বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০১৫

খোশ আমদেদ মাহে রমযান


বছর ঘুরে আবারও এসেছে আল্লাহ তা’লার রহমত এবং গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার পবিত্র মাস রমযান। সুরা আল বাক্বারাহ্র ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম (অর্থাৎ রোজা) ফরজ করা হয়েছে যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’  রোজা সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বর্ণনার দরকার পড়ে না। সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব তথা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকাটা অবশ্যই সহজ কাজ নয়। কোনো মানুষ দেখবে না জেনেও মুসলমানরা লুকিয়ে কিছু খান না। পানও করেন না। কারণ, তারা জানেন, মহান আল্লাহ সবই দেখছেন। আর  রোজা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সেহেতু কষ্ট যতোই হোক, মুসলমানরা  রোজা ভাঙেন না। এর মধ্য দিয়ে একদিকে তারা অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জীবন যন্ত্রণা অনুভব করতে শেখেন, অন্যদিকে ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অন্যদের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষাও লাভ করেন। আল্লাহ তাঁর এই বান্দাদের জন্য রহমতের দরোজা  খুলে দেন এই মাসে। একমাস ধরে  রোজা রাখার তথা সংযম পালনের পেছনেও মুসলমানদের জন্য রয়েছে নানামুখী কল্যাণ। এ মাসে পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চিন্তা ও কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রেও নিজেদের পরিশীলিত রাখেন মুসলমানরা। তারা কোনো অন্যায় কাজে অংশ নেন না, কারো সঙ্গে বিবাদে জড়ান না। অন্যের ক্ষতির চিন্তাও এড়িয়ে চলেন। সব মিলিয়েই রমযানের দিনগুলোতে মুসলমানরা আত্মশুদ্ধির এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন। আল্লাহ তা’লাও বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখান এবং তাদের মাফ করে দেন। ভালো কাজ না করার কারণে যারা দরিদ্র ও হীন অবস্থায় থাকে তারাও এ মাসের মাহাত্ম্যে এবং তওবা-এস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়ে উঠতে পারে।
রমযান মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার দ্বিতীয় কারণ পবিত্র লাইলাতুল কদর। ২৬ রমযানের দিন শেষে, অর্থাৎ ২৭ তারিখে, অনেকের মতে রমযান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় তারিখের রাতে হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পবিত্র কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিল। আল-কুরআন এমন একটি মহাগ্রন্থ, যার মধ্যে আল্লাহর নাযিল করা পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থের সারবস্তু এবং ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌল নির্দেশনা একত্রিত করা হয়েছে। পবিত্র এ গ্রন্থটিকে আল্লাহ মানুষের জন্য জীবনবিধান হিসেবে পাঠিয়েছেন। মক্কার নিকটবর্তী হেরা পর্বতে শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। স্বয়ং আল্লাহ তা’লা বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ এই রাতে বেশি বেশি ইবাদতের তাগিদ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি নিজেও কদরের সারারাত আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। শুধু এই একটি রাত্রি নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযানের শেষ ১০দিনই ইতিকাফ করতেন, যার অর্থ পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে কেবলই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের ইবাদতে মগ্ন থাকা এবং আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাত করা। গুনাহর জন্য মাফ চাওয়া। এজন্যই কদরের রাতকে যারা পাবেন তারা খুবই সৌভাগ্যবান এবং তাদের উচিত আল্লাহর কাছে সর্বান্তকরণে নিজেদের সমর্পণ করা, তাঁর কাছে পানাহ চাওয়া। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা এবং শারীরিক সুস্থতা ও সহজ-সরল জীবনযাপনের তওফিক দেয়ার জন্য আল্লাহ তা’লার কাছে বিশেষভাবে মোনাজাত করা। গুনাহ থেকেও মাফ ও মুক্তি চাইতে হবে। কারণ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ জীবনে মানুষ প্রতিদিনই অনেক গুনাহ বা অপরাধ করে। অন্যদিকে আল্লাহ গুনাহগার বান্দাদের মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যভিচারী, মুশরিক ও নাস্তিক-মুরতাদ ছাড়া অন্য বান্দাদের সব নেক তথা ভালো আশা-আকাঙ্ক্ষা পুরনের মওসুম রমযান মাস। এমন একটি সুযোগকে অবশ্যই হাতছাড়া করা যায় না। প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত নিজেদের পাশাপাশি জনগণের কল্যাণ এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করা। আমরা মনে করি, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রমযান পালনের পাশাপাশি সামগ্রিক বাস্তবতার আলোকেও চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। কারণ, সরকারের ব্যর্থতা এবং চাঁদাবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে টাউট ব্যবসায়ীরা রমযান মাসে পণ্যের দাম বাড়ায় যথেচ্ছভাবে। নাভিশ্বাস ওঠে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে। এজন্যই আমাদের উচিত সকল ব্যর্থতা এবং বেড়ে চলা পণ্যমূল্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads