বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৪

উপজেলা নির্বাচনের জের


গত ১৫ মার্চ নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচন আসছেÑ আসছেবলে সবাই আতঙ্কে ছিল। ১৪ মার্চ গভীর রাতে দোলখাড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর কয়েকটি বোমার বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে হাঁটতে ভোটকেন্দ্রের দিকে এগোলাম। একজন লোককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গভীর রাতে এ দিকে আওয়াজগুলো কোথায় হয়েছে? কারো বাড়িতে ডাকাত পড়ল কি না।ভদ্রলোক বললেন, ‘সকালে বকরি ঈদ, জানেন না?’ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘বুঝেন নাই? কাল সকালে এখানে মানুষ জবাই হবে। আগে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিত। এখন ভোট দিতে এলে জবাই করে শুইয়ে রাখে। দেশ স্বাধীন, মানুষ স্বাধীন নয়। দেশে নতুন এসেছেন; কিছু দিন থাকলে সব বুঝে যাবেন।বলে রাখা ভালো, দেশের বাইরে প্রায় ২৫ বছর ছিলাম। অবসর সময়টা নিজ দেশে কাটাতে এলাম।
পরদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলো। সকাল ১০টা পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসছিল। সাড়ে ১০টায় পরপর আরো তিনটি ককটেল ফাটল। মানুষ জান নিয়ে দৌড়াতে লাগল। চার-পাঁচজন আহত হলো। একজন ভোটারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কেন হলো? ভোট তো ঠিকভাবেই চলছিল।জবাব পেলাম, এভাবে চললে ওরাহেরে যাবে। ওরাকারা, বুঝতে পারলাম না।
ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হলো গণনা। অল্প সময়ের মধ্যেই গণনা শেষ। কারণ এই কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৭০০ হলেও কাস্ট হয়েছে আনুমানিক এক হাজার ৩৫০। ফলাফল ঘোষণা করা হলো। এই কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হলেন। সন্ধ্যায় আনন্দ মিছিল। আবারো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখন আতঙ্ক কিসের?’ সে বলল, ‘জেতার মজা ওরা কালকে দেখাবে। আপনি বুঝবেন না।সবাই বলে আমি কিছুই বুঝি না। আসলে বোঝার যে চেষ্টা করছি, সেটা কেউ বোঝে না।
সত্যিই পরের দিন সকালে ওদেরমুখ থেকে হুঙ্কার শুনতে পেলাম, ‘বিএনপির কোনো শালাকে পাঁচ বছর ঘরে ঘুমাতে দেবো না।সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। সবার চোখেমুখে কালো ছায়া। দৌড়াদৌড়ি করছে, কে কোথায় রাত যাপন করবে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, আমার বাড়িও তো ১ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজনীতি করি না। আমাকেও ঘরের বাইরে থাকতে হবে?’ তখন ভদ্রলোক বললেন, ‘আপনি রাজনীতি করেন বা না করেন, পুলিশ সেটা বুঝবে না। আপনার বয়সও দেখবে না। প্রথমেই উত্তম-মধ্যম দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নেবে।শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। এই বৃদ্ধ বয়সে লাঠিপেটা খেলে বাঁচব না। এখন ১ নম্বর ওয়ার্ডে পুরুষবিহীন রাত কাটে। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক পরিহার করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।
কৃষক সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমোতে চান। মনে হয়, এই ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের বড় নেতারা জানেন না। গ্রামের আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু লোকের কাণ্ড এসব। এরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে স্বার্থসিদ্ধির জন্য গ্রামে পুলিশ আনার ব্যবস্থা করে সমাজে শান্তির বিঘœ ঘটায়।
শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এমন একটি আদর্শ গ্রামে ভাইয়ে-ভাইয়ে, বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রীতে, চাচা-ভাতিজার মধ্যে কাটাকাটি, হানাহানি বন্ধ করুন।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads