শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

জনতাকে লক্ষ্য করে এমপি’র গুলি, গফরগাঁওয়ে তোলপাড় দু’পক্ষের শোডাউন



গফরগাঁও প্রতিনিধি: জনতাকে লক্ষ্য করে ময়মনসিংহের সরকারদলীয় এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দিন আহমেদের গুলিবর্ষণের ঘটনা এখন ‘টক অব দি কান্ট্রি’। গতকাল দিনভর এ নিয়ে তোলপাড় চলেছে সর্বত্র। ঘটনার জেরে এমপি সমর্থক এবং তার বিরোধী নেতাকর্মীরা শোডাউন করেছেন গফরগাঁওয়ে। এমপি’র গাড়িতে হামলার অভিযোগ এনে তার সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতারা থানা ঘেরাও করেন। দুপুর ১টার দিকে কয়েক শ’ নেতাকর্মী মিছিল সহকারে থানার গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নূরুজ্জামান সরকারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন। এর আগে এমপি সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিল পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে এমপি সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে উপজেলা চেয়ারম্যান ফাহ্‌মী গোলন্দাজ বাবেল সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পৌরশহরে অবস্থান নেন। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ৯টায় এমপি সমর্থিত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বাবুলের নেতৃত্বে ২০-৩০টি মোটরসাইকেল বহর সশস্ত্র অবস্থায় কান্দিপাড়া বাজারে যায়। সেখানে চৌরাস্তায় সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা। বক্তব্য দেন মতিউর রহমান বাবুল, লিয়াকত আলী মণ্ডল, মোফাজ্জল হোসেন সাগর, মাহতাব উদ্দিন সাদেক প্রমুখ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সতরবাড়ি বাজারে এমপি’র সমর্থকরা উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত লংগাইর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এম হককে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ পথচারীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- বকুল মিয়া (২২), তানজিব (২০) ও কামরুল (৪২)। এ ব্যাপারে ওসি ওমর ফারুক জানান, ১৩ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি পরিবর্তন হতে পারে এই কারণে মামলাটি রেকর্ড করতে বিলম্ব হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত যুবলীগ নেতা আবদুল হামিদ মুনসুর বলেন, এমপির ঘুষ-দুর্নীতির কারণে এবং পাগলা থানা নিয়ে বিক্ষুব্ধ মানুষ এ ঘটনা ঘটাতে পারে।  এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন এ হামলা চালায়।
কি ঘটেছিল কান্দিপাড়ায়
শুক্রবার বিকাল ৬টার দিকে ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ উপজেলার কান্দিপাড়া বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন। তার আসার খবরে সেখানে জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় জনতা এবং বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীরা। তারা রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করে রাখে। এমপির গাড়ি ব্যারিকেড স্থলে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনতা গাড়িটিকে ঘিরে ধরে। পাগলা থানার স্থান পরিবর্তনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে তারা। এ অবস্থায় এমপি গাড়ির গ্লাস খুলে তাদের ধমক দেন এবং গালাগাল করেন। এতে জনতা উত্তেজিত হয়ে গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। তখন ক্ষুব্ধ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ গাড়ির জানালা দিয়ে নিজের পিস্তল থেকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি করেন। এতে লোকজন আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তিনি গাড়ি থেকে নেমে জনতাকে লক্ষ্য করে আবারও গুলি করেন। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গিয়াসউদ্দিন কান্দিপাড়া ত্যাগ করেন। সেখান থেকে গিয়ে তিনি উপজেলা সদরের সরকারি ডাকবাংলোতে অবস্থান নেন। কান্দিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন ও কাজল মিয়া জানান, পাগলা থানা নিয়ে কান্দিপাড়া এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভের কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে।  প্রজন্ম ’৭১ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে মিলে প্রতিবাদ করেন। এ সংগঠনের সব নেতাকর্মীই স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রথম দিকে তারা এমপি গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে কাজ করলেও বর্তমানে তারা উপজেলা চেয়ারম্যান ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের সমর্থক। গত ৩রা মে এই সংগঠনের উদ্যোগে ময়মনসিংহ সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে বানচালের চেষ্টা করেছিলেন।
সাংবাদিককে আসামি করে মামলা
ওদিকে গফরগাঁওয়ে স্থানীয় এমপি’র গাড়িতে হামলার ঘটনায় দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি ও গফরগাঁও প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল আমিন বিপ্লবকে দ্রুত বিচার আইনে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গফরগাঁও প্রেস ক্লাব, গফরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটি, গফরগাঁও বহুমুখী সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নির্যাতিত সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল আমিন বিপ্লবকে ইতিপূর্বে একাধিক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার স্থানীয় এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদের গুলি করার দৃশ্য দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়। স্থানীয় থানা সূত্রে জানা গেছে, এমপির এপিএস একেএম খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল এ মামলা করেন। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন সংবাদ কারও বিপক্ষে গেলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো আমার বেলায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads