দেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ মাঝে-মধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় এসে থাকেন। সম্প্রতি আবারও এসেছেন। তাকে নিয়ে আলোচনা জমে ওঠার কারণ, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে ‘সঠিক’ ইতিহাস শেখানোর নামে একজন মাত্র নেতাকে প্রাধান্যে রাখার এবং সকল কৃতিত্ব কেবল তাকেই দেয়ার যে উদ্ভট কর্মকা- বহুদিন ধরে চলে আসছে অবসরপ্রাপ্ত এই জেনারেলও সে কর্মকা-ে নেমে পড়েছেন। পাঠকদের মনে পড়তে পারে, গত সপ্তাহের নিবন্ধে অতি সংক্ষেপে কে এম সফিউল্লাহ সম্পর্কে বলার পাশাপাশি জানিয়ে রেখেছিলাম, কেউ উল্লেখিত নেতার ব্যাপারে ব্যতিক্রম ঘটালে কিংবা তার সামান্য সমালোচনা করলেই তার পেছনে আওয়ামী ঘরানার লোকজন এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন যেন ওই ব্যক্তি কোনো মহা অপরাধ করে ফেলেছেন! দেশ ও জাতির জন্য যতো অবদানই রেখে থাকুন না কেন নেতার সমালোচনা বা বিরোধিতা করলে তার আর রেহাই নেই! এমন অবস্থারই শিকার হয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার ‘বীর উত্তম’- যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন। তার অন্য দু-একটি পরিচিতিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ব আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন তিনি। তারও আগে, উদ্দিন সাহেবদের আমলে মূলত তারই নেতৃত্বে জাতিকে বিভক্ত করার সুনির্দিষ্ট ভারতীয় এজেন্ডা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। দীর্ঘদিন এই ফোরামের সভাপতিও ছিলেন এ কে খন্দকার। ভারতপন্থী হিসেবেও বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তার। অর্থাৎ সব দিক থেকেই আওয়ামী ঘরানার একজন ‘খাস লোক’ তিনি। কিন্তু এতো কিছুতেও কোনো লাভ হয়নি। অমন একজন কৃতী পুরুষকেই ক’দিন আগে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকেই এ কে খন্দকারের নাম বাদ দেয়ার দাবি জানিয়ে বসেছেন। দাবিটির কারণ সম্পর্কে পাঠকরাও সম্ভবত এরই মধ্যে জেনে গেছেন। ‘১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে’ নামে লেখা গ্রন্থে এ কে খন্দকার নাকি অনেক ভুল ও মিথ্যে তথ্য দিয়ে সেই মহান নেতাকে ‘খাটো’ করার গুরুতর অপরাধ করে ফেলেছেন!
এ পর্যন্ত এসেই গত সপ্তাহে বলতে হয়েছিল, কে এম সফিউল্লাহ নিজে কত বড় ‘কীর্তিমান’ পুরুষ সেটাও অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে। এবারের নিবন্ধে একটি মাত্র ঐতিহাসিক ঘটনার- আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ এবং বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে সফিউল্লাহর ভূমিকার আলোকে তেমন পর্যালোচনারই চেষ্টা করা হবে। বিস্তারিত উল্লেখের আগে শুরুতে জানিয়ে রাখি, কে এম সফিউল্লাহকে নিয়ে প্রথম দফায় নিন্দা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ২০০৯ সালে। সেবার তাকে সর্বোচ্চ অদালতের তিরষ্কার শুনতে হয়েছিল। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, সে বছরের অক্টোবরে শেখ মুজিব হত্যা মামলার শুনানিতে আসামী পক্ষের আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেছিলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ তার সাক্ষ্যতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন, ওইদিন সকাল ছয়টা বাজার তিন-চার মিনিট আগে তিনি নাকি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। অথচ অন্য সাক্ষীরা জানিয়েছেন, সেদিন ভোর চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই সব ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। তাছাড়া সফিউল্লাহর সাক্ষ্যতেই জানা গেছে, আক্রান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে টেলিফোনে ফোর্স পাঠাতে বলেছিলেন। কিন্তু সেনাপ্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির প্রাণ বাঁচানোর জন্য সফিউল্লাহ সেনা পাঠাননি। এ পর্যায়ে এসেই মাননীয় বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, সফিউল্লাহ একজন কাপুরুষ, ভীতু এবং মিথ্যাবাদী সেনাপতি।
সেবার কথার পিঠে কথাও উঠেছিল। কারণ, সর্বোচ্চ আদালতই প্রথম নয়, তারও আগে খোদ আওয়ামী লীগ থেকেও সফিউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সকল সরকারের আমলে সুবিধাভোগকারী এই জেনারেলের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে আয়োজিত দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ‘নেপথ্য ভূমিকায়’ ছিলেন। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শেখ সেলিম বলেছিলেন, সেদিন আক্রান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার সফিউল্লাহকে টেলিফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু জবাবে সফিউল্লাহ দেশের রাষ্ট্রপতিকে তার বাসভবন থেকে ‘পালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন! উল্লেখ্য, দুটি অনুষ্ঠানের একটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সফিউল্লাহ নিজেও ছিলেন সামনের সারিতে। শেখ সেলিম বলেছিলেন, সেনা প্রধান হিসেবে সফিউল্লাহ কেন রাষ্ট্রপতির টেলিফোন পাওয়ার পরও ব্যবস্থা নেননি তা ‘রহস্যজনক’। তাছাড়া হত্যাকান্ডের পর ‘খুনিরা’ সেনানিবাসে গিয়েছিল। সেখানে রেড অ্যালার্ট জারি করেও ‘খুনিদের’ গ্রেফতার করা যেতো। কিন্তু সফিউল্লাহ উল্টো তাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছিলেন। রেডিওতে গিয়ে ‘খুনিদের’ প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এভাবে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়ার পর পুরোপুরি ডিফেন্সিভে চলে গিয়েছিলেন সফিউল্লাহ। পরদিন, ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট একটি দৈনিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ সেলিমের অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘তখনকার’ বাস্তবতা ‘এখনকার’ মতো ছিল না। রাষ্ট্রপতিকে হত্যার বিষয়ে তিনি নাকি কোনো তথ্যই জানতেন না! কারণ, ১৯৭৪ সালে ডিজিএফআইকে তার হাত থেকে সরিয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে নেয়া হয়েছিল এবং এর ফলে তিনি নাকি একেবারে ‘অন্ধ ও বধির’ হয়ে পড়েছিলেন! রাষ্ট্রপতিকে রক্ষার দায়িত্বও নাকি তার কাছ থেকে ‘ছিনিয়ে’ অন্য একটি বিশেষ অংশের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। সুতরাং হত্যাকান্ডে তার কোনো ‘ব্যর্থতা’ ছিল না! রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তার কাছে টেলিফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন- এই প্রচারণাকে ‘অসত্য’ দাবি করে তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি নন, তিনিই রাষ্ট্রপতিকে টেলিফোন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছিলেন, ‘সফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স বোধ হয় আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। ওরা সম্ভবত কামালকে (মুজিবপুত্র শেখ কামাল) মেরে ফেলেছে। তুমি দ্রুত ফোর্স পাঠাও।’ উত্তরে সফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আপনি কি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন?’ রাষ্ট্রপতি কোনো উত্তর দেননি, টেবিলের ওপর টেলিফোনের রিসিভার রেখে দিলে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দ পেয়েছিলেন সফিউল্লাহ। তারপর (‘দ্রুত’ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে) ‘বেশ কয়েক মিনিট’ তিনি ‘হ্যালো, হ্যালো’ করেছেন। কিন্তু জবাব পাননি। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু গুলীর শব্দ শুনেছিলেন। শুনে তার ‘মনে হয়েছিল’, রাষ্ট্রপতি হয়তো আর বেঁচে নেই। সফিউল্লাহ দাবি করেছিলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক কর্নেল সালাহউদ্দিনের মাধ্যমে তিনি হামলার প্রথম খবর পেয়েছিলেন। তার মাধ্যমেই তিনি ঢাকা ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে ধানমন্ডি যাওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু শাফায়াত জামিলের সেনারা নাকি ‘মুভ’ করেনি! এর মধ্যেই সফিউল্লাহ নাকি রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিল আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন রাষ্ট্রপতিকে তার বাসভবন থেকে বের করে নিয়ে যান। এখানে লক্ষ্য করা দরকার, সফিউল্লাহ নিজেই আবার বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে রক্ষার দায়িত্বও নাকি ‘অন্য একটি বিশেষ অংশের হাতে’ ন্যস্ত করা হয়েছিল! এটা সত্য হলে তিনি রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কোন অধিকারে?
রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ব্যাপারে সফিউল্লাহ ‘নিশ্চিত খবর’ পেয়েছিলেন সকাল আটটার দিকে। তিনি তখন তার অফিসে উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। এই দু’জনও নাকি তার টেলিফোনে দেয়া নির্দেশ পালন করেননি! ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য’ সফিউল্লাহ নাকি এরপর ৪৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে সেখানকার সৈন্যদের মধ্যে ‘আনন্দের আভা’ দেখতে পেয়েছিলেন! ততক্ষণে ওই সৈন্যরাও নাকি ‘খুনিদের’ সঙ্গে যোগ দিয়েছিল! সেখান থেকেই তাকে নাকি ‘চাপাচাপি’ করে রেডিও অফিসে নেয়া হয়েছিল! সেখানে আগে থেকে উপস্থিত নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ তাকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছিলেন এবং ‘কাজ শেষ হওয়ায় বিশ্রাম নিতে’ বলেছিলেন! প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি জড়িত না থাকলে ‘অভিনন্দন’ জানানোর, ‘কাজ শেষ’ হওয়ার এবং ‘বিশ্রাম’ নেয়ার ব্যাপার এসেছিল কিভাবে? কে এম সফিউল্লাহ তখন নাকি ‘বিরক্ত’ হয়ে রেডিও অফিস থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেজর ডালিম তার ‘পথরোধ’ করে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘বাধ্য হয়ে’ তাকে নাকি প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরের লিখে দেয়া বক্তব্য ‘পাঠ’ করতে হয়েছিল! মেজর ডালিমকে কেন গ্রেফতার করেননি- এ প্রশ্নের উত্তরে সফিউল্লাহ বলেছিলেন, পরিস্থিতি ‘কখনোই’ সে রকম ছিল না। তারা আমার সঙ্গে ‘অস্ত্র উঁচিয়ে’ কথা বলেছে! মেজর ডালিম নাকি সফিউল্লাহর অফিসের দরোজায় লাথি পর্যন্ত মেরেছিলেন! এরপর ২৪ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় এবং ‘বাধ্য হয়ে’ তিনি রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান!
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেক চেষ্টা করেও জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ কিন্তু নিজেকে ‘বাঁচাতে’ পারেননি। জনগণ বরং তার কাছ থেকেই জেনেছে, তিনি এমন ‘যোগ্য’ সেনাপ্রধানই ছিলেন যে, ‘খুনি’ মেজররা তার সঙ্গে ‘অস্ত্র উঁচিয়ে’ কথা বলার সাহস পেয়েছেন, তাকে ‘ধরে’ নিয়ে গেছেন রেডিও অফিসে এবং তাকে দিয়ে আনুগত্যের শপথ ‘পাঠ’ করিয়ে ছেড়েছেন! সফিউল্লাহ লক্ষ্য করেননি যে, এসবের প্রতিটিই ভারি লজ্জার কথা। তাছাড়া রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে ‘খুনিদের’ প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার পর সফিউল্লাহর জীবনে ‘শনৈ শনৈ’ উন্নতি হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত তিনি চুটিয়ে রাষ্ট্রদূতের চাকরি করেছেন। এজন্যই চেষ্টায় ত্রুটি না থাকলেও সাবেক এই সেনাপ্রধান দায়দায়িত্ব এড়ানোর মতো যুৎসই বক্তব্য হাজির করতে পারেননি। তার বক্তব্যে বরং প্রমাণিত হয়েছিল, হয় তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন; না হলে নিজের অধীনস্থদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এই সময়ের আগে পর্যন্ত শেখ মুজিব হত্যার দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে সাবেক এই জেনারেল নিজে ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে দিব্যি বহাল তবিয়তে ছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য পর্যন্ত বানিয়েছেন। কিন্তু শেখ সেলিমের মতো শীর্ষ একজন নেতা হঠাৎ হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়ায় এবং সর্বোচ্চ আদালত তার সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করায় প্রমাদ গুণতে হয়েছিল তাকে। তাকে এমনকি মুজিব হত্যা মামলায় আসামীর কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানোর দাবি উঠেছিল সে সময়। পাঠকরা ভেবে দেখতে পারেন, মাননীয় আদালত যাকে একজন ‘কাপুরুষ, ভীতু এবং মিথ্যাবাদী সেনাপতি’ বলেছেন তেমন কেউ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের মতো একজন ‘বীর উত্তম’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানোর যোগ্যতা রাখেন কি না? একই কথা অন্যদের সম্পর্কেও সমান সত্য, যারা সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের প্রধান নায়ক এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তমসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে চলেছেন, যারা একজন মাত্র নেতাকে প্রাধান্যে রাখার জন্য কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে পর্যন্ত ‘রাজাকার’ বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন, পেছনে র্যাব-পুলিশসহ সরকারের সমর্থন থাকায় অমন ধৃষ্টতা তারা দেখাতেই পারেন, পারেন যথেচ্ছভাবে মিথ্যাচার করতেও। কিন্তু করা ও বলাটাই সব নয়। ‘সঠিক’ ইতিহাস তো রয়েছেই, জনগণও সবকিছু ভুলে যায়নি! সুতরাং কাউকে কিছু বলার কিংবা জিয়াউর রহমান থেকে এ কে খন্দকার ও কাদের সিদ্দিকী পর্যন্ত দেশের কৃতীপুরুষদের সম্পর্কে কিছু বলার আগে দশবার অন্তত ভেবে দেখা এবং জিহবা সামাল দেয়া দরকার। চামচামোর পরিণতি কতটা লজ্জাকর হয় তার সর্বশেষ প্রমাণ তো এ কে খন্দকারই!
এ পর্যন্ত এসেই গত সপ্তাহে বলতে হয়েছিল, কে এম সফিউল্লাহ নিজে কত বড় ‘কীর্তিমান’ পুরুষ সেটাও অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে। এবারের নিবন্ধে একটি মাত্র ঐতিহাসিক ঘটনার- আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ এবং বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে সফিউল্লাহর ভূমিকার আলোকে তেমন পর্যালোচনারই চেষ্টা করা হবে। বিস্তারিত উল্লেখের আগে শুরুতে জানিয়ে রাখি, কে এম সফিউল্লাহকে নিয়ে প্রথম দফায় নিন্দা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ২০০৯ সালে। সেবার তাকে সর্বোচ্চ অদালতের তিরষ্কার শুনতে হয়েছিল। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, সে বছরের অক্টোবরে শেখ মুজিব হত্যা মামলার শুনানিতে আসামী পক্ষের আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেছিলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ তার সাক্ষ্যতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন, ওইদিন সকাল ছয়টা বাজার তিন-চার মিনিট আগে তিনি নাকি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। অথচ অন্য সাক্ষীরা জানিয়েছেন, সেদিন ভোর চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই সব ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। তাছাড়া সফিউল্লাহর সাক্ষ্যতেই জানা গেছে, আক্রান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে টেলিফোনে ফোর্স পাঠাতে বলেছিলেন। কিন্তু সেনাপ্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির প্রাণ বাঁচানোর জন্য সফিউল্লাহ সেনা পাঠাননি। এ পর্যায়ে এসেই মাননীয় বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, সফিউল্লাহ একজন কাপুরুষ, ভীতু এবং মিথ্যাবাদী সেনাপতি।
সেবার কথার পিঠে কথাও উঠেছিল। কারণ, সর্বোচ্চ আদালতই প্রথম নয়, তারও আগে খোদ আওয়ামী লীগ থেকেও সফিউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সকল সরকারের আমলে সুবিধাভোগকারী এই জেনারেলের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে আয়োজিত দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ‘নেপথ্য ভূমিকায়’ ছিলেন। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শেখ সেলিম বলেছিলেন, সেদিন আক্রান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার সফিউল্লাহকে টেলিফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু জবাবে সফিউল্লাহ দেশের রাষ্ট্রপতিকে তার বাসভবন থেকে ‘পালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন! উল্লেখ্য, দুটি অনুষ্ঠানের একটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সফিউল্লাহ নিজেও ছিলেন সামনের সারিতে। শেখ সেলিম বলেছিলেন, সেনা প্রধান হিসেবে সফিউল্লাহ কেন রাষ্ট্রপতির টেলিফোন পাওয়ার পরও ব্যবস্থা নেননি তা ‘রহস্যজনক’। তাছাড়া হত্যাকান্ডের পর ‘খুনিরা’ সেনানিবাসে গিয়েছিল। সেখানে রেড অ্যালার্ট জারি করেও ‘খুনিদের’ গ্রেফতার করা যেতো। কিন্তু সফিউল্লাহ উল্টো তাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছিলেন। রেডিওতে গিয়ে ‘খুনিদের’ প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এভাবে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়ার পর পুরোপুরি ডিফেন্সিভে চলে গিয়েছিলেন সফিউল্লাহ। পরদিন, ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট একটি দৈনিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ সেলিমের অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘তখনকার’ বাস্তবতা ‘এখনকার’ মতো ছিল না। রাষ্ট্রপতিকে হত্যার বিষয়ে তিনি নাকি কোনো তথ্যই জানতেন না! কারণ, ১৯৭৪ সালে ডিজিএফআইকে তার হাত থেকে সরিয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে নেয়া হয়েছিল এবং এর ফলে তিনি নাকি একেবারে ‘অন্ধ ও বধির’ হয়ে পড়েছিলেন! রাষ্ট্রপতিকে রক্ষার দায়িত্বও নাকি তার কাছ থেকে ‘ছিনিয়ে’ অন্য একটি বিশেষ অংশের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। সুতরাং হত্যাকান্ডে তার কোনো ‘ব্যর্থতা’ ছিল না! রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তার কাছে টেলিফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন- এই প্রচারণাকে ‘অসত্য’ দাবি করে তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি নন, তিনিই রাষ্ট্রপতিকে টেলিফোন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছিলেন, ‘সফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স বোধ হয় আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। ওরা সম্ভবত কামালকে (মুজিবপুত্র শেখ কামাল) মেরে ফেলেছে। তুমি দ্রুত ফোর্স পাঠাও।’ উত্তরে সফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আপনি কি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন?’ রাষ্ট্রপতি কোনো উত্তর দেননি, টেবিলের ওপর টেলিফোনের রিসিভার রেখে দিলে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দ পেয়েছিলেন সফিউল্লাহ। তারপর (‘দ্রুত’ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে) ‘বেশ কয়েক মিনিট’ তিনি ‘হ্যালো, হ্যালো’ করেছেন। কিন্তু জবাব পাননি। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু গুলীর শব্দ শুনেছিলেন। শুনে তার ‘মনে হয়েছিল’, রাষ্ট্রপতি হয়তো আর বেঁচে নেই। সফিউল্লাহ দাবি করেছিলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক কর্নেল সালাহউদ্দিনের মাধ্যমে তিনি হামলার প্রথম খবর পেয়েছিলেন। তার মাধ্যমেই তিনি ঢাকা ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে ধানমন্ডি যাওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু শাফায়াত জামিলের সেনারা নাকি ‘মুভ’ করেনি! এর মধ্যেই সফিউল্লাহ নাকি রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিল আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন রাষ্ট্রপতিকে তার বাসভবন থেকে বের করে নিয়ে যান। এখানে লক্ষ্য করা দরকার, সফিউল্লাহ নিজেই আবার বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে রক্ষার দায়িত্বও নাকি ‘অন্য একটি বিশেষ অংশের হাতে’ ন্যস্ত করা হয়েছিল! এটা সত্য হলে তিনি রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কোন অধিকারে?
রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ব্যাপারে সফিউল্লাহ ‘নিশ্চিত খবর’ পেয়েছিলেন সকাল আটটার দিকে। তিনি তখন তার অফিসে উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। এই দু’জনও নাকি তার টেলিফোনে দেয়া নির্দেশ পালন করেননি! ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য’ সফিউল্লাহ নাকি এরপর ৪৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে সেখানকার সৈন্যদের মধ্যে ‘আনন্দের আভা’ দেখতে পেয়েছিলেন! ততক্ষণে ওই সৈন্যরাও নাকি ‘খুনিদের’ সঙ্গে যোগ দিয়েছিল! সেখান থেকেই তাকে নাকি ‘চাপাচাপি’ করে রেডিও অফিসে নেয়া হয়েছিল! সেখানে আগে থেকে উপস্থিত নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ তাকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছিলেন এবং ‘কাজ শেষ হওয়ায় বিশ্রাম নিতে’ বলেছিলেন! প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি জড়িত না থাকলে ‘অভিনন্দন’ জানানোর, ‘কাজ শেষ’ হওয়ার এবং ‘বিশ্রাম’ নেয়ার ব্যাপার এসেছিল কিভাবে? কে এম সফিউল্লাহ তখন নাকি ‘বিরক্ত’ হয়ে রেডিও অফিস থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেজর ডালিম তার ‘পথরোধ’ করে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘বাধ্য হয়ে’ তাকে নাকি প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরের লিখে দেয়া বক্তব্য ‘পাঠ’ করতে হয়েছিল! মেজর ডালিমকে কেন গ্রেফতার করেননি- এ প্রশ্নের উত্তরে সফিউল্লাহ বলেছিলেন, পরিস্থিতি ‘কখনোই’ সে রকম ছিল না। তারা আমার সঙ্গে ‘অস্ত্র উঁচিয়ে’ কথা বলেছে! মেজর ডালিম নাকি সফিউল্লাহর অফিসের দরোজায় লাথি পর্যন্ত মেরেছিলেন! এরপর ২৪ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় এবং ‘বাধ্য হয়ে’ তিনি রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান!
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেক চেষ্টা করেও জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ কিন্তু নিজেকে ‘বাঁচাতে’ পারেননি। জনগণ বরং তার কাছ থেকেই জেনেছে, তিনি এমন ‘যোগ্য’ সেনাপ্রধানই ছিলেন যে, ‘খুনি’ মেজররা তার সঙ্গে ‘অস্ত্র উঁচিয়ে’ কথা বলার সাহস পেয়েছেন, তাকে ‘ধরে’ নিয়ে গেছেন রেডিও অফিসে এবং তাকে দিয়ে আনুগত্যের শপথ ‘পাঠ’ করিয়ে ছেড়েছেন! সফিউল্লাহ লক্ষ্য করেননি যে, এসবের প্রতিটিই ভারি লজ্জার কথা। তাছাড়া রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে ‘খুনিদের’ প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার পর সফিউল্লাহর জীবনে ‘শনৈ শনৈ’ উন্নতি হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত তিনি চুটিয়ে রাষ্ট্রদূতের চাকরি করেছেন। এজন্যই চেষ্টায় ত্রুটি না থাকলেও সাবেক এই সেনাপ্রধান দায়দায়িত্ব এড়ানোর মতো যুৎসই বক্তব্য হাজির করতে পারেননি। তার বক্তব্যে বরং প্রমাণিত হয়েছিল, হয় তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন; না হলে নিজের অধীনস্থদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এই সময়ের আগে পর্যন্ত শেখ মুজিব হত্যার দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে সাবেক এই জেনারেল নিজে ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে দিব্যি বহাল তবিয়তে ছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য পর্যন্ত বানিয়েছেন। কিন্তু শেখ সেলিমের মতো শীর্ষ একজন নেতা হঠাৎ হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়ায় এবং সর্বোচ্চ আদালত তার সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করায় প্রমাদ গুণতে হয়েছিল তাকে। তাকে এমনকি মুজিব হত্যা মামলায় আসামীর কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানোর দাবি উঠেছিল সে সময়। পাঠকরা ভেবে দেখতে পারেন, মাননীয় আদালত যাকে একজন ‘কাপুরুষ, ভীতু এবং মিথ্যাবাদী সেনাপতি’ বলেছেন তেমন কেউ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের মতো একজন ‘বীর উত্তম’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানোর যোগ্যতা রাখেন কি না? একই কথা অন্যদের সম্পর্কেও সমান সত্য, যারা সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের প্রধান নায়ক এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তমসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে চলেছেন, যারা একজন মাত্র নেতাকে প্রাধান্যে রাখার জন্য কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে পর্যন্ত ‘রাজাকার’ বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন, পেছনে র্যাব-পুলিশসহ সরকারের সমর্থন থাকায় অমন ধৃষ্টতা তারা দেখাতেই পারেন, পারেন যথেচ্ছভাবে মিথ্যাচার করতেও। কিন্তু করা ও বলাটাই সব নয়। ‘সঠিক’ ইতিহাস তো রয়েছেই, জনগণও সবকিছু ভুলে যায়নি! সুতরাং কাউকে কিছু বলার কিংবা জিয়াউর রহমান থেকে এ কে খন্দকার ও কাদের সিদ্দিকী পর্যন্ত দেশের কৃতীপুরুষদের সম্পর্কে কিছু বলার আগে দশবার অন্তত ভেবে দেখা এবং জিহবা সামাল দেয়া দরকার। চামচামোর পরিণতি কতটা লজ্জাকর হয় তার সর্বশেষ প্রমাণ তো এ কে খন্দকারই!
আহমদ আশিকুল হামিদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন