ইতিহাস হলো নানা তথ্যের সমাহার। এটি যুগ যুগ ধরে সব সময় সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণদেরকে শিক্ষা নিতে প্রেরণা জোগায়। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের একটি হচ্ছে পলাশীর যুদ্ধ। কিন্তু আমরা আজ পলাশীর যুদ্ধের বেদনাদায়ক ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছি জন্ম দিবস আর মৃত্যু দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে আগামী দিনের দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বাহির হচ্ছেন, তারা পলাশীর ইতিহাস কতটুকু জানেন এটাই প্রশ্ন? আমরা কষ্ট করে দিন রাত পরিশ্রম করে পড়াশুনা করে জাতির কল্যাণে যাহা কিছু লেখি তা পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় বিচার বিষেøষণ করে প্রকাশের ব্যবস্থা করে থাকেন। একটি আর্টিকেল লিখতে যে পরিমাণে শ্রম ও মেধা ব্যয় হয় সে তুলনায় পত্রিকার কলাম পড়ার পাঠকের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। তারপরেও দেশ ও জাতির কল্যাণে ইতিহাসের ঘটে যাওয়া অজানা কথা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরবো।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক দিন। এ বেদনা কেবল পরাজয়ের বেদনা বললে ভুল হবে। আজ থেকে ২৫৮ বছর আগে উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে নতুন সূত্রপাত হয়েছিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসন শোষণের সুদীর্ঘ ইতিহাস। পলাশী থেকে বাংলাদেশ যোজন যোজন মাইল দূরে হলেও পলাশীর বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো নিয়ে লিখলে মনে দাগ কাটে। প্রায় দু’শ বছরের জিল্লতি ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল বাংলার জনগণ। পলাশীর পরাজয় কেবল একজন নবাবের পরাজয় মনে করার সুযোগ নেই, সে পরাজয় ছিল গোটা উপমহাদেশের মসুলিম মানুষের পরাজয়। ইংরেজ বাহিনী জয়ী হওয়ার সাথে সাথে যে নিষ্ঠুর হত্যালীলা চালিয়েছিল ইতিহাসে তার নজির পাওয়া খুবই কঠিন। ভারত বিখ্যাত কবি গালিব সেই সময় দিল্লীতে ছিলেন। তিনি লিখেছেন : রক্তের সমুদ্র দেখেছি, আল্লাহ আর কত দিন দেখাবেন কে জানে! নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের সাথে সাথে পতন হয়েছিল আমাদের ভাগ্যের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার। আমাদের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভীষিকাময় ইতিহাস।
পলাশীর পিছনের ইতিহাস : নবাব আলীবর্দী খান ১৭৫৬ সালের ৯ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। তার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। তাই তাঁর প্রাণপ্রিয় নাতি সিরাজ-উদ-দৌলাকেই সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। সিরাজের পিতার নাম জয়নুদ্দিন আহমাদ। তিনি ছিলেন বিহারের গভর্ণর। তাঁর মায়ের নাম আমিনা। নবাব সিরাজের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূণ অধ্যায়। আধুনিক ইতিহাসের মিথ্যা দুর্নামের আসরে তার ভুমিকা অতীব বেদনাদায়ক। নবাব আলীবর্দী খান তার নবাবী আমলের (১৭৪০-১৭৫৬) শেষ দিকে আহমদ শাহ আবদালীর ভারত আক্রমনের সম্ভাবনার কারণে বীরোচিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ক্ষুব্ধ করতে চাননি বলেই তিনি ইংরেজ বেনিয়াদের অনেক অযৌক্তিক দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে ২৩ বছর বয়সে সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে আসীন হয়েছিলেন। মাত্র ১ বছর ২ মাস ৭ দিন তিনি বাংলার নবাব ছিলেন। সিরাজের সিংহাসন লাভের পরেই নবাবকে অযোগ্য মনে করে ইংরেজরা দুঃসাহসের সঙ্গে কলকাতার ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরি করতে শুরু করে। ইংরেজরা জানতো সারা ভারতের মস্তিষ্ক হচ্ছে বাংলা- তাই কলকাতাতেই ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে লাগলো। সিরাজ সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ পাঠালেন যে, দুর্গ তৈরি বন্ধ করো এবং তৈরি অংশ ভেঙ্গে ফেলা নবাবের আদেশ। ইংরেজরা নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে দুর্গের কাজ অব্যাহত রাখে। অর্থ আত্মসাৎকারী রাজবল্লভকে নবাব যখন তলব করেন তখন রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ আদায়কৃত রাজস্ব ও অবৈধভাবে অর্জিত যাবতীয় ধন সম্পদসহ গঙ্গা স্নানের ভান করে পালিয়ে গিয়ে ১৭৫৬ সালে কোলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয় গ্রহণ করে। সিরাজ-উদ-দৌলা ধন সম্পদসহ পলাতক কৃষ্ণবল্লভকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কোলকাতার গভর্ণর ড্রেককে আদেশ করেন। হিন্দুপ্রধান মাহতাব চাঁদ প্রমুখ অন্যান্য হিন্দু বণিক ও বেনিয়াদের পরামর্শে ড্রেক নবাবের আদেশ পালন করতে অস্বীকার করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের আরো বহু আইনসম্মত নির্দেশ অমান্য করতে কুন্ঠাবোধ করেনি। তারা দেশের প্রতিরক্ষা আইন অমান্য করে কোলকাতায় একটি ষড়যন্ত্রের সুদৃঢ় দুর্গ গড়ে তোলে। এ ছাড়া তারা ব্যবসায় চুক্তি ভঙ্গ করে অসদুপায় অবলম্বন করে রাষ্ট্রের কর ফাঁকি দিয়ে আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। নবাব উপলব্ধি করলেন ইংরেজ বেনিয়াদের আর এদেশে থাকার অনুমতি দেয়া যেতে পারে না। হুগলির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী খাজা ওয়াজেদকে দেয়া পত্র থেকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৭৫৬ সালের ৩ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কাশিম বাজারস্থ ইংরেজদের কারখানা দখল করে একটা মীমাংসায় উপনীত হবার জন্য কোম্পানিকে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে একটা শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় আসার জন্য কয়েকবার পত্র লিখেন। কিন্তু ইংরেজরা শান্তির পথকে উপহাস করে উল্টো যুদ্ধের পথ বেছে নেয়।
কি ঘটেছিল পলাশীতে : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০-৩০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত ভাগিরথীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে অসম যুদ্ধে বিপুল সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিল মাত্র আধাঘন্টা সময়ের ব্যবধানে। নবাবের ছিল প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য ও ৫০টি কামান। ইংরেজদের ছিল মাত্র ১১০০ ইউরোপীয় ২৩০০ দেশী সিপাহী এবং কয়েকটি হালকা কামান। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অনুসারে মীর জাফর, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ প্রমুখ সেনা নায়ক অধিকাংশ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকেন নিষ্ক্রিয়। শুধু মীরমদন, মোহন লাল ও ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রে যুদ্ধ করেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার হাজারো সৈন্যের বিশাল কামান থাকা সত্ত্বেও তা ছিল নিষ্ক্রিয়। মীর মদন, মোহন লাল ও সীনফ্রের অধীনে মুষ্টিমেয় সৈন্য ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েও ইংরেজ বাহিনীকে অপসারণে বাধ্য করেছিল। সিরাজের বিজয় সুনিশ্চিত হওয়ার মুহূর্তেই বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন শহীদ হন। মোহন লালের একক প্রচেষ্টায় যুদ্ধের গতি সিরাজের অনুকূলে রাখা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত মীরজাফরের সর্বনাশা সিদ্ধান্তে পরাজিত হয় নবাব সিরাজের বাহিনী। সময়ের ব্যবধানে নানা পরিবর্তন ঘটলেও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে আজও পলাশী প্রাসঙ্গিক। সিংহকে বলা হয় বনের রাজা। বনের সব প্রাণী তার ভয়ে সব সময় আতংকে থাকে। একটি মাত্র সিংহের তাড়ায় একপাল মহিষও প্রাণ নিয়ে পালাতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সংঘবদ্ধ শক্তি যে কী জিনিস সেটা মাঝে মাঝে বনের রাজা সিংহও টের পায় সংঘবদ্ধ মহিষের তাড়া খেয়ে। নবাব সিরাজের বিশাল বাহিনী ছিলো কিন্তু সংঘবদ্ধ ছিল না বলেই পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। লড ক্লাইভের বাহিনীরা জাহাজ বোঝাই করে যখন মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন নদীর দু’ধারের উৎসুক জনতা বলাবলি করল রাজায় রাজায় যুদ্ধ বাঁধছে।
ইতিহাস নির্মম সত্যের ধারক। এ কথা বুঝার জন্য আইনস্টাইন রুশ কিংবা প্লেটো হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিহাসের চলমান চাকার তলে পিষ্ট হয়েছে কত জালেমশাহী অত্যাচারী রাজা-মহারাজা তার ইতিহাস একটু পড়লেই সহজে তা অনুধাবন করা যায়। যারা ক্ষমতার সিঁড়িকে স্বৈরশাসকের পাকাপোক্ত সিঁড়ি বানিয়েছিলেন তারাও চাওয়া পাওয়ার এই পৃথিবী থেকে বেইজ্জতির সাথে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সুতরাং এ কথাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না আজ আমার কাল তোমার। সেজন্যে বোধ হয় মহামতি আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকাসকে বলেছিলেন- বড়ই বিচিত্র এই দেশ! তাই না সেলুকাস? আজকের এই দিনে ক্ষমতায় থাকার জন্য এক সময়ের চিরশত্রুও বন্ধু হয়ে যায়। আর যাদের সাথে ছিল সখ্যতা ক্ষমতায় টিকে থাকার দ্বন্দ্বে তাদের সাথে করা হচ্ছে শত্রুতা। রাজনীতির কুটচালের এ দৃশ্য দেখলে নিশ্চয়ই আলেকজান্ডার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়তেন।
বিশ্বাসঘাতকদের ভুমিকা : পলাশীর যুদ্ধের নির্মমতার এ ইতিহাস ভোলার নয়। এ যুদ্ধের পরাজয়ের সাথে অবধারিতভাবে যে কজন ব্যক্তির নাম জড়িত, তাদের মধ্যে মীর জাফর অন্যতম। মীর জাফর নামটি উচ্চারণের সাথে সাথে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলের চোখে ঘৃণার সাথে জেগে উঠে এক চরম বিশ্বাসঘাতকের প্রতিচ্ছবি। আবু জেহেল, আবু লাহাব, উৎবা, শায়বার মতো মীর জাফরের নাম শুনলে থুথু নিক্ষেপ করতে ইচ্ছে করে। বাংলার সিপাহসালার হয়েও নিজ স্বার্থে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতাকে ইংরেজদের কাছে বিকিয়ে দিয়ে মীর জাফর বিশ্বের ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার করুণ পরাজয়ের জন্য মীর জাফরের দায়িত্বহীনতাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। মীর জাফর, ঘসেটি বেগম, শওকত জঙ্গ, রাজ বল্লভ প্রমুখের চক্রান্ত শয়তানকেও হার মানিয়েছিল। কোলকাতার শাসনভার নবাব পরম বিশ্বাসে যে মানিক চাঁদের উপর অর্পণ করেছিলেন সে মানিক চাঁদ বিশ্বাস ভঙ্গ করে কোলকাতা ও হুগলী ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। ১৫ ডিসেম্বর ১৭৫৬ ক্লাইভ কোলকাতায় পৌঁছে মানিক চাঁদকে গাদ্দারির জন্য ধন্যবাদ প্রদান করেন। এ ষড়যন্ত্রে যারা সহযোগিতা করেছিল তারা কারা? তারা বিদেশী নয়, তারা স্বজাতীয় নবাবের বিশ্বাসভাজন লোক ছিলেন। বাংলার বিরুদ্ধে বাঙালীর এর চেয়ে অধিকতর বিশ্বাসঘাতকতা আর কি হতে পারে? উপমহাদেশের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের চেয়ে বেশি রক্তপাত ঘটেছে বহু যুদ্ধেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। আমরা যদি ফলাফল দিয়ে বিবেচনা করি তাহলে পলাশীর যুদ্ধকে তরাইন বা পানিপথের যুদ্ধের সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে পারি। তরাইনের যুদ্ধের ফলে উপমহাদেশে যেমন ইসলামী সালতানাতের অভ্যুদয় ঘটেছিল কিংবা পানি পথের যুদ্ধের ফলে সূচিত হয়েছিল মুঘল শাসন ও সভ্যতার সূত্রপাত। তেমনিভাবে পলাশীর যুদ্ধ দ্বারা উপমহাদেশে উন্মুক্ত হয়েছিল ব্রিটিশ বেনিয়া ইংরেজ শাসনের দ্বার। হিন্দু মহাজনের অর্থ আর ইংরেজ সেনাপতির তরবারি নিয়ে আসে বাংলার মুসলমান রাজত্বের বিপর্যয়। পরবর্তীকালে উপমহাদেশে প্রায় দুই শতাব্দীর পরাধীনতা, ব্রিটিশ শাসনের সম্প্রসারণ, শোষণ এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার বিকাশ সবই সম্ভব হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের ফলে। সেজন্য ইতিহাসের চিন্তাশীল পাঠকের নিকট পলাশীর বেদনাদায়ক ইতিহাসের পাঠ এতো বেশি অর্থবহ।
বিশ্বাসঘাতকদের করুণ পরিণতি : ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে মানুষ কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করে না। নিউটন আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমমুখী ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা শুধুমাত্র যে বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, পরাষ্ট্রনীতি এবং বিচারনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে এর সমান প্রতিক্রিয়া। তা না হলে পৃথিবীর স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বিশ্বাসঘাতকদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি কেন হবে? প্রকৃতির অমোঘ বিধান অমান্য করে যারাই অন্যায়ভাবে মানুষের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চালিয়ে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, ক্ষমতার রঙিন চশমা পড়ে সময়ের ব্যবধানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে কঠিনভাবে শায়েস্তা করেছেন। শুধু পলাশী বললে ভুল হবে যারাই ষড়যন্ত্রের ফাঁদ অন্যের জন্য তৈরি করেছেন, তারাই উল্টো সেই ফাঁদে পড়েছেন। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে তাদের জীবনের অবসান হয়েছে মর্মান্তিক পরিণতির মধ্য দিয়ে। সবার ভাগ্যে জুটেছিল কোনো না কোনো ভয়াবহ পরিণতি। ইতিহাসের পাতায় আজোও ঘৃণার অক্ষরে লিপিবব্ধ রয়েছে সেসব বিশ্বাসঘাতকদের নাম। তাদেরই একজন ছিলেন মীর মীরন। সে পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক। মীর জাফরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার মৃত্যু হয়েছিল বিনা মেঘে বজ্রাঘাতে। তবে কেউ কেউ বলছেন মিরনকে আততায়ী দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। মুহাম্মদীবেগের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি কেবল তার কাছে দু’রাকাত নামায পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদীবেগের পাষাণ হৃদয় নবাব সিরাজকে দুরাকাত নামায পড়ারও সুযোগ দেয়নি। নামায শেষ করার আগেই নবাবের পিঠের উপর তরবারি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলো বিশ্বাসঘাতক। ইতিহাস স্বাক্ষী এই নরাধম অবশেষে বিনা কারণে কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। মীরজাফরের মৃত্যু হয় আরো মর্মান্তিকভাবে। দুরারোগ্য কুষ্ঠব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মত্যৃ হয় তার। রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন নবাব সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম খলনায়ক। তার মৃত্যুর স্থান ছিল বাথরুমে। নিজের হাতের ক্ষুর দিয়ে সে নরাধম আত্মহত্যা করেছিল।
পলাশীর শিক্ষা ও আমাদের করণীয় : দেশের বিরাজমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই বললেই চলে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশের আকাশে বাতাসে মিশে রয়েছে মীরজাফর, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, মানিক চাঁদের প্রেতাত্মারা। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলছে। মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে সিকি শতাব্দী ধরে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা জনগণের মুখে নেই। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের খবর কয়েকদিন দেখলে ও পড়লে যে কেউ ভাববে উজবেকিস্তান তো বেশ সুশাসিত একটি দেশ। সে দেশের মানুষ কী সুখেই না আছে! তবে দেশবাসী যেমনই থাক, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট করিমভ ও তার পরিবারের সদস্যরা সবকিছুর উর্ধ্বে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের শাসক পরিবারের ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের খবর সম্প্রতি বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। উজবেকিস্তানের সুশাসন আর আমাদের রাষ্ট্রীয় সুশাসনের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু তা বিবেচনার ভার আপনাদের কাছে ছেড়ে দিলাম। সরকার দলীয় রাজনীতির কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রতিহিংসা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে গোটা দেশের জনগণ আশার আলো দেখতে ভুলে যেতে বসেছে। জননিরাপত্তা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপার সম্ভাবনাময় দেশটিকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেয়ার প্রয়াসে দেশের জনগণকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আর বিরোধী শক্তি বলে প্রতিহিংসার রাজনীতির বীজ বপন করা হচ্ছে। পাঠকদের একটু আমাদের মানচিত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই। আমি বা আপনারা যারাই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মানচিত্র আকঁতে চাই। তারা কি পারবো দুটো মানচিত্র আকঁতে? যেটি হবে একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরটি বিপক্ষের। আমরা লক্ষ্য করেছি ধর্মীয় মূল্যবোধকে নিরুৎসাহিত করার ফলে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা হরমেশাই ঘটছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিনপাত করছে। কার্যত দেশ আজ বড় ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
পলাশীর পরের ইতিহাস আরো নির্মম : এ ইতিহাস শোষণ, নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের। ১৭৭৬ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলার এক তৃতীয়াংশ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। দুর্ভিক্ষ যখন চরমে পৌঁছে তখন পূর্বের বছরের তুলনায় ছয় লাখ টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা হয় এবং বাংলা বিহার থেকে পরবর্তী বছর অতিরিক্ত চৌদ্দ লাখ টাকা আদায় করা হয়। মানবতার প্রতি এর চেয়ে অধিক নির্মমতা ও পৈশাচিকতা আর কি হতে পারে? ঐতিহাসিকরা মোটামুটি হিসাব করে বলছেন ১৭৫৭ থেকে ১৭৮০ সাল পর্যন্ত মাত্র তেইশ বছরে বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে চালান হয়ে গেছে প্রায় তিন কোটি আশি লাখ পাউন্ড অর্থাৎ সমকালীন মূল্যের ষাট কোটি টাকা। বেদনাবিধূর নির্মম পলাশী থেকে আমাদেরকে দেশ গড়ার শিক্ষা নিতে হবে। জাতীয় অনৈক্য ও জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা কখনও জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। পলাশী আমাদের শত্রু মিত্র চিনতে শিখায়। পলাশী চোখে আঙ্গুল দিয়ে গাদ্দারদের ব্যাপারে সাবধান হতে শিক্ষা দেয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্যনীতি কেমন হওয়া উচিত তাও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থি বাণিজ্যচুক্তি সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। নবাব সিরাজ পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত ও নিহত কেন হলেন? তাঁর অযোগ্যতাই কি পরাজয়ের কারণ? সে প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, পলাশীর যুদ্ধ কোনো যুদ্ধই ছিল না। এটা ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা মাত্র। আসলে যাদের তিনি বিশ্বাস করতেন, সেই উমিচাঁদ, সেনাপতি রায়দুর্লভ, প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, দেওয়ান রামচাঁদ, মুন্সী নবকৃষ্ণ আর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ ধনী জগৎশেঠ এরাই ছিলেন সিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রকাশ্য শত্রুর দ্বারা যত ক্ষতি হয় বন্ধু শত্রু হলে তা হয় আরও মারাত্মক। পলাশী যুদ্ধে এই সত্যই দারুণভাবে প্রমাণিত। ইতিহাসের মূল প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্লেষণে যেসব বিষয় পরিলক্ষিত হয় তা থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে একালেও বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয়। আমরা আর পলাশীর মতো নৃশংসতার ইতিহাস দেখতে চাই না।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক দিন। এ বেদনা কেবল পরাজয়ের বেদনা বললে ভুল হবে। আজ থেকে ২৫৮ বছর আগে উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে নতুন সূত্রপাত হয়েছিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসন শোষণের সুদীর্ঘ ইতিহাস। পলাশী থেকে বাংলাদেশ যোজন যোজন মাইল দূরে হলেও পলাশীর বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো নিয়ে লিখলে মনে দাগ কাটে। প্রায় দু’শ বছরের জিল্লতি ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল বাংলার জনগণ। পলাশীর পরাজয় কেবল একজন নবাবের পরাজয় মনে করার সুযোগ নেই, সে পরাজয় ছিল গোটা উপমহাদেশের মসুলিম মানুষের পরাজয়। ইংরেজ বাহিনী জয়ী হওয়ার সাথে সাথে যে নিষ্ঠুর হত্যালীলা চালিয়েছিল ইতিহাসে তার নজির পাওয়া খুবই কঠিন। ভারত বিখ্যাত কবি গালিব সেই সময় দিল্লীতে ছিলেন। তিনি লিখেছেন : রক্তের সমুদ্র দেখেছি, আল্লাহ আর কত দিন দেখাবেন কে জানে! নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের সাথে সাথে পতন হয়েছিল আমাদের ভাগ্যের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার। আমাদের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভীষিকাময় ইতিহাস।
পলাশীর পিছনের ইতিহাস : নবাব আলীবর্দী খান ১৭৫৬ সালের ৯ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। তার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। তাই তাঁর প্রাণপ্রিয় নাতি সিরাজ-উদ-দৌলাকেই সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। সিরাজের পিতার নাম জয়নুদ্দিন আহমাদ। তিনি ছিলেন বিহারের গভর্ণর। তাঁর মায়ের নাম আমিনা। নবাব সিরাজের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূণ অধ্যায়। আধুনিক ইতিহাসের মিথ্যা দুর্নামের আসরে তার ভুমিকা অতীব বেদনাদায়ক। নবাব আলীবর্দী খান তার নবাবী আমলের (১৭৪০-১৭৫৬) শেষ দিকে আহমদ শাহ আবদালীর ভারত আক্রমনের সম্ভাবনার কারণে বীরোচিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ক্ষুব্ধ করতে চাননি বলেই তিনি ইংরেজ বেনিয়াদের অনেক অযৌক্তিক দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে ২৩ বছর বয়সে সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে আসীন হয়েছিলেন। মাত্র ১ বছর ২ মাস ৭ দিন তিনি বাংলার নবাব ছিলেন। সিরাজের সিংহাসন লাভের পরেই নবাবকে অযোগ্য মনে করে ইংরেজরা দুঃসাহসের সঙ্গে কলকাতার ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরি করতে শুরু করে। ইংরেজরা জানতো সারা ভারতের মস্তিষ্ক হচ্ছে বাংলা- তাই কলকাতাতেই ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে লাগলো। সিরাজ সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ পাঠালেন যে, দুর্গ তৈরি বন্ধ করো এবং তৈরি অংশ ভেঙ্গে ফেলা নবাবের আদেশ। ইংরেজরা নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে দুর্গের কাজ অব্যাহত রাখে। অর্থ আত্মসাৎকারী রাজবল্লভকে নবাব যখন তলব করেন তখন রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ আদায়কৃত রাজস্ব ও অবৈধভাবে অর্জিত যাবতীয় ধন সম্পদসহ গঙ্গা স্নানের ভান করে পালিয়ে গিয়ে ১৭৫৬ সালে কোলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয় গ্রহণ করে। সিরাজ-উদ-দৌলা ধন সম্পদসহ পলাতক কৃষ্ণবল্লভকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কোলকাতার গভর্ণর ড্রেককে আদেশ করেন। হিন্দুপ্রধান মাহতাব চাঁদ প্রমুখ অন্যান্য হিন্দু বণিক ও বেনিয়াদের পরামর্শে ড্রেক নবাবের আদেশ পালন করতে অস্বীকার করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের আরো বহু আইনসম্মত নির্দেশ অমান্য করতে কুন্ঠাবোধ করেনি। তারা দেশের প্রতিরক্ষা আইন অমান্য করে কোলকাতায় একটি ষড়যন্ত্রের সুদৃঢ় দুর্গ গড়ে তোলে। এ ছাড়া তারা ব্যবসায় চুক্তি ভঙ্গ করে অসদুপায় অবলম্বন করে রাষ্ট্রের কর ফাঁকি দিয়ে আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। নবাব উপলব্ধি করলেন ইংরেজ বেনিয়াদের আর এদেশে থাকার অনুমতি দেয়া যেতে পারে না। হুগলির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী খাজা ওয়াজেদকে দেয়া পত্র থেকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৭৫৬ সালের ৩ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কাশিম বাজারস্থ ইংরেজদের কারখানা দখল করে একটা মীমাংসায় উপনীত হবার জন্য কোম্পানিকে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে একটা শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় আসার জন্য কয়েকবার পত্র লিখেন। কিন্তু ইংরেজরা শান্তির পথকে উপহাস করে উল্টো যুদ্ধের পথ বেছে নেয়।
কি ঘটেছিল পলাশীতে : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০-৩০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত ভাগিরথীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে অসম যুদ্ধে বিপুল সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিল মাত্র আধাঘন্টা সময়ের ব্যবধানে। নবাবের ছিল প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য ও ৫০টি কামান। ইংরেজদের ছিল মাত্র ১১০০ ইউরোপীয় ২৩০০ দেশী সিপাহী এবং কয়েকটি হালকা কামান। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অনুসারে মীর জাফর, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ প্রমুখ সেনা নায়ক অধিকাংশ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকেন নিষ্ক্রিয়। শুধু মীরমদন, মোহন লাল ও ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রে যুদ্ধ করেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার হাজারো সৈন্যের বিশাল কামান থাকা সত্ত্বেও তা ছিল নিষ্ক্রিয়। মীর মদন, মোহন লাল ও সীনফ্রের অধীনে মুষ্টিমেয় সৈন্য ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েও ইংরেজ বাহিনীকে অপসারণে বাধ্য করেছিল। সিরাজের বিজয় সুনিশ্চিত হওয়ার মুহূর্তেই বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন শহীদ হন। মোহন লালের একক প্রচেষ্টায় যুদ্ধের গতি সিরাজের অনুকূলে রাখা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত মীরজাফরের সর্বনাশা সিদ্ধান্তে পরাজিত হয় নবাব সিরাজের বাহিনী। সময়ের ব্যবধানে নানা পরিবর্তন ঘটলেও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে আজও পলাশী প্রাসঙ্গিক। সিংহকে বলা হয় বনের রাজা। বনের সব প্রাণী তার ভয়ে সব সময় আতংকে থাকে। একটি মাত্র সিংহের তাড়ায় একপাল মহিষও প্রাণ নিয়ে পালাতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সংঘবদ্ধ শক্তি যে কী জিনিস সেটা মাঝে মাঝে বনের রাজা সিংহও টের পায় সংঘবদ্ধ মহিষের তাড়া খেয়ে। নবাব সিরাজের বিশাল বাহিনী ছিলো কিন্তু সংঘবদ্ধ ছিল না বলেই পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। লড ক্লাইভের বাহিনীরা জাহাজ বোঝাই করে যখন মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন নদীর দু’ধারের উৎসুক জনতা বলাবলি করল রাজায় রাজায় যুদ্ধ বাঁধছে।
ইতিহাস নির্মম সত্যের ধারক। এ কথা বুঝার জন্য আইনস্টাইন রুশ কিংবা প্লেটো হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিহাসের চলমান চাকার তলে পিষ্ট হয়েছে কত জালেমশাহী অত্যাচারী রাজা-মহারাজা তার ইতিহাস একটু পড়লেই সহজে তা অনুধাবন করা যায়। যারা ক্ষমতার সিঁড়িকে স্বৈরশাসকের পাকাপোক্ত সিঁড়ি বানিয়েছিলেন তারাও চাওয়া পাওয়ার এই পৃথিবী থেকে বেইজ্জতির সাথে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সুতরাং এ কথাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না আজ আমার কাল তোমার। সেজন্যে বোধ হয় মহামতি আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকাসকে বলেছিলেন- বড়ই বিচিত্র এই দেশ! তাই না সেলুকাস? আজকের এই দিনে ক্ষমতায় থাকার জন্য এক সময়ের চিরশত্রুও বন্ধু হয়ে যায়। আর যাদের সাথে ছিল সখ্যতা ক্ষমতায় টিকে থাকার দ্বন্দ্বে তাদের সাথে করা হচ্ছে শত্রুতা। রাজনীতির কুটচালের এ দৃশ্য দেখলে নিশ্চয়ই আলেকজান্ডার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়তেন।
বিশ্বাসঘাতকদের ভুমিকা : পলাশীর যুদ্ধের নির্মমতার এ ইতিহাস ভোলার নয়। এ যুদ্ধের পরাজয়ের সাথে অবধারিতভাবে যে কজন ব্যক্তির নাম জড়িত, তাদের মধ্যে মীর জাফর অন্যতম। মীর জাফর নামটি উচ্চারণের সাথে সাথে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলের চোখে ঘৃণার সাথে জেগে উঠে এক চরম বিশ্বাসঘাতকের প্রতিচ্ছবি। আবু জেহেল, আবু লাহাব, উৎবা, শায়বার মতো মীর জাফরের নাম শুনলে থুথু নিক্ষেপ করতে ইচ্ছে করে। বাংলার সিপাহসালার হয়েও নিজ স্বার্থে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতাকে ইংরেজদের কাছে বিকিয়ে দিয়ে মীর জাফর বিশ্বের ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার করুণ পরাজয়ের জন্য মীর জাফরের দায়িত্বহীনতাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। মীর জাফর, ঘসেটি বেগম, শওকত জঙ্গ, রাজ বল্লভ প্রমুখের চক্রান্ত শয়তানকেও হার মানিয়েছিল। কোলকাতার শাসনভার নবাব পরম বিশ্বাসে যে মানিক চাঁদের উপর অর্পণ করেছিলেন সে মানিক চাঁদ বিশ্বাস ভঙ্গ করে কোলকাতা ও হুগলী ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। ১৫ ডিসেম্বর ১৭৫৬ ক্লাইভ কোলকাতায় পৌঁছে মানিক চাঁদকে গাদ্দারির জন্য ধন্যবাদ প্রদান করেন। এ ষড়যন্ত্রে যারা সহযোগিতা করেছিল তারা কারা? তারা বিদেশী নয়, তারা স্বজাতীয় নবাবের বিশ্বাসভাজন লোক ছিলেন। বাংলার বিরুদ্ধে বাঙালীর এর চেয়ে অধিকতর বিশ্বাসঘাতকতা আর কি হতে পারে? উপমহাদেশের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের চেয়ে বেশি রক্তপাত ঘটেছে বহু যুদ্ধেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। আমরা যদি ফলাফল দিয়ে বিবেচনা করি তাহলে পলাশীর যুদ্ধকে তরাইন বা পানিপথের যুদ্ধের সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে পারি। তরাইনের যুদ্ধের ফলে উপমহাদেশে যেমন ইসলামী সালতানাতের অভ্যুদয় ঘটেছিল কিংবা পানি পথের যুদ্ধের ফলে সূচিত হয়েছিল মুঘল শাসন ও সভ্যতার সূত্রপাত। তেমনিভাবে পলাশীর যুদ্ধ দ্বারা উপমহাদেশে উন্মুক্ত হয়েছিল ব্রিটিশ বেনিয়া ইংরেজ শাসনের দ্বার। হিন্দু মহাজনের অর্থ আর ইংরেজ সেনাপতির তরবারি নিয়ে আসে বাংলার মুসলমান রাজত্বের বিপর্যয়। পরবর্তীকালে উপমহাদেশে প্রায় দুই শতাব্দীর পরাধীনতা, ব্রিটিশ শাসনের সম্প্রসারণ, শোষণ এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার বিকাশ সবই সম্ভব হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের ফলে। সেজন্য ইতিহাসের চিন্তাশীল পাঠকের নিকট পলাশীর বেদনাদায়ক ইতিহাসের পাঠ এতো বেশি অর্থবহ।
বিশ্বাসঘাতকদের করুণ পরিণতি : ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে মানুষ কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করে না। নিউটন আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমমুখী ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা শুধুমাত্র যে বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, পরাষ্ট্রনীতি এবং বিচারনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে এর সমান প্রতিক্রিয়া। তা না হলে পৃথিবীর স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বিশ্বাসঘাতকদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি কেন হবে? প্রকৃতির অমোঘ বিধান অমান্য করে যারাই অন্যায়ভাবে মানুষের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চালিয়ে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, ক্ষমতার রঙিন চশমা পড়ে সময়ের ব্যবধানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে কঠিনভাবে শায়েস্তা করেছেন। শুধু পলাশী বললে ভুল হবে যারাই ষড়যন্ত্রের ফাঁদ অন্যের জন্য তৈরি করেছেন, তারাই উল্টো সেই ফাঁদে পড়েছেন। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে তাদের জীবনের অবসান হয়েছে মর্মান্তিক পরিণতির মধ্য দিয়ে। সবার ভাগ্যে জুটেছিল কোনো না কোনো ভয়াবহ পরিণতি। ইতিহাসের পাতায় আজোও ঘৃণার অক্ষরে লিপিবব্ধ রয়েছে সেসব বিশ্বাসঘাতকদের নাম। তাদেরই একজন ছিলেন মীর মীরন। সে পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক। মীর জাফরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার মৃত্যু হয়েছিল বিনা মেঘে বজ্রাঘাতে। তবে কেউ কেউ বলছেন মিরনকে আততায়ী দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। মুহাম্মদীবেগের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি কেবল তার কাছে দু’রাকাত নামায পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদীবেগের পাষাণ হৃদয় নবাব সিরাজকে দুরাকাত নামায পড়ারও সুযোগ দেয়নি। নামায শেষ করার আগেই নবাবের পিঠের উপর তরবারি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলো বিশ্বাসঘাতক। ইতিহাস স্বাক্ষী এই নরাধম অবশেষে বিনা কারণে কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। মীরজাফরের মৃত্যু হয় আরো মর্মান্তিকভাবে। দুরারোগ্য কুষ্ঠব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মত্যৃ হয় তার। রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন নবাব সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম খলনায়ক। তার মৃত্যুর স্থান ছিল বাথরুমে। নিজের হাতের ক্ষুর দিয়ে সে নরাধম আত্মহত্যা করেছিল।
পলাশীর শিক্ষা ও আমাদের করণীয় : দেশের বিরাজমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই বললেই চলে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশের আকাশে বাতাসে মিশে রয়েছে মীরজাফর, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, মানিক চাঁদের প্রেতাত্মারা। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলছে। মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে সিকি শতাব্দী ধরে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা জনগণের মুখে নেই। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের খবর কয়েকদিন দেখলে ও পড়লে যে কেউ ভাববে উজবেকিস্তান তো বেশ সুশাসিত একটি দেশ। সে দেশের মানুষ কী সুখেই না আছে! তবে দেশবাসী যেমনই থাক, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট করিমভ ও তার পরিবারের সদস্যরা সবকিছুর উর্ধ্বে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের শাসক পরিবারের ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের খবর সম্প্রতি বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। উজবেকিস্তানের সুশাসন আর আমাদের রাষ্ট্রীয় সুশাসনের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু তা বিবেচনার ভার আপনাদের কাছে ছেড়ে দিলাম। সরকার দলীয় রাজনীতির কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রতিহিংসা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে গোটা দেশের জনগণ আশার আলো দেখতে ভুলে যেতে বসেছে। জননিরাপত্তা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপার সম্ভাবনাময় দেশটিকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেয়ার প্রয়াসে দেশের জনগণকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আর বিরোধী শক্তি বলে প্রতিহিংসার রাজনীতির বীজ বপন করা হচ্ছে। পাঠকদের একটু আমাদের মানচিত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই। আমি বা আপনারা যারাই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মানচিত্র আকঁতে চাই। তারা কি পারবো দুটো মানচিত্র আকঁতে? যেটি হবে একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরটি বিপক্ষের। আমরা লক্ষ্য করেছি ধর্মীয় মূল্যবোধকে নিরুৎসাহিত করার ফলে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা হরমেশাই ঘটছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিনপাত করছে। কার্যত দেশ আজ বড় ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
পলাশীর পরের ইতিহাস আরো নির্মম : এ ইতিহাস শোষণ, নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের। ১৭৭৬ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলার এক তৃতীয়াংশ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। দুর্ভিক্ষ যখন চরমে পৌঁছে তখন পূর্বের বছরের তুলনায় ছয় লাখ টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা হয় এবং বাংলা বিহার থেকে পরবর্তী বছর অতিরিক্ত চৌদ্দ লাখ টাকা আদায় করা হয়। মানবতার প্রতি এর চেয়ে অধিক নির্মমতা ও পৈশাচিকতা আর কি হতে পারে? ঐতিহাসিকরা মোটামুটি হিসাব করে বলছেন ১৭৫৭ থেকে ১৭৮০ সাল পর্যন্ত মাত্র তেইশ বছরে বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে চালান হয়ে গেছে প্রায় তিন কোটি আশি লাখ পাউন্ড অর্থাৎ সমকালীন মূল্যের ষাট কোটি টাকা। বেদনাবিধূর নির্মম পলাশী থেকে আমাদেরকে দেশ গড়ার শিক্ষা নিতে হবে। জাতীয় অনৈক্য ও জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা কখনও জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। পলাশী আমাদের শত্রু মিত্র চিনতে শিখায়। পলাশী চোখে আঙ্গুল দিয়ে গাদ্দারদের ব্যাপারে সাবধান হতে শিক্ষা দেয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্যনীতি কেমন হওয়া উচিত তাও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থি বাণিজ্যচুক্তি সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। নবাব সিরাজ পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত ও নিহত কেন হলেন? তাঁর অযোগ্যতাই কি পরাজয়ের কারণ? সে প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, পলাশীর যুদ্ধ কোনো যুদ্ধই ছিল না। এটা ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা মাত্র। আসলে যাদের তিনি বিশ্বাস করতেন, সেই উমিচাঁদ, সেনাপতি রায়দুর্লভ, প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, দেওয়ান রামচাঁদ, মুন্সী নবকৃষ্ণ আর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ ধনী জগৎশেঠ এরাই ছিলেন সিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রকাশ্য শত্রুর দ্বারা যত ক্ষতি হয় বন্ধু শত্রু হলে তা হয় আরও মারাত্মক। পলাশী যুদ্ধে এই সত্যই দারুণভাবে প্রমাণিত। ইতিহাসের মূল প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্লেষণে যেসব বিষয় পরিলক্ষিত হয় তা থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে একালেও বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয়। আমরা আর পলাশীর মতো নৃশংসতার ইতিহাস দেখতে চাই না।
মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন