বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

সাড়ে তিন বছরে ৩ লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা




মামলা ও আদালতের ওপর নির্ভর করেই চলছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ঠেকাতে সাড়ে তিন বছরের শাসনে সরকার প্রায় তিন লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পুলিশের করা প্রায় ২১ হাজার মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, কৃষক, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে। প্রতিবাদ-আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে অধিকাংশ মামলায় রয়েছে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত আসামি। সরকারের যে কোনো সমালোচনা কিংবা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামলেই এসব মামলায় নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, বেপরোয়া দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে সর্বত্রই জনক্ষোভ থাকায় এসব মামলাকে আন্দোলন দমানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি আদালতও সরকারের এজেন্ডা ধারণ করে বড় বড় রাজনৈতিক মামলায় রায় দিচ্ছে। বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের জামিন না দেয়ার ঘটনা সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে জনমনে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
সরকারপক্ষের লাখ লাখ মামলা দায়েরের ঘটনাকে ‘রোগাক্রান্ত’ শাসন উল্লেখ করে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ‘মামলা দিয়ে জনঅধিকার কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করা যায় না; বরং মামলা-নির্যাতনে ভুক্তভোগীরা সরকারের বিরুদ্ধে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এতে সরকার নড়বড়ে হয়ে পড়ে।’ তারা বলেন, এসব মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেবে। এসব কাজে পুলিশ ও আদালতকেও অহেতুক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারি মামলায় জনগণ অব্যাহত হয়রানির শিকার হচ্ছে। এতে জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় পৌঁছবে বলে তারা সরকারকে সতর্ক করে দেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা ২১ হাজারের মধ্যে শতাধিক মামলা আলোচিত। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলা পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দল দমনের লক্ষ্যে দায়ের করেছে। হরতালে অশান্তি সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অধিকাংশ মামলা করা হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি আলোচিত মামলা হয়েছে জনক্ষোভ দমনে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নাগরিকরা নিজ ভূমি রক্ষা কিংবা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশ তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। পরে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার ও এলাকাছাড়া করে। সেসব মামলায় দিনের পর দিন সাধারণ নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ সরকারের আমলে এভাবে পুলিশের দায়ের করা মামলায় প্রায় এক লাখ নাগরিককে আসামি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মামলায় ৪১ মাসে বিরোধী দলের প্রায় দুই লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ তাদের অব্যাহত হয়রানি চালাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করলেই আগের মামলায় গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। মিছিল থেকে ধরে নিয়ে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। আর আদালতও পুলিশের অবিশ্বাস্য ও সাজানো মামলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রিমান্ড মঞ্জুর করে চলেছে।
লাখ লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনাকে সরকারের ‘অপরিপকস্ফ’ পদক্ষেপ অভিহিত করে বিশিষ্ট রাষ্ট্রদার্শনিক প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মামলা দিয়ে কোনো আন্দোলন বন্ধ করা যায় না; বরং এতে সংশ্লিষ্ট নাগরিকরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, রূপগঞ্জে কিংবা মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলের ঘটনায় পুলিশ হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, হয়রানি করেছে; কিন্তু আন্দোলন থামেনি। আন্দোলন সফল হয়েছে। এভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন হাজার হাজার মামলা দেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার আসামি করা হচ্ছে। এতে আন্দোলন থামবে না; বরং সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হবেন। দুই লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মী যদি মামলার ভয় কাটিয়ে রাজপথে বসে যায়, তাহলে সরকারের টিকে থাকাই তো কঠিন হয়ে পড়বে।’
বিশিষ্ট চিন্তক বদরুদ্দীন উমর বলেন, যেদেশে সরকারকে তিন লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়, সেদেশের শাসনব্যবস্থা এক কথায় রোগাক্রান্ত। শাসনব্যবস্থার অবস্থা ভালো নয়। যদি সরকারের শাসনব্যবস্থা ভালোই হতো, তাহলে সরকারকে গুম-খুন করতে হতো না। তিনি বলেন, শাসনব্যবস্থার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এত মামলার নিষ্পত্তি করবে কে? কয়েকজনকে হয়তো জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, অন্যদের কী হবে? শাসনব্যবস্থার অবস্থা বেগতিক বলেই এত মামলা দিতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এত লোকের বিরুদ্ধে মামলা কখনোই হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রমনস্ক মানুষ চিন্তাই করতে পারে না। সরকারের শাসনব্যবস্থা ও মামলা ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভাষা আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় এই চিন্তক বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—‘শিলা জলে ভেসে যায়, বানরে সঙ্গীত গায়, না দেখিলে হয় না প্রত্যয়...।’ বাংলাদেশের অবস্থাও তা-ই। ‘অধিকার’ রূপ শিলা ভেসে যাচ্ছে... শাসনক্ষমতায় যারা আছে তারা বানরের মতো সঙ্গীত গাচ্ছে।’
রাজনৈতিক মামলায় আসামি প্রায় দুই লাখ : বিরোধী দলগুলোর রাজপথের আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই লাখ রাজনৈতিক নেতাকে আসামি করে মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ফেরত আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। গত ২৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের কমপক্ষে ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। ২০১০ সালের ১১ অক্টোবরে সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে বিএনপি কর্মীদের নিহতের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাদী হয়ে ১৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
এছাড়া শুধু ঢাকা শহরে হরতালসহ বিভিন্ন ঘটনায় সরকারের প্রথম তিন বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলা দায়ের করা হয়। এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার জ্ঞাত-অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ। চট্টগ্রামেও এ সংখ্যা হবে ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে। প্রথম তিন বছরে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একশ’টির বেশি মামলায় দেড় হাজার আসামি রয়েছে। পুরো বিভাগে প্রায় ২ হাজার মামলায় আসামি করা হয় ২০ হাজারের মতো বিএনপি নেতাকর্মীকে। সিলেট বিভাগেও প্রথম তিন বছরেই শতাধিক মামলায় কমপক্ষে ৪ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এদিকে সারাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ মামলা করেছে।
এম ইলিয়াস আলী ফেরত আন্দোলন থামাতে পুলিশের দায়ের করা অধিকাংশ মামলা দ্রুত বিচার আইনে। এসব মামলায় কমপক্ষে ৩০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ শত শত মানুষকে আসামি করা হয়। রাজনৈতিক মামলায় রেকর্ড গড়েছে ঢাকার দুটি মামলা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় ১৮ দলীয় জোটের ৫৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। মামলা দুটি পুরো ইলিয়াস ফেরত আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরেছে। গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী জোটের ৪২ শীর্ষ নেতাকে এরই মধ্যে কারাবন্দি করা হয়েছে। সারাদেশে ফুঁসে ওঠা জনতার দৃষ্টি এখন হেভিওয়েট এই মামলার দিকে।
এম ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথে জনবিস্ফোরণ দমাতে পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলাকে ঘিরে পুরো জনপদে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশ্বনাথ থানার তিন মামলায় আসামি প্রায় ১২ হাজার। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথে পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদের গুলিতে তিন বিএনপি নেতা নিহত হন।
এছাড়া ইলিয়াস ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ ও হরতালে ২০ এপ্রিল ঢাকার নয়াপল্টনে মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সহস্রাধিক, চট্টগ্রামে আট মামলায় আড়াই হাজার, রাজশাহীতে পাঁচ মামলায় চার শতাধিক, খুলনায় চার মামলায় পাঁচ শতাধিক, বরিশাল বিভাগে পঁচিশ মামলায় সাত শতাধিক, কুমিল্লায় তিন মামলায় চার শতাধিক, সাতক্ষীরায় এক মামলায় পাঁচ শতাধিক, নাটোরে চার মামলায় দুই শতাধিক, চাঁদপুরে তিন মামলায় শতাধিক, নারায়ণগঞ্জে দুই মামলায় দুই শতাধিক, সাভারে এক মামলায় অর্ধশতাধিক, ময়মনসিংহে দুই মামলায় শতাধিক এবং বান্দরবানে এক মামলায় ২৩ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
উল্লিখিত মামলার পাশাপাশি গত তিন দফা হরতালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল শহরে দুই হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশ আইনে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। তাদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্ত আছেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী চারদলীয় জোটের গণমিছিল কর্মসূচি নিয়ে পুলিশ ১১ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেয়। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ ব্যক্তি নিহত হন। আবার পুলিশই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পুলিশের মামলায় লক্ষ্মীপুরে ৬-৭ হাজার, চাঁদপুরে ২ হাজার এবং রাজশাহীতে দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
২০১০ সালের ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে ছয় বিএনপি কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ, রেলওয়ে কর্মচারী, জেলা প্রশাসকের অফিসের এক কর্মচারী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দার বাদী হয়ে আটটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় বিএনপির ১৬ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মী। এমনকি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঘটনায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর সরাসরি আসামি করা হয় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ ও নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে।
১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১২শ’র বেশি মামলা দিয়েছে বর্তমান সরকার। এতে আসামি কমপক্ষে ৩০ হাজার। পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে এসব মামলায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন থানায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এর মধ্যে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজপথে পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৯টি মামলায় তিন হাজার আসামি করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে বিভিন্ন মামলায় ছয় হাজার, খুলনা বিভাগে পাঁচ হাজার, রাজশাহী বিভাগে চার হাজার, সিলেট বিভাগে ছয় হাজার, বরিশাল বিভাগে এক হাজার এবং রংপুর বিভাগে দেড় হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ মামলা দিয়েছে।
এসব আসামির মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির, নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ঢাকা মহানগর আমির, ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারিসহ প্রতিটি মহানগর আমির ও সেক্রেটারি রয়েছেন। এমনকি অধিকাংশ থানার আমির ও সেক্রেটারিকে আসামি করা হয়েছে পুলিশের দায়ের করা মামলায়।
এছাড়া ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা হরতালে শুধু চট্টগ্রামেই পুলিশ বাদী হয়ে ২-৩ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
বিএনপির ১৫ নেতার নামে ১৫৬ মামলা : এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিএনপির ১৫ জন নেতার বিরুদ্ধে ১৫৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দলটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধেই রয়েছে ৩২টি মামলা। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৩১টি।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ১৬টি, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপির ১৪টি, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানের ৯টি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলমের ৯টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ৭টি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাদেক হোসেন খোকার ৬টি করে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহের ৫টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান ও ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৫টি করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৩টি করে মামলা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় গাড়ি পোড়ানো মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
লাখো অরাজনৈতিক নাগরিকের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা : নিজ ভূমি রক্ষা ও বেতন-ভাতার দাবিতে সাধারণ মানুষের গড়ে ওঠা আন্দোলন দমাতে গত ৪১ মাসে পুলিশ প্রায় ১ লাখ মানুষকে আসামি করে মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ৮-১০টি মামলা বেশি আলোচিত। গত ১৩ মে সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
এর আগে ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে জনআন্দোলন গড়ে উঠলে পুলিশ প্রায় ২১ হাজার লোককে আসামি করে মামলা দেয়। ওই মামলায় বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এছাড়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ সুশীল সমাজের বেশ ক’জন প্রতিনিধিকে আসামি করা হয়।
২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে গার্মেন্টে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলায় ২৫ হাজার শ্রমিককে আসামি করে পুলিশ মামলা করে। এর আগে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর জমির দখল নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। আর এর দু’দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় রূপগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন।
২০১০ সালের ১ আগস্ট বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের লাঠিপেটায় শত শত কর্মী আহত হন। নারায়ণগঞ্জেও একই ঘটনা ঘটে। আর এতে পুলিশ বাদী হয়ে ১৩ হাজার গার্মেন্ট কর্মীকে আসামি করে আশুলিয়া ও ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করে।
গত বছর বেতন-ভাতার দাবিতে সিইপিজেডের ১৫৮টি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে ৩১ জনসহ অজ্ঞাত ৩ হাজার শ্রমিককে আসামি করে পুলিশ পৃথক ৩টি মামলা করে।
এরও আগে ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে ৩ গার্মেন্ট কর্মী নিহত হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩ হাজার শ্রমিককে আসামি করে মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads