শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

ভয়ঙ্কর পথে বাংলাদেশ, ইকোনমিস্ট-এর রিপোর্ট



 বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী বৃটিশ সাপ্তাহিক দি ইকনোমিস্ট গতকাল আবারও বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি বিষয়ে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে একটি নিবন্ধ ও একটি রিপোর্ট ছেপেছে। তবে এই প্রথম তারা বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতকে সরাসরি ভূমিকা রাখতে একটি নির্দেশনা দিল। নিবন্ধের শিরোনাম: ‘হ্যালো, দিল্লি।’ নিচে উপশিরোনাম: ‘বাংলাদেশকে ধ্বংস করা থেকে শেখ হাসিনাকে থামানোর দায় ভারতের।’ প্রতিবেদনের শিরোনাম: বাংলাদেশের হ-য-ব-র-ল রাজনীতি। (পলিটিক্স অব বাংলাদেশ: ব্যাঙড অ্যাবাউট)। নিচে উপশিরোনাম: ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি ভয়ংকর পথে পরিচালিত করছেন।’
হ্যালো, দিল্লি নিবন্ধটির তরজমা অবিকল নিচে তুলে ধরা হলো: ‘বাংলাদেশে পাঞ্চ অ্যান্ড জুডি শো (চার শ বছর ধরে জনপ্রিয় ইতালীয় পাপেট শোকে বলা হয়, পাঞ্চ এ জুডি শো। পাঞ্চ ও জুডি স্বামী-স্ত্রী। তারা অত্যন্ত দাঙ্গা ও কলহপ্রিয় চরিত্র) চলছে। এর একটি চরিত্র শেখ হাসিনা। অন্যটি বেগম খালেদা জিয়া। দশকের পর দশক ধরে তারা নেতৃত্বে আছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর দিকে কমই সময় দেয়, কারণ কোন কিছুতেই পরিবর্তন আসে না। ১৭ কোটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট সরকারের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিকরা তাদের ভাগ্য বদলাতে কোন আগ্রহই দেখাচ্ছেন না, তাই বাইরের লোকদের দেশটিকে নিয়ে ভাবা দরকার।
যখন নব্বই দশকে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া পরস্পরের মধ্যে ক্ষমতার অদলবদল করতেন, তখন পরিস্থিতি বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু গত দশকে পরিস্থিতি নিকৃষ্টরূপ নিয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যে সরকারের নেতৃত্ব দেন, সেটি ছিল এক নিষ্ঠুর ক্লেপটোক্র্যাসি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও লুটপাটের এক স্বর্গরাজ্য। এরপরে আসে সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট সরকার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এক ভূমিধস বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে।  ৩০০ আসনের সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৯ ও বিএনপি পায় ৩১ আসন। শেখ হাসিনা এই নিরঙ্কুশ বিজয়কে তার প্রকৃত ও কাল্পনিক শত্রু দমনে ব্যবহারে ব্রতী হন।
রহস্যজনকভাবে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসে বাসে অগ্নিসংযোগের দায়ে ৩৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ আধুনিক ইতিহাসের মধ্যকার রক্তস্নাত যুদ্ধগুলোর অন্যতম। কিন্তু অভিযুক্তদের বিচার করতে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সম্ভাব্য রায়ের উদ্দেশ্য এখন প্রতীয়মান হচ্ছে বিএনপি ও তার ইসলামী মিত্রদের হেয়প্রতিপন্ন করা। নোবেল জয়ী গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৭ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘তৃতীয় ধারা’ আনতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তার সেই হঠকারিতার জন্য এখন তাকে মাশুল দিতে হচ্ছে। এদিকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা ক্রমশ ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার। গণতান্ত্রিক চেতনাকে গতিশীল রাখতে সক্রিয় থাকা এনজিওগুলো এখন প্রস্তাবিত আইন নিয়ে শঙ্কিত। ওই আইনের ফলে তারা সরকারের খেয়ালখুশির শিকারে পরিণত হবেন।
গত বছরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সরকার সংবিধান থেকে বাদ দেয়। সেই ব্যবস্থাটি অবশ্য আদর্শিক ছিল না। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বিএনপি নির্বাচনে কারচুপি করবে বলে যে গ্রহণযোগ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার পরিণতিতে সামরিক অভ্যুত্থান আসে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ভরসা না পেলে তারা তা বয়কট করবে। সুতরাং এমনিতেই হরতাল-ধর্মঘটে জেরবার থাকা বাংলাদেশে সামনের দিনগুলোতে আরও বিক্ষোভ ধর্মঘট দেখা দেবে। বাংলাদেশের সামনে তাই রাজনৈতিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে রাস্তায় রাস্তায় আরও খারাপ ধরনের সংঘাত দেখা দিতে পারে।
ঢাকার একমাত্র কণ্ঠস্বর
বাইরের বিশ্ব তাদের কণ্ঠ তুলে ধরার চেষ্টা করছে। সন্দেহজনক দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক একটি বড় সেতুর (পদ্মা) চুক্তি বাতিল করেছে। ড. ইউনূসের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা তার নিন্দা করেছেন। হিলারি ক্লিনটন চলতি মাসে ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে ঢাকায় ছুটে আসেন।
কিন্তু সরকার মনে হচ্ছে অসাড়। মিসেস ক্লিনটনকে জব্ধ করতে তারা এবারে গ্রামীণ ব্যাংক দখলে মালিকানাস্বত্ব পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে। সম্ভবত তারা ব্যাংকটিকে ধ্বংস করতে চায়।
ঢাকার ওপর প্রভাব খাটানোর মতো একটি দেশ রয়েছে। সেটি হলো ভারত। সামপ্রতিককাল পর্যন্ত আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত শেখ হাসিনা সরকারের বাড়াবাড়ি সহ্য করেছে। এর আংশিক কারণ হলো বাংলাদেশ জঙ্গি ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চালিয়েছিল। ভারত দুই দলের মধ্যে তার বাজি ভাগাভাগি করছে। কিন্তু ঘরের দরজায় তারা যদি একটি ক্রিয়াশীল গণতন্ত্র দেখতে চায়, তাহলে তার স্বপক্ষে ভারতকে অনেক বেশি উচ্চ কণ্ঠে কথা বলতে হবে।’ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads