মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৪

সরকারের তুষ্টি, অন্তরের অভিলাষ


সময়ের বিবর্তনে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়েছে সেটা হলো বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্যশক্তি, আর অনেকটা স্বার্থপরও বটে। দেশের অভ্যন্তরে যা-ই ঘটুক না কেন, যতক্ষণ না নিজের শরীরে এসে আগুনের তাপ লাগবে ততক্ষণ নীরব দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে থাকব, এমন মনের বাসনা। তাইতো অবৈধ সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও নির্লজ্জ দলীয়করণ অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। দশম জাতীয় সংসদ তার মেয়াদকাল সমাপ্তির পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিলো। যেখানে উল্লেখ ছিল, সংবিধান লঙ্ঘনসংক্রান্ত ৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায় (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।মহাজোট সরকারতো প্রধানত বর্ণিত ওই সব অপরাধ করেছে, নিয়মমাফিক তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচার হওয়া উচিত। জাতির দুর্ভাগ্য তাই তিনিই আজো বহাল তবিয়তে থেকে ১৬ কোটি মানুষের মাথায় ছড়ি ঘুড়িয়ে চলেছেন, জোর করে মুলুক দখল করেছেন। তখন তারা জনগণকে বুঝিয়েছে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। আর গভীর ষড়যন্ত্র করেছে যাতে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না আসে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এমন ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সরকারের গায়ে যেন আগুন লেগে গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রীপর্যায়ের সবার তীর্যক মন্তব্য ছুড়তে আরম্ভ করেছেন। আর এতে লাভবান হয়েছে বিএনপি। বৃহৎ জনসাধারণের সামনে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মহাজোট সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে অনিচ্ছুক। গণতন্ত্রকে আঁস্থাকুড়ে নিক্ষেপ করে তারা ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে চায় অনন্তকাল। তাতে যদি জনসংখ্যা কমে অর্ধেকও হয়ে যায় তাতে কিছু যায় আসে না। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচন হওয়ার পর যখন দেখল ১৯ দলীয় জোটের পক্ষে সব সমর্থন যাচ্ছে ঠিক তখনই তাদের অপ্রত্যাশিত হস্তক্ষেপ আর নির্বাচন কমিশনের আপ্রাণ চেষ্টায় জয়ের ফসল সরকারের ঘরে এনে দিয়েছে। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সে কারণেই ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন বেফাঁস, অগণতান্ত্রিক মন্তব্য করে নিজেকে সরকারের চামচা বলে প্রমাণ করেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হয়ে তিনি ভুলে গেছেন যে তিনি স্বীকৃত আওয়ামী লীগ কর্মী নন। বেগম জিয়ার প্রতি তার বিতৃষ্ণা থাকলেও সেটা তিনি জনসমক্ষে প্রকাশ করার এখতিয়ার রাখেন না। দেশের মানুষ আজ্ঞাবহ দলীয় কর্মী এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায়। শুধু তাই নয়, সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচনে একটি নির্বাহী ক্ষমতায় থেকে পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে জনতার আদালতে তার বিচার হওয়া উচিত। বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে করছে, এমন মন্তব্য করে তিনি তার পদের অমর্যাদা করেছেন এবং ওই পদের জন্য তিনি অনুপযুক্ত প্রমাণ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা কিছুই না হতে পারি, জিরোও হতে পারি, কিন্তু সেই জিরোর অধীনেই তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাহলে কি নাকে খত দিয়ে অংশ নেয়া হলো না?’ ভারপ্রাপ্ত সিইসির এমন এখতিয়ার নেই বিএনপি চেয়ারপারসনের মন্তব্যের বিপরীতে আর একটি অমূলক মন্তব্য ছুড়ে দেয়া।
বিএনপি দেশের দুটি বড় দলের একটি এবং বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন তিন দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কমিশনকে তিনি সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করতে পারেন। এমনকি তার পদত্যাগ ও দাবি করতে পারেন। কিন্তু পাল্টা আক্রমণ করার এখতিয়ার সিইসির নেই। মুখ বন্ধ রেখে কান খুলে রেখে, শুধু সংশোধিত প্রক্রিয়ার কার্যসম্পন্ন করা তার কর্তব্য। সিইসি যদি বিচক্ষণ ও নিরপেক্ষ হতো তবে বিএনপির এই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের দক্ষতা আর আন্তরিকতা প্রমাণ করার সুযোগ সাদরে গ্রহণ করত। তা না করে তারা সরকারের অপকর্মের দোসর এটাই প্রমাণ করলেন। উপজেলা নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা ছিল ব্যর্থ নীরব দর্শকের মতো। তৃতীয় দফা নির্বাচনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে তাদের পেশিশক্তি আর প্রশাসনিক শক্তি প্রদর্শনের দুর্দমনীয় মহড়া। ৩১ মার্চ পঞ্চম দফা নির্বাচনে আমি স্বয়ং প্রত্যক্ষ করেছি সরকারি দলের জালভোট দেয়ার হিড়িক। বেলা ৩টার পর শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট কেন্দ্রে আওয়ামী সমর্থকেরা কেন্দ্রে ঢুকে সবার সামনেই জালভোট দিয়েছেন। সেখানে নিশ্চিত বিএনপি সমর্থিত আব্দুল মোতালিব জয়ী হওয়ার কথা। অথচ কেন্দ্র দখল করে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা মহাজোট সমর্থিত চেয়ারম্যানকে জিতিয়ে নিয়েছেন। অথচ স্থানীয়ভাবে ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থী সজ্জন ও জনপ্রিয়। আর মহাজোটের প্রার্থী সন্ত্রাসী বলে পরিচিত আর জননিন্দিত। তবুও জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর জন্য। সারা দেশের চিত্রই এমন। অবিলম্বে ব্যর্থ নির্বাচনের দায়ভার মাথায় নিয়ে সিইসির পদত্যাগ করা উচিত। গণতন্ত্রপ্রিয় জনসাধারণের এমন দাবি। আমি স্বয়ং ওই কেন্দ্রের ভোটার হওয়ার সুবাদে এ অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছি। এ কথা আর একবার কঠিনভাবে প্রমাণিত হলো যে, দেশের প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গণতন্ত্র আজ পাশের ডোবায় নির্বাসিত হয়ে অশ্রুবিসর্জন করে চলেছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। স্বাধীনতার চেতনা ক্ষত-বিক্ষত সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। রাজনীতি থেকে নীতিটা আজ মুছে গেছে। সে কারণেই বয়োজ্যেষ্ঠ মহাজোট নেতা তোফায়েল আহম্মেদ এমন মন্তব্য করতে পারেন। গত সংসদে মন্ত্রিত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে এবার অটোমেটিক সংসদের মন্ত্রী হয়ে স্বেচ্ছাচারী নেত্রীকে সন্তুষ্ট করতে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি এমন একটি দল যে দলের কোনো নীতি নেই। এরা একটি নির্বাচনে অংশ নেয়, অন্যটিতে অংশ নেয় না। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছে তারা বিগত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে। এবার তারা নাকে খত দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই সরকার দেশে একদলীয় সরকারব্যবস্থা চালু করতে চায় তাই বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। জাতীয় পার্টির মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কোন্দল লাগিয়ে হাস্যকর নীতিশূন্য করে জনবিচ্ছিন্ন করেছে। বাম দলগুলোকে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজের জোটের আওতাভুক্ত করে এবার চিপামাইর দিচ্ছে। তবে গ্রামবাংলার প্রবাদটি অমূলক নয়, ‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে।
দেশ-বিদেশে এই সরকারের প্রতি সমর্থন জ্যামিতিক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সরকারপ্রধানের বুকে মোহর মারা হয়ে গেছে তাই তিনি অনিবার্য পতন প্রত্যক্ষ করতে পারছেন না। পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা জিএসপি নবায়ন বা সম্প্রসারণ সম্পর্কে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনেজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশে যতদিন পর্যন্ত তৈরী পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নেতা ও সংগঠনের সদস্যদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন বন্ধ না হবে ততদিন  পর্যন্ত বাংলাদেশী পণ্যের সম্প্রসারণ হবে না। ব্রিটেন বলেছে, কোনো দল বয়কট করবে না এমন নির্বাচনী সমাধান চায় ব্রিটেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছেন, ‘ক্রিমিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের সাথে থাকতে পারেনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।দেশের জনসাধারণ বিরক্ত আর জিম্মি হয়ে আছে সেই সাথে উন্নত দেশের বিরাগভাজন হয়ে শুধু প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এ সরকার আর কত দিন অনৈতিকতার পাহাড়কে প্রসারিত করবে।

মর্জিনা আফসার রোজী


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads