শনিবার, ৫ মে, ২০১২

আদালতে আসতে পারা সাংবিধানিক অধিকার



সাজেদুল হক: আইনের আশ্রয়লাভের জন্য আদালতে আসতে পারা যে কোন ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। বিশেষ করে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ এ ব্যাপারে পৃষ্ঠা নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করেই বিএনপি নেতাদের আদালতে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। গত সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের সব ক’টি গেটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া পাহারা বসিয়েছে। উচ্চ আদালতের গেটেই গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরসহ বিরোধীজোটের নেতারা জামিন আবেদনের শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসতে পারছেন না। আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পর্কে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, যাতে কোন ব্যক্তির জীবন স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ৩৪ ডিএলআরে বর্ণিত এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে তা মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেয়া উচিত। এরূপ নির্দেশ দেয়া না হলে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, প্রত্যেক মানুষের আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার রয়েছে। আদালতে এসে বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সরকার যেভাবে বাধা দিচ্ছে তা প্রত্যাশা করি না। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে সরকার আইনের শাসন অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। এটা সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবীসহ সকলের জন্য অবমাননাকর। আমরা বিচার চাইতে আদালতেও আসতে পারছি না। আমরা আইনের আশ্রয়লাভ করতে চাই। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন অনতিবিলম্বে বিচারপ্রার্থীদের আসার পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে দেশের মানুষের আশা-ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল। এখানে প্রত্যেকের আসার অধিকার রয়েছে। পাকিস্তান আমলসহ বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় রাজনীতিবিদরা এখানে এসেছেন এবং জামিন পেয়েছেন। গত ২৯শে এপ্রিল বিরোধীজোটের ৫০ নেতার বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের অভিযোগে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এসব মামলা দায়ের করে। মামলায় এরই মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলটির আরেক যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এম কে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির অন্য নেতারাও হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। সোমবার তারা হাইকোর্টে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads