বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০১৪

ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রলীগ খুন : দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষার ফল


এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগের আগেই যার যাত্রা শুরু এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসেও এগিয়ে ছিল ছাত্রলীগই। স্বাধীনতা আন্দোলনেও গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। কিন্তু স্বাধীনতার পর বিভক্তির চক্করে পড়ে ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হারাতে থাকে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। মুজিববাদের ধ্বজা নিয়ে সন্ত্রাসসহ অপরাধের কানাগলিতে আটকে যায় যারা তারাই এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গী হিসেবে দাপট দেখিয়ে সর্বত্র একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দিন থেকে তাদের দাপটের শিকার হতে হয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। সে ইতিহাস লিখতে গেলে আর একটা মহাভারত হয়ে উঠবে।
প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন-খারাবি থেকে শুরু করে হল ও ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া যেন ছাত্রলীগের অধিকার হয়ে উঠেছে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের দাবিদাররা এক্ষেত্রেও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। রাখতে চায়নি বলাই সঙ্গত। ফলে এখন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি নিজ সংগঠনের সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছে না সন্ত্রাসের হাত থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কত ক্যাম্পাস যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে রঞ্জিত হয়েছে তার হিসাব কারও জানা নেই। নিজ দলের ছেলেরাও রেহাই পায়নি। বিগত পাঁচ বছর ধরে এই ধারায় ছেদ পড়েনি। ফলে এখনও ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে ছাত্রদেরই।
গত সোমবার ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী ও দুই সহপাঠী ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের পত্রিকায়। নিহত ছাত্রটি ছিল ছাত্রলীগের একটি হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগেও জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একইভাবে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে ছাত্রলীগ সদস্যদের। সেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি না হওয়ায় আবারও প্রাণ হারাতে হলো আরেকজনকে। একই সংগঠনের ভেতরে এমন রক্তক্ষয়ী কোন্দলের পেছনে নিশ্চয়ই রাজনীতি বা আদর্শগত প্রশ্ন কাজ করেনি?
তবে আসল কারণ ঢাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা যা বলছেন তাও ভয়ঙ্কর। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা দখল, অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মতো অপরাধমূলক কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করার পরিবর্তে বলা হচ্ছে অনুপ্রবেশের কথা। ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের অনুপ্রবেশকারীরাই নাকি সব অপকর্মের হোতা? বড় আবিষ্কারই বটে!
অথচ পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শিবির পিটিয়ে বেড়াচ্ছে। ক’দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়ার খবরও ফলাও প্রচার পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের টর্চার সেলের কথাও এখন আর অজানা নয়। বাকৃবিতে প্রতিদিন রাত ১০টার পর সেখানে সাধারণ ছাত্রদের ডেকে এনে শাসন করা হয়। প্রয়োজনে শিবির বলে বেধড়ক পেটানো এখন ছেলেখেলা হয়ে উঠেছে। এই ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে জানা না গেলেও দীর্ঘদিন ধরে এমনটা চলে আসায় বোঝা যায় এর পেছনে ওপরের আশীর্বাদ আছে। এভাবে অবৈধ কর্তৃত্বের স্বাদ পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কীভাবে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে সেটাও জানা যাচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একটি হলের প্রভোস্টরা একযোগে পদত্যাগ করে ছাত্রলীগ নেতার ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার প্রাণনাশের হুমকির কথা কে না জানে। এত কিছুর পরও সোনার ছেলেদের প্রশ্রয় দেয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে তারা যুবলীগ এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাদের শায়েস্তা করতেও পিছপা হচ্ছে না। বগুড়াতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার খবর পত্রিকাতেই ছাপা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলেই এ কাজ জায়েজ করা হয়েছে বলেও প্রকাশিত খবরে প্রকাশ।
এভাবেই বিগত ছয় বছর ধরে বেপরোয়া ছাত্রলীগ এখন দলের ওপরও ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছে। এটাকে দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষার সঙ্গে তুলনা করা হলে কাউকে কি দোষ দেয়া যাবে?
সূত্র- আমার দেশ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads