বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

আগাম নির্বাচন দিতে পারে সরকার



আগামী বছর অগ্রিম নির্বাচন দিতে পারে সরকার। এর মাধ্যমে তারা বিরোধী দলকে ফাঁদে ফেলতে চায়। এ নির্বাচনে বিএনপিকে দূরে রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে। কম করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হতে পারে। চলতি সংখ্যা প্রোব ম্যাগাজিনে ‘ইলিয়াস আলী অ্যান্ড অল দ্যাট এইলস দ্য নেশন’ শীর্ষক এক রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেকটাই পচে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক কতগুলো ঘটনায় জাতি গভীর থেকে গভীর সঙ্কটে ডুবে যাচ্ছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন। অনেকের ভয়, তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বল্প সময়ের জন্য  রেলমন্ত্রী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৭০ লাখ টাকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা সোহেল তাজ পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিদের অন্যতম তাজউদ্দিন আহমদের পুত্র। বাংলাদেশে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তরুণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। সৌদি আরবের দূতাবাসে নিয়োজিত কূটনীতিককে হত্যা করা হয়েছে। এ দু’টি হত্যাকাণ্ডের খুনিরা এখনও চিহ্নিত হয়নি। রহস্যের কিনারা হয়নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং, ট্রাফিক অব্যবস্থা। সঙ্গে আছে নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য ও শেয়ার বাজারের হতাশাজনক পরিস্থিতি। আরও অনেক কিছু- তা শেষ করা যাবে না। এমন অবস্থার অধীনে জনতার মাঝে নানা গুজব ডালপালা ছড়ায়। তাতে সাধারণ জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করে। তারা সরকারের ওপর থেকে সব আশা ও বিশ্বাস হারিয়েছে। এখন সরকার যা-ই বলুক তারা বিশ্বাস করে না। তারা এখন বিশ্বাস করে যে কোন রকমের গুজব। টুইটার ও ফেসবুকের মতো সামাজিক ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তা নিয়ে চায়ের আড্ডা বা রাজনৈতিক আড্ডা সরগরম। সমপ্রতি তথাকথিত ক্রুসেডার-১০০ নামের একটি গ্রুপ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। ভীতিকর এই গুজবে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থা প্রশিক্ষণ দিয়ে এই গ্রুপটি গঠন করেছে। তাদের কাজ হলো বাংলাদেশের লোকজনকে টার্গেটে পরিণত করা। অনেক মানুষই এখন এ গুজব বিশ্বাস করেন। তারা আরও বিশ্বাস করেন, এখন বাংলাদেশে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় রয়েছে। এমন রিপোর্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। চারদিকে সব কিছুতে বিপর্যয় ঘটছে- আর সরকার তা দেখবে না এমন হতে পারে না। জরিপের প্রতি আওয়ামী লীগের একটি ঝোঁক আছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য জরিপের কোন প্রয়োজন নেই। দেয়ালের লেখা যে কেউ দেখতে পান এবং তা শুনতে পান। বিরোধীরা কি করবেন তা দেখতে জনগণ এখন যদি অপেক্ষা করেন, তারা এটা জানেন তার প্রেক্ষিতে সরকার কি করবে। সব নির্দেশকই বলছে, সরকার এখন কঠোর অবস্থানে। বিশ্লেষকরা বলেন, বিরোধীরা হয়তো ভাবতে পারে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা জানে না সরকার এর চেয়ে আর কত ভয়ঙ্কর হতে পারে সামনে। সরকার বিরোধীদের আন্দোলন থামাতে সবকিছু, সব আইন- সেটা সাদা হোক বা কালো হোক তা ব্যবহার করছে। আসলে সরকার জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার আগ্রাসী ভূমিকায়। সরকার শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী গঠন করেছে এবং তাদের লালন করছে। অতীতের মতো নয়, এখন সহিংসতা ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় এপিসি’র মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এমন  সূচনা ভাল নয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, গণতন্ত্র এখন মুমূর্ষু। আলোচনার কোন সুযোগ নেই। বিরোধী দল আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল চায়। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, এ ইস্যুতে কোন ছাড় দেয়ার লক্ষণ সরকারের নেই। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজি হবে ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল এবং সেনাবাহিনীর সরাসরি তদারকে নির্বাচনে। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিষয়ে আওয়ামী লীগ কখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। সেনা মোতায়েনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করতে পারে। মূল কথা হলো- তারা বিএনপি বা কমপক্ষে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, সরকার প্রস্তুত এবং তার কৌশল প্রণয়ন করেছে। আগে থেকেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছেন। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। বিচারের রায় এ বছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়ন করবে। তারা নিশ্চিত, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক এমন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি  না করতে। আর তা করতে সরকার আগামী বছর অগ্রিম নির্বাচন দিতে পারে। বিরোধী দলকে ফাঁদে ফেলার জন্য এটা করা হবে। সামপ্রতিক সময় পর্যন্ত বিএনপি শক্তি সঞ্চয় করছিল। তারা তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করছিল। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন তারা। বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের সফলতা এটা। এ বছরের ১২ই মার্চের মহাসমাবেশ ছিল তারই সফলতা। ওই সমাবেশে সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থা বাধা দেয়া সত্ত্বেও সারা দেশের মানুষ বিভিন্ন ভাবে ঢাকা এসে যোগ দিয়েছিল। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিএনপিকে এখন এমন পথে ঠেলে দিয়েছে যাতে তারা ওইরকম জনপ্রিয় কর্মসূচি থেকে ফিরে হরতাল এবং একই রকম ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেয়। এই পরিস্থিতি প্রকাশিত হওয়ায় এখন বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনের চেয়ে বেশি বেশি প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও রাজপথের আন্দোলন করবে। তাদেরকে রাজপথে ক্লান্ত করে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কৌশল ভাল কাজ করছে। আওয়ামী লীগ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে, যাতে তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে। এভাবে হঠাৎ নির্বাচন দিয়ে বিরোধীদলকে অপ্রস্তুত করে দিতে চায়। এই অবস্থায় কঠোর অবস্থানের মধ্য দিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট শক্তি সব সময় শীর্ষে আরোহণ করে না। আরও কিছু ফ্যাক্টর আছে যা তাদের পক্ষে যায় না। অর্থনৈতিক ফ্রন্টে সরকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের অসন্তুষ্ট করেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি এ কাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কথিত এই দুর্নীতিতে যদি সামান্য সত্যতা থাকে, তাহলে স্পর্শকাতর কোন কোন ক্ষেত্রেও তার ছোঁয়া লাগতে পারে। বিশ্বব্যাংক পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে অর্থ দেয়া বন্ধ করছে। এটা কি বাংলাদেশ থেকে তাদের অফিস উঠিয়ে নেয়ার পূর্বাভাস? আইএমএফ যে অর্থ প্যাকেজ প্রস্তাব করেছে সরকার সেটা সাদরে গ্রহণ করলেও এতে যেসব কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে সেটা তারা প্রকাশ করছে না। এই প্যাকেজ হলো সঙ্কট উত্তরণের জন্য। সরকার জাতিকে যে গভীর সঙ্কটে ফেলেছে সে তুলনায় এটা তেমন কোন সহযোগিতা নয়। পরিশেষে বলতে হয়, ক্ষমতার মালিক আসলেই জনগণ। রাজনীতিতে গুটিকয়েক জন পরিকল্পনা করলেও তার কয়টি কাজে আসে? গণতন্ত্রের এই অবস্থায় জনগণ তাদের ক্ষমতার প্রয়োগ দেখাতে পারবে কি? একটি পুলিশি রাষ্ট্রে জনগণের কথা বলার জায়গা নেই। আমরা কি একটি পুলিশি রাষ্ট্রেও পরিণত হচ্ছি? আমরা কি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসছি? আমাদেরকে কি নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? বিকল্প কোন সরকার কি ক্ষমতায় আসবে? আগামী কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহেই এর প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে।
বিরোধী দলকে চাপে রাখতে চায় সরকারি দল
ওদিকে আমাদের রাজনৈতিক সংবাদদাতা জানান, বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে সরকারি দল। এ মুহূর্তে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলা করতে চান না তারা। এজন্য ইলিয়াসের নিখোঁজ ঘটনার পর বিরোধী দলের টানা হরতালেও কোন কর্মসূচি দেয়নি আওয়ামী লীগ। হরতালে প্রশাসনিক ও আইনি শক্তি প্রয়োগেই নজর ছিল সরকারের। এখন হরতালে জ্বালাও পোড়াও এবং ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের নামে দায়ের করা মামলাকে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় নেতারা যাতে সহজে ছাড়া না পান সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মামলায় নেতারা জামিন পেলেও বিচার প্রক্রিয়ায় যাতে ছেদ না পড়ে তারও নির্দেশনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সামনে বিরোধী দল আর কি ধরনের কর্মসূচি দিতে পারে তা অনুমান করে সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। আপাতত বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে বিশেষ কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারি দল মহাজোটের শরিকদের নিয়ে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে। তবে এ মুহূর্তে তা করলে সংঘাত-সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে তা নেতিবাচক হিসেবে প্রচার হলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে এ ধরনের কর্মসূচি না দেয়ার পক্ষে দলের বেশির ভাগ নেতা। তাই হরতালে মাঠে থাকার কথা বলা হলেও নির্ধারিত এলাকায় মিছিল করা ছাড়া নেতাকর্মীদের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। এর আগে গত ১২ই মার্চ বিরোধী দলের ঢাকা চলো কর্মসূচির সময় বলা হয়েছিল বিরোধী দলের ঢাকা অচলের ষড়যন্ত্র  মোকাবিলা করা হবে। এজন্য বিশেষ প্রস্তুতিও ছিল সরকারি দলের। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন কোন ভূমিকা রাখতে হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণেই ঢাকার বাইরে থেকে তেমন লোকসমাগম করতে পারেনি বিরোধী দল। এছাড়া ওই কর্মসূচিকে ঘিরে সরকারি দলের অতি তৎপরতাও বেশ সমালোচনা কুড়ায়। ১২ই মার্চের আগের দু’দিন ঢাকার বাইরে থেকে যানবাহন আসতে না দেয়ায় তখন অনেকে বলেছিলেন, ক্ষমতায় থেকে সরকারি দল হরতাল দিচ্ছে। হরতালে গাড়িতে আগুন ও সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দিনই সরকারি দলের নেতারা এ মামলার বিষয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। ওইদিন বিকালে এক সমাবেশে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছিলেন, শুধু মামলা দায়েরই নয়, জ্বালাও পোড়াওয়ের জন্য বিচার থেকে বিরোধী দলের নেতারা রেহাই পাবেন না। একই অনুষ্ঠানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ওই মামলার বিষয়ে বলেন, মামলা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ মামলা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন সারা দেশে আগুন জ্বলবে বলে। এরপর হরতালে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। এজন্য তারা তো হুকুমের আসামি। তিনি বলেন, কোন দলের বড় নেতা বলে মামলা থেকে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এদিকে বিরোধীদল আরও বড় কর্মসূচি দিতে পারে এমনটি ভেবে সরকারি দলের তরফে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে আগামী ৫ই মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ৬ই মে ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। একই সময়ে ঢাকায় আসছেন জাপানের উপ প্রধানমন্ত্রী। এই তিন ভিআইপির সফরের সময় বিরোধী দল হরতাল বা অবরোধের মতো বড় কোন কর্মসূচি না দিতে পারে সেদিক থেকে চাপে রাখতেই হরতালের পর বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সামনে হরতাল বা অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে একই ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটলে এখন থেকে সরকার আইনি প্রক্রিয়াকেই গুরুত্ব দেবে বলে সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। সরকারের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায় না। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও সরকার বাধা দিতে চায় না। তবে বিরোধী দল কর্মসূচি নামে মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে চাইলে, জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালালে তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে না। তবে বিরোধী দল কর্মসূচির নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এদিকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ইস্যুতে শুরুতে সরকারি দল নমনীয় থাকলেও বিরোধী দলের কর্মসূচী দীর্ঘ হওয়ায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে সরকার। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারি দলের নেতারাও এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। তবে এ ইস্যুতে বিরোধী দল পাঁচ দিন হরতাল করার পরও অবস্থানে অনমনীয় হওয়ায় সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাসে আগুন এবং সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত এলাকায় দু’টি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় সরকারি দলেই সমালোচনা আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে। এ নিয়ে খোদ সরকারি দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে। এমন অবস্থায় চাপে পড়েই বিরোধী দলের কর্মসূচির প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। এর আগে ১২ই মার্চের ঢাকা চলো কর্মসূচিতেও কৌশলী অবস্থান নিয়েছিল সরকারি দল। ফলে বিরোধী দলের ওই কর্মসূচি প্রত্যাশিত হতে পারেনি। এর আগেই রাজপথে আওয়ামী লীগের ব্যাপক তৎপরতা বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী সমাবেশে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া ওই কর্মসূচি আগের তিন দিন বাইরে থেকে ঢাকায় আসার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি আরোপ করার ফলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতেই পারেননি। বিরোধী দলের ওই কর্মসূচিকে ঘিরে সরকারি দল প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও কার্যত তাদের রাজপথে নামতে হয়নি। গত বছর সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর বিরোধী দলের কর্মসূচিও একই ভাবে স্থিমিত করে দিয়েছিল সরকারি দল। তখন মামলা দিয়ে নেতাদের মুখ বন্ধ করা হয়। ওই সময় সংবিধান নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোটের নেতা ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে। এরপর থেকে আমিনী দাবি করে আসছেন তিনি কার্যত গৃহবন্দি হয়ে আছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের একাধিক শোডাউন সহিংস রূপ নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধেও শক্ত আইনি ব্যবস্থা নেয় সরকার। এরপর থেকে রাজপথে জামায়াতের তৎপরতাও অনেক কমে গেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads