বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন : দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করতে দিল্লিকে আহ্বান



বাংলাদেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করতে দিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন (দ্য প্রাইম মিনিস্টার সেটস দ্য কান্ট্রি অন এ ড্যাঞ্জারাস পাথ)।
‘বাংলাদেশ’স টক্সিস পলিটিক্স, হ্যালো দিল্লি, ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রুইনিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনের ১৮ মাস আগে বাংলাদেশে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে গুম আর খুন বেড়েছে। আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে এবং স্বচ্ছ হবে কি-না তা নিয়ে বিবাদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক পর্যবেক্ষক সন্দিহান হয়ে পড়েছেন যে, দেশটিতে আদৌ নির্বাচন হবে কি-না। বাংলাদেশে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক লোডশেডিং এবং নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সবকিছুর জন্য সরকার দায়ী। বিরোধী দলের একজন তরুণ নেতাকে (ইলিয়াস আলী) এক মাস আগে অপহরণ করা হয়েছে এবং সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে আরও দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় ৩৩ নেতাকে অগ্নিসংযোগের সাজানো মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। বেগম জিয়া বলেছেন, প্রায় ৩ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা শুধু ভীতি প্রদর্শনের জন্য নয়, আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরও অন্ধকার দিক রয়েছে। কয়েক মাসে আরও অনেক রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সৌদি কূটনীতিককে হত্যা করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আমিনুল ইসলামকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। দুর্নীতি তদন্ত করায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের এই সংবাদদাতার পথ অনুসরণ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে স্বনামখ্যাত ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা তাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে থাকেন। বাংলাদেশ সফর করার সময় হিলারি ক্লিনটন তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি এতটা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে যে, দাতারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে ঋণদান বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বহাল করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে জোরালো সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিলারির কথা ফের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। সঙ্গত কারণেই ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা যতই কঠোর হচ্ছেন জনগণ ততই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনে পরিণতি উপলব্ধি করে শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আছে। একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি বিএনপি বয়কট করে তবে বিএনপি সমর্থকরা রাস্তায় ২০ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার জরাজীর্ণ সড়কের মতোই বাংলাদেশের রাজনীতিও যানজটকবলিত। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদেশি কূটনীতিক এবং পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন সময়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads