ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরসি মজুমদার আর্টস অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজান একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেছেন। দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেছেন, “ন্যায়বিচার সম্পর্কে কোন কথা বললেই আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।” ‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ: পাস্ট, প্রেজেন্ট এবং ফিউচার্স’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি বলেন, “দেশের পুলিশ যখন বন্দুক ঠেকিয়ে কোন সাধারণ জনগণকে গুলী করে, এটা কোন ধরনের আইনের মধ্যে পড়ে? এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আর আমি যদি তাদের ন্যায়বিচারের কথা বলি তখন আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশে আইন আছে, কেউ অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। পুলিশের এ ধরনের বর্বরতা কোন সভ্য দেশে নেই।”
পরিস্থিতির পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলে উল্টো তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। কদিন আগে, পুলিশের গুলীতে আহত এক যুবককে দেখতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. মিজান পুলিশের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিবৃতি দিয়ে ড. মিজানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে কড়া ভাষায়। ডিএমপির ওই বিবৃতিতে আহত যুবককে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য দাবি করে বলা হয়েছে ড. মিজানের এ বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। প্রতিক্রিয়ায় ড. মিজান বলেছেন, নিজস্ব ক্ষমতাবলেই তিনি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। আর আহত যুবক হিযবুত তাহরীরের সদস্য হলেও তার পায়ে গুলী করার অধিকার পুলিশের নেই। সে অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। বৃহস্পতিবার ড. মিজান পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ তুলে বলেন, একটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা যেন ‘আইনের ঊর্ধ্বে’ উঠে গেছেন। যদিও ড. মিজান কোন জেলার নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সেই জেলা কোনটি তা আপনারা সবাই জানেন।
ড. মিজানের সাফ কথায় তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। তিক্ত বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে পুলিশ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে। এমনকি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মিলের ইঙ্গিতও করা হয়েছে পুলিশের প্রতিবাদলিপিতে। গত বছরের ২৯শে ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে খালেদা জিয়া এক নারী পুলিশ সদস্যকে কটাক্ষ করেছিলেন। পুলিশের প্রতিবাদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তিনি পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আসামিকে দেখতে গিয়েছিলেন। এতে আইন ও শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এটা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
ড. মিজান দমে না গিয়ে এসব কথারও পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তারা হয়তো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ ভালভাবে পড়ে দেখেনি। এখানে যে কোন হাসপাতাল, এমনকি কারাগার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলো পরিদর্শন করার এখতিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রয়েছে।’
এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান গুলীবিদ্ধ নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পুলিশের দাবি, নাফিস হিযবুত তাহরির উলাই’য়াহ বাংলাদেশ-এর সক্রিয় সদস্য। নাফিসের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বাড়াবাড়ি সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন নাগরিকরা দাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং তারা সবাই দাস-মালিক এবং তাদের ভিতরে কোন রকম চেইন অব কমান্ড কাজ করছে বলে মনে হয় না।” ড. মিজান সে সময় আরো বলেন, “এখানে পুলিশ বর্বরোচিত আচরণ করছে। আমরা সাংঘাতিকভাবে শঙ্কিত ও উদ্বেগ প্রকাশ করি যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জেলা থেকে যখন কেউ দায়িত্বে থাকে, তাদের ধারণার সৃষ্টি হয় তারা যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে, আইন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না।” ড. মিজানের এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ড. মিজানের ইঙ্গিত করা ‘নির্দিষ্ট জেলা’ যে কোনটি তা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্ষমতা কাঠামোর দিকে তাকালে বোঝার বাকি থাকে না কারও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রাতেই গণমাধ্যমে এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ পাঠানো হয়।
ড. মিজানের কথার সূত্র ধরে আরো অনেক কথাই বলা যায়। কারণ, তার কথার মধ্যে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আইনের শাসন কখনোই যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে হতে পারে না, এই সরল-সত্য কথাটিই তিনি মূলত বলতে চেয়েছেন। বর্তমানে সবাই জানেন যে, দেশের মানবাধিকারের মারাত্মক অবনতির চিত্র সম্পর্কে প্রায়-নিয়মিতই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র থেকে বার বার বলা হচ্ছে। জানাজা আর কবর দেওয়ার মতো ধর্মীয় কর্তব্য পালনেও কিরূপ আচরণ করা হচ্ছে, সে রকম দুঃখজনক উদাহরণও সকলে সামনে রয়েছে। জানাজা থেকে, মসজিদ থেকে লোকজনকে ধরার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনও প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় যে কোনো বিষয়কে, এমন কি পবিত্র কোরআন-হাদিস গ্রন্থসমূহকেও জঙ্গিবাদের নামে তথাকথিত অভিযোগ তুলে আক্রমণ ও আক্রান্ত করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেটাও ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। আইনের শাসন, নাগরিকগণের নিরাপত্তা ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতার বিষয়ও এক্ষেত্রে নাজুক হওয়ার চিত্রই ভেসে ওঠছে। রাজনৈতিক অধিকারে, ভোটের অধিকার, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের অধিকার এবং মৌলিক নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে যদি ধর্মীয় অধিকারও ক্ষুণœ আর বিপর্যস্ত হয়, তাহলে মানবাধিকারের জায়গাটা অনেক কমে আসে। গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজের জন্য এমনটি বেদনার। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
সর্ব-সাম্প্রতিক এমনই একটি খবরে জানা যায় ভয়াবহ চিত্র। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেছেন, আমার কাছে ‘নারী-পুরুষের পর্দা’ নামক একটি বই ছিল। আমার এ বইটি দেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সভাপতির রুমে ডেকে নিয়ে বলে, তোর কাছে ইসলামী বই আছে, তুই জঙ্গি। ছাত্রীটি আরো বলেন, ওই সময় ছাত্রলীগের হলের নেতারা আমাকে বলে, তুই তো জঙ্গি, এখন তোর আল্লাহ কোথায়? তোকে বাঁচালে আমরা বাঁচাবো, তা ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না। ছাত্রীটি অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বা হলের প্রক্টর কেউই আমার কোনো কথাই শোনেন নি, তারা ছাত্রলীগ নেতাদের কথা মতোই কাজ করেছেন। (সূত্র: ইনকিলাব ৭.১১.১৪)
উপরোক্ত সংবাদ সত্য হলে [সত্যই বলতে হবে, কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা হল কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করে নি] বলতে হবে, আমরা একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি। মানুষের মৌলিক অধিকারের অনেক কিছুই বিপন্ন হচ্ছে। ড. মিজান যা বলছেন এবং বাস্তবে যা হচ্ছে, এগুলো নিয়ে তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া কর্তব্য। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, ড. মিজান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে দেশের আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতেই আগ্রহী। তার কথায় বাদ-প্রতিবাদ সৃষ্টি করা হলে পরিস্থিতি ঘোলাটেই হবে। মানবাধিকারের উন্নতি হবে না। বরং একটি দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান যখন মানবাধিকারের অবক্ষয় ও অভাব নিয়ে কথা বলেন, তখন সেটা দেশে-বিদেশে সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করবেন; বিশ্বাস করবেন। কাজের কাজ না করে শুধু প্রতিবাদে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এক্ষেত্রে আইন ও সংবিধানের প্রতি সৎ ও দায়িত্বশীল থেকে সরকারি কাজে সংশ্লিষ্ট সকলেরই কর্তব্য নিয়ম, নীতি ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করা। বাড়াবাড়ির ফল কখনোই ভালো হয় না। ক্ষমতার অপব্যবহারও ভালো ফল বহন করে না। অপরের জন্য মানবাধিকার রক্ষা করলেই নিজের মানবাধিকার রক্ষিত হবে এই বোধ জাগ্রত হলেই সবার মঙ্গল।
পরিস্থিতির পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলে উল্টো তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। কদিন আগে, পুলিশের গুলীতে আহত এক যুবককে দেখতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. মিজান পুলিশের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিবৃতি দিয়ে ড. মিজানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে কড়া ভাষায়। ডিএমপির ওই বিবৃতিতে আহত যুবককে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য দাবি করে বলা হয়েছে ড. মিজানের এ বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। প্রতিক্রিয়ায় ড. মিজান বলেছেন, নিজস্ব ক্ষমতাবলেই তিনি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। আর আহত যুবক হিযবুত তাহরীরের সদস্য হলেও তার পায়ে গুলী করার অধিকার পুলিশের নেই। সে অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। বৃহস্পতিবার ড. মিজান পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ তুলে বলেন, একটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা যেন ‘আইনের ঊর্ধ্বে’ উঠে গেছেন। যদিও ড. মিজান কোন জেলার নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সেই জেলা কোনটি তা আপনারা সবাই জানেন।
ড. মিজানের সাফ কথায় তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। তিক্ত বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে পুলিশ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে। এমনকি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মিলের ইঙ্গিতও করা হয়েছে পুলিশের প্রতিবাদলিপিতে। গত বছরের ২৯শে ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে খালেদা জিয়া এক নারী পুলিশ সদস্যকে কটাক্ষ করেছিলেন। পুলিশের প্রতিবাদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তিনি পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আসামিকে দেখতে গিয়েছিলেন। এতে আইন ও শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এটা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
ড. মিজান দমে না গিয়ে এসব কথারও পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তারা হয়তো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ ভালভাবে পড়ে দেখেনি। এখানে যে কোন হাসপাতাল, এমনকি কারাগার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলো পরিদর্শন করার এখতিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রয়েছে।’
এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান গুলীবিদ্ধ নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পুলিশের দাবি, নাফিস হিযবুত তাহরির উলাই’য়াহ বাংলাদেশ-এর সক্রিয় সদস্য। নাফিসের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বাড়াবাড়ি সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন নাগরিকরা দাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং তারা সবাই দাস-মালিক এবং তাদের ভিতরে কোন রকম চেইন অব কমান্ড কাজ করছে বলে মনে হয় না।” ড. মিজান সে সময় আরো বলেন, “এখানে পুলিশ বর্বরোচিত আচরণ করছে। আমরা সাংঘাতিকভাবে শঙ্কিত ও উদ্বেগ প্রকাশ করি যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জেলা থেকে যখন কেউ দায়িত্বে থাকে, তাদের ধারণার সৃষ্টি হয় তারা যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে, আইন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না।” ড. মিজানের এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ড. মিজানের ইঙ্গিত করা ‘নির্দিষ্ট জেলা’ যে কোনটি তা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্ষমতা কাঠামোর দিকে তাকালে বোঝার বাকি থাকে না কারও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রাতেই গণমাধ্যমে এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ পাঠানো হয়।
ড. মিজানের কথার সূত্র ধরে আরো অনেক কথাই বলা যায়। কারণ, তার কথার মধ্যে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আইনের শাসন কখনোই যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে হতে পারে না, এই সরল-সত্য কথাটিই তিনি মূলত বলতে চেয়েছেন। বর্তমানে সবাই জানেন যে, দেশের মানবাধিকারের মারাত্মক অবনতির চিত্র সম্পর্কে প্রায়-নিয়মিতই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র থেকে বার বার বলা হচ্ছে। জানাজা আর কবর দেওয়ার মতো ধর্মীয় কর্তব্য পালনেও কিরূপ আচরণ করা হচ্ছে, সে রকম দুঃখজনক উদাহরণও সকলে সামনে রয়েছে। জানাজা থেকে, মসজিদ থেকে লোকজনকে ধরার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনও প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় যে কোনো বিষয়কে, এমন কি পবিত্র কোরআন-হাদিস গ্রন্থসমূহকেও জঙ্গিবাদের নামে তথাকথিত অভিযোগ তুলে আক্রমণ ও আক্রান্ত করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেটাও ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। আইনের শাসন, নাগরিকগণের নিরাপত্তা ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতার বিষয়ও এক্ষেত্রে নাজুক হওয়ার চিত্রই ভেসে ওঠছে। রাজনৈতিক অধিকারে, ভোটের অধিকার, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের অধিকার এবং মৌলিক নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে যদি ধর্মীয় অধিকারও ক্ষুণœ আর বিপর্যস্ত হয়, তাহলে মানবাধিকারের জায়গাটা অনেক কমে আসে। গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজের জন্য এমনটি বেদনার। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
সর্ব-সাম্প্রতিক এমনই একটি খবরে জানা যায় ভয়াবহ চিত্র। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেছেন, আমার কাছে ‘নারী-পুরুষের পর্দা’ নামক একটি বই ছিল। আমার এ বইটি দেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সভাপতির রুমে ডেকে নিয়ে বলে, তোর কাছে ইসলামী বই আছে, তুই জঙ্গি। ছাত্রীটি আরো বলেন, ওই সময় ছাত্রলীগের হলের নেতারা আমাকে বলে, তুই তো জঙ্গি, এখন তোর আল্লাহ কোথায়? তোকে বাঁচালে আমরা বাঁচাবো, তা ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না। ছাত্রীটি অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বা হলের প্রক্টর কেউই আমার কোনো কথাই শোনেন নি, তারা ছাত্রলীগ নেতাদের কথা মতোই কাজ করেছেন। (সূত্র: ইনকিলাব ৭.১১.১৪)
উপরোক্ত সংবাদ সত্য হলে [সত্যই বলতে হবে, কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা হল কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করে নি] বলতে হবে, আমরা একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি। মানুষের মৌলিক অধিকারের অনেক কিছুই বিপন্ন হচ্ছে। ড. মিজান যা বলছেন এবং বাস্তবে যা হচ্ছে, এগুলো নিয়ে তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া কর্তব্য। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, ড. মিজান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে দেশের আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতেই আগ্রহী। তার কথায় বাদ-প্রতিবাদ সৃষ্টি করা হলে পরিস্থিতি ঘোলাটেই হবে। মানবাধিকারের উন্নতি হবে না। বরং একটি দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান যখন মানবাধিকারের অবক্ষয় ও অভাব নিয়ে কথা বলেন, তখন সেটা দেশে-বিদেশে সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করবেন; বিশ্বাস করবেন। কাজের কাজ না করে শুধু প্রতিবাদে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এক্ষেত্রে আইন ও সংবিধানের প্রতি সৎ ও দায়িত্বশীল থেকে সরকারি কাজে সংশ্লিষ্ট সকলেরই কর্তব্য নিয়ম, নীতি ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করা। বাড়াবাড়ির ফল কখনোই ভালো হয় না। ক্ষমতার অপব্যবহারও ভালো ফল বহন করে না। অপরের জন্য মানবাধিকার রক্ষা করলেই নিজের মানবাধিকার রক্ষিত হবে এই বোধ জাগ্রত হলেই সবার মঙ্গল।
কনক জ্যোতি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন