শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

বিজ্ঞাপনে অশ্লীলতা


আজকাল আমাদের সমাজে বিচিত্র কায়দায় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নষ্টামি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মেয়ে তার বাবাকে কিংবা বোন তার ভাই, মামা-চাচাকে নিজের গোপন কথা খুলে বলতে পারে না। এটা একটা সামাজিক ও পারিবারিক ভব্যতাও বটে। বিশেষত মেয়েদের শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে যখন বয়ঃসন্ধি বা যৌবন আসে প্রাকৃতিক নিয়মে তখন দৈহিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ সময় মেয়েদের কিছু জরুরি ও গোপন কথা প্রয়োজনে মাকে, বোনকে, বান্ধবীকে, ভাবিকে বলতে পারে খুব স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু বাবা-চাচা কিংবা ভাই-মামাকে বলতে পারে না। বললে তা ভব্যতা-সামাজিকতার মধ্যে পড়ে না। শুধু তাই নয়, মেয়েরা যদি বয়ঃসন্ধিকালের গোপনীয়তা বিষয়ে মা-বোন কিংবা ভাবি সম্পর্কীয়দের বাইরে অর্থাৎ বাবা, ভাই, চাচা-মামাদের কাছে খোলামেলা হয়ে পড়ে তাহলে তাকে বেহায়াপনা বা লজ্জাহীনতা ছাড়া কিছু বলা যায় না। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কিছু কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সংস্থা তাদের প্রস্তুতকৃত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে অত্যন্ত সুকৌশলে অশ্লীলতা বা বেহায়াপনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের গোপনীয়তাকে খোলামেলাভাবে বাবার কাছে উপস্থাপনের মতো ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লি.-এর একটি বিজ্ঞাপনে। এটি ছাপা হয়েছে গতকাল মতিঝিলের ইনার সার্কুলার রোড, ইডেন কমপ্লেক্স থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রথম পাতার অর্ধেকজুড়ে। সম্ভবত কৌশলে অশ্লীলতায় ভরা ঢাউস বিজ্ঞাপনটি অন্য দৈনিকগুলোতেও ছাপা হয়েছে বা হবে। আলোচ্য বিজ্ঞাপনটি টিভি চ্যানেলগুলোতেও নিয়মিত সম্প্রচার করা হয়। তবে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে যেভাবে বেহায়াপনা প্রকাশ পেয়েছে, টিভির বিজ্ঞাপনে সেভাবে ধরা পড়ে না। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটির মূল বক্তব্য অশ্লীলভাবে মেয়েটি বাবাকে লিখছে তার বয়ঃসন্ধিকালের গোপন কথাগুলো। অথচ এদেশের সিংহভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, সংস্কৃতি কিংবা পারিবারিক ভব্যতার আবহে কখনও এভাবে প্রকাশ করা যায় না।
এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মবোধ, কৃষ্টিকালচার, সামাজিকতা ও পারিবারিক পরিম-লে লজ্জা, সংকোচ হচ্ছে অলংকার। এছাড়া ইসলামী জীবনদর্শন অনুসারে লজ্জাতো ঈমানের অঙ্গ বলেই গণ্য। লজ্জা বা সংকোচ যার নেই তার তো ঈমানও নেই। লজ্জা ও সংকোচ পশুর থাকে না। যার এ জিনিস নেই, সে আর পশুতে তফাতও নেই। তবে কি ধরে নেবো যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটি সুকৌশলে আমাদের সভ্যতা-ভব্যতাকে ধ্বংস করে দিয়ে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনায় সমাজ ভরে দিতে চায়? বিজ্ঞাপনটির ভাষা ও উপস্থাপনা দেখে আমাদের তাই মনে হয়েছে। অবশ্য আলোচ্য বিজ্ঞাপনটিতেই শুধু নয়, আরও অনেক বিজ্ঞাপনে নানা কৌশলে এদেশের ধর্মবিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সামাজিকতাকে আঘাত করা হয় অত্যন্ত সুকৌশলে এবং সূক্ষ্মভাবে। সাধারণতভাবে তা অনেক সময় আমাদের দৃষ্টিগোচরও হয় না। এমনকি আমরা সেগুলো অনেক সময় গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যাই। এভাবেই আমাদের ধর্মবিশ্বাস, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তাবিরোধীরা অত্যন্ত কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে এবং আমাদের ধর্মবিশ্বাস, বোধ ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলে বিজাতীয় কৃষ্টিকালচার তথা লজ্জাহীনতা বা বেহায়াপনার অবাধ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে এ দেশকে ব্যবহার করতে দুঃসাহস দেখানো হচ্ছে।
কিন্তু এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঈমান-আকিদা, বিশ্বাস-বোধ ও স্বকীয়তা রক্ষার্থে আমাদের এখনই সজাগ ও সচেতন হতে হবে। দুশমনদের চিহ্নিত করে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads