সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

‘২০১৪ সালের ‘উপজেলা নির্বাচন’ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ও সত্যের পক্ষে ঐতিহাসিক জয়’


‘সত্য’ দিয়েই পৃথিবীর যাত্রা। সত্যের পিঠে ভর করেই পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত। সত্য বিনে পৃথিবী অচল। মিথ্যেরা তখনো অনস্তিত্বে। ফলে সত্যেরা খেলা করতো আপন মনে। হঠাৎ কাবিলের হাত ধরে মিথ্যার আগমন। কিন্তু তাও খুব স্বল্প সময় স্থান পায় সত্যের ভিড়ে। জয় হয়েছে সত্যেরই। যুগে যুগে পৃথিবীবাসীরা এটাই দেখে আসছে। তাই সত্যই শাশ্বত। মিথ্যা বিতাড়িত। ২০১৪ সালের ‘উপজেলা নির্বাচন’ তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম। একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে ও বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশটির আবির্ভাব। তাই এর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষাও  বিশেষ নজরদারির দাবিদার। এর স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র কর্তৃক সহযোগিতা একে করুণার পাত্রে পরিণত করেছে। কিন্তু এটাও সত্য ৩০ লক্ষ প্রাণ ঝরেছে বাংলাদেশেরই। প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের নয়। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই সহযোগিতাকারী রাষ্ট্রটিই যখন এদেশের অমূল্য সম্পদ লুন্ঠনে আত্মহারা হয়ে উঠে, তখন দেশটির সেই সহযোগিতাকে লোক দেখানো ও স্বার্থপরতা বলতে দ্বিধা থাকেনা। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বঙ্গবীর তো অকপটে বলেই ফেলেছেন যে, জামায়াত যেই কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি আসেনি, দেশ সে দিকেই এগুচ্ছে। মেজর জলিলের বিবৃতিও এরকমই ছিল।
৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের এহেন পরিস্থিতিতেও যারা ভারতনির্ভর রাজনীতিতে আত্মপ্রশান্তি খুঁজে ফেরে তারা তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাসী কিনা তা স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমীদের প্রশ্ন। জামায়াত স্বাধীনতার যুদ্ধে সরাসরি না থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মৌলিক অগ্রগতি-উন্নতি ও স্থায়িত্বের পথে এগিয়ে নিতে জামায়াত-শিবির অনুসরণীয় ভূমিকায় নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। তার প্রমাণ স্বাধীনতার পরেই জাতীয় নির্বাচনে (১৯৯১ সালে) এককভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে জামায়াতের শক্তিশালী আবির্ভাব। এর আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হলেও ঐ নির্বাচনের পরই মিথ্যাশ্রয়ী লোকদেখানো দেশপ্রেমীরা জামায়াত বিরোধী প্রচারণার ঝড় তোলে। প্রমাণিত হয় সত্য তিক্ত। আর সত্যের মাল্য স্থান পায় জামায়াতেরই গলে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত জামায়াতের শক্তিশালী আবির্ভাব এবং দেশের ইতিহাসে মন্ত্রিত্বের দু’টি রোল মডেল উপস্থাপন পরজীবী রাজনীতিকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। অপপ্রচারের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে। অসহনীয় সকল নির্যাতনের শিকার হয় সেই দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রীদের দলটিই। অন্যদিকে দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট ঘোষিত হয় বিশ্ববিখ্যাত দুর্নীতিবাজের নামে।
জামায়াতকে নৈতিক সমর্থনদাতা এশিয়ার সুশৃঙ্খল ছাত্রসংগঠন শিবিরের সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে কোনো অন্যায় প্রমাণ করা ছাড়াই নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। দলটি শিকার হয় জেল-জুলুম-গুম-খুন আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের। দেশের প্রচলিত ছাত্রসংগঠনগুলো অস্ত্রবাজীর প্রতিযোগিতায় গিনিজবুকে নাম উঠানোর মত যোগ্যতা অর্জন করলেও বিশ্বের ৩য় সন্ত্রাসী সংগঠনের বদনামের শিকার হতে হয় সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় বিশ্বাসী শিবিরকে। এই কলামটি যখন লিখছি তার ক‘দিন পূর্বেও রাবি ও বাকৃবিতে ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলে ঝরে গেছে দু‘টি তাজাপ্রাণ। তথাপি শিবির সন্ত্রাসী। আর ছাত্রলীগ ধোয়া তুলশী পাতা। সাংবাদিকতার কী নির্মম চিত্র! তবে কাক কখনো ময়ূর হয়না। কাক নিজেকে আমরণ ময়ূর দাবি করলেও কেউ তাকে ময়ূর ডাকবেনা । অন্য দিকে ময়ূর নিজেই তার পরিচয়ে যথেষ্ট। তাকে মাইক লাগিয়ে বলতে হবে না আমি ময়ূর। তাই কে কাকে কি বলল তা নয় বরং ব্যক্তি বা দলের কাজই প্রমাণ করবে সে কি বা কে?
স্বাধীন দেশের জামায়াত সমর্থিত ও বিরোধী দল সমর্থক বিভিন্ন অঞ্চলে কী নির্মমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলো! জাতির প্রশ্ন, সাতক্ষীরায় খেটে খাওয়া মানুষের মাটির ঘর বুলডোজার দিয়ে পিষে দেয়া, দু’বেলা অন্নের সন্ধানে সাতক্ষীরায় মাছের ঘেরের পাড়ে গাছের পাতায় নির্মিত মাচায় ঘুমিয়ে থাকা নাবালেগ শিশুকে হত্যা করা- এটাই কি মানবাধিকার কিংবা স্বাধীনতার চেতনার  চিত্র? দেশের রাজনীতিতে জামায়াত নামক এ দলটিকে যেভাবে অপপ্রচারে জর্জরিত করা হচ্ছে, সীমাহীন নির্যাতনের মুখোমুখী করা হচ্ছে, অন্য কোন দল হলে তাদের নামনিশানা থাকতো কিনা সন্দেহ। 
দলটির বিরুদ্ধে এত মিথ্যাচারের পরও ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে কেন মানুষ শাসকগোষ্ঠীকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলো? এতো নির্যাতন ও মিথ্যাচারের পরও উপজেলা নির্বাচনে কী দেখলাম! যেখানে জামায়াত নামক দলটিকে জীবন্ত কবরস্থ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, সেখানে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের ২য় দফা পর্যন্ত একি কারিশমা দেখলো জনগণ? জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হল ১৩+৮= ২১ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫+২৩= ৫৮ জন, তথাকথিত নারীবাদীদের জামায়াতকে নারীবিদ্বেষী বললেও জামায়াতের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান  নির্বাচিত হল ১০+৯=১৯ জন। যেন মুখের উপর জওয়াব। প্রথম দু‘দফায় সরকার বিরোধী গণজোয়ার দেখে অবৈধ গদিওয়ালারা  দিশেহারা হয়ে তাদের স্বভাবগত আচরণ তথা পেশীশক্তির নাটকীয় প্রদর্শন শুরু করে দিল। যে কোন প্রকারের নির্যাতন জনগণের উপর প্রয়োগ করতে তারা  ভুল করেনি। তারপরও প্রথম আলো পত্রিকার তথ্য মতে ৫ম দফা ভোট শেষে জামায়াত চেয়ারম্যান পদে ৩৬ টি, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১৭ টি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৪ টি তথা ১৮৭ টি উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য জামায়াত সব উপজেলায় প্রার্থীও দেয়নি। যদি জনগণকে তাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে দেয়া হতো তবে চিত্র থাকতো আরো শক্তিশালী।
তাই ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল সত্যের সাক্ষী। যুগে যুগে এ নির্বাচন সাক্ষ্য দেবে- সত্যই জয়ী, আর মিথ্যা পরাভূত। তাই সত্যপ্রেমীদের বলে যেতে চাই; সত্যের জয় হবে নিশ্চয়, মুমিন হৃদয়ে হতাশার ঠাই নাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads