মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

ভারতকে করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত


মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের আশ্বাসে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী ভারতকে করিডোর দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় দেশটি ব্রহ্মপুত্রের উজানে বিশাল জলরাশি আটকে রাখার উদ্দেশ্যে প্রায় আড়াইশ’ ড্যাম-ব্যারাজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে ধূসর মরুভূমিতে পরিণত করার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভারত এসব ডাম-ব্যারাজ নির্মাণ করে আটককৃত পানি বিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি কৃষি ও সেচ কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনাও গ্রহণ করছে। উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক কোনও নদীর উপর ভাটির দেশের সম্মতি ও অনুমতি ছাড়া উজানের দেশ পানির প্রবাহে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোনও অবকাঠামো বা স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। ভারত সরকার বাংলাদেশের উপর প্রবাহিত ৫২টি নদীর উপর বাঁধ/ড্যাম প্রভৃতি তৈরি করে সে দেশে তিন লাখ কোটি রুপী ব্যয়ে একটি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে গঙ্গা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদীর উপর তারা বাঁধ দিয়ে অসংখ্য সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেও শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের উপর তার বিরূপ প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারের নিকট তারা দীর্ঘ সময় ধরে এর প্রতিকারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এর প্রতিকারের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ভারত থেকে তথাকথিত বিদ্যুৎ আমদানির আশ্বাস পেয়ে জনমতের অপেক্ষা না করে ভারতকে করিডোর দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি প্রত্যাহারের ভারতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে আর কোনও বাধা থাকছে না বলে বিশেষজ্ঞ মহল মতামত প্রকাশ করেছেন। আমরা তাদের সাথে এ ব্যাপারে একমত এবং মনে করি যে, বাংলাদেশ সরকার জনগণের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে তার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং অর্থনীতিকে গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ ভূখ-ের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর উপর বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের মিঠা পানি প্রত্যাহার করে ত্রিপুরা অঞ্চলে সরবরাহ এবং পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলের রাস্তা করে দেয়ার খবরকেও বিস্ময়কর বলে মনে করি। নিজের জনগণের স্বার্থকে বলি দিয়ে বিদেশীদের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার দৃষ্টান্ত দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। কিন্তু তথাপিও আমরা আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ দলীয় শাসকদের মধ্যে তা প্রত্যক্ষ করছি। এটা শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয় ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যও ধ্বংসাত্মক।
স্বয়ং ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ থেকেও আমরা কোনও শিক্ষা নিতে পারি না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা গত কয়েক বছর ধরেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমাদের সাথে যে তামাশা করেছেন তা আমাদের কাছে নিন্দনীয় হলেও তাদের জন্য জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পরিচায়ক। ক্ষমতার লোভে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতার আশায় আওয়ামী লীগ সরকার একটার পর একটা ছাড় দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু অদ্যাবধি একটা সুযোগ তারা আমাদের জন্য আদায় করতে পারেননি। উভয় দেশের মধ্যে এনক্লেভ বিনিময়সহ স্থল ও জনসীমান্ত বিনিময়, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা, চোরাচালান প্রভৃতি দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর কোনটিই তারা সমাধান করেননি। তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের একাধিক প্রতিশ্রুতির পর সম্প্রতি তারা বলেছেন যে আসন্ন নির্বাচনের আগে তারা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতায় এই চুক্তি হয়নি। নির্বাচনের পরে তিনি এবং অন্যান্য দলগুলো যে এই চুক্তিতে সম্মতি দেবেন তার কোনও গ্যারান্টি আমরা দেখি না। এসব কিছুর সারমর্ম হচ্ছে ভারতীয় জনগণ এবং সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশকে তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে চান না এবং তাদের বিরোধিতা করে সরকারও ছাড় দিতে রাজি নন। ফলে একবার তারা আদালতের দোহাই দেন, অন্যবার জনমত ও নির্বাচনের দোহাই দেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাই আমাদের সরকারের জন্য প্রধান বিবেচনা। জনগণ, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তারা তোয়াক্কা করেন না। ভোটারবিহীন নির্বাচনে পেশী শক্তি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ অবস্থায় নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশবাসীকে এগিয়ে আসা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads