শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৪

গণজাগরণ মঞ্চের নানা রূপ এবং অভিযোগ প্রসঙ্গ-


শাহবাগে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করতে আসা গণজাগরণ মঞ্চের দুই অংশের কর্মীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার বিকেলে উক্ত ঘটনায় লাকী আক্তারসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় গণজাগরণ মঞ্চের ইমরানপন্থী ৫ জন এবং ইমরানবিরোধী ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডে’র ২ জনকে আটক করা হয়। উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এর জের ধরেই গত শুক্রবার উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করতে যায় শাহবাগে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘায়িত করা নিয়ে আমরা কথা বলছি। লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেয়ার বিরুদ্ধেও বলেছি। এসব কারণে সরকার আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাবছে। যে কারণে এ হামলা। এদিকে শুক্রবারের ঘটনার পর ‘গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকবৃন্দ’ নাম নিয়ে মঞ্চের মুখপত্র ইমরানবিরোধী অংশটি প্রকাশ্যে আসে। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে ইমরানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য যে, গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত  ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’, ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ’ ও ‘গৌরব ৭১’ নামের সংগঠনগুলোর কর্মীরাই ‘গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকবৃন্দের’ ব্যানারে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাস্তায় নামেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকবৃন্দ’Ñএর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র মনোনীত হওয়ার পর ইমরান স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম ও এই আন্দোলনের ফসলকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করেন। তিনি দেশ থেকে এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহের মাধ্যমে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা প্রত্যেকেই একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তারা নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই গণজাগরণ মঞ্চে এসেছিলেন। তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা এসব অভিযোগ তুলছেন। আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা কোনো সংগঠন থেকে কখনো চাঁদা নেননি। নিজেরাই নিজেদের খরচের জোগান দিয়ে থাকেন। তাই কোনো দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না। এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
ভাবতে অবাক লাগে, অনুমতি না নিয়ে শাহবাগে সমাবেশের উদ্যোগ নেয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের দুই পক্ষকে বেধড়ক লাঠিপেটা করলো পুলিশ। অথচ ব্যস্ত শাহবাগ মোড়ে মঞ্চ বানিয়ে মাসের পর মাস নাগরিকদের অসুবিধায় ফেলে সভা-সমাবেশ করে গেছে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। তখন তো ওদের এমন বেআইনী কর্মকা-ে বাধা দেয়নি পুলিশ? বরং পুলিশ তখন ওদের নিরাপত্তা বিধানসহ নানা প্রশ্রয় দিয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো শুক্রবারের ঘটনা প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার বলতে পেরেছেন, বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলন কখনও কি পুলিশের অনুমতি নিয়ে হয়? আসলে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে তখনও রাজনীতি ছিল, এখনও রাজনীতি আছে। আর এখন তো উভয়পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে দলীয় রাজনীতির অভিযোগ আনছেন। অথচ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর সময় কত আলোকিত কথাবার্তা বলা হয়েছিল, দলীয় ক্ষুদ্র রাজনীতির বিরুদ্ধে কথামালা গাঁথা হয়েছিল। মোমের আলোতে কৃত্রিমভাবে একটি পবিত্র পরিবেশ তৈরিরও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই একে একে আয়োজকদের মুখোশ খসে পড়ছে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-নেত্রীরা তো এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে শুধু ক্ষুদ্র রাজনীতির অভিযোগই আনছেন না, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও আনা হলো। তিনি এই অভিযোগকে নির্বিকারভাবে শুধু অস্বীকারই করলেন না, সাধু ব্যক্তির মত বলে গেলেন- আমরা কখনো চাঁদা নেইনি বরং নিজেরাই নিজেদের খরচের জোগান দিয়ে গেছি, তাই দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকা- ও শাহবাগের পরিবেশ নিয়ে দিনের পর দিন পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি অস্বীকার করবেন কীভাবে? শাহবাগে হাজার হাজার প্যাকেট বিরিয়ানীসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় কি করে আসতো? প্রতিদিন যারা উপস্থিত হতো তাদের উপস্থিতির পারিশ্রমিক-অর্থ কারা দিত? নগরীর আশপাশের ছোটখাট কারখানার মালিকরা তো তখন আক্ষেপ করে বলতো, শাহবাগের গান-বাজনা, বিরিয়ানী ও টাকার কারণে শ্রমিকদের এখন কাজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার এসব রিপোর্ট তো জনগণ ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকা- এবং এর প্রধান মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের যে কথা উঠেছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগসমূহের সুরাহা হলে গণজাগরণ মঞ্চকেন্দ্রিক অঘটনের অবসান হতে পারে। নয়তো পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও হানাহানির কারণে গণজাগরণ মঞ্চ জাতির জন্য এক আপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads