সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

বিডিনিউজ অফিসে সন্ত্রাসী হামলা : ১০ সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম



আবারও আক্রান্ত গণমাধ্যম। এবার জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজের সংবাদকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকায় বিডিনিউজের কার্যালয়েই এই হামলা হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন সংবাদকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে সাংবাদিকদের। রক্তে ভেসে যায় বিডিনিউজ কার্যালয়।
বিডিনিউজ জানায়, সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সহ-সম্পাদক রিফাত নওয়াজ, প্রতিবেদক সালাউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতম এবং অফিস সহকারী রুহুল আমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমতলীর বন ভবনের পাশেই ৯৯ মহাখালীর পঞ্চম তলায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়। এর নিচ তলায়ই সন্ত্রাসীরা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুর হামলার জের কাটতে না কাটতেই আবারও এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটল। হামলায় আহত রিফাত ও প্রীতমের পায়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। তাদের নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলায় আনার পরও পা থেকে রক্ত ঝরছিল। নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে ছিল ছোপ ছোপ রক্ত। তাদের সঙ্গে অফিস সহকারী রুহুল আমিনকেও গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়েছে। তবে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, অনলাইন এই সংবাদ সংস্থার নতুন
কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অফিস সহকারী রুহুল আমিন নিচে অবস্থানকালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়। রুহুল আমিনের ছুরিকাঘাতের কথা শুনে কার্যালয়ে দায়িত্বরত সাংবাদিকরা নিচে গিয়ে ওই সন্ত্রাসীকে আটকে পুলিশে খবর দিলে তার সঙ্গীরা জড়ো হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার শিকার হন বিডিনিউজের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহসীনুল করিমসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ের নিচ তলার শাটার খুলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ভবনের নিচে থাকা সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। ভাংচুর হয়েছে স্থানান্তরের জন্য নিচে রাখা মালপত্রও। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
গুলশান জোনের পুলিশের ডিসি খন্দকার লুত্ফুল কবীর আমার দেশ-কে বলেন, ‘ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’ সন্ত্রাসীদের ধরতে কয়েকটি টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া : বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আকস্মিকভাবেই এ ঘটনা ঘটে। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের ৭-৮ জন কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে তা কল্পনাতেও ছিল না। কোনো কিছুই আঁচ করা যাচ্ছে না কেন এই হামলা।’
খালিদী বলেন, ‘আমরা উপরে নিউজরুমে ছিলাম। হঠাত্ করেই আমাদের দুই সহকর্মী সহ-সম্পাদক রিফাত নেওয়াজ এবং প্রতিবেদক সালাহউদ্দিন ওয়াহিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেখি। এতে সবাই হতবাক হয়ে যাই। তারাই জানায় একদল সন্ত্রাসী তাদের ভবনের ভেতরে ঢুকে ছুরিকাহত করেছে। এ সময় অন্য সহকর্মীরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। আরও ৫-৬ জন তাদের ছুরিকাঘাতে আহত হন।’
কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা যাচ্ছিল না বলে উল্লেখ করে খালিদী বলেন, দ্রুত পুলিশ ডাকা হলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। তবে হামলাকারীদের আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় দ্রুত মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার নিন্দা : বিডিনিউজ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।
গত রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ঘটনা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং সাংবাদিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলার আরেকটি ন্যক্কারজনক নজির। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, দেশে আজ কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি আহতদের সুচিকিত্সার দাবি জানান এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
ঘটনার পরপরই বিডিনিউজের সংবাদকর্মীদের সহমর্মিতা জানাতে বেগম খালেদা জিয়া তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানকে বিডিনিউজ কার্যালয়ে পাঠান।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিন্দা : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অফিসে দৃর্বৃত্তদের হামলায় বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং দৃর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। প্রেস ক্লাব নেতারা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের খবর আসছে।
নেতারা বলেন, কয়েকদিন আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রথম আলোর তিনজন ফটোসাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এর আগে পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে হাত ভেঙে দিয়েছে। গফরগাঁয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমপি পিস্তল উঁচিয়ে জনগণকে গুলি করতে উদ্যত হলে সেই ছবি সংবাদপত্রে ছাপিয়েছিলেন সাংবাদিকরা। এজন্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এ ধরনের ঘটনা অসহিষ্ণু আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা মনে করি বিচার না হওয়ার কারণেই একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
সারাদেশের প্রেস ক্লাবগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে বিবৃতি দিয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads