প্রয়োজনীয়তাই তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads