চারদিকে নানা ঘটনার ঘনঘটায় চমকাচ্ছে বাংলাদেশ। চমক কখনো আনন্দের; কখনো বেদনার। কখনো চমক আলোর এবং একই সঙ্গে আঁধারের।
আজ ৩ নবেম্বর। জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালে ঘটেছিল দিবসটি। সন্দেহ নেই, দিনটি বেদনার। নিন্দার। কিন্তু হত্যার রেশ কাটেনি এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ থেকে। বিরোধী রাজনীতিবিদরা হত্যার অভিযোগ তুলছেন এখনো। গতকালের পত্রিকায় দেখলাম বেগম জিয়া বলছেন, আমরা আন্দোলন করতে রাস্তায় নামলে পুলিশ কথায় কথায় গুলী চালায়। সরকারকে বলতে চাই, পুলিশকে দিয়ে অন্যায়ভাবে সরাসরি গুলী করা বন্ধ করুন; আন্দোলন দেখিয়ে দেবো। শান্তিপূর্ণ হরতালে আমাদের কোনো মিছিল করতে দেয়া না হলেও পুলিশি প্রহরায় সরকারের লোকজন হরতাল বিরোধী মিছিল করে। আপনারা বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। আরে, এরশাদকে তো আমরাই নামিয়েছিলাম। তখন তো আপনারা আঁতাত করে জাতীয় বেঈমান হয়েছিলেন। আপনারা বলেন, বিএনপির পায়ের তলায় মাটি নেই। আমাদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি আছে। নীলফামারীতে সেদিন দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, আজ নাটোরে দেখেন। পুলিশের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের কাছে জানতে চাই- মানুষের ওপর গুলী করা কি আপনাদের দায়িত্ব? আপনাদের সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আপনাদের বোঝা উচিত, আপনাদেরই মা-বোন-ভাই-আত্মীয়-স্বজন এ রকম বিপদে পড়তে পারে। মনে করবেন না, আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে। তারা আপনাদের চিরদিন নিরাপত্তা দেবে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাধা দিতে দেবেন না। খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশকে অপকর্ম করতে উৎসাহ দিচ্ছে কারা? সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি একটি জাতীয় দৈনিক দেখিয়ে বলেন, পুলিশ এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং করছে। আর এতে আওয়ামী লীগই তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাবকে অপকর্ম করতে কারা উৎসাহ দিচ্ছে? নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল সরকার, র্যাব ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন হর্তাকর্তা। এ ঘটনায় র্যাবের কয়েকজনকে লোক দেখানো আটক করা হয়েছে। তাদের এখন কারাগারে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সে ঘটনার বিচার হবে কিনা। আমরা বলতে চাই, র্যাবের মূল নেতা জিয়াকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মানুষ হত্যা করার জন্য র্যাব গঠন করা হয়নি। সারাদেশে তারা যেসব খুন-গুম করেছে তার বিচার করতে হবে। র্যাবকে বাতিল করতে হবে। বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে প্রকাশ্যে খুন করার প্রসঙ্গে টেনে নাটোরের জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আজ আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি। নাটোরে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বাবুকে প্রকাশ্যে রাজপথে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে। চার বছরেও তার কোনো বিচার হয়নি। এভাবে সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সরকার ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যাচার ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমীরে জামায়াত মতিউর রহমান নিজামীকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছে। তারা তাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে চায়। কিন্তু সরকারের দেশ ও জাতিসত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সচেতন জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা প্রিয় নেতাকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই ঘরে ফিরবে না। তিনি মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াতকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মহল থেকেও যা বলা হচ্ছে, সেটা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। মাওলানা নিজামীর পর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধেও একই রায় ঘোষিত হয়েছে। নিজের মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণার পর মীর কাসেম আলী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মিথ্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষীতে এ রায় হয়েছে। পুরো ঘটনা সাজানো, কালো আইন। শিগগির সত্যের জয় হবে। রায় ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। কথা বলার সময়ই পুলিশ তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে বাইরে নিয়ে যায়।
আরেক ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত শনিবার সারা দেশ অকস্মাৎ অন্ধকারে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব মিডিয়াতেও এসেছে খবরটি। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের দায় নেবে না ভারত। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রিড বিপর্যয়ে অন্ধকারে ডুবে গেল প্রায় গোটা বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর এমনকী হাসপাতালেও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হওয়ার পরে কোনও কোনও মহল থেকে এ জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা খবর প্রচার করা হয়। এর ফলে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিকেলে ভারতের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন্স) আর পি শাসমল সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আমাদের দিকে সব ঠিকঠাক রয়েছে। বাংলাদেশের সাব-স্টেশনে কোনও সমস্যার জেরে তারা বিদ্যুৎ নিতে পারেনি। বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্তা দাবি করেন, ভেড়ামারা উপজেলায় জাতীয় বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনে ফল্ট হওয়ার পরেই ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ লাইনের সংযোগস্থলে এই ফল্টটি হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-লাইনে কোনও বিপর্যয়ের কারণেই সব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বন্ধ হয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, জাতীয় গ্রিড ফেল করেছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ চ্যানেলে। কোনও কোনও মহল প্রচার করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের মানুষ সঙ্কটে পড়েছে। তবে বিকেলের দিকে সরকারি ভাবে ঢাকা জানায়, নিজেদের সমস্যাতেই এই দুর্ভোগ। বেশি রাতের দিকে ঢাকার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ আসে। তবে মধ্যরাতেও বহু এলাকাই অন্ধকারে ডুবে থাকতে দেখা যায়। এ দিন রাজশাহির নাটোরে বিরোধী বিএনপি-র নেত্রী খালেদা জিয়া বহু দিন পরে জনসভা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এই সভার টেলিভিশন সম্প্রচার আটকাতেই সরকার দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এরই মাঝে ৬৭ বছর বয়সী রেলমন্ত্রী ২৯ বছরী কন্যাকে রেলে নয়, গাড়িতে চড়ে বিয়ে করেছেন। কিন্তু রেলের হাল-হকিকত সম্পর্কে অন্য আরেক খবরে প্রকাশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে শুধুমাত্র যাত্রী আর মালামালই পরিবহন করে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাদের পরিবহনের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাদকও। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা বি-বাড়িয়া থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রেলপথটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওপারের বিভিন্ন মাদক রেলের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। নিরাপদে মাদক পরিবহনের কাজটি করছে রেলওয়ের একটি চক্র। তাদের সাথে জড়িয়ে আছে রেলওয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ‘গবর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ’-জিআরপি। মাদক পরিবহনের কাজটি দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি চলে। আন্তঃনগর ট্রেন কি আর লোকাল কোনটাই বাদ পড়ছে না এ থেকে। তবে রাতের বেলার ট্রেনগুলোতেই মাদক পরিবহনের কাজটি বেশি করে থাকে সরকারি মালিকানা ও সরকার কর্তৃক পরিচালিত দেশের কথিত মুখ্য পরিবহন সংস্থার দাবিদার বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলের বস্তা বস্তা টাকার কেলেঙ্কারীর পর ‘কালো বিড়াল’ নিয়ে কথা হয়। এখন কি নিয়ে কথা হবে?
বস্তুত বাংলাদেশের মতো এতো বিচিত্র বিষয় বিশ্বের অন্যত্র ঘটছে কি-না, কে জানে? হত্যা, ফাঁসি, হাসি, বিয়ে, অন্ধকার, চোরাচালান, ষড়যন্ত্র একাকার হয়ে আছে এখানে। হাজার বছর আগে, এজন্যই কি এদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেলুকাসকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছিল, ‘কি বিচিত্র এই দেশ!’
আজ ৩ নবেম্বর। জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালে ঘটেছিল দিবসটি। সন্দেহ নেই, দিনটি বেদনার। নিন্দার। কিন্তু হত্যার রেশ কাটেনি এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ থেকে। বিরোধী রাজনীতিবিদরা হত্যার অভিযোগ তুলছেন এখনো। গতকালের পত্রিকায় দেখলাম বেগম জিয়া বলছেন, আমরা আন্দোলন করতে রাস্তায় নামলে পুলিশ কথায় কথায় গুলী চালায়। সরকারকে বলতে চাই, পুলিশকে দিয়ে অন্যায়ভাবে সরাসরি গুলী করা বন্ধ করুন; আন্দোলন দেখিয়ে দেবো। শান্তিপূর্ণ হরতালে আমাদের কোনো মিছিল করতে দেয়া না হলেও পুলিশি প্রহরায় সরকারের লোকজন হরতাল বিরোধী মিছিল করে। আপনারা বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। আরে, এরশাদকে তো আমরাই নামিয়েছিলাম। তখন তো আপনারা আঁতাত করে জাতীয় বেঈমান হয়েছিলেন। আপনারা বলেন, বিএনপির পায়ের তলায় মাটি নেই। আমাদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি আছে। নীলফামারীতে সেদিন দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, আজ নাটোরে দেখেন। পুলিশের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের কাছে জানতে চাই- মানুষের ওপর গুলী করা কি আপনাদের দায়িত্ব? আপনাদের সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আপনাদের বোঝা উচিত, আপনাদেরই মা-বোন-ভাই-আত্মীয়-স্বজন এ রকম বিপদে পড়তে পারে। মনে করবেন না, আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে। তারা আপনাদের চিরদিন নিরাপত্তা দেবে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাধা দিতে দেবেন না। খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশকে অপকর্ম করতে উৎসাহ দিচ্ছে কারা? সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি একটি জাতীয় দৈনিক দেখিয়ে বলেন, পুলিশ এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং করছে। আর এতে আওয়ামী লীগই তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাবকে অপকর্ম করতে কারা উৎসাহ দিচ্ছে? নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল সরকার, র্যাব ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন হর্তাকর্তা। এ ঘটনায় র্যাবের কয়েকজনকে লোক দেখানো আটক করা হয়েছে। তাদের এখন কারাগারে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সে ঘটনার বিচার হবে কিনা। আমরা বলতে চাই, র্যাবের মূল নেতা জিয়াকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মানুষ হত্যা করার জন্য র্যাব গঠন করা হয়নি। সারাদেশে তারা যেসব খুন-গুম করেছে তার বিচার করতে হবে। র্যাবকে বাতিল করতে হবে। বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে প্রকাশ্যে খুন করার প্রসঙ্গে টেনে নাটোরের জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আজ আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি। নাটোরে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বাবুকে প্রকাশ্যে রাজপথে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে। চার বছরেও তার কোনো বিচার হয়নি। এভাবে সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সরকার ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যাচার ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমীরে জামায়াত মতিউর রহমান নিজামীকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছে। তারা তাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে চায়। কিন্তু সরকারের দেশ ও জাতিসত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সচেতন জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা প্রিয় নেতাকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই ঘরে ফিরবে না। তিনি মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াতকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মহল থেকেও যা বলা হচ্ছে, সেটা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। মাওলানা নিজামীর পর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধেও একই রায় ঘোষিত হয়েছে। নিজের মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণার পর মীর কাসেম আলী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মিথ্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষীতে এ রায় হয়েছে। পুরো ঘটনা সাজানো, কালো আইন। শিগগির সত্যের জয় হবে। রায় ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। কথা বলার সময়ই পুলিশ তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে বাইরে নিয়ে যায়।
আরেক ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত শনিবার সারা দেশ অকস্মাৎ অন্ধকারে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব মিডিয়াতেও এসেছে খবরটি। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের দায় নেবে না ভারত। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রিড বিপর্যয়ে অন্ধকারে ডুবে গেল প্রায় গোটা বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর এমনকী হাসপাতালেও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হওয়ার পরে কোনও কোনও মহল থেকে এ জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা খবর প্রচার করা হয়। এর ফলে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিকেলে ভারতের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন্স) আর পি শাসমল সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আমাদের দিকে সব ঠিকঠাক রয়েছে। বাংলাদেশের সাব-স্টেশনে কোনও সমস্যার জেরে তারা বিদ্যুৎ নিতে পারেনি। বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্তা দাবি করেন, ভেড়ামারা উপজেলায় জাতীয় বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনে ফল্ট হওয়ার পরেই ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ লাইনের সংযোগস্থলে এই ফল্টটি হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-লাইনে কোনও বিপর্যয়ের কারণেই সব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বন্ধ হয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, জাতীয় গ্রিড ফেল করেছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ চ্যানেলে। কোনও কোনও মহল প্রচার করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের মানুষ সঙ্কটে পড়েছে। তবে বিকেলের দিকে সরকারি ভাবে ঢাকা জানায়, নিজেদের সমস্যাতেই এই দুর্ভোগ। বেশি রাতের দিকে ঢাকার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ আসে। তবে মধ্যরাতেও বহু এলাকাই অন্ধকারে ডুবে থাকতে দেখা যায়। এ দিন রাজশাহির নাটোরে বিরোধী বিএনপি-র নেত্রী খালেদা জিয়া বহু দিন পরে জনসভা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এই সভার টেলিভিশন সম্প্রচার আটকাতেই সরকার দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এরই মাঝে ৬৭ বছর বয়সী রেলমন্ত্রী ২৯ বছরী কন্যাকে রেলে নয়, গাড়িতে চড়ে বিয়ে করেছেন। কিন্তু রেলের হাল-হকিকত সম্পর্কে অন্য আরেক খবরে প্রকাশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে শুধুমাত্র যাত্রী আর মালামালই পরিবহন করে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাদের পরিবহনের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাদকও। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা বি-বাড়িয়া থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রেলপথটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওপারের বিভিন্ন মাদক রেলের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। নিরাপদে মাদক পরিবহনের কাজটি করছে রেলওয়ের একটি চক্র। তাদের সাথে জড়িয়ে আছে রেলওয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ‘গবর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ’-জিআরপি। মাদক পরিবহনের কাজটি দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি চলে। আন্তঃনগর ট্রেন কি আর লোকাল কোনটাই বাদ পড়ছে না এ থেকে। তবে রাতের বেলার ট্রেনগুলোতেই মাদক পরিবহনের কাজটি বেশি করে থাকে সরকারি মালিকানা ও সরকার কর্তৃক পরিচালিত দেশের কথিত মুখ্য পরিবহন সংস্থার দাবিদার বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলের বস্তা বস্তা টাকার কেলেঙ্কারীর পর ‘কালো বিড়াল’ নিয়ে কথা হয়। এখন কি নিয়ে কথা হবে?
বস্তুত বাংলাদেশের মতো এতো বিচিত্র বিষয় বিশ্বের অন্যত্র ঘটছে কি-না, কে জানে? হত্যা, ফাঁসি, হাসি, বিয়ে, অন্ধকার, চোরাচালান, ষড়যন্ত্র একাকার হয়ে আছে এখানে। হাজার বছর আগে, এজন্যই কি এদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেলুকাসকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছিল, ‘কি বিচিত্র এই দেশ!’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন