আজ ৭ নবেম্বর, সিপাহী-জনতার সফল বিপ্লব এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্রবাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করেছিল। স্মরণ করা দরকার, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাকশাল সরকারের পতন ঘটার পর রাষ্ট্রপতি পদটিতে অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার গঠন করেছিলেন নিহত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানেরই দীর্ঘকালের সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ। ৩ নবেম্বর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করে সেনাপ্রধানের পদ দখল করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। অভ্যুত্থানটি ভারতপন্থী পদক্ষেপ হিসেবে পরিচিতি পায় এবং ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সিপাহী-জনতার বিপ্লব ঘটেছিল ৬ নবেম্বর দিবাগত রাতে। সে বিপ্লবে খালেদ মোশাররফ মারা গিয়েছিলেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান মুক্তি পেলেও ‘গণবাহিনী’র আড়ালে জাসদসহ ভারতপন্থী একটি গোষ্ঠী সেনা অফিসারদের হত্যার অভিযান শুরু করেছিল। সকল সেনানিবাসে ঝটিকা সফরের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করেছিলেন জিয়াউর রহমান। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বুঝতে পেরেছিলেন, অফিসার হত্যার পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। জিয়ার চেষ্টায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চেইন অব কমান্ড। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্র বাহিনীকে বিভক্ত বা দুর্বল করা সম্ভব হয়নি। সশস্ত্র বাহিনী বরং আরো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছিল।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রধান অবদান। তার আগে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সব দলকে নিষিদ্ধ করে ‘বাকশাল’ নামের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাতারাতি তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। বাকশালের চেয়ারম্যান হিসেবে সর্বময় ক্ষমতাও নিজের হাতে নিয়েছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তন করার কোনো বিধানই বাকশালের শাসন ব্যবস্থায় ছিল না। ফলে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চরম ধরনের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসন। এই সুযোগে আওয়ামী-বাকশালীরা একদিকে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল, অন্যদিকে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উৎখাত করার নিষ্ঠুর অভিযান। অভিযোগ রয়েছে, ওই দিনগুলোতে বিরোধী দলের প্রায় ৩৭ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। কোনো হত্যা বা নির্যাতনের বিরুদ্ধেই তখন প্রতিবাদ জানানোর উপায় ছিল না। সমগ্র জাতি বাকশালী শাসনের জেলখানায় বন্দী হয়ে পড়েছিল।
৭ নবেম্বরের বিপ্লব দেশ ও জাতিকে ওই বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আগত জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে খুলে দিয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দরোজা। ফলে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলো আবারও কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পেয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের নামে বাকশাল সরকার ইসলামী দল মাত্রকেই নিষিদ্ধ করেছিল। জেনারেল জিয়া সে দলগুলোকে রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন। জিয়ার এ উদার নীতির সুযোগেই মুসলিম লীগ থেকে শুরু করে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ পর্যন্ত বেশ কিছু ইসলামী দলের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আবির্ভাব ঘটেছিল, পুনর্গঠিত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীও। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া এবং শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনাও ছিল জেনারেল জিয়ার বিশেষ অবদান। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার আমলেই ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনও করিয়েছিলেন জিয়া। সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করাও ছিল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।
এসবই সম্ভব হয়েছিল ৭ নবেম্বরের কারণে। ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সফল বিপ্লবই পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন ও পথ নির্মাণ করেছিল। সব মিলিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর তাই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য দিক-নির্দেশনা হয়ে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় জীবনের অমন একটি দিক-পরিবর্তনকারী দিবসকে নিয়েও জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’কে বাতিল করার মধ্য দিয়ে এই কূটিল রাজনীতির সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ৭ নবেম্বরকে আগের সম্মান ফিরিয়ে দিলেও তত্ত্বাবধায়ক নামের মইন-ফখরুদ্দিনদের অসাংবিধানিক সরকার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলেও ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’কে অন্ধকারেই রাখা হয়েছে। দিনটিকে ক্ষমতাসীনরা বরং আরো একটি ‘হত্যা দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। অন্যদিকে সব মিলিয়ে প্রমাণিত সত্য হচ্ছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার নীতি-কর্মকাBGE ও সাফল্যের পেছনে প্রধান অবদান রেখেছে ৭ নবেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব। আমরা দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ ও পালন করার দাবি জানাই।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রধান অবদান। তার আগে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সব দলকে নিষিদ্ধ করে ‘বাকশাল’ নামের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাতারাতি তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। বাকশালের চেয়ারম্যান হিসেবে সর্বময় ক্ষমতাও নিজের হাতে নিয়েছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তন করার কোনো বিধানই বাকশালের শাসন ব্যবস্থায় ছিল না। ফলে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চরম ধরনের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসন। এই সুযোগে আওয়ামী-বাকশালীরা একদিকে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল, অন্যদিকে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উৎখাত করার নিষ্ঠুর অভিযান। অভিযোগ রয়েছে, ওই দিনগুলোতে বিরোধী দলের প্রায় ৩৭ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। কোনো হত্যা বা নির্যাতনের বিরুদ্ধেই তখন প্রতিবাদ জানানোর উপায় ছিল না। সমগ্র জাতি বাকশালী শাসনের জেলখানায় বন্দী হয়ে পড়েছিল।
৭ নবেম্বরের বিপ্লব দেশ ও জাতিকে ওই বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আগত জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে খুলে দিয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দরোজা। ফলে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলো আবারও কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পেয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের নামে বাকশাল সরকার ইসলামী দল মাত্রকেই নিষিদ্ধ করেছিল। জেনারেল জিয়া সে দলগুলোকে রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন। জিয়ার এ উদার নীতির সুযোগেই মুসলিম লীগ থেকে শুরু করে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ পর্যন্ত বেশ কিছু ইসলামী দলের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আবির্ভাব ঘটেছিল, পুনর্গঠিত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীও। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া এবং শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনাও ছিল জেনারেল জিয়ার বিশেষ অবদান। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার আমলেই ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনও করিয়েছিলেন জিয়া। সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করাও ছিল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।
এসবই সম্ভব হয়েছিল ৭ নবেম্বরের কারণে। ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সফল বিপ্লবই পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন ও পথ নির্মাণ করেছিল। সব মিলিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর তাই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য দিক-নির্দেশনা হয়ে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় জীবনের অমন একটি দিক-পরিবর্তনকারী দিবসকে নিয়েও জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’কে বাতিল করার মধ্য দিয়ে এই কূটিল রাজনীতির সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ৭ নবেম্বরকে আগের সম্মান ফিরিয়ে দিলেও তত্ত্বাবধায়ক নামের মইন-ফখরুদ্দিনদের অসাংবিধানিক সরকার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলেও ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’কে অন্ধকারেই রাখা হয়েছে। দিনটিকে ক্ষমতাসীনরা বরং আরো একটি ‘হত্যা দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। অন্যদিকে সব মিলিয়ে প্রমাণিত সত্য হচ্ছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার নীতি-কর্মকাBGE ও সাফল্যের পেছনে প্রধান অবদান রেখেছে ৭ নবেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব। আমরা দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ ও পালন করার দাবি জানাই।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন