মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

বিকেলে কুকুর হলো সকালের ঠাকুর


সকালে ঠাকুর ছিলো তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের (শাহবাগী) নট-নটীকা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন ব্লগার একটি ব্যানার নিয়ে শাহবাগে এসে বসে পড়েছিলো। তাদের দাবি ছিলো ‘যুদ্ধাপরাধী’দের ফাঁসি দিতে হবে। তার আগে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ- ঘোষণা করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এই ব্লগারদের দাবি ছিলো যাবজ্জীবনে চলবে না, এদের মৃত্যুদ- নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে তারা পানি যথেষ্টই ঘোলা করেছিলো। সরকার, প্রশাসন ও দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে শাহবাগীদের এমন মদত দিতে শুরু করলো যে, দ্রুতই তা তরুণ সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছিলো, ট্রাকে করে হাজার হাজার প্যাকেট খাবার ও পানি আসছিলো। এখানে ২৪ ঘন্টা থাকলে, শোনা যায়, হাজার টাকা নজরানা দেওয়া হচ্ছিলো। আধা বেলায় তিন’শ টাকা। ফলে শিল্পাঞ্চলের বহু এলাকায় শ্রমিকের মারাত্মক ঘাটতি দেখা যাচ্ছিলো। তা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত শাহবাগ এক দারুণ উৎসবে পরিণত হয়েছিলো। সারাদিন নাচ, গান। সারারাত পান আর আদিম প্রবৃত্তি চরিতার্থকরণ এই হয়ে উঠেছিলো শাহবাগীদের প্রধান কাজ।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন শাহবাগে এসে সমবেত হচ্ছিলো ফূর্তির আশায়। মেয়েরা মঞ্চে মল্লযুদ্ধ করে, কোমর বেঁধে লাঠি খেলে, গান গায়, লাফালাফি করে, দেখতে মন্দ কী। অনেক রাতেও দেখেছি বিভিন্ন বয়সের মানুষ একেবারে বৈশাখের মতো সেজেগুজে শাহবাগে এসে সমবেত হতে থাকে। সে হুজুগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, এমন কথা শিশুদের গালেও একে দিচ্ছিলেন তাদের অবোধ পিতা-মাতারা। আমরা সে সময় লিখেছিলাম, যদি এই শিশুটি জানতে চায়, বাবা ফাঁসি কাকে বলে? তখন এই তিন-চার বছরের শিশুটিকে তার বাবা-মা’কে বোঝাতে হবে ফাঁসি কাকে বলে, আর কেমন করেই বা তার কার্যকর করতে হয়। এতে ঐ শিশুটির মনে যে কী ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। সেটি কেউ উপলব্ধি করতে চাননি। আমরা সরকার, প্রশাসন, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, ভবিষ্যৎ বংশধরদের রক্ষার স্বার্থে, তাদের হৃদয়বান মানবিক গুণাবলী নিয়ে বেড়ে ওঠার স্বার্থে এখনই এই হিস্টিরিয়া বন্ধ করা হোক। কিন্তু সে আবেদনে কর্ণপাত করেনি কেউ।
শাহবাগে প্রায় দু’মাস ধরে এই ইতর ব্লগারেরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি থেকে দাবির মাত্রা ক্রমেই বাড়াতে থাকে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। সেই প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা হাসপাতালসহ অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কোচিং সেন্টারগুলো জালিয়ে দেয়ার উৎসব শুরু হলো। সেটা যে কতো অপরিণামদর্শী ও ভয়াবহ ছিলো, তা কেউ বিবেচনায় নিতে চায়নি। শাহবাগীদের এই তথাকথিত জজ্বায় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেই মোড়ে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ দু’টি হাসপাতাল-পিজি ও বারডেম। ওদিকে মৎস্য ভবন, চানখারপুল, নীলক্ষেত, কাঁটাবন হয়ে হোটেল রূপসী বাংলার মোড় পর্যন্ত সকল রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ফলে লক্ষ লক্ষ রোগী যেমন অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন, তেমনি গোটা শহর এক দুঃসহ যানজটে স্থবির হয়ে গিয়েছিলো।
এর সবটাই ঘটেছিলো সরকার ও তার দেশী-বিদেশী প্রভুদের মদতে। তারা শাহবাগ মোড়ে ধীরে ধীরে সুবিশাল স্থায়ী মঞ্চ গড়ে তুলেছিলো। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিলো, শাহবাগে যে গেলো না, যে ঐ মতলববাজদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলো না, তাদেরকেই যুদ্ধাপরাধী বা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বলে চিহ্নিত করা হতে থাকলো। আর শাহবাগে যুদ্ধাপরাধী বলে নাম ঘোষণা করে দেবো এমন ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চলতে থাকলো কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। প্রধানত বাম ও নাস্তিক্যবাদীরা মিলে এই আন্দোলন শুরু করলেও পরে তাতে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো।
শুধু কি তাই, শাহবাগীদের এই অসঙ্গত জজ্বায় এসে যোগ দিতে শুরু করলো ভারতের নট-নটী ও গায়ক-গায়িকারা। এ নিয়ে তাদের সে কি আহ্লাদ! অথচ এই ভারতীয়দের ইচ্ছায় ১৯৭২ সালে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী বলে চিহ্নিত ১৯৩ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যকে পাকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিলো। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন যে, বাঙালী জাতি দেখিয়ে দিলো তারা ক্ষমা করতে জানে। এখন যুদ্ধাপরাধী বলে যাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে তাদের কারও নাম রাজাকার বা দালালের তালিকায়ও ছিলো না। দালাল আইনে যাদের আটক করা হয়েছিলো, শেখ মুজিব তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তখন তো ভারতীয়দের এতো পীরিত উছলে উঠতে দেখিনি। শুধু ভারতীয় নট-নটীরাই নয়, নাটের গুরুদের প্রতিনিধি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ বাংলাদেশে এসে শাহবাগীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও ভারত ছাড়া সারা বিশ্বই বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ এবং এরকম বিচার ও ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কিছুতেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। সম্ভবত তা হচ্ছেও না।
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা গদগদ ভাষায় শাহবাগীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বললেন, শাহবাগ আন্দোলন বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তার মন পড়ে থাকে শাহবাগে। তিনি শাহবাগীদের দিয়ে দাবি তুলিয়ে দিলেন যে, যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন সংশোধন করতে হবে। কি সে সংশোধন? মূল বিধানে ছিলো যে, শুধুমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তিই আপিল করতে পারবেন। শাহবাগীরা সরকারের নির্দেশনায় দাবি তুললো যে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিই নয়, সরকারেরও আপিলের বিধান রেখে আইন সংশোধন করতে হবে। সরকার বললো এটা গণদাবি। অনেকেই হিসাব করে দেখালেন যে, এটা দশমিক ০১ শতাংশেরও লোকের দাবি নয়। কিন্তু সরকার বিধান সংশোধন করলো। আর সেই মতে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, আদালতকে শুধু নথিপত্র দেখলেই হবেনা, রায় এমনভাবে দিতে হবে যাতে তাতে গণআকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালকে তিনি এক ধরনের দিক-নির্দেশনা দিলেন যে, কাদের মোল্লার আপিলের রায় কী হতে হবে। এর নাম ন্যায়বিচার?
সরকার শাহবাগীদের জন্য আলীশান আয়োজন করলো। শাহবাগ চত্বর পাহারার জন্য মোতায়েন করা হলো হাজার হাজার পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি। বসানো হলো শত শত ভ্রাম্যমাণ টয়লেট। তাদের গোসল-আছল আর বিশ্রাম-বিনোদনের জন্য একেবারে ফাইভ স্টার ব্যবস্থা করা হলো। বসানো হলো সিসি ক্যামেরা। সে ক্যামেরায় যা ধরা পড়লো তা নীল ছবিকেও হার মানায়। কেনো তা ধরা পড়লো, সে ‘অপরাধে’ খুন হয়ে গেলো ক্যামেরার নিয়ন্ত্রক পুলিশ কর্মকর্তা। যার কোনো কিনারা হলো না। শাহবাগ আন্দোলনের মুখপাত্র বলে পরিচিত ডা. ইমরান এইচ সরকার। ইমরান সরকারসহ মঞ্চের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জন্য সরকার গানম্যান ও পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করলো। যা সাধারণত মন্ত্রীদের বেলায় করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সরকার পাম্প দিয়ে এক জিরো ইমরানকে বিশাল হিরো করে দিলো। আমরা তখন সরকারকে এই বলে সতর্ক করেছিলাম যে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের মতো এই শাহবাগও একসময় সরকারের জন্য আরেকটি ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হিসেবে আবির্র্ভূত হতে যাচ্ছে। সে কথায়ও কেউ কান দেয়নি।
কিন্তু গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আজব কা- ঘটলো শাহবাগে। আমরা দেখলাম, যে পুলিশ ইমরানকে নিরাপত্তা দিয়েছে, যে পুলিশ ইমরানকে গানম্যান দিয়েছে, যে পুলিশ তাকে রাজকীয় সম্মান দেখিয়েছে, সেই পুলিশই ইমরান সরকার ও তার সহযোগীদের কলার চেপে ধরে পাছায় বেত মারছে। কেউবা মারছে লাথি। কিন্তু হটাৎ করেই গণেশ কেনো উল্টে গেলো? তারও প্রায় সপ্তাহখানিক আগে থেকে শাহবাগীদের দ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকে। ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় আকস্মিকভাবেই প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে তোলা হয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আরেকটি প্রতিষ্ঠান। যারা ইমরান সরকারকে চোর ও চাঁদাবাজ হিসেবে অভিহিত করে তাকে মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর শুরু হয় সংঘাত। ইমরান সরকারের শাস্তি ও ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করারও দাবি ওঠে। এর মধ্যে ইমরান সরকার ও লাকি বেশ কয়েকবার নাকি বিদেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়।
ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে চাঁদাদাতাদের এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, চাঁদা না দিলে মঞ্চে তাদের যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী বলে চিহ্নিত করা হবে। ছাত্রলীগ ও কমান্ড একই কথা বলেছেন। সেই বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি এখন বিশাল বিত্তের মালিক। এই মঞ্চ আরও বেশি জিগিরায়িত করে এদেশের এক শ্রেণীর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। অশিক্ষার কারণে হোক আর মতলবের কারণেই হোক তারা ২৪ ঘন্টা শাহবাগীদের এই জজবা লাইভ প্রচার করতে থাকে। পত্রিকাগুলোও প্রতিদিন বিশাল ব্যানার শিরোনাম করে শাহবাগের খবর ছাপতে থাকে। কোনো কোনো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া শাহবাগে প্রায় জনশূন্য চিত্র ঢাকতে গিয়ে পুরনো ছবি যুক্ত করে দেয়।
কার্যত এর সবকিছুই ছিলো বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি ধ্বংস করে দেয়ার একটি সূক্ষ্ম ও সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। তারই অংশ হিসেবে নাসিরউদ্দিন ইউসূফ বাচ্চুরা মঞ্চে এসে স্বঘোষিত নেতা সেজেছিলেন। তখনও কারও কাছে এই মতলব যেনো স্পষ্ট হয়নি। তাই যা খুশি, যেমন খুশিভাবে শাহবাগী তৎপরতা চলছিলো। এই শাহবাগীদের অপতৎপরতাকে যখন সরকার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করলো, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম পত্রিকায় কলাম লিখে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধই। নাচ-গান বা ফূর্তি-ফার্তার বিষয় নয়। কেউ কান দেয়নি।
ধারণা করি, কেউই ভুলে যাননি যে, এই ইমরান সরকার শাহবাগে ধর্মবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে হিরো হয়েছিলেন। জনভিত্তিহীন কিছু অকর্মণ্য লাফাঙ্গা এখানে আল্লাহ, ইসলাম ও হযরত মুহম্মদ (স.) এর বিরুদ্ধে ব্লগে নানা ধরনের অশ্রাব্য ভাষায় কুৎসা রটনা শুরু করে। নাউজুবিল্লাহ। যখন তারা এই অপকর্ম শুরু করেন, তখন থেকে গণজাগরণ মঞ্চ ধীরে ধীরে জনশূন্য হতে থাকে। কেননা যে সাধারণ মানুষেরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে সমবেত হচ্ছিলেন, তারা আল্লাহ, ইসলাম ও মহানবীর বিরুদ্ধে ঐ সব কুৎসায় নিজেদের শরিক করতে চাননি। আর এই কুৎসাকারদেরও তারা স¦াভাবিকভাবে নেননি।
শাহবাগীদের এই তথাকথিত আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস যখন লেখা হবে, তখন দেখা যাবে যে, এই মঞ্চ প্রকৃতপক্ষে কোনো আন্দোলনই ছিলো না। এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নবস্ফূরণ ঘটানো এর লক্ষ্য ছিলো না। কার্যত এটি ছিলো বিএনপি-জামায়াতকে নিঃশেষ করে দেওয়ার এক চক্রান্ত মাত্র। সে চক্রান্ত ছিলো আওয়ামী লীগ ও তার বিদেশী প্রভুদের। সন্দেহ নেই এ আন্দোলন হয়ে উঠতে পারতো এক জাগরণ। কিন্তু আমাদের অপরিণামদর্শী মিডিয়া সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এ আন্দোলনকে নিয়েছিলো বিএনপি ধ্বংস করার হাতিয়ার হিসেবে। তাতে আওয়ামী লীগ একেবারে ব্যর্থ হয়েছে এমন দাবি করি না।
সেটুকু অর্জিত হওয়ার পর এবার সরকারের মঞ্চ থেকে বের হবার প্রচেষ্টা। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই জানতো, এই মঞ্চ একসময় তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আল্লাহ, ইসলাম ও রসূলের বিরুদ্ধে তাদের কুৎসা গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষকে মঞ্চ এবং সরকার উভয়ের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তুলবে। কিন্তু আওয়ামী মিত্র বাম ঘরানার লোকেরা বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংস যেমন চেয়েছে, একইসঙ্গে তারা ধর্ম নিরপেক্ষতাও চেয়েছে, যেখানে ইসলাম দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না।
আওয়ামী লীগ নিজেও হয়তো এটাই চায়। কিন্তু প্রকাশ্যে সেটা বলতে চায় না। এখন রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। এক হাস্যকর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতাসীন, যে নির্বাচন বিশ্বে কোথায়ও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এখন আর মঞ্চ তাদের কোনো কিছুতেই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে না। বরং তা বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া মঞ্চ পদে পদে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করেছে। জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে যে তিন কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে গ্রহণ করেছিলেন, মঞ্চ তা ব্যাংকটিকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। মঞ্চের আরও অভিযোগ যে, সরকার এখন জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আর সেই কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় এখন খুব আর তোড়জোড় নেই। তাছাড়া যারা মঞ্চের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেছেন, তারা হয়তো আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, একসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও মঞ্চ পরস্পরের গলায় ছুরি ধরবে। ঘটনা ঘটেছেও তাই। এখন উদ্যত ছোরা হাতে পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি।
কিছু প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত জবাবহীনই থেকে যাবে। তাহলো, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মঞ্চে উঠে কেনো ঘোষণা দিলেন যে, যারা মঞ্চ সমর্থন করে না তারা বাংলাদেশ এবং মক্তিযুদ্ধ বিরোধী? দ্বিতীয়ত, শাহবাগীদের যখন পুলিশ কলার ধরে লাথি মেরে শাহবাগ থেকে তুলে দিলো তখন ঐসব ব্যক্তিত্ব একেবারে চুপ মেরে গেলেন? তৃতীয়ত, কেনো এতোদিন ধরে যে শাহবাগীদের সরকার আদর-যতেœ পুষলো কেনো তাদেরকে এখন জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে? তরুণসমাজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই শাহবাগী সংযাত্রার আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন। ইতিহাসের নির্মম সত্য এটাই, যদি ভিনদেশী কোনো পটুয়ার হাতে তৈরী পুতুল হন, তাহলে সকালে ঠাকুর থাকবেন, বিকেলে কুকুরে পরিণত হবেন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads