জামায়াতে ইসলামীর নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড সম্পর্কে আমরা কোন মন্তব্য করছি না। এটি আদালতের রায়। তাই সে সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা যায় না। আমরাও করছি না। কিন্তু তার মৃত্যুদন্ড নিয়ে এই তাড়াহুড়ো কেন? মনে হচ্ছে তাকে ফাঁসিতে যতক্ষণ ঝুলানো না হচ্ছে ততক্ষণ যেন কিছু মানুষের ঘুম হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কয়েক ব্যক্তি আইন কানুনও মানতে চান না। ইতোমধ্যেই দেশের কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় কয়েকটি খবর বেরিয়েছে। ওই সব খবরে বলা হয়েছে যে কামারুজ্জামানের ফাঁসির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন জেল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে। জেলের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারী কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। প্রকাশিত খবর মোতাবেক জেলখানাসমূহের মহা পরিদর্শক মনে করেন যে এভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তাড়াহুড়ো করে যদি জনাব কামারুজ্জামানকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয় তাহলে সেটি হবে জেলকোড বা জেল বিধির লঙ্ঘন। জেল বিধি লঙ্ঘন করে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলে তার দায় দায়িত্ব নেবে কে? খবরে প্রকাশ, আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক নাকি কামারুজ্জামানকে ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই কারণে আই জি প্রিজন সাথে সাথে আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে আমরা জানি না। এরপর আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে সেটাও আমরা জানি না। তবে ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এরমধ্যে জনাব কামারুজ্জামানের পরিবার এবং তার নিযুক্ত ৫ জন আইনজীবী কারাগারে তার সাথে দেখা করেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো আইনগত ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে। এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন যে রায় দেবে উচ্চ আদালত, আর সেটি কার্যকর করবে সরকার। রিভিউ পিটিশন দাখিলের কোন সুযোগ নাই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মরহুম আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড দিলে মরহুমের পক্ষ থেকে রায় বিভিউ বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন। সুতরাং কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও রিভিউ করার কোন সুযোগ নাই।
কিন্তু জনাব কামারুজ্জামানের আইনজীবী বলেন যে শহীদ কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের মামলার মধ্যে একটি ভিন্নতা রয়ে গেছে, যেটি অনেকে নজরে এড়িয়ে গেছে। ট্রাইবুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই রায়টিকে সম্পূর্ণ উল্টে নিজস্ব রায় দিয়েছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। এটি একটি ফ্রেস রায়। তাই তারা বলেছেন যে কাদের মোল্লার আপিলের রায় এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন যে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার ন্যায্য অধিকার কামারুজ্জামানের পরিবার অথবা তার আইনজীবীদের রয়েছে। এছাড়া এটি ছিল একটি বিভক্ত রায়। কাজেই যে বিচারপতি অপর বিচারপতিদের সাথে একমত হতে পারেননি তিনি কোন গ্রাউন্ডে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সেটি আসামী পক্ষের উকিলদেরকে জানতে হবে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার পরেই রিভিউ পিটিশন করা হবে। তারপর সুপ্রিম কোর্ট সেই রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করবেন কি খারিজ করবেন সেটি তাদের ব্যাপার। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত তাকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি দেওয়া তো দূরের কথা সংক্ষিপ্ত রায়ের কপিও দেওয়া হয়নি। সব প্রক্রিয়ার উর্ধে রয়েছে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। এই সবের কোন স্টেপ এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা পালন করা হয় নাই। এসব প্রক্রিয়ার কোনটিই সম্পন্ন না করে তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য এই মহল অস্থির হয়ে পড়েছেন।
আমরা পুনর্বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে আমরা ট্রাইবুনাল বা সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে অথবা রায় নিয়ে কোন কথা বলছি না। এতক্ষণ পর্যন্ত যা কিছু বলা হল সেগুলো আইন আদালতের বাইরের ব্যাপার। তবে সরকারের এই তাড়াহুড়া এবং ছুটাছুটি দেখে অনেকে বলছেন যে সরকার (আদালত নয়) জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে বেঁচে যায়।
দুই
জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের ঘুুম হারাম হয়ে গেছে। সর্বত্র তারা জঙ্গিবাদের ছায়া প্রচ্ছায়া দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে সরকারী লোকেরাই এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। সরকারী লোকেরাই বলছেন যে সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরাই জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন। প্রিয় পাঠক, এসব কথা আমাদের নয়। এসব কথা বলছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ সম্পর্কে গত শুক্রবার ৭ ই নভেম্বর একটি অনলাইন পত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেটি নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হল। পত্রিকাটি বলেছে,
“জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান জঙ্গিবাদের পক্ষ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে পুলিশের গুলীতে আহত নাফিস সালাম নামের এক তরুণকে দেখতে গিয়ে ড. মিজানুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে ডিএমপি।
বুধবার রাতে ডিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ উস্কে দেয়ার এই অভিযোগ আনা হয়।
বিবৃতিতে ডিএমপি অভিযোগ করেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের সক্রিয় সদস্য নাফিস সালামকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
ডিএমপির দাবি, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন। নাফিস সালাম এই সংগঠনের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক। ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। তিনি এ পদে কর্মরত থেকে একজন আসামির সঙ্গে আদালতের অনুমতি ব্যতীত হাসপাতালে দেখা করতে গিয়েছেন। এতে আইন এবং শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে যা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকদের মধ্যে আইন লংঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। তদুপরি যাচাই বাছাই ব্যতীত নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের আসামির বক্তব্যের ভিত্তিতে একতরফাভাবে বক্তব্য প্রদান জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
‘সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে অনভিপ্রেত মন্তব্য করেছেন যা পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে এবং এর ফলে জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও এ বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
ডিএমপির দাবি, গত বছর ডিসেম্বর মাসেও একটি নির্দিষ্ট জেলাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করেন ড. মিজানুর রহমান। এবারও একই সুরে কথা বলছেন।
ডিএমপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়; ‘ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে। একটি সাংবিধানিক পদে থেকে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে তিনি কি অর্জন করতে চেয়েছেন তা বোধগম্য নয়। দায়িত্বশীল সকল ব্যক্তিকে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য পরিহার করতে ডিএমপি অনুরোধ করছে।’
এর আগে বুধবার সকালে ড. মিজানুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাফিসকে দেখতে যান। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটি জেলার নাম ব্যবহার করে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। একটি নির্দিষ্ট জেলার পুলিশ যেন আইনের ঊর্ধ্বে। সভ্য সমাজে তারা যে ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তা মেনে নেওয়া যায় না।’
এসময় পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে তা রাষ্ট্রপতির নজরে আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড বায়তুস সালাম মসজিদের সামনে নাফিস সালামকে পুলিশ গুলী করে। এ সম্পর্কে আমাদের কোন মন্তব্য বা ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নাই।
তিন
মুসলিম লীগ, জামায়াত তথা দক্ষিণ পন্থী দল সমূহকে উঠতে বসতে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ বলে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ইত্যাদি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে স্বয়ং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সে কথা কি আপনারা জানেন? না জানলে জেনে নিন, আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলেছেন আর কেউ নয়, খোদ জাসদের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং এক সময় শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত সহচর সিরাজুল আলম খান। দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রথমা’ একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। নাম, ‘জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, প্রথমা প্রকাশন, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। পুস্তকের ৭৯ পৃষ্ঠায় সিরাজুল আলম খানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে,“ বঙ্গবন্ধুর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ের নেতা হলেন তাজউদ্দীন। জামায়াতে ইসলামী হলো পাকিস্তানী ফোর্স, আর আওয়ামী লীগ ছিল ‘অ্যান্টি লিবারেশন ফোর্স’। আওয়ামী লীগ তো ছয় দফা থেকে এক ইঞ্চিও আগে বাড়তে চায়নি। এদের সত্যিকার চেহারা জানতে পারলে মানুষ এদের গায়ে থুতু দেবে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাজউদ্দীনের নাম আসা উচিত এক নম্বরে। অথচ তিনিই হলেন এর প্রথম ক্যাজুয়ালটি।” প্রিয় পাঠক, এখানেও মন্তব্য নিষ্পোজন। কারণ এটি সরাসরি সিরাজুল আলম খানের মুখনি:সৃত উক্তি।
যারা কাঁচের ঘরে বাস করে, অন্যের ঘরে ঢিল ছোঁড়া তাদের মজ্জাগত স্বভাব। কিন্তু তারা জানে না যে অন্যেরা ঢিল ছুঁড়লে ওদের কাঁচের ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। এ কে খন্দকার নাকি মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধাই না হন তাহলে রেসকোর্স ময়দানে তিনি পাক সেনাদের আত্নসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেন কোন ক্যাপাসিটিতে? যদি মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে সেখানে খন্দকার সাহেবের উপস্থিতি না ঘটে থাকে তাহলে পাক বাহিনী কাদের কাছে সারেন্ডার করল? ‘মানবজমিনের’ সম্পাদক ‘চ্যানেল আইয়ের’ রাত ১২ টার সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, খন্দকার সাহেব মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার না হলে পাক বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে সারেন্ডার করেছে। কথাটি শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না।
এরমধ্যে জনাব কামারুজ্জামানের পরিবার এবং তার নিযুক্ত ৫ জন আইনজীবী কারাগারে তার সাথে দেখা করেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো আইনগত ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে। এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন যে রায় দেবে উচ্চ আদালত, আর সেটি কার্যকর করবে সরকার। রিভিউ পিটিশন দাখিলের কোন সুযোগ নাই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মরহুম আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড দিলে মরহুমের পক্ষ থেকে রায় বিভিউ বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন। সুতরাং কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও রিভিউ করার কোন সুযোগ নাই।
কিন্তু জনাব কামারুজ্জামানের আইনজীবী বলেন যে শহীদ কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের মামলার মধ্যে একটি ভিন্নতা রয়ে গেছে, যেটি অনেকে নজরে এড়িয়ে গেছে। ট্রাইবুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই রায়টিকে সম্পূর্ণ উল্টে নিজস্ব রায় দিয়েছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। এটি একটি ফ্রেস রায়। তাই তারা বলেছেন যে কাদের মোল্লার আপিলের রায় এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন যে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার ন্যায্য অধিকার কামারুজ্জামানের পরিবার অথবা তার আইনজীবীদের রয়েছে। এছাড়া এটি ছিল একটি বিভক্ত রায়। কাজেই যে বিচারপতি অপর বিচারপতিদের সাথে একমত হতে পারেননি তিনি কোন গ্রাউন্ডে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সেটি আসামী পক্ষের উকিলদেরকে জানতে হবে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার পরেই রিভিউ পিটিশন করা হবে। তারপর সুপ্রিম কোর্ট সেই রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করবেন কি খারিজ করবেন সেটি তাদের ব্যাপার। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত তাকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি দেওয়া তো দূরের কথা সংক্ষিপ্ত রায়ের কপিও দেওয়া হয়নি। সব প্রক্রিয়ার উর্ধে রয়েছে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। এই সবের কোন স্টেপ এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা পালন করা হয় নাই। এসব প্রক্রিয়ার কোনটিই সম্পন্ন না করে তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য এই মহল অস্থির হয়ে পড়েছেন।
আমরা পুনর্বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে আমরা ট্রাইবুনাল বা সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে অথবা রায় নিয়ে কোন কথা বলছি না। এতক্ষণ পর্যন্ত যা কিছু বলা হল সেগুলো আইন আদালতের বাইরের ব্যাপার। তবে সরকারের এই তাড়াহুড়া এবং ছুটাছুটি দেখে অনেকে বলছেন যে সরকার (আদালত নয়) জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে বেঁচে যায়।
দুই
জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের ঘুুম হারাম হয়ে গেছে। সর্বত্র তারা জঙ্গিবাদের ছায়া প্রচ্ছায়া দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে সরকারী লোকেরাই এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। সরকারী লোকেরাই বলছেন যে সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরাই জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন। প্রিয় পাঠক, এসব কথা আমাদের নয়। এসব কথা বলছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ সম্পর্কে গত শুক্রবার ৭ ই নভেম্বর একটি অনলাইন পত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেটি নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হল। পত্রিকাটি বলেছে,
“জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান জঙ্গিবাদের পক্ষ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে পুলিশের গুলীতে আহত নাফিস সালাম নামের এক তরুণকে দেখতে গিয়ে ড. মিজানুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে ডিএমপি।
বুধবার রাতে ডিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ উস্কে দেয়ার এই অভিযোগ আনা হয়।
বিবৃতিতে ডিএমপি অভিযোগ করেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের সক্রিয় সদস্য নাফিস সালামকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
ডিএমপির দাবি, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন। নাফিস সালাম এই সংগঠনের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক। ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। তিনি এ পদে কর্মরত থেকে একজন আসামির সঙ্গে আদালতের অনুমতি ব্যতীত হাসপাতালে দেখা করতে গিয়েছেন। এতে আইন এবং শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে যা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকদের মধ্যে আইন লংঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। তদুপরি যাচাই বাছাই ব্যতীত নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের আসামির বক্তব্যের ভিত্তিতে একতরফাভাবে বক্তব্য প্রদান জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
‘সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে অনভিপ্রেত মন্তব্য করেছেন যা পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে এবং এর ফলে জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও এ বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
ডিএমপির দাবি, গত বছর ডিসেম্বর মাসেও একটি নির্দিষ্ট জেলাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করেন ড. মিজানুর রহমান। এবারও একই সুরে কথা বলছেন।
ডিএমপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়; ‘ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে। একটি সাংবিধানিক পদে থেকে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে তিনি কি অর্জন করতে চেয়েছেন তা বোধগম্য নয়। দায়িত্বশীল সকল ব্যক্তিকে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য পরিহার করতে ডিএমপি অনুরোধ করছে।’
এর আগে বুধবার সকালে ড. মিজানুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাফিসকে দেখতে যান। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটি জেলার নাম ব্যবহার করে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। একটি নির্দিষ্ট জেলার পুলিশ যেন আইনের ঊর্ধ্বে। সভ্য সমাজে তারা যে ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তা মেনে নেওয়া যায় না।’
এসময় পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে তা রাষ্ট্রপতির নজরে আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড বায়তুস সালাম মসজিদের সামনে নাফিস সালামকে পুলিশ গুলী করে। এ সম্পর্কে আমাদের কোন মন্তব্য বা ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নাই।
তিন
মুসলিম লীগ, জামায়াত তথা দক্ষিণ পন্থী দল সমূহকে উঠতে বসতে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ বলে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ইত্যাদি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে স্বয়ং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সে কথা কি আপনারা জানেন? না জানলে জেনে নিন, আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলেছেন আর কেউ নয়, খোদ জাসদের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং এক সময় শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত সহচর সিরাজুল আলম খান। দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রথমা’ একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। নাম, ‘জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, প্রথমা প্রকাশন, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। পুস্তকের ৭৯ পৃষ্ঠায় সিরাজুল আলম খানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে,“ বঙ্গবন্ধুর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ের নেতা হলেন তাজউদ্দীন। জামায়াতে ইসলামী হলো পাকিস্তানী ফোর্স, আর আওয়ামী লীগ ছিল ‘অ্যান্টি লিবারেশন ফোর্স’। আওয়ামী লীগ তো ছয় দফা থেকে এক ইঞ্চিও আগে বাড়তে চায়নি। এদের সত্যিকার চেহারা জানতে পারলে মানুষ এদের গায়ে থুতু দেবে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাজউদ্দীনের নাম আসা উচিত এক নম্বরে। অথচ তিনিই হলেন এর প্রথম ক্যাজুয়ালটি।” প্রিয় পাঠক, এখানেও মন্তব্য নিষ্পোজন। কারণ এটি সরাসরি সিরাজুল আলম খানের মুখনি:সৃত উক্তি।
যারা কাঁচের ঘরে বাস করে, অন্যের ঘরে ঢিল ছোঁড়া তাদের মজ্জাগত স্বভাব। কিন্তু তারা জানে না যে অন্যেরা ঢিল ছুঁড়লে ওদের কাঁচের ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। এ কে খন্দকার নাকি মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধাই না হন তাহলে রেসকোর্স ময়দানে তিনি পাক সেনাদের আত্নসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেন কোন ক্যাপাসিটিতে? যদি মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে সেখানে খন্দকার সাহেবের উপস্থিতি না ঘটে থাকে তাহলে পাক বাহিনী কাদের কাছে সারেন্ডার করল? ‘মানবজমিনের’ সম্পাদক ‘চ্যানেল আইয়ের’ রাত ১২ টার সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, খন্দকার সাহেব মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার না হলে পাক বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে সারেন্ডার করেছে। কথাটি শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না।
আসিফ আরসালান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন